somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কিশোর কুমার দাস মুসলমান হলে বিদ্যানন্দ এতো বিপদে পড়তো না

১৮ ই এপ্রিল, ২০২৩ সকাল ১০:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিদ্যানন্দ ফাউনডেশন কঠিন সমালোচনার মধ্যে পড়েছে। গতকাল এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা কিশোর কুমার দাস এই সমালোচনা সমুহের জবাব দিয়েছেন। তবে অন্তত একটা সমালোচনার জবাব মনে হয় বাকি আছে। সেটা হল সেইন্টমারটিন দ্বীপের ময়লা আবর্জনা সংক্রান্ত। অনেকে অভিযোগ করেছে যে বিদ্যানন্দের নিজের লোকেরা বা সেচ্ছাসেবীরা নিজেরা ময়লা আবর্জনা এক জায়গায় আগে ফেলেছে তারপর নিজেরাই পরিষ্কার করেছে। এটার উপযুক্ত ব্যাখ্যা আশা করি বিদ্যানন্দের পক্ষ থেকে দেয়া হবে। আমার ধারণা ঐ প্রতিষ্ঠানের সেচ্ছাসেবিদের অতি উৎসাহের কারণে এটা ঘটে থাকতে পারে। গতকাল কিশোর কুমার দাস অন্যান্য অভিযোগের নিম্নলিখিত ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন।

১. পাহাড়ের জমির মালিকানা প্রজেক্ট শেষে মূল মালিকের কাছে ফিরে যাবে। প্রথম ছবিতে সে চুক্তিপত্রে শর্তে দেখতে পাবেন।

২. কক্সবাজারের রামুর জমিটি নগদ অর্থে তখনকার বাজার মূল্যে কেনা। যদি জমি বিক্রেতা আজও সে জমি ফেরত চান, তবে বিক্রিত মূল্য পরিশোধ করে (ডিপ্রিশিয়েশন এডজাস্ট করে) জমিটি ফেরত নিতে পারবেন। আমরা এটা নিয়ে বিক্রেতার সঙ্গে কথা বললে তিনি ফেরত নিতে রাজি হননি। এই নিয়ে তার পরিবারের একজন মিথ্যা প্রচার করে যাচ্ছে, যেটাকে পরিবারের কর্তা এড়িয়ে যেতে বলেছিলেন। দ্বিতীয় ছবিতে জমির দামের রেকর্ড পাবেন।

৩. বিদ্যানন্দের জমিগুলোর মালিকানা বিদ্যানন্দের, আমার নামে নয়। বিদ্যানন্দের পক্ষে দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন সাইন করতে পারে। তৃতীয় ছবিতে পাবেন।

৪. আমরা সব দলের মানুষকে সংযুক্ত করার চেষ্টা করেছি। বিএনপির আমির খসরু সাহেবকে আমন্ত্রণ জানানোর ছবি দেওয়া হয়েছে চতুর্থতে।

৫. বিদ্যানন্দের ব্যাংক একাউন্টের টাকা একাধিক স্বাক্ষরে উঠে এবং দেশে না থাকার জন্য আমার সাইন ব্যবহার হয় না।

৬. ফেসবুকের এক লাইভে শিখা নামে একজনকে আমার বোন দেখানো হয়েছে। শিখার পুরো নাম হচ্ছে সুলতানা জান্নাত। ধর্মপ্রাণ মুসলিম এই মেয়েটি বিদ্যানন্দের আমার প্রিয় এক স্বেচ্ছাসেবী ছিল, তবে রক্তের সম্পর্ক নেই।

৭. রূপক অর্থে নাম ব্যবহার হয় পেজের পোস্টে। মজিদ চাচা নয়, আপনি সুলতান, রহিমা কিংবা কলিম চাচা নামেও অনেক পোস্ট পাবেন। গ্রামের নামগুলো সাধারণত কমন হয় এবং বিখ্যাত মানুষের নামেই থাকে। সে নামে একবার লিখে বিপদে পড়েছিলাম (মানহানি মামলার ঝুঁকি), কারণ একই নামে একজন রাজনৈতিক নেতা ছিলেন।

