বৃহস্পতিবার ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট মহান জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী হুজুরে জনাব শাহেন শাহ মালজাদা। আর বাজেটে অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, বছরের যেকোনো সময় ব্যাংক হিসাবে ১ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা জমা দিলে বা তুললে ৮০০ টাকা আবগারি শুল্ক কেটে রাখা হবে। অন্যান্য পরিমাণ ত’ থাকছেই। আসুন জেনে নিই কি কি পদ্ধতি ব্যবহার করলে আবগারি শুল্ক থেকে বাঁচা যাবেঃ-
০১।
মাটির ব্যাংকঃ ছোটবেলায় অনেকের মাটির ব্যাংকে টাকা পয়সা জমানোর স্বভাব ছিল। সোনার চামচ মুখে দিয়ে যারা জন্ম গ্রহন করেছে তাদের কথা আলাদা। আবার প্রয়োজন কিংবা তুচ্ছ কারণে অনেক সময় এই ব্যাংক ভেঙ্গে ফেলা হত। পিঠাপিঠি ভাইবোন থাকলে এই সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করত। বর্তমানে যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায় তারা এটি ব্যবহার করতে পারেন। যখন অভাবের তাড়না
আসবে তখন ভাঙ্গতেও পারবেন অনায়াসে। অর্থাৎ ব্যবহারে ঝামেলা নেই।
২।
কলসিঃ আমরা যারা ৬০ থেকে ৯০ দশকে শৈশব কাল কাটিয়েছি তাদের কাছে গুপ্ত ধনের কালসি একটি পরিচিত নাম। নানা-নানি কিংবা দাদা-দাদি থেকে শুরু করে আগের দিনের ধনী ব্যক্তিরা কলসির ভিতরে গুপ্তধন রাখতেন বলে গাল-গল্প শুনতাম। আমরা এই গুপ্তধনের কলসি স্বপ্নে হস্তগত করে শিহরিত হতাম। কিন্তু মাল সাহেবের জমানায় পোলাপাইন এই সমস্ত গাল-গল্প কে এখন রুপকথা ভাবে। তাদের চোখ থাকে মোবাইল কিংবা টিভির পড় পর্দায় HD ভিডিওতে। তাই বলে কি এই জিনিষের
পূর্বেকার ব্যবহার বন্ধ হয়ে যাবে? প্রশ্নই আসে না। এখন যারা গ্রাম্য মধ্যবিত্ত শ্রেণির তারা অনায়াসে এই জিনিষটার পূর্বেরকার ব্যবহার শুরু করতে পারেন। বিফলে মূল্য ফেরত।
৩।
হাড়িঃ প্রাচীন কালে মূলত হাড়ি ব্যবহার হত দুটি কাজে, এক. রান্নাবান্না, দুই. মোহর, দিরহাম, সোনা রুপার পঁয়সা রাখার জন্য। সাধারণত যাদের সামর্থ বেশি ছিল তারা পিতলের হাড়ি ব্যবহার করতেন। অতীত কালে চোর কিংবা ডাকাত অথবা মগ জলদস্যুদের ভয়ে মানুষ কাঁচা মোহর ভরে নির্দিষ্ট জায়গায় মাটির ভিতর লুকিয়ে রাখতেন। যুগের পরিবর্তনের কারণে অপরাধের ধরণ পাল্টিয়েছে, সে সাথে ব্যাংকিং ব্যবস্থা আসার কারণে মানুষ কিছুটা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেও ‘মাল যুগে’ প্রবেশের কারণে এর সঠিক ব্যবহার আরেক বার প্রমাণ করার সুযোগ আইছে। দেশের মোটামুটি ধনী কিন্তু কিপটু টাইপের লোকেরা এই জিনিষ ব্যবহার করতে পারেন।
৪।
সিন্দুকঃ বর্তমানে যে লকার দেখা যায় তার আদি পিতা হলো সিন্দুক। সিন্দুকের ব্যবহার এখনো বাংলাদেশ থেকে একেবারে বিলুপ্ত হয়ে যায়নি। কিছু কিছু খান্দানি পরিবারে যত্নে কিংবা অবহেলায় ঘরের কোনায় তাদের উপস্থিতি আছে। প্রাচীন কালে এতে তালা এবং চাবি ব্যবহারের কারণে মধ্য উচ্চ বিত্তদের মাঝে এর ব্যবহার ব্যাপক আকারে বৃদ্ধি পেয়েছিল। দেশের মধ্য উচ্চ বিত্তরা একে আবার চালু করতে পারেন মহাসমারোহে।
