বাঙালি এক হলে মহা বিপ্লব ঘটাতে পারে, একটি নতুন দেশ সৃষ্টি করতে পারে, জাতিকে নতুন করে বিশ্ব দরবারে পরিচিত করতে পারে, যার সাক্ষী ১৯৭১ সাল, যা প্রত্যক্ষ করেছে সারা বিশ্ব। আমরা কথায় কথায় বলি, আমাদের সবার এক থাকতে হবে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কেউ কি বাঙালি জাতিকে এক করতে পেরেছেন?
বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালে জাতির অধিকাংশ মানুষ কে এক ছাতায় এক কাতারে দাড় করাতে পেরেছিলেন। আবার বঙ্গবন্ধু মরার পর জাতি বহুভাগে বিভক্ত হয়ে এখন হানাহানিতে লিপ্ত রয়েছে। জাতির এই বিভক্তি হওয়ার ফলে যা লাভ হয়েছে তার ষোল আনা আওয়ামীলীগ ঘরে তুলেছে! অন্যরা যে যেভাবে পেরেছেন সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন।
আওয়ামীলীগ এবং বঙ্গবন্ধু যদিও একে অপরের সাথে সম্পর্কিত কিন্তু ব্যাপক অর্থে উভয়েই আলাদা প্যাটার্ন বহন করে।৭৫ পরবর্তী আওয়ামীলীগ নেতারা বঙ্গবন্ধুর গায়ে দলীয় ট্যাগ লাগাতে উৎসাহবোধ করেছেন অথচ তাকে যদি দলীয়করণ না করে দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দিতেন এবং সে অনুযায়ী ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতেন তাহলে আজ বঙ্গুবন্ধু কে নিয়ে দলীয় বিভাজনের রেখা টানা সম্ভব হত না বলে আমি বিশ্বাস করি।
আচ্ছা এই দেশে আওয়ামীলীগের বাহিরে অন্য কোন দল বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, স্লোগান ধারণ করে কি? উত্তর যদি না হয় তাহলে এই বিভাজন সৃষ্টির পেছনে আওয়ামীলীগের দায়ভায় কোন অংশে কম নয়।
অনেকে মনে হতে পারে আওয়ামীলীগ দলটি বেঁচে না থাকলে বঙ্গবন্ধুর নামে যে 'জিগির' (জয়গান) চালু আছে তা আর চালু থাকত না!
এই ধারণা সঠিক নয়। ইতিহাসের যারা নায়ক তাদের কেউ আড়াল করতে পারেনা। এখানে আওয়ামীলীগ কে টেনে আনার অর্থ হলো আওয়ামীলীগ কর্তৃক বঙ্গবন্ধুর ভুমিকা বা প্রভাব কে দলীয়ভাবে সীমিতকরণের কারণে। আওয়ামীলীগ হয়ত বঙ্গবন্ধুর নামে দলীয় জয়গান (জিগির) চালু রেখেছে দলের স্বার্থের জন্য, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আদিষ্ট হওয়ার জন্য। কিন্তু তারা যদি ক্ষমতার বাহিরে যায় তখন এই জিগিরের কি হবে? তখন রাষ্ট্রীয়ভাবে জাতীয় শোক দিবস পালিত হবে কিংবা জন্ম দিবস (শিশু দিবস)? উত্তর অবশ্যি না।
কেন হবেনা?
কারণ ক্ষমতার পালা বদলের কারণে রাষ্ট্রের সুর চেঞ্জ হয়ে যায়! এবং বঙ্গবন্ধু কে নিয়ে রাষ্ট্রীয় কর্রমসূচিতে ভাটা পড়ে। এর অবশ্যি কারণ আছে, আওয়ামীলীগ বঙ্গবন্ধু কে জাতীয় করণ না করে দলীয়করণ করে বড় ধরনের বেনিফিশায়ী হচ্ছে। অন্যরা যেহেতু সেটি পারছেনা তাই তারা করতে যাবে কেন! তাহলে আওয়ামীলীগের এই দলীয় জয়গানের কি দরকার আছে? আর দলীয় জয়য়গান করতে গিয়ে অন্য কে কেন দূরে ঠেলে দিচ্ছে?