৮. একই ইভেন্টের ছবি একাধিক পোস্টে দেওয়া হয়। যেমন- গরু কেনা হয়েছে, গরু প্রসেস করা হয়েছে, রান্না হচ্ছে, আহার করছেন ইত্যাদি। বিদ্যানন্দের কাছে দাতব্য কাজটি অভিযাত্রার মতো। শুধু লক্ষ্যটা মূখ্য নয়, যাত্রাপথে আপনাদের সঙ্গী করতে চাই।

৯. সীমিত রিসোর্সে প্রতিষ্ঠান চলে। এখানে খুব পেশাদার আপডেট দেওয়া সম্ভব হয় না। অনাথালয়ের দাতাদের কিছু অনুরোধ রাখতে পারিনি বলে ক্ষমা চাচ্ছি। এটা অল্প সময়েও সমাধান আমরা দেখছি না অল্প রিসোর্সের জন্য। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের স্ট্যান্ডার্ডে আমরা হয়তো যেতে পারব। কিন্তু তাঁদের মতো বিশাল এডমিন খরচের বোঝাটা আমরা নিতে চাইনি।

১০. ৯৫% বিশেষ খাবার আয়োজন স্পেসিফিক দাতার স্পন্সরে হয়। আয়োজনের আগেই শিডিউল জানানো হয় যেন তিনি উপস্থিত থাকেন। আয়োজন শেষে খাবার ছবি প্রমাণসহ পাঠানো হয়। আর যদি তাতেও বিশ্বাসযোগ্য না হয় তবে তাঁদের সিদ্ধান্ত মেনে নেব।

১১. বিদ্যানন্দ মূলত নিজেদের ফেসবুক পেজগুলোতে অনুপ্রেরণার পোস্ট শেয়ার (৩০,০০০ এর কাছাকাছি হবে) করে। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবীদের শেয়ার করা হয়ে থাকে। ৯৯.৯% শুদ্ধ হলেও কিছু অনুসারী ০.১% ভুলকে বড় করে দেখতে চাচ্ছেন। আমরা সে ভুলটাকেও শুদ্ধ করতে চাই।

বিদ্যানন্দের দশ বছরের ইতিহাসে কয়েকজন কর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে নৈতিক স্খলনের জন্য। তরুণ বয়সে তাঁদের ক্যারিয়ার নষ্ট না করতে আমরা লিগ্যাল একশনে যাই না। এই মানুষগুলো কিছু বছর পর উল্টা ব্লেইম দিতে থাকে নিজের চলে যাওয়াটা জাস্টিফাই করতে। এতেও বেশ ক্ষতিতে পড়ে আমাদের ইমেজ।

পরিশেষে বলি, ভুল থাকবেই বিদ্যানন্দের অনেক পদক্ষেপে। শুধু বলতে পারি, কাজটা শুদ্ধভাবেই করার চেষ্টা করি। ভবিষ্যতে শুদ্ধ করার সুযোগ না পেলেও আফসোস থাকবে না। মানুষের প্রতিষ্ঠান, মানুষই ভাঙবে, মানুষই গড়বে।


এছাড়া বিদ্যানন্দের প্রতিনিধি সালমান খান ইয়াসিন নীচের ভিডিওতে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেয়ার চেষ্টা করেছেন।


