আমি জানি হয়ত কিছু দিনের মধ্যে চলে যাবো। এই চলে যাওয়ার পর সবচেয়ে ব্যথিত কে হবেন? আর সবচেয়ে খুশিই বা কে হতে পারেন?
যারা ব্যথিত হবেন তাদের তালিকায় বাবা-মা, ছেলে সন্তান বা পরিবারের অন্য সদস্যরা থাকবেন এটা নিশ্চিত। কিন্তু খুশির তালিকায় কারা থাকতে পারেন? এই তালিকায় উপরের দিকে থাকবে আমার একমাত্র নিকাহ করা বউ সেলিনা!
কিন্তু কেন?
আমার সাথে বিয়েতে তার মত ছিলোনা। তার মা-বাবা তাকে এক প্রকার জোর করে আমার সাথে বিয়ে দিয়েছন। বিয়ের আগে সেলিনা অন্য আরেকটি ছেলের সাথে প্রেমাসক্ত ছিল। কিন্তু ছেলেদের আর্থিক অবস্হা সেলিনাদের তুলনায় তত একটা ভালো ছিল না। ছেলেটি শিক্ষিত বেকার হওয়ার কারণে সেলিনাদের পরিবার তাদের সম্পর্ক মেনে নিতে পারিনি। অধিকাংশ বাবা-মা চায় মেয়েকে ফাইনান্সি সুখি দেখতে, সেলিনাকেও দেখতে চেয়েছেন, তাই আমার সাথে বিয়ে দিয়ে কিছুটা দায়মুক্তি পেয়েছেন। আমি তাকে সাধ্যের মধ্যে রাণীর হালে রেখেছি। কিন্তু সে কি আমাকে দু'দন্ড মানুষিক সুখ দিতে পেরেছে? অবশ্যি না। সে আমার সাথে যন্ত্রের মত আচরণ করে। স্বামী স্ত্রীর দৈহিক মিলনের তৃপ্তি ক্ষণিকের। এই তৃপ্তি ত' হোটেলের পতিতারাও দিতে পারে! এই জন্য আমি তাকে বহু বার স্ব- প্রণোদিত হয়ে মুক্ত করে দিতে চেয়েছি, কিন্তু সে কি জন্যে আমার কাছে পরে আছে কে জানে! হয়ত তার বাবা-মায়ের ইজ্জতের দিকে তাকিয়ে, নয়ত আমার মৃত্যু নিশ্চিত হলে শেষ হাসি হাসার জন্য।
আমার মৃত্যু হলে খুশির তালিকায় আরেকজন থাকবে।
আমার সাবেক প্রেমিকা। আমি যখন শিক্ষিত বেকার ছিলাম, তখন এক সাথে ঘর সংসার করব বলে দিনের পর দিন তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করেছি। কাম বাসনা পূ্র্ণ করেছি, যখন রিপুর ইচ্ছে হয়েছে।
আমার যখন ভালো চাকুরী হলো তখন আমি তাকে জীবন সঙ্গিনীরর মর্যাদা দিতে পারিনি শুধু পরিবারিক কারণে! কারণ আমার প্রেমিকার পারিবারিক স্টাটাস খুবই নিচু মানের ছিল। এই পরিবারে আত্মীয় করতে বাবা-মা একে বারেই নাখোশ ছিলেন। আবার আমিও কি এক আশ্চর্য কারণে খুব সহজে তাকে ভুলে যেতে পেরিছি। হয়ত টাকা এবং পরিবার আমার ক্ষেত্রে প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে। কিন্তু রেশমার মনের অবস্হা বুঝার মত মন সে সময় আমার ছিলনা। আমি নিষ্ঠুর পাষাণ হয়ে গিয়েছি । আমার বিয়ের আগে সর্বশেষ যেদিন তার সাথে দেখা হয়েছে সেদিন আমার গলায় ধরে কিযে কান্না। এই কান্না কেঁদে ছিল আমার বিয়ে অন্য মেয়েদের সাথে হবে বলে।
মেয়েদের কে এরকম অসহায়ত্ব প্রকাশ করতে আমি কখনো দেখিনি।
হয়ত রেশমা আমাকে অভিশাপ দিয়েছে, সে অভিশাপের ফল এখন হারে হারে ভোগ করছি।
আমার মৃত্যুর সংবাদ তার কাছে পৌছালে সেকি স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলবে?
আরেকজন খুশির তালিকায় থাকতে পারেন, আমার পাশের বাড়ির আক্কাস ভাই। তার ঘরের বৌ দিনের পর দিন পাশের গ্রামের হানিফের সাথে দীর্ঘ পরকিয়া করেছ। বিষয়টি আমি জানার পরেও আক্কাস ভাই কে কোন দিন বলিনি। বল্লে আক্কাস ভাই হয়ত বিশ্বাস করতেন না! আক্কাস ভাই প্রবাসে থাকতেন। ভালো টাকাও কামিয়েছেন। সে টাকা দিয়ে ঢাকাতে ফ্লাট, গ্রামে জায়গা জমি কিনে বউয়ের নামে রেজিষ্ট্রি করেছেন। আদরের বউ সময় বুঝে গয়নাগাটি এবং নগদ টাকা সহ পরকিয়াসক্ত হানিফের সাথে ভেগে গেছে। খবর শুনে আক্কাস ভাই দেশে ফিরে এখন পাগল প্রায়। সে যখন জানতে পারল, আমি পররকিয়ার বিষয়টি জেনেও তাকে বলিনি, তখম সে আমার প্রতি কি যে কষ্ট পেয়েছিলেন তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবেনা।
এই আমি, আমার জন্য কতগুলো সংসার অসুখী! আচ্ছা আমি কি নিজে সুখে আছি?
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ৮:২৬