২০শে নভেম্বর ৭:১৫ মিনিটে ঢাকা রেলস্টেশনে এর উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। আমি আর আব্বা এক রিক্সায়, অন্যটায় লিটু ভাই (আমার খালাত ভাই) আর সিফাত (আমার ছোট ভাই)। আমাদের ট্রেন পারাবত ৭:৪০ এ ছাড়ার কথা ছিল। ১০ মিনিট আগে স্টেশনে পৌছলাম। এরপর তারাহুরা করে ট্রেনে বসলাম। তবে ট্রেন ছাড়ল ৭:৫০ এ। এর মধ্যে লিটু ভাই তার নতুন সার্টের কাফফারা স্বরুপ এক প্যাকেট চুইংগাম কিনে দিল ফেরিওয়ালার কাছ থেকে (তখন আমাদের মধ্যে এই প্রচলন ছিল, কেও নতুন ড্রেস পরলে, তাকে কিছু খাওয়াতে হতো)।
ট্রেন ছাড়ল, এটাই আমার প্রথম ট্রেন ভ্রমন। প্রথম যখন ধীরে ধীরে ট্রেন চলছিল তখন মনে হলো, হাতির পিঠে বসলে যেমন একবার ডানে আর একবার বামে হেলে তেমনি ভাবে যাচ্ছে। আমরা যাচ্ছিলাম শোভন চেয়ারে। খুব ভাল লাগছিল। ট্রেনে বসে রেলগেটে অপেক্ষমান যাত্রীদের দেখছিলাম, তখন মনে হচ্ছিল আমিও একসময় এভাবে রিক্সায় বসে ট্রেন দেখতাম। শহর ছেড়ে বাইরে যাবার পর যখন ধান ক্ষেতের মাঝখান দিয়ে যাচ্ছিল। তখন শো শো শব্দ হচ্ছিল। প্লেন উড়ার সময় যে ধরনের শব্দ হয়ে অনেকটা সে রকম। ট্রেনে ঝিক ঝিক শব্দ হয় শুনেছিলাম। কিন্তু এই শব্দটার কথা কেউ আমাকে বলেনি।
সিলেট পৌছানোর পথে ৫জায়গায় ট্রেন থেমেছিল। এরমধ্যে আখাউরা জংশনে শুধু আধা ঘন্টা থেমেছিল। বাকি ৪ স্টেশনে ৫ মিনিট করে। ট্রেন থেকে সিলেটের ধান ক্ষেত দেখলাম। এখানকার মানে সিলেট অঞ্চলের ধান গাছগুলো খাট আর মাটি শুকনো। আমি জানিনা এগুলোকে কি ধান বলে। এসব তথ্য রাতের ট্রেনে বসে লিখছি, তাই হাতের লেখার এ অবস্থা (আমার মনে হয় টাইপিংয়ের অবস্থাও ভাল না)। শ্রীমংগলে ট্রেন পৌছানোর পর থেকে সারাটা জায়গায় শুধু চা বাগান দেখলাম। কতকগুলো রেললাইনের এতো কাছে যে হাত বাড়িয়ে পাতা ছেড়া যায়। বৃহত্তর সিলেট জেলার কয়েক অঞ্চলে দেখলাম মাটি একদম দুধের মত সাদা। কয়েক জায়গায় দেখলাম মাটি কেটে ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এগুলো কাচবালি কিনা কে জানে।
ট্রেনে আব্বাকে নিয়ে হয়েছে এক সমস্যা। এখানে সারাক্ষনই হকাররা যাওয়া আসা করছে। আব্বার কোন কিছু খেতে ইচ্ছা করলে আমাদের জিগ্যেস করেন খাব কিনা। যদি আমরা (আমি আর সিফাত) না বলি তাহলে আব্বাও আর খায়না। আব্বার খেতে ইচ্ছা হয় বলে আমি অনেক সময় খাব বলি। যেমন- চা। এই পারাবত ট্রেনের চা মোটেও ভাল না। তবে নাস্তাটা মোটামুটি ভাল। এক ধরনের বিস্কিট জাতীয় মালয়েশিয়ান মিমি খেতে খুব ভাল লাগল। আমাদের পাশাপাশি ৩টা সিট, ৪ নম্বরটা খালি। এ সুযোগে সিফাত এতোবার সিট বদলালো যে ট্রেনের লোকজন অবাক হয়ে গেল। আমি একবার আব্বাকে নিয়ে গেলাম ট্রেনের খোলা দরজা দিয়ে দাড়ানোর জন্য। কিন্তু দরজা বন্ধ। তার উপর ট্রেনের বগি দুটোর সংযোগ স্থলে বগিটা এতো বেশি নড়ে যে, অন্য বগিতে যাবার সাহস পেলাম না। ফেরার পথে অবশ্য ভেবেছিলাম, চলন্ত ট্রেনে হেটে দেখবো। কিন্তু রাতের ট্রেনে ফিরতে হলো বলে সেটা আর করা হয়নি। কারন আব্বা ঘুমাচ্ছিলেন আর একা একা ঘুরতে যাওয়া হয়নি।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৫:৫৪