অনেকে বিদ্যানন্দের নিরীক্ষিত হিসাবের সুত্রে কিছু ভুল ধরার চেষ্টা করেন। যেমন পিনাকি ভট্টাচার্য বলেছেন যে বিদ্যানন্দের ২০১৮ সালের নিরীক্ষিত হিসাব অনুযায়ী মাত্র ৫০,৯১৩ টাকা বিকাশে দান এসেছে। কিন্তু এই তথ্যটা পিনাকি ভুল বলছেন। কারণ এই টাকাটা আসলে বিদ্যানন্দের বছর শেষের বিকাশ হিসাবের ব্যালেন্স। এটা সারা বছরের প্রাপ্তি না। নিরীক্ষিত হিসাবটা দেখলেই পরিষ্কার বোঝা যায়। নিরীক্ষা প্রতিবেদনে যে বিকাশ নাম্বারগুলি উল্লেখ আছে সেগুলি দাতাদের বিকাশ হিসাবের নাম্বার না বরং সেগুলি বিদ্যানন্দের বিকাশ নাম্বার। এই ব্যাপারেও পিনাকি ভুল বলেছে। সে বলেছে এগুলি দাতাদের বিকাশ নাম্বার।

দেশের বাইরে থেকে টাকা আসা নিয়েও পিনাকি প্রশ্ন করেছেন। কিন্তু আমরা জানি যে দেশের বাইরে থেকে তাদের টাকা ব্যাংকিং চ্যানেলেই আসে। তাই কোন প্রশ্ন করার সুযোগ নাই। ব্যাংক কোন অবৈধ টাকা ব্যাংকিং চ্যানেলে আসতে দেবে না এটাই স্বাভাবিক। নিরীক্ষকরা ব্যাংকের মাধ্যমে আসা বড় বড় টাকাগুলির নিরীক্ষা না করে রিপোর্ট দেয়ার কথা না।

পিনাকি প্রশ্ন করেছে ৬ থেকে সাড়ে ৬ কোটি টাকা কীভাবে আসলো সেটা নিরীক্ষিত হিসাবে নাই। কোন প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষিত হিসাবেই প্রতিটি নগদ বা ব্যাংক প্রাপ্তির বিস্তারিত থাকে না। নিরীক্ষা ফার্ম প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবগুলি এবং ক্যাশবুকের নিরীক্ষা করেই রিপোর্ট দিয়ে থাকে। নিরীক্ষকরা তার মক্কেলের প্রতিটি ব্যাংক হিসাবের বিবরণী সংগ্রহ করে তাদের ফাইলে রাখে। তাই এই ব্যাপারেও পিনাকির সন্দেহ গ্রহণযোগ্য না।

পিনাকি নিরীক্ষিত হিসাবে উল্লেখিত জমির মূল্য নিয়ে প্রশ্ন করেছে। উনি বলেছে তাদের কয়েকশো বিঘা জমির কথা শোনা যায় কিন্তু নিরীক্ষিত হিসাবে মূল্য এত কম কেন। এটার জবাবে বিদ্যানন্দের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, সব জমি তাদের মালিকানায় নেই। অনেক জমি সাময়িক সময়ের জন্য তাদেরকে ইজারা দেয়া হয়েছে স্বল্প মেয়াদি চুক্তির মাধ্যমে। আমার মনে হয় এই ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য। কারণ খুব কম পরিমান জমির প্রকৃত মালিকানা বিদ্যানন্দের নামে আছে বলে কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে।

২০১৭ সালের নিরিক্ষিত হিসাবের সুত্রে পিনাকি বলেছেন ১ টাকার খাবারের ক্ষেত্রে মাত্র ২ লাখ ৭ হাজার ৯ শ ৮ টাকা কেন ১ টাকা খাবারের জন্য প্রাপ্তি দেখানো হয়েছে। কিন্তু উনি কীভাবে নিশ্চিত হলেন যে এই টাকা ১ টাকার খাবারের জন্য প্রাপ্ত। কারণ এটা ছাড়াও আরও ২,৫২,৭৪, ১০৫ টাকা প্রাপ্তি নিরীক্ষিত হিসাবে আছে। এটার মধ্যে ১ টাকার প্রাপ্তির হিসাব থাকতে পারে। আর তাছাড়া ২ লাখ ৭ হাজার টাকা প্রাপ্তির খাতের নাম দেয়া আছে বিবিধ প্রাপ্তি হিসাবে। আমার ধারণা এই ২ লাখ ৭ হাজার টাকা অন্যান্য খাতে বিবিধ প্রাপ্তি এবং ১ টাকার খাবারের বিপরীতে পাওয়া না। এটার পুরনাঙ্গ ব্যাখ্যা পিনাকির দেয়া হিসাবে দেয়া নাই। ওয়েব সাইটে শুধু মূল পাতাগুলি দেয়া আছে। আর তাছাড়া ওরা বলেছে যে অনেক ক্ষেত্রেই কোন কোন প্রোগ্রামে (যেমন ইফতার, ঈদ ইত্যাদি) খাবারের জন্য কোন টাকাই নেয়া হয়নি। তাই নিরীক্ষা হিসাবে কোন সমস্যা আছে বলে আমার মনে হয় না। একনাবিন নামের একটা বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণীর সি এ ফার্ম নিরীক্ষা করেছে। এরা কখনও হাবিজাবি রিপোর্ট দেয় না।

