ইসলামি পোশাক বলে আসলে কিছু নাই। ইসলাম ধর্মে কোন নির্দিষ্ট পোশাককে পরিধান করার কথা বলা হয় নাই। এই কথা পুরুষ ও নারী উভয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কোরআন বা হাদিসে কোন পোশাকের নাম বলা নাই।
হিন্দুরা পাঞ্জাবি পড়ে, মুসলমানরাও পাঞ্জাবি পড়ে। ইহুদি পুরোহিতরা মাথায় টুপি পড়ে ( যদিও দেখতে একটু অন্য রকম)। মুসলমানরাও মাথায় টুপি পড়ে। মহানবী (সা) যে পোশাক পড়তেন আবু জেহেলও একই পোশাক পড়তেন। কাফির থেকে কেউ মুসলমান হলে রসুল (সা) কখনও তাকে পোশাক পরিবর্তন করতে বলেননি। কারণ আরব কাফের, ইহুদি, নাসারা সবার পোশাক একই ছিল। পোশাক ব্যাপারটা জাতীয়তা ও সংস্কৃতির সাথে সম্পর্কিত। ইসলাম নির্দিষ্ট কোন পোশাক পরিধান করতে বলে না। কোন পোশাককে নিষেধও করে না, যদি না সেটা পোশাকের নুন্যতম নিয়মকে ভঙ্গ করে। পোশাকের ব্যাপারে ইসলামে শুধু কিছু দিকনির্দেশনা আছে। যেমন ছেলেদের পোশাক হতে হবে ঢিলেঢালা। টাইট পোশাক পড়া পুরুষদের জন্য হারাম। নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত পুরুষদের অবশ্যই ঢেকে রাখতে হবে। আমাদের দেশে পুলিশ, সামরিক বাহিনী ইত্যাদিতে হাফ প্যান্ট পড়ার রেওয়াজ আছে। এটা হারাম। হাফ প্যান্ট অন্তত হাঁটু পর্যন্ত হওয়া উচিত। নারীদের ক্ষেত্রে শরীরের কতখানি ঢেকে রাখতে হবে সেটা বলা আছে। মেয়েদেরকে বোরকা বা হিজাবই পড়তে হবে, এমন না। বোরকা বা হিজাব ছাড়া অন্য কোন কাপড় দিয়ে পর্দা করা সম্ভব হলে সেটাতেই চলবে। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বোরখা পড়েন না, হিজাবও পড়েন না। কিন্তু উনি পূর্ণ পর্দা মেনে চলেন। বাংলাদেশের মেয়েদের জন্য ওনার পোশাক হতে পারে একটা আদর্শ পোশাক, যারা পর্দা করতে চান।
খ্রিস্টান ফাদাররা বা ভ্যাটিকানের লোকেরা লম্বা আলখাল্লা পড়ে। তার মানে এটা না যে আলখাল্লার একছত্র অধিকার শুধু ওনাদের। মুসলমানরাও লম্বা পোশাক পড়ে অনেক দেশে, নাম যাই হোক না কেন। আগেকার জমানার পুরুষরা লম্বা পোশাকই বেশী পড়তো। প্রাচীন চিত্রগুলিতেও তাই দেখা যায়। এই দেশের মুসলমানরা এক সময় ধুতি পড়তেন। ধুতি হিন্দু ধর্ম কর্তৃক আবিষ্কৃত কোন পোশাক না। অনাদিকাল থেকে এই অঞ্চলের মানুষ ধুতি পড়েছে। এই অঞ্চলের হিন্দু মেয়েরাও মাথায় ঘোমটা দিতেন এক সময়। গ্রামে হয়তো এখনও দেয়। তাই বলে বলা যাবে না যে মুসলমানরা মাথায় ঘোমটা দিলে সে হিন্দু হয়ে যাবে।
