ভোট কেন্দ্রে গিয়ে কে কাকে ভোট দিচ্ছে এটা জানার কোন উপায় নেই। কারণ প্রকাশ্যে ব্যালট পেপার ব্যালট বাক্সে ফেলা হয় না। যদিও আওয়ামী লীগ আমলে বিভিন্ন সময়ে অনেক কেন্দ্রে বাধ্য করা হয়েছে আওয়ামী পাণ্ডাদের সামনে ব্যালট পেপার ব্যালট বাক্সে ফেলার জন্য। এই ব্যতিক্রমকে অগ্রাহ্য করলে বলা যায় যে কারও পক্ষে জানা সম্ভব না কে কাকে ভোট দিচ্ছে। যদি না ভোট দাতা নিজে প্রকাশ করে। আমাদের দেশে বহু বছর ধরে একটা ধারণা প্রচলিত যে বেশীর ভাগ হিন্দু আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়। তবে তথ্য উপাত্ত দিয়ে এটা প্রমাণ করা কঠিন। কারণটা প্রথমেই ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছি।
তবে গত কয়েক বছরে হিন্দু বা অমুসলিমদের সংগঠনগুলির বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন বক্তব্য থেকে অনুমান করা যায় যে আওয়ামী লীগের সমালোচনা তারা করলেও শেখ হাসিনার ডাকাতি ভোট ব্যবস্থাকে তারা অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছে। একটা উদাহরণ দেয়ার চেষ্টা করছি। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খৃস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাসগুপ্ত ৪ জানুয়ারী, ২০১৯ সালে বলেছিলেন (সূত্র - ঐ তারিখের যুগান্তর পত্রিকা) যে সংখ্যালঘুরা শঙ্কাহীনভাবে ভোট দিয়েছে। শুধু তাই নয় এ জন্য তারা সরকার, নির্বাচন কমিশনসহ সব রাজনৈতিক দলকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। অথচ একটা স্কুলের বাচ্চাও জানে যে ২০১৮ সালে কি ধরণের ভোট ডাকাতি হয়েছিল।
আমরা জানি বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খৃস্টান ঐক্য পরিষদে হিন্দুদের প্রভাব এবং প্রতিনিধিত্বও বেশী। কারণ এই দেশে বৌদ্ধ বা খৃস্টান ধর্মাবলম্বী মানুষের সংখ্যা কম। এই সংগঠনটিকে সাধারণ হিন্দুরা সমর্থন করে থাকে। এই ধরণের সংগঠনের নেতা যখন ২০১৮ সালের ডাকাতির নির্বাচনকে সমর্থন করে এবং সরকারকে ধন্যবাদ জানায় তখন এটা বোঝা যায় যে হিন্দু জনগোষ্ঠীর বড় অংশের এতে সায় আছে। কারণ সাধারণ হিন্দুদের বিরুদ্ধে এই সংগঠনের কথা বলার কথা না। হিন্দুদের প্রতিনিধি হিসাবে যখন রানা দাসগুপ্তের মত ধর্মীয় সংগঠনের নেতারা বলে থাকে যে শেখ হাসিনা সরকারের ভোট প্রক্রিয়ায় তারা সন্তুষ্ট। এটা থেকে কি অনুমান করা যায় না যে হিন্দুদের একটা বড় অংশের এই ডাকাতির ভোটে সমর্থন আছে। এই সংগঠন অতীতে কখনও বিএনপির সময়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচন সম্পর্কে এই ধরণের সন্তুষ্টি কি প্রকাশ করেছে? আমার ধারণা করে নাই। কারণ এই সংগঠনটা শুরু থেকেই আওয়ামী লীগ ঘেঁষা। মাঝে মাঝে আওয়ামী লীগের সমালোচনা করলেও তারা আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষে কোন দিন কথা বলেনি। অনেকটা ব্লগের সোনাগাজীর মত। উনি হাসিনার অনেক সমালোচনা বিভিন্ন সময়ে করেছেন। কিন্তু উনি পরিষ্কার ভাষায় এখনও বলে যাচ্ছেন যে তিনি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সমর্থক।