আওয়ামীলীগ বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দল পরিচালনা করুক তাতে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু যারা আওয়ামীলীগ করেনা তাদের কে রাজাকার, স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি বলাতে আমাদের আপত্তি আছে। বা এইরুপ বলা কতটুকু যুক্তিযুক্ত? আমরা জানি, দল একটি চলমান প্রক্রিয়া। তার সাফল্য নির্ভর করে কি ধরণের কর্ম কান্ডের উপর দল পরিচালিত হচ্ছে এবং জনগণ সেটা কিভাবে নিচ্ছে তার উপর । কিন্তু ব্যক্তির আদর্শের ক্ষেত্রে এরুপ দায়দায়িত্ব নেই। ব্যক্তি মারা গেলে তার আদর্শ বিমূর্ত রুপ ধারণ করে।
আচ্ছা, ১৯৭১ সালে কত পারসেন্ট মানুষ রাজাকার ছিল? বড় জোড় ১ পারসেন্ট। এখন কত পারসেন্ট মানুষ আওয়ামীলীগ করে, বঙ্গুবন্ধুর নামে দলীয় চেতনা ধারণ করে, বড় জোড় ৩০-৩৫ পারসেন্ট (অনুমান)। আওয়ামীলীগের দৃষ্টিতে বাকী মানুষগুলো কি রাজাকার!
আর রাজাকার হলে একাত্তরের পর এত রাজাকারের সৃষ্টি হয় কি করে?
রাজাকার একটি খাস শব্দ, ইহা ১৯৭১ সালে যারা গুম, খুন, হত্যা, রাহাজানি, ধর্ষণ ইত্যাদি করেছে বা সমর্থন করেছে তাদের সাথে সম্পর্কিত। কিন্তু আওয়ামী যে অর্থে রাজাকার শব্দ ব্যবহার করে তা খাস নয়, বারোয়ারি!
একাত্তর সালের রাজাকার খুব নগন্য সংখ্যক বেঁচে থাকতে পারে। আর থাকলেও তারা আত্মগোপনে আছে। এই রাজাকারদের বিপরীতে দেশে একটি শ্রেণির খুবই দাপট পরিলক্ষিত হচ্ছে, তারা হচ্ছে 'দালাল'! এই দালালরা এক পারসেন্ট এর কম কিন্তু তারা বহু শ্রেনিতে বিভক্ত। দালালদের আবার একেক জনের একেক ফাদার আছে, এই ফাদারদের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে তারা দেশের, দেশের মানুষের এবং কি তাদের কর্মকান্ড খোদ বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে যায়। তারা (দালালরা) যতটা না আওয়ামীলীগ জন্য ক্ষতিকর তার চেয়ে বেশি ক্ষতিকর দেশ, জাতি এবং বঙ্গবন্ধুরর জন্য।
তবে এখানে লক্ষনীয় বিষয় হলো, একাত্তরে রাজাকারেরা যেখানে ধর্ম কচলাত সেখানে বর্তমান দাললরা বিভিন্ন 'চেতনা', আদর্শ, ভুজংভাজাং, হম্বিতম্বা, কচলায়।
এই দালালদের কতক আবার সুচীল(সুশীল) ভেক ধারণ করে আছে। এদের প্রচারণার গ্রাফ মাঝে মাঝে পরিবর্তন হয়। যখন যে দল ক্ষমতায় যায় তখন সে দলের সুচিলরা মিডিয়াতে কান জ্বালাপোড়া করে। এই সমস্ত সুচিলদের দৌরাত্বে সাধারণ মানুষদের ত্রাহিত্রাহি অবস্হা। আমি হলফ করে বলতে পারি, বাংলাদেশে যদি বাস দু্র্ঘটনা কবলিত হয়ে একজন মানুষ মারা যায়, সেখানে হাজার দুয়েক মানুষ জড়ো হয় কিন্তু এই সমস্ত ভেকধারী সুচিলরা রাস্তায় মড়ে পড়ে থাকলেও একমাত্র মিডিয়া ছাড়া সাধারণ মানুষ তাদের দেখে দৌড়ে পালাবে।
পরিশেষে, তোরা সব দালালরা আগে মানুষ হও, মানুষ হয়ে একক হও। কেননা তোদের বাহিরে আরেকটি শ্রেণি আছে, তারা হলো সর্ব সাধারণ শ্রেণি। তোরা মানুষ হলে এই শ্রেণীরা একটু শান্তিতে থাকতে পারবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৪:০৮