১৯৯০ সালে কয়েকটি রোমানমুদ্রা আবিষ্কারের পর ভারতে মুদ্রা গবেষণার পত্তন হয়। এরকম বর্ণনা দেয়া আছে এশিয়াটিক রিচার্চের ২য় বালামে। পেশাদার ও পদ্ধতিগত গবেষণাশুরু হয় ১৮২৪ সালে যখন জে.এ.টোড কিছু গ্রিক,পার্সীয়ান ও ভারতীয় মুদ্রা প্রকাশ করেন "ট্রানজেকশন অব রয়েল এশিয়াটিক সোসাইটি" তে।এরপর ভারতীয় মুদ্রাগবেষণা সম্পর্কিত আগ্রহ ধাপে ধাপে উন্নতি সাধন করে এবং বিশেষজ্ঞ গবেষক ও মুদ্রাসংগ্রাহকরা মুদ্রার বিশাল সংগ্রহ প্রকাশ করেন এবং তাদের সংগ্রহ সম্পর্কে লেখা প্রকাশ করেন। ঊনবিংশ শতাব্দির শেষার্ধে আ.কানিংহাম, ডব্লিও. এস.থিওবোল্ড এবং বি. ইন্দ্রাজি ভারতীয় মুদ্রাগবেষণায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গবেষক ছিলেন। থিওবোল্ডই প্রথম ব্যাক্তি যিনি ছাপাঙ্কিত মুদ্রার গবেষণার উপর গুরুত্বারোপ করেন।থিওবোল্ডের পর আলেকজান্ডারের কানিংহাম পদ্ধতিগত ভাবে ছাপাঙ্কিতমুদ্রা নিয়ে গবেষণা করেন।তিনি প্রায় ৫-৬হাজার মুদ্রা পর্যবেক্ষণ করেন পরবর্তীকালে প্রাপ্ত তথ্য ও ফলাফলের ভিত্তিতে " কয়েনস অব ইন্ডিয়া "পুস্তক প্রকাশ করেন।বিংশ শতাব্দির প্রথমার্ধে ডি.বি. স্পুনার, ভি.এস স্মিথ,ডি.প্রসাদ, ডি.আর. কান্দারকার,জে.এলান এবং ই. এইচ.সি.ওয়ালশ এরা ছাপাঙ্কিত মুদ্রা গবেষণায় বিশেষ অবদান রাখেন। উপনেবেশিক শাসনের অবসানের পরে ডি.ডি. কোশাম্বি, এম.মিচেনার,পি. এল. গুপ্ত, টি.আর.হার্ডাকার,ডি.রাজগর এর মত কিছু অসাধারণ মুদ্রা গবেষক ছাপাঙ্কিত রোপ্য মুদ্রা গবেষণায় গুরু্ত্বপূর্ন অবদান রাখেন।
১৯০৪ সালে এইচ.এন. রাইট যিনি এশিয়াটিক সোসাইটি অব বেঙ্গল এর একজন সম্পাদক ছিলেন, তিনি একটি ক্রোড়পত্র প্রকাশের সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন যেখানে মুদ্রা গবেষনা সম্পর্কিত অনেক তথ্য প্রকাশ পাবে। রাইট নিজেই এ ক্রোড়পত্র প্রকাশের দায়িত্ববান নেন। ১৯১০ সালের ২৮ ডিসেম্বর এলাহাবাদে মুদ্রাসম্পর্কিত এক কনফারেন্স এর আয়োজন করেন, কনফারেন্সেরর পরবর্তী সময়ে" নিউমিস্মেটিক সোসাইটি অব ইন্ডিয়া" প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯৩৯ সালের থেকে এ সংস্থা নিয়মিত সাময়িকী বের হত যার নাম জার্নাল অব নিউমিস্সেটিক সোসাইটি অব ইন্ডিয়া। এ সংস্থা থেকে সাময়িকী ছাড়াও নানা স্মৃতিগ্রন্থ ও মনোগ্রাফ প্রকাশ করতেো।এ সংস্থা পরবর্তীকালে মুদ্রাগবেষণায় একটি অগ্রগামী প্রতিষ্ঠান হিসেবে রূপ লাভ করে।