আমার ব্যক্তিগত ধারণা হল হিন্দুদের একটা অংশ আওয়ামী লীগকে বিশ্বাস করে না। তারা বোঝে যে আওয়ামী লীগ তাদের নিয়ে খেলছে। কিন্তু হিন্দুদের একটা বড় অংশ আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে থাকে। যে কারণে আওয়ামী লীগ মনে করে তাদের একটা বাধা ভোট আছে হিন্দু সমাজে। ভোট যেহেতু গোপনে হয় তাই প্রকৃত তথ্য উপাত্ত পাওয়া মুশকিল। তবে সাধারণভাবে বহু বছর থেকেই আমাদের সমাজের মুসলমানদের ধারণা যে হিন্দুদের বৃহত্তর অংশ আওয়ামী লীগকে ভোট দেয় এবং সমর্থন করে। যাহা রটে কিছু তো বটে।
নতুন ছাত্র নেতা সারজিস এই কথাটাই বলতে চেয়েছিলেন ঠাকুরগাঁয়ের হিন্দুদের সম্পর্কে। সমাজে প্রচলিত ধারণার আলোকেই উনি হিন্দুদেরকে বলতে চেয়েছেন যে আপনারা বুঝে শুনে ভোট দিয়েন। আমার মতে তার কথাটা আপত্তিকর কোন কথা না। কারণগুলি উপরে বর্ণনা করার চেষ্টা করেছি।
ভারত যে আওয়ামী লীগকে পছন্দ করে তার কারণ তারা মনে করে আওয়ামী লীগের সাথে ইসলামী দল বা জঙ্গিদের কোন সম্পর্ক নেই। এছাড়া আরেকটা কারণ হল ঐতিহ্যগতভাবে আওয়ামী লীগ দেখাতে চায় যে তারা সেকুলার (যদিও তলে তলে তারা অনেক কিছুই করে)। বাংলাদেশের হিন্দু জনগণের মনোজগতে ভারত একটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটা দোষের কিছু না। পৃথিবীতে হিন্দু প্রধান রাষ্ট্র হাতে গোনা। ১৯৭১ সালে উদ্বাস্তুদের একটা বড় অংশ ছিল হিন্দু, যাদেরকে আশ্রয় দিয়েছিল ভারত। যে কারণে ভারত যখন আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে তখন দেশের হিন্দুদের একটা বড় অংশ আওয়ামী লীগকে সমর্থন ক'রে থাকতে পারে বলে আমার মনে হয়। হিন্দুদের মধ্যে যারা রাজনীতি করে তাদের সিংহভাগ আওয়ামী লীগ করে বলে আমার মনে হয়। এগুলি দোষের কিছু না। আমার এই পোস্টের উদ্দেশ্য হল ছাত্র নেতা সারজিসের বক্তব্যের স্বপক্ষে আমার যুক্তি তুলে ধরা। সে যা বলেছে সেটার মধ্যে সত্যতা এবং যুক্তি আছে। আমি উপরে সেটা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি আওয়ামী লীগ হিন্দুদের নিয়ে খেলে এবং হিন্দুদের উপরে নির্যাতনও তারাই বেশী করেছে। হিন্দুদের উপরে হামলার বিচার তারা করে না। কিন্তু তা সত্ত্বেও ভারতের কারণে বা আরও বিভিন্ন কারণে (কিছু কারণ উপরে বলার চেষ্টা করেছি) হিন্দুদের একটা বড় অংশ আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে।
আওয়ামী লীগ করা মানেই খারাপ কাজ এমন না। তবে আওয়ামী লীগের যারা হত্যা, গুম, নির্যাতন, দুর্নীতি, লুটপাটে জড়িত তাদের শাস্তি হতে হবে। সব দলের চেয়ে আওয়ামী লীগের বাড়াবাড়ি চোখে পড়ার মত। গত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগ দলটি নিজেদেরকে একটা দানবে পরিণত করেছে। হত্যা, গুম, নির্যাতন, দুর্নীতি, লুটপাটে অতীতের যে কোন রেকর্ড তারা ভঙ্গ করেছে। জাতিসংঘ জুলাইয়ের হত্যা এবং জুলুমের তদন্ত শুরু করেছে। আশা করি ফ্যাসিস্ট হাসিনা এবং তার দোসরেরা শাস্তি পাবে। এদের শাস্তি না দিলে এরা দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালিয়েই যাবে। আওয়ামী লীগকে ভবিষ্যতে জনগণের কাছে আসতে হলে সাজা ভোগ করে এবং নাকে খত দিয়ে আসতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১:০৪