৫।
মটকাঃ মাটি থেকে তৈরি করা একপ্রকার বিশালাকৃতির পাত্র, যা দেখতে অনেকটা কলসের আদি পিতা মনে হতে পারে। সাধারণত এজাতীয় পাত্রে চাল, কিংবা ভোগ্য পণ্য সংরক্ষণ করা হয়। গ্রামের ছেলেপুলেরা পলন্তিস পলান্তি খেলার সময় এতে লুকিয়ে থাকে। বর্তমানে যারা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে তাদের জন্য এপাত্র বিশাল কাজ দিবে। তবে এতে হাল্কা রিস্ক আছে এবং অধিক চাপে ভেঙ্গে যেতে পারে। তা থেকে উত্তরণের জন্য টাকা কে ডলারে কনভার্ট করতে হবে।
৬।
পাতিলঃ সত্য যুগে নাকি মুরুব্বিরা দেখতেন, ঐতিহাসিক কোন পুকুর থেকে অলৌকিক কোন বড় পাতিল/ডেক ডাঙ্গায় উঠে আসত। এবং সেগুলো নাকি নিজে নিজে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় চলাচল করত। এলাকায় বড় ধরণের বিবাহ কিংবা মেজবানি অনুষ্ঠান হলে সে পাতিল দ্বারা রান্না বান্না চলত, তবে শর্ত থাকত কোনরুপ ক্ষতি সাধন কিংবা লুকিয়ে রাখা যাবে না, তাহলে অমঙ্গল হওয়ার সম্ভাবনা থাকত এবং পাতিল উঠে আসা বন্ধ হয়ে যেত। সত্য যুগ গত হয়েছে কয়েক শতাব্দি ধরে, কিন্তু মানুষের তৈরি পাতিল এখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ডেকারেশন দোকান থেকে মানুষের বাড়িতে। মাল সাহেবের আমলে আবগারি কর থেকে বাঁচতে হলে পাতিল কিংবা ডেক একটি অব্যর্থ ব্যবহারিক জিনিষ হতে পারে। শহুরে মধ্য উচ্চ বিত্ত শ্রেণির লোকের ইহা ব্যবহার করে ফল পেতে পারেন।
৭।
ড্রাম: মূলত তেল কিংবা দ্যাহ পদার্থ রাখার জন্য ব্যবহার করা হলেও সোনা, রুপা, টাকা পয়সা রাখতে পারেন নির্দ্বিধায়। এটা একুশ শতকের চিন্তা ধারার ফসল। এর ভিতরে স্বর্ণের বার সারি সারি রাখতে পারেন। কিংবা টাকাকে ডলারে রুপান্তর করে বান্ডিলে বান্ডিলে সাজিয়ে রাখুন। দুদক টাকার সন্ধান পাওয়া দূরে থাক, তেলাপোকাও আপনার টাকা খুঁজে পাবে না! এটা উচ্চ বর্গীয় শ্রেণির লোকের জন্য জায়েজ।
৮।
বাংকারঃ এটি আম পাব্লিক, ধনী কিংবা শহুরে বাড়িওয়াদের জন্য নয়, ইহা সালমান এফ. রহমান, ফালু, কাউছ মিয়াদের জন্য প্রযোজ্য। সুইস ব্যাংক যখন তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে তখন তারা বাংকার পদ্ধতি অনায়াসে ব্যবহার করতে পারবে। ব্যাংকার যুদ্ধেক্ষেত্রে ব্যবহার হলেও বাংলাদেশে সুইস ব্যাংকের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। এই ধারণা ২০১৭ সালে আমার মত আইজাড়া প্যাঁচাল মার্কা পাব্লিকের মাথায় আসে। সালমান এফ. গংরা যদি ডলারগুলো এই ব্যাংকারে ভরে রাখেন তাহলে--
# কর দিতে হবে না।
# সুইস ব্যাংকের থেকে নিরাপদ, কারণ সুইস ব্যাংক খাড়া যুক্তিতে মাঝে মাঝে টাকা আটকিয়ে দেয়।
আমাদের প্রিন্স মুসার নাকি অনেকগুলো টাকা আটকিয়ে আছে।
# ব্যাংক থাকে দূরে কিন্তু আপনার হাতের নাগালের মধ্যে থাকবে।
# চেক আর জমা বইয়ের ঝামেলা নেই শুধু বাংকের চাবি হাতে থাকলেই চলবে।
এছাড়াও যদি কোন তরিকা কারো মাথায় খিজ খিজ করে তাহলে কমেন্ট করে জানান দিবেনে। জাতির উপকার হলেও হতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুন, ২০১৭ বিকাল ৫:৫৭