ইন্ডিয়ান সিউমিস্মেটিক ক্রনিকল নামে আরেকটি সাময়িকী পাটনার বিহার রিসার্চ সোসাইটি থেকে ১৯৬০ সালে বের হয়। পি.এল.গুপ্তা এবং কে.কে. মহেশ্বরী এ দুজনের প্রচেষ্টায় মুদ্রা বিদ্যা ও গবেষণায় উন্নতি সাধনের জন্য নাশিকে গড়ে তোলেন "ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব রিসার্চ ইন নিউমিসস্মেটিক স্টাডি"। IIRNS মুদ্রা গবেষনার জন্য খুবই নিবেদিত এবং তারা আন্তর্জাতিক প্রসংসা ও লাভ করেছে। NSI ও IIRNS এর পাশাপাশি আরও যে সংগঠন গুলেো আছে সেগুলো হল (ইন্ডিয়ান কয়েন সোসাইটি.নাগপুর, নিউমিস্মেপিক সোসাইটি অব হায়দ্রাবাদ, কয়েন স্টাডি সার্কেল কলকাতা, বিলাই নিউমিস্মেটিক সোসাইটি, গোয়ালিয়র কয়েন সোসাইটি. গোয়ালিয়র)। এ সংগঠন গুলো দেশের নানা প্রান্তে মুদ্রা তাত্ত্বিক গবেষণা গড়ে তোলে। এ সংগঠন গুলোর প্রকাশনা গুলো কমবেশি ভারতীয় উপমহাদেশের মুদ্রা গবেষণাকে সমৃদ্ধ করেছে। মুদ্রা গবেষণায় সংস্থা গুলোর কর্মকান্ডের পাশাপাশি কতিপয় ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও যাদুঘর মানুষকে শিক্ষা ও গবেষণা কাজের মধ্য দিয়ে মুদ্রাবিজ্ঞান সম্পর্কে ধারণা দেন।
উপমহাদেশে ছাপাঙ্কিত মুদ্রার গবেষণায় বিভিন্ন গবেষকরা অবদান রাখেন ঊনবিংশ শতাব্দির শেষ দশক থেকে বর্তমান পর্যন্ত কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এ গবেষকরা বাংলাদেশ অঞ্চলে প্রাপ্ত মুদ্রা গুলোকে গবেষণার বিষয় হিসেবে গ্রনন করেনি। বর্তমান বাংলাদেশ অঞ্চলের প্রাপ্ত মুদ্রা গুলো সম্পর্কে সর্বপ্রথম লেখেন হানিফ পাঠান যিনি নরসিংদি জেলার উয়ারি-বটেশ্বর গ্রামের একজন শিক্ষক ও বাসিন্দা। তিনি ১৯৩৩সালে "সাপ্তাহিক মোহাম্মদী" সাময়িক পত্রিকাতে "প্রাচীন মুদ্রা প্রাপ্তী "শীর্ষক প্রবন্ধ রচনা করেন। ঢাকা যাদুঘরের তৎকালীন কিউরেটর (বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর) এন.কে. ভট্টাশালী এ প্রবন্ধের বিষয়গুলোর উপর নজর দেন এবং উয়ারী -বটেশ্বর অঞ্চলের মরজাল নামক স্থান থেকে ছাপাঙ্কিত রোপ্য মুদ্রা সংগ্রহ করেন যার সবগুলো বাংলাদেশ জাতীয় যাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। এ সংগ্রহ সম্পর্কে লেখা বের হয় "ঢাকা যাদুঘরের বার্ষিক রিপোর্টে "এবং "হিস্ট্রি অব বেঙ্গল "(চক্রবর্তী) বইয়ে। উয়ারী বটেশ্বরের পাঠান পরিবারের অর্থাৎ হানিফ পাঠান ও হাবিবুল্লাহ পাঠান সেখানে ছাপাঙ্কিত মুদ্রা ও প্রত্নবস্তু সংগ্রহের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন আবার সেখানে বিশাল অঞ্চলের প্রাচীন বস্তুু সংগ্রহের উপর আগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন। উনারা বিভিন্ন জার্ণাল ও দৈনিক সংবাদপত্রে তাদের সংগ্রহ প্রকাশ করেন। হাবিবুল্লাহ পাঠানের গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনা হল "প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন :উয়ারী বটেশ্বর"। যা উয়ারী বটেশ্বর অঞ্চলের ছাপাঙ্কিত মুদ্রার উপর উনার পর্যবেক্ষণ প্রকাশ করেন।