আশা করি বিদ্যানন্দ সম্পর্কে ভুল ধারণা সবার দূর হয়ে যাবে। দুই একটা বিষয় এখনও তারা ব্যাখ্যা দেয়নি। আশা করি তারা অল্প সময়ের মধ্যেই এগুলির ব্যাখ্যা দেবে।

পিনাকির ভিডিও

https://www.youtube.com/watch?v=5qNCMXxLVN8

ইস্কনের সাথে এবং 'র' য়ের সাথে বিদ্যানন্দকে ট্যাগ করা হচ্ছে। আমার ধারণা কিশোর কুমার দাস হিন্দু বলেই এতো অভিযোগ এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে করা হচ্ছে।

সূত্র - জুম বাংলা ডট কম
ঢাকা পোস্ট
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে এপ্রিল, ২০২৩ ভোর ৫:৪৪
৫৩টি মন্তব্য ৫৩টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজকের ডায়েরী- ১৫০

লিখেছেন রাজীব নুর, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:৩৩



গতকাল ছিলো বাংলা নববর্ষ।
সকালে এক জরুরী কাজে আমি উত্তরা গিয়েছিলাম। আমার তাড়াতাড়ি বাসায় ফেরার কথা। কিন্তু দেরী করে ফেললাম। আজ বাসার সবাই মাওয়া যাবে। সেখানেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই সময়ের কিঞ্চিৎ ভাবনা!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৩:১৭

বাক স্বাধীনতা কিংবা যা মনে আসছে তাই লিখে বা বলে ফেলছেন, খুব একটা ব্যাক স্পেস চাপতে হচ্ছে না এখন, তবে নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে এবং যে কোন দল নির্বাচিত হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্প: অপেক্ষা (১ম পর্ব)

লিখেছেন শামীম মোহাম্মাদ মাসুদ, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪৭

ফকির আবদুল হাই সাহেবের সাথে পরিচয় হয় যখন আমি অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি তখন। খুবই আধ্যাত্মিক আর রহস্যময় মানুষ। পেশায় একজন অধ্যাপক। অধ্যাপনা ছেড়ে আধ্যাত্মিকতা করেন, ফকির নামটি তার নিজস্ব... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেন বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:০৮

কেন বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার.....

হোয়াটসঅ্যাপে আমাদের ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক এবং অরাজনৈতিক ১০ জনের একটা গ্রুপ আছে। আমরা বেশীরভাগ সময়ই সমসাময়ীক বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করি। গত তিনদিনের আলোচনার বিষয়বস্তু ছিলো বিএনপির... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের মডেল মসজিদ প্রকল্প: রাজনীতি, প্রতারণা ও সমাজের প্রতিচ্ছবি

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:২৪


২০১৪ সালের প্রহসনের নির্বাচনের পর শেখ হাসিনার সরকার একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেয়। ইসলামপন্থীদের সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে তারা ধর্মীয় আবেগকে কাজে লাগানোর পথ বেছে নেয়। ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরের ঘটনা সরকারকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×