সিলেটে ছুরি/চাপাতির ঝলকে জাফর ইকবাল স্যার আলোকিত হয়েছেন। এটা বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়। ছুরি/চাপাতির ধার প্রতিনিয়ত বাংলাদেশে চলে। প্রতিনিয়ত ছুরির ঝিলিকে অনেকে মায়ের বুক খালি হচ্ছে। সামনে যে হবে না তার কোন গ্যারান্টি নেই। কথা সেইটা না কথা হলো জাফর স্যারের উপর আক্রমণ হওয়ার কারণে আমরা পাব্লিকরা কিছু দিন ছুরিময় মিডিয়া দেখতে পাবো। স্বাধীনতার পর এইটা জাতির জন্য বিশাল অগ্রগতি!
প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক ও সোশ্যাল মিডিয়াতে কেউ কেউ স্যারের আক্রমণ নিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন। অনেকে বলছেন, মানুষের ভিন্নমত থাকতেই পারে, তাই বলে ছুরি দিয়ে আক্রমণ করতে হবে! হামলাকারীদের বিচার চাই"। তারা ভাল বলেছেন। ভিন্নমতের কারণে ছুরি দিয়ে আক্রমণ একটি শাস্তি যোগ্য জঘন্য অপরাধ। তার উপযুক্ত শাস্তিই কাম্য। এখন কথা হলো ভিন্নমত দমন, হামলা, নির্যাতন বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়। প্রতিদিন বাংলাদেশে বিরোধী দলীয় নেতা কর্মীদের ভিন্নমতের কারণে বিভিন্নভাবে ধমিয়ে রাখা হচ্ছে, হামলা, মামলা করা হচ্ছে। এখন যারা ভিন্নমত ভিন্নমত করছেন তারা তখন দাঁতে দাত কিলিয়ে হাসতেন। সাম্নেও হাসবেন। আমাদের মনে রাখতে হবে, এরা কথিত চেতনাজীবী,
আর তারা যা বলেন কিংবা করেন তা হলো চেতনাবাজী। এরা একচোখা, নিজেদেরটা ভালোভাবে দেখতে পায়, কিন্তু বাকীদের বেলায় বেজায় অন্ধ! এখন নিজেদের পাছায় ঘা লেগেছে তাই ভিন্নমত ভিন্নমত আহাজারি করে বাতাস ভারী করছেন। পাব্লিক বুঝে, "এইগুলো এডিটিং করা যায় ভাই!"
জাফর স্যার রাষ্ট্রের কোন সাধারণ ব্যক্তি নয় যে, তার হামলাকারীদের আলাদাভাবে বিচার চাইতে হবে! আর যদি তার হাম্লাকারীদের আলাদাভাবে বিচার চাইতে হয় তাহলে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্হা হচ্ছে বড় একটা প্রশ্ন (?) ।
হামলা হওয়ার কারণে স্যারের প্রচারণা শত গুণ বেড়ে যাবে নিশ্চিত। তাকে এখন রিক্সাওয়ালা ফেসবুক ইউজারাও চিনতে পারবে! কপালে শনির দশার এটি একটি ভালো দিক। হয়ত টিভিতে নিউজ প্রচার হওয়ার কারণে অজোপাড়াগায়ের কোন এক চায়ের দোকানে একজন খেটে খাওয়া মানুষ আরেকজন খেটে খাওয়া মানুষ কে বলবে,
-আম্বিয়ার বাপ, এই জাফর স্যার আবার কেটা? তখন আম্বিয়ার বাপ প্রতি উত্তরে বলবে,
- খবরের আপায় তো কইল বৈজ্ঞানিক কল্প- কাহিনী লেখক।
- ও. ও তাই, আমিতো ভাবছিলাম হেত্যায় আবার বিরাট কিছুর আবিষ্কার করছে কিনা। এই রকম কল্প-কাহিনী বাপ দাদার থেকে বহুত হুনছি। এখন চ্যানেলটা পাল্টাতে কও। দেখি কোথাও চালের দাম কমার নিউজ আছে কিনা।
আমরা সাধারণ পাব্লিক অন্যের বিপদের সময় লাফাই। সহ মর্মিতা জানাই। বিচার চাই। যা ভালো দিক। কিন্তু আমরা যারা এই সমস্ত রাষ্ট্রীয় বড় বড় ব্যক্তিদের পাশে দাড়াই তারা কখনো আমাদের বিপদে দাড়ায়িছে কিনা একবার কি ভেবে দেখেছেন? তারা কি কখনো, ক্ষমতার দাপট কিংবা টাকার কারণে যে সমস্ত বাবা মেয়ের ধর্ষণের বিচারের জন্য সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত যেতে পারেনা তাদের সুপ্রিমকোর্ট পর্যন্ত যাওয়ার পথ দেখিয়েছেন কিনা? যারা নির্যাতনের পর থানায় গিয়ে কর্তব্যরত পুলিশ অফিসার কে উৎকোচ না দেওয়ার কারণে মামলা রুজু করতে দীর্ঘ সময় কেন নিয়েছে তার প্রশ্ন করছেন কিনা? ঘরের ধান/পাট/মরিচ অথবা জমি বিক্রি করে তদন্তকারী অফিসার কে টাকা দিয়ে সঠিক তদন্তের রিপোর্ট কেন আনতে হবে সে সম্পর্কে কোন দিন কথা বলছেনা কিনা? অথবা পাশের বাড়ির ছেলেটি বিরোধী দল করার কারণে কেন হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে গেল তার সম্পর্কে কোন খোঁজ খবর নিয়েছেন কিনা? মুক্তিযুদ্ধের এত বছর পর কেন আমাদের দেশ থেকে দাসী বান্দি বিদেশে রপ্তানি করতে হবে সে সম্পর্কে রাষ্ট্র কে কোন দিন প্রশ্ন করছেন কিনা? মানুষ কেন বেলা-অবেলা উপোষ থাকে, সে কথা বলেছেন কিনা দেখতে হবে।
যদি এই সম্পর্কে কোন পদক্ষেপ না নিয়ে থাকেন, যদি কোন কথা না বলে থাকেন তাহলে তাদের নিয়ে সাধারণের মাতামাতির কিছু নেই। কারণ জাফর স্যারেরা মুরগের বাচ্ছা নয় যে, চিলে থাপা মেরে নিয়ে গেলে তার হিসাব তার মা কিছুক্ষণ পর রাখতে পারবেনা।
আশা করি স্যারের বিচার নিশ্চিত করার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের বিচার পাওয়ার দ্বার খুলে যাবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০১৮ রাত ১১:৫৯