somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন স্টিফিং হকিং এর চলে যাওয়া এবং বাংলাদেশি হকিংদের আমলনামা

১৪ ই মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৫:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



স্টিফিং হকিং দুনিয়া থেকে চলে গেছেন। তার আত্মা পরলোকগত হয়েছে। ইব্রাহিমী ধর্ম মতে, তার আত্মার উপর এতক্ষণে জান্নাত বা জাহান্নামের সিল পড়েছে। অন্যান্য ধর্মে আলাদা ভার্সণ থাকলেও থাকতে পারে। নাস্তিক্যবাদ অনুযায়ী হাওয়ায় মিশে গেছে।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, স্টিফিং হকিং 1948 সালের 8ই জানুয়ারী দুনিয়াতে আগমণ করেন। পরলোকগত হয়েছে আজ (14/03/2018 ইং খ্রিষ্টাব্দে)। তিনি পদার্থ বিজ্ঞানে কিছু তথ্য প্রমাণ মানুষের সামনে হাজির করেছেন। এই তথ্যগুলোর মধ্যে পেনরোজ-হকিং তথ্য অন্যতম।

তিনি যখন মহা বিশ্বের গূঢ় রহস্য উদঘাটন করার জন্য চেষ্টা করেছেন আমরা তখন মফিজ রহস্যের গূঢ় তত্ত্ব উৎঘাটনে ব্যস্ত ছিলাম। তবে বেচারার ভাগ্য খারাপ, বিরল মোটর নিউরন রোগের একটি ধরন অ্যামিওট্রপিক লেটারেল স্কেলরোসিসে (এএলএস) আক্রান্ত হয়েছিলেন। এর কারণে স্নায়ুর স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হয়ে যায়। এ রোগ হলে সাধারণত মানুষ বেশি দিন বাঁচেনা। তিনি বেঁচে ছিলেন। কথা বলতেন কম্পিউটার স্পিচ সিনথেসাইজারের মাধ্যমে। চলাফেরা করতেন হুইল চেয়ারে।

তার ভাগ্য ভালো যে, তিনি অক্সফোর্ডে জন্মেছিলেন। তিনি যদি বাংলাদেশে জন্ম গ্রহণ করতেন তাহলে তার জীবন দশা কী হতো তা একবার দেখে নিই:

১। প্রথমে তিনি কোন এক মায়ের গর্ভে জন্ম গ্রহণ করতেন। তার নাম রাখা হতো মোঃ আবুল মিয়া।

২। দুই বছর বয়স পর্যন্ত তার মায়ের বুকের দুধ পান করে ভালোই চলে যেত। তৃতীয় বছরের সময় থেকে বাবার দারিদ্রতার কারণে শরীরের পুষ্টির অভাব দেখা দিত।

৩। ছয় বছর বয়সে স্কুলে ভর্তি হতেন, স্কুল ড্রেসের অভাবে স্যারদের নিকট নিয়মিত বকা খেতেন কিংবা তাকে দাড়িয়ে রাখ হতো।

৪। প্রাইমারী কোন রকম পাশ করতে পারলেও বাবা-মা আর্থিক দুর্গতির জন্য হাইস্কুল পর্যন্ত পড়াতে চাইতেন না। তাকে হয়ত বাসের হেল্পার, কিংবা দর্জির দোকান অথবা খেতে খামারে লাগিয়ে দিত।

৫। আর যদি কোন রকম হাইস্কুলে ভর্তি হতে পারতেন, তাহলে হাইস্কুলে অনেক কিছুর অভাব অনুভব করতেন। যেমন, সময়মত স্কুল ড্রেস না পাওয়া, বই খাতা কিনতে না পারা, পরীক্ষার ফি কিংবা মাসিক বেতন দিতে না পারা ইত্যাদি ইত্যাদি।

৬। কারো দয়ায় হয়ত এস.এস.সি'র ফরম পূরণ করে মোটিমুটি বা ভালো মানের রেজাল্ট করতেন। তারপর কলেজের ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। পাড়ার পোলাপাইন পড়িয়ে কিংবা স্থানীয় চায়ের দোকানে কাজ করে কলেজে ভর্তি হয়ে যেতেন। কলেজের ভর্তি হওয়ার পর এক সুন্দরী সহপাঠীর প্রেমে হাবুডুবু খেতেন। কিন্তু মানি ব্যাগের ওজন হালকা হওয়ার কারণে কোন দিন প্রস্তাব দিতে সাহস পেতেন না। আর যদি সাহস করে প্রস্তাব দিয়েও দিতেন তাহলে ‘ফহিন্নির পোলার আবার ভালোবাসা!” এই বলে প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়া হতো।