উয়ারি বটেশ্বর অঞ্চলের ছাপাঙ্কিত মুদ্রা নিয়ে বিক্ষিপ্তভাবে আলোচনা করেন অনেক গবেষক যার মধ্যে যাকারিয়া ১৯৮৪,মূখার্জি ১৯৯১.২০০০,চক্রবর্তী ১৯৯২,পাবানকার ১৯৯৮,বাসা এবং রহমান ১৯৯৮, হক ১৯৯৮,জাহান ১৯৯৯, ইমাম ২০০৫.২০০৭, কিন্তু আর.করিম উয়ারি বটেশ্বর ছাপাঙ্কিত মুদ্রা সম্পর্কে প্রথম পেশাদার বিশ্লেষণ করতে চেষ্টা করেন। দীর্ঘ সময় পর বুলবুল আহমেদ ২০০১ সালে উয়ারি বটেশ্বর অঞ্চলে পাওয়া ১৯টি কয়েনের উপর গবেষণা করেন যেগুলো নরসিংদীর হাবিবুল্লাহ পাঠানের সংগ্রহে আছে। এ গবেষণা ওনার বাংলা মনোগ্রাফ "নরসিংদী জেলার উয়ারি বটেশ্বর :একটি প্রত্নতাত্ত্বিক সমীক্ষা " এবং হাকিম হাবিবুর রহমানের স্মৃতিচারণা গ্রন্থে স্খান পেয়েছে। এস.এম.রহমান (সুফি মুস্তাফিজুর রহমান)২০০৫ সালে উয়ারি বটেশ্বরে প্রাপ্ত ৯৫টি ছাপাঙ্কিত মুদ্রার একটি গবেষনা কর্ম প্রকাশ করেন। আব্দুল করিম, বুলবুল আহমেদ, সুফি মুস্তাফিজুর রহমান উয়ারি বটেশ্বর অঞ্চলের ছাপাঙ্কিত মুদ্রাকে রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক প্রক্ষিতে গবেষনা করেছেন। এ. ইমাম, বুলবুল আহমেদ, এস.ইমরান ২০০৬ সালে বাংলাদেশে প্রথম ছাপাঙ্কিত মুদ্রার চিহ্ন কে ধর্মীয় দিক থেকে ব্যাখ্যা করেন। তাদের এ গবেষণা কর্ম প্রকাশ পায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ব বিভাগের জার্নাল "প্রত্নতত্ব " এ।
২০১১ সালে সুফি মুস্তাফিজুর রহমান এবং বুলবুল আহমেদ উয়ারী বটেশ্বর অঞ্চলের ছাপাঙ্কিত জনপদ মুদ্রার উপর গবেষনা করেন এবং তা পরিবেশন করেন"উয়ারি বটেশ্বর প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ ও উৎখনন শীর্ষক সেমিনার ২০১১"তে যা আয়োজন করে বাংলাদেশ ইতিহাস সংস্থা ও প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ঐতিহ্য অন্বেষণ।
উয়ারী বটেশ্বরের ছাপাঙ্কিত মুদ্রার পাশাপাশি গবেষকরা নর্থ বেঙ্গল অঞ্চলের ছাপাঙ্কিত মুদ্রার দিকেও নজর দেন। ১৯৩২-৩৩সালে পাটগ্রামে ৩৫টি মুদ্রার সাথে ৫টি রোপ্য মুদ্রা পাওয়া যায় যা সংগ্রহ করেন ভারতীয় যাদুঘর কলকাতা। এ অল্প সংগ্রহ এবং ৫টি মুদ্রার ছবি ১৯৩৫ সালে এন.জি.মজুমদার প্রকাশ করেন ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগের বার্ষিক রিপোর্ট ১৯৩৩-৩৪ সালে।
নর্থ বেঙ্গল অঞ্চলের ছাপাঙ্কিত মুদ্রার উপর বিক্ষিপ্তভাবে অনেক গুলো প্রকাশনা বের করেন অনেক গবেষক তারা হলেন ইসলাম ১৯৭২,বাসু ১৯৭৭, লাহিড়ি ১৯৮৫,চক্রবর্তী ১৯৯২,মুখার্জী ১৯৯১,২০০০, রহমান ২০০০ সালে।
সাম্প্রতিক সময়ে নর্থ বেঙ্গল অঞ্চলে ২ মুদ্রার পাত্র (কলস) পাওয়া গেছে। ১টি রাজশাহীর বাইগাছাতে, অন্যটি বগুড়ার মহাস্থানগড়ে। প্রথম পাত্রটি ১৯৮৭ সালে (৩৩টি মুদ্রা) পাওয়া যায় যখন গ্রাম বাসীরা একটি বাশঁঝাড়ে কাজ করছিল, দ্বিতীয়টি(৯৩টি মুদ্রা ) ১৯৯৫ সালে ফ্রান্স বাংলাদেশ উৎখননের সময় মহাস্থানে পাওয়া যায়। মহাস্থানের এ পাত্রের পদ্ধতিগত বর্ণণা করেন বোসাক ও আলম এবং প্রকাশ করেন "France -Bangladesh joint venture excavations at mahasthangar :-First interim report 1993-99" এ। এখানে বলে রাখা দরকার যে ৬৩টি মুদ্রার উপর গবেষণা করেছেন এম.হোসেন এবং এগুলোর উপর ওনার পর্যবেক্ষণ প্রকাশ করেন "Journal of Bangal Art, volume no.4"। বাইগাছা পাত্রের ছাপাঙ্কিত মুদ্রা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন বোসাক এবং আলম তাদের প্রবন্ধ প্রকাশ হয় "বরেন্দ্র রিসার্চ মিউজিয়াম " এর জার্নালে। ২০০২ সালে বাংলাদেশ জাতীয় যাদুঘর ৭০টি এবং ১০টি ছাপাঙ্কিত মুদ্রা যথাক্রমে নাটোর ও ঢাকা থেকে সংগ্রহ করেন। এ মুদ্রা গুলো প্রদর্শিত হয় বাংলাদেশ যাদুঘরের বিশেষ প্রদর্শনী যার নাম ছিল "Object collection and Activities Of Bangladesh National Museum 2002" । মুদ্রার গুলোর প্রাপ্তিস্থান ঠিক কোথায় পাওয়া গেছে এ সম্পর্কে কিছু জানা যায় না। আবার এ মুদ্রা গুলো সম্পর্কে এখন ও গবেষণা হয়নি।
২০০৭ সালে বুলবুল আহমেদ ছাপাঙ্কিত রৌপ্য মুদ্রার স্খান হিসেবে একটি নতুন স্থানকে চিহ্নিত করেন। এটা হল গাইবান্ধার সাহেবগঞ্জ উপজেলা। বুলবুল আহমেদ সাহেবগঞ্জে প্রাপ্তবস্তু সম্পর্কে একটি রিপোর্ট জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিক অনুষদে জমা দেন। ২০০৭ সালে বুববুল আহমেদ বাংলাদেশের ছাপাঙ্কিত মুদ্রার উপর ওনার গুরুত্বপূর্ণ গবেষনা শেষ করেন যা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রত্নতত্ব বিভাগ থেকে এম.পিল তত্ত্বালোচনার জন্য করেন। বুলবুল আহমেদের এ গবেষণার নাম "বাংলাদেশের ছাপাঙ্কিত মুদ্রা :একটি মুদ্রা বিষয়ক গবেষনা "। এ তত্ত্বালোচনার মধ্যে ওয়ারি বটেশ্বর, পাটগ্রাম,বাইগাছা এবং সাহেবগঞ্জের মুদ্রা গুলো নিয়ে আলোচনা করেন।
সারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সংগ্রহীত ছাপাঙ্কিত মুদ্রা গুলোর একটি বড় সংরক্ষিত স্থান বাংলাদেশ জাতীয় যাদুঘর। বুলবুল আহমেদের (২০১০) এক গবেষণায় প্রকাশ করেন যে জাতীয যাদুঘরের ৪৯ টি কয়েন ছিল বগুড়া অঞ্চলে প্রাপ্ত। "বগুড়া অঞ্চল হতে জাতীয় যাদুঘরের সংগ্রহীত ছাপাঙ্কিত রৌপ্যমুদ্রা :একটি মুদ্রা বিষয়ক গবেষণা "। শীর্ষক রচনা প্রকাশিত হয়" প্রত্নতত্ত্বের ইতিহাসের নির্বাচিত রচনাসমূহ _অধ্যাপক আবু ইমাম স্মরনে। ২০১০ সালে বুলবুল আহমেদ বাংলাদেশে প্রাপ্ত ছাপাঙ্কিত মুদ্রায় প্রাপ্ত চিহ্ন সমূহের তালিকা তৈরির উপর মনযোগী হন। বাংলাদেশে প্রাপ্ত ২১৪টি মুদ্রার উপর চিত্রিত নানা চিহ্নের উপর একটি অংকন নির্ভর নির্ঘন্ট তৈরি করেন যা পরবর্তীতে প্রকাশিত হয় "জার্নাল অব বেঙ্গল আর্টে "।
মহাস্থান, উয়ারি -বটেশ্বর, পাটগ্রাম, বাইগাছা ও সাহেবগঞ্জ ছাড়াও আরও কয়েকটি স্থানের নাম পাই যেখানে ছাপাঙ্কিত রৌপ্যমুদ্রা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জের ভৈরব বাজার, কুমিল্লার দাউদকান্দি। এ স্থানগুলোকে প্রত্নতাত্ত্বিকরা বিভ্রান্তিকর হিসেবে চিহ্নিত করেছেন কারন এগুলোর জন্য মৌখিক ব্যাতীত লিখিত কোন ধারণা পাওয়া যায় না। সুতরাং মহাস্খান,উয়ারি-বটেশ্বর, পাটগ্রাম, বাইগাছা এবং ছাপাঙ্কিত মুদ্রার স্খান হিসেবে খাঁটি ও স্বীকৃত।
গবেষণার বর্তমান বিষয়বস্তু
বর্তমান গবেষণার মূলবিষয় হল মহাস্খানে প্রাপ্ত ছাপাঙ্কিত মুদ্রার পাত্রের মুদ্রা গুলোকে পদ্ধতিগত ভাবে তালিকাবদ্ধ ও শ্রেনিকরণ করা। আরও গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হল মুদ্রা গুলোর ভিত্তিতে প্রাচীন বাংলার রাজনৈতিক, সাংবিধানিক, অর্থনৈতিক এবং প্রশাসনিক ইতিহাস মুল্যায়ন।
সীমাবদ্ধতা এ সম্ভাবনা
ছাপাঙ্কিত মুদ্রার পাত্রটির ভাগ্যক্রমে প্রাপ্ত বা আবিষ্কার হয়েছে। এ বস্তুগুলোতে কোন স্তরায়ন রেকর্ড নাই। ফলশ্রুতিতে স্তরায়ন পদ্ধতিতে এর আপেক্ষিক সময়কাল নির্ধারণ করা সম্ভব হবে না। ওয়াবলেন্থ ডিসপারসিভ এক্সরে ফ্লুরিসেন্স (WDCF) এবং স্কানিং ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ (SEM) পদ্ধতি গুলোকে ধাতুতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোন থেকে স্টাডি করা সম্ভব। এ মুদ্রা গুলোর বিশ্লেষণ মুদ্রার গঠনপ্রণালী অন্যধাতুর সমন্বয়কে তুলে ধরে।বাংলাদেশে উপরিওক্ত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি গুলো না আসা পর্যন্ত এগুলো করা যাবে না।
উপরিওক্ত সীমাবদ্ধতাসত্ত্বেও বর্তমান অধ্যয়ন বা গবেষনা অনেকটাই কার্যকর হিসেবে প্রমান করেছে কারন এটি বিভিন্ন ভাবে এ বাংলা অঞ্চলের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ইতিহাসের সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। এ গবেষণার সাহায্যে পাত্রের ছাপাঙ্কিত মুদ্রার তালিকা প্রদান করা সম্ভব হয়। এগুলোই বর্তমান সময়ের গবেষনার ও প্রচেষ্টার মূল ভিত্তি।
(অনূদিত)