খ্রিস্টান নানরা বোরকার মত একটা পোশাক পড়ে। তার মানে এই না যে মুসলমান মেয়েরা বোরকা পড়তে পারবে না। সমাজে প্রচলিত যে কোন পোশাক পড়া যাবে যদি তা ইসলামের পোশাক সংক্রান্ত চাহিদা পুরন করে। তবে কিছু পোশাক আছে যেগুলি শুধু অন্য কোন ধর্মের পুরোহিতদের জন্য নির্দিষ্ট। যেমন নির্দিষ্ট রঙের গেরুয়া পোশাক। এই পোশাক সাধারণ হিন্দু বা বৌদ্ধরা পড়ে না। শুধু সন্ন্যাসীরা পড়ে। পৃথিবীর কোন সমাজে এই রঙের পোশাক সাধারণ মানুষ পড়ে না। এখানে রঙটা সমস্যা, কাপড়টা না। কারণ হজ্জ করার সময় মুসলমানরা দুই খণ্ড চাদর পরিধান করে যেটার সাথে সন্ন্যাসীদের পোষাকে মিল আছে। কিন্তু গেরুয়া ছাড়া অন্য রঙের কাপড় সন্ন্যাসীরা পড়ে না। সমাজের কেউও পড়ে না। তাই গেরুয়া রঙের পোশাক পড়া মুসলমানদের জন্য ঠিক হবে না। কারণ সাধারণভাবে এই পোশাক প্রচলিত না। আসলে পোশাক নিয়ে যারা বাড়াবাড়ি করে তারা ইসলামকে সঙ্কীর্ণ করার চেষ্টা করছেন। যে কোন সমাজে প্রচলিত পোশাক যা সাধারণ মানুষ পড়ে তা পড়তে কোন বাঁধা নাই। শুধু ইসলামের পোশাক সংক্রান্ত দিক নির্দেশনা মানা হচ্ছে কি না এটা খেয়াল করতে হবে।
অনেকে হিজাবকে বলতে চাচ্ছেন যে এটা শুধু খ্রিস্টান নানদের পোশাক। আসলে কথাটা ঠিক না। খ্রিস্টপূর্ব ২৫০০ অব্দেও মেসোপটেমিয়া, বাইজানটাইন, পারস্য এবং গ্রীসের অভিজাত মেয়েরা হিজাব পড়তো। সম্মান ও আভিজাত্যের জন্য তারা হিজাব পড়তো। এসিরিয়া এবং মেসোপটেমিয়াতে পরিষ্কার আইন ছিল অভিজাতরা হিজাব পড়তে পারবে এবং সাধারণ নারীরা পড়তে পারবে না। সেই যুগের একটা ছবি এই পোস্টে দিলাম যেটা গ্রীসের একটা ব্রোঞ্জ নারী মূর্তি। এই নারী হিজাব পরিহিত। ডিজাইন/ স্টাইল অবশ্যই এখনকার মত না। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যে পোশাকের ফ্যাশন/ স্টাইল সদা পরিবর্তনশীল। তাই যারা হিজাবকে খ্রিস্টান রিচুয়াল বলছেন তারা ইসলামকে সঙ্কীর্ণ করার চেষ্টা করছেন কু মতলব মাথায় নিয়ে।
একজন নারী তার মাথা কিভাবে ঢাকবেন এটা তার ব্যাপার। কারো কাছে হিজাব ভালো লাগলে সে হিজাব পড়বে। মাথা এবং দেহ চাদর দিয়েও ঢাকা যায়। কোরআনে চাদরের কথাই বলা আছে। খ্রিস্টান নানরা পড়ে বলে এটা পড়া যাবে না, এই ধারণা ভিত্তিহীন। খ্রিস্টান নানরা বোরকাও পড়ে। ডিজাইন হয়তো হুবহু এক না। আর হিজাব খ্রিস্টান নানরা চালু করেন নাই। বাইবেলেও হিজাবের কোন ডিজাইনের কথা বলা নাই। তবে দেশে বিদেশে অনেক মেয়ে মাথায় হিজাব পড়েন আবার টাইট জিন্স পড়েন। এটা এক ধরণের ভণ্ডামির পর্যায়ে পড়ে। শুধু মাথা ঢাকলেই পর্দা হয়ে যায় না। পর্দা যদি কেউ করতে চান তাহলে আল্লাহর ভয়ে করা উচিত। মানুষকে দেখানোর জন্য যেন না হয়।
ইসলাম শুধু শালীনতা নিশ্চিত করার জন্য পোশাকের ক্ষেত্রে কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছে পুরুষ ও নারী উভয়ের জন্য। আমাদের দেশে অনেক পুরুষ যেভাবে পোশাক পড়ে তা আপত্তিকর। অনেকে মসজিদে টাইট জিন্স পড়ে নামাজ পড়তে যায়। এরা সেজদায় গেলে নিতম্ব আংশিক উন্মুক্ত হয়ে যায