৭। ভালোবাসার মানুষ থেকে প্রতাক্ষাত হয়ে মনে মনে মেয়েদের কে ঘৃনা করতেন। এদিক দিয়ে কলেজ শেষ করে ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার জন্য টেনশনে তার ঘুম আসতো না। এক বন্ধুর কাছ থেকে পরীক্ষার আগের রাত প্রশ্ন পেয়ে নামকরা ভার্সিটিতে চাঞ্চ পেতেন। তারপর ঢাকাতে মেস বাড়িতে আশ্রয় লাভ করে টিউশনি করে লেখাপড়া চালিয়ে নিতেন। একদা এক বড় লোকের মেয়েকে টিউশনী করতে গিয়ে তার সাথে নতুনভাবে প্রেমে জড়িয়ে পড়তেন। অত:পর বিয়ে করে নিজের একটি স্টাটাস বজায় রেখে শ্বশুড়ের টাকায় বিদেশে পাড়ি জমাতেন একটি ডিগ্রি আনার জন্য। বিদেশ থেকে ফিরে এসে দেশের একটি নামকরা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা ও গবেষণায় আত্ম নিয়োগ করতেন। সেখানে সহকর্মীদের নিয়ে গবেষণায় ভালো সাফল্য পেতেন । কিছুদিন পর তিনি নতুন এক রোগেও আক্রান্ত হয়ে পড়তেন।

৮। তার শরীলে মোটর নিউরন রোগের একটি ধরন অ্যামিওট্রপিক লেটারেল স্কেলরোসিসে (এএলএস) উপস্থিতি দেখো দিলে তিনি চিৎিসায় ভালো হতে পারতেন না।

৯। ইতিমধ্যে ভালবেসে বিবাহ করা বউ তাকে ত্যাগ করে অন্য জনকে নিয়ে ঘর বাধা শুরু দিত। ফলে তিনি এক প্রকার বাধ্য হয়ে বাবা-মায়ের কাছে চলে আসতেন। তখন বাবা মা মনে করতেন, তাকে বদ জীনে আছর করেছে। সুতরাং তাকে ফকির-কবিরাজের নিকট নিয়ে যেতে হবে। সেখানে তার তাবিজ, কবজ, পানিপড়া, হু-হা চলত। ফলাফলা: লাভের কিছুই হতো না, বরংঞ্চ দরিদ্র পিতার একগুচ্ছ টাকা নষ্ট।

১০। কবিরাজ দেখানোর পরেও তার কোন উন্নতি না হওয়ার কারণে প্রথমে গ্রাম্য ডাক্তার, তার পর থানা হাসপাতাল, সেখান থেকে জেলা হাসপাতালে ডাক্তার দেখানো হতো। ডাক্তার দুই মিনিটে রোগী দেখে কিছু মুখস্থ ঔষুধ লিখে বিদায় করে দিতেন। আর কোন দিন হয়ত তিনি ভালো হতে পারতেন না। তিনি মরে যেতেন। আর যদি কোন কারণে বেঁচে যেতেন-

১১। তার বাবা প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্ধ সরকারী তহবিলের সাহায্য পাওয়ার জন্য স্থানীয় মেম্বার-চেয়ারম্যানের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াতেন। তিনি যদি চেয়ারম্যানের আস্থাভাজন হতেন তাহলে তার জন্য সহায়তা পাওয়া সম্ভব হতো।

১২। তার বাবা মা যদি বিম্পির সাপোর্টার হতো তাহলে আওয়ামী আমলে তার সাহায্য পাওয়া এক প্রকার অনিশ্চিত হয়ে যেত, আবার তার বাবা-মা যদি আওয়ামী হতো তাহলে বিম্পির আমলে তার সাহায্য পাওয়ার কোন গ্যারান্টি থাকতো না।

১৩। তারপর কিছু দিন বাড়িতে কষ্টে থাকতেন। বাবা-মায়ের আদর যত্ম পেলেও পারিপার্শ্বিক পরিবেশ থেকে অবহেলার স্বীকার হতেন। বাবা-মা যদি একেবারে আর্থিক নিম্নস্তরে অবস্থান করতেন তাহলে তাকে ভিক্ষাবৃত্তির কাজে লাগিয়ে দিত।

১৪। হয়ত তিনি সারা জীবন ভিক্ষাবৃতি করে কাটিয়ে দিতেন। তার জন্য দেশীয় ওয়ার্কসপে একটি হুইল চেয়ারের আদলে ভিক্ষাবৃত্তির জন্য চেয়ার বানানো হতো। সেটি ঠেলা দেয়ার জন্য আরেকজন লোক থাকতো। এভাবে দুইজন মানুষের কর্ম সংস্থান হয়ে যেত। সেটিতে বসে বাংলাদেশি স্টিফিং হকিং ভিক্ষা করতেন। মাঝেমধ্যে মুখে আওড়াতেন, আল্লাহর ওয়াস্তে দান করেন। এক টাকা দান করিলে সত্তুর টাকার ছোয়াব পাওয়া যাবে।

১৫। তার বাবা-মা যদি একটু চালাক প্রকৃতির হতেন, তাহলে তাকে নিয়ে আজবগুজি কল্প-কাহিনী ছড়িয়ে দিতেন। ফলে লোকে তার নিকট আসত আসমানী-জমিনী, হাওয়াই বালামছিবত থেকে মুক্তি পেতে। এই সুযোগে তার বাবা-মা রাতারাতি টাকা উপর্জন করে বড় লোক হয়ে যেত। এবং তার মরণের পর কবরের উপর বিখ্যাত কোন মাজার গড়ে উঠলেও আশ্চার্য হওয়া কিছু থাকতো না।

১৬। তার জীবনে হয়ত জৈবিক চাহিদা মিটানোর জন্য ২য় কোন স্ত্রী জুটতো না।

১৭। তার ভাগ্য যদি সু-প্রসন্ন হতো, তাহলে প্রথমে কোন স্থানীয় পত্রিকা তাকে নিয়ে একটি রিপোর্ট করত এবং সেখানে চিকিৎসার ব্যয় মিটানোর জন্য সাহায্যের আবেদন করা হতো। সে খবর আবার সোশ্যাল মিডিয়া ছড়িয়ে যেত। উপরে ক্যাপশন লেখা থাকতো ‘কেউ আমিন না লিখে যাবেন না’! মানুষ মুক্ত হস্তে আমিন লিখতো। আর যদি কপাল ভালো হতো তাহলে উক্ত খবর পড়ে কোন স-হৃদয়বান ব্যক্তি তাকে চিকিৎসা করালেও করাতে পারতো।

১৮। সর্বশেষ তিনি যদি নিজের ঐকান্তিক চেষ্টায় ভালো কিছু করার সক্ষমতা অর্জন কিংবা কর্ম করে খেতে পারতেন তাহলে বড়জোড় হানিফ সংকেতের ইত্যাদিতে তাকে নিয়ে প্রতিবেদন দেখানো হতো। আমারা তা দেখে দু' হাতে করতালি দিতাম। কেয়া কসমেটিস এর সৌজনে তিনি পঁঞ্চাশ হাজার টাকা পেয়ে যেতেন। এইতো আমাদের সোনার বাংলাদেশ!

পরিশেষে, আমাদের দেশে সমস্যা আছে। সম্ভাবনাও আছে। আশা করি একদিন স্টিফিং হকিং এর চেয়ে বড় মাপের কোন বিজ্ঞানী আমরা পাব। তার আগে আমাদের রাজনৈতিক পরিবেশ ঠিক করতে হবে। দেশের অন্যায়-অনাচার বন্ধ করতে হবে। সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরী করে মেধার বিকাশিত করার সুযোগ দিতে হবে।

সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১৫
১৬টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দেশনায়ক তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করার নেপথ্যে  

লিখেছেন এম টি উল্লাহ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৮


আগেই বলেছি ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং আওয়ামীলীগের যবনায় জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পৌনে একশ মামলা হলেও মূলত অভিযোগ দুইটি। প্রথমত, ওই সময়ে এই প্রজন্মের নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল দেশনায়ক তারেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পের বিজয়, বিশ্ব রাজনীতি এবং বাংলাদেশ প্রসংগ

লিখেছেন সরলপাঠ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১

ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশে বা দেশের বাহিরে যে সব বাংলাদশীরা উল্লাস করছেন বা কমলার হেরে যাওয়াতে যারা মিম বানাচ্ছেন, তারাই বিগত দিনের বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টের সহযোগী। তারা আশায় আছেন ট্রাম্প তাদের ফ্যাসিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠেলার নাম বাবাজী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩১

এক গ্রামীণ কৃষক জমিদার বাড়িতে খাজনা দিতে যাবে। লোকটি ছিলো ঠোটকাটা যখন তখন বেফাস কথা বা অপ্রিয় বাক্য উচ্চারণ করে ক্যাচাল বাধিয়ে ফেলতে সে ছিলো মহাউস্তাদ। এ জন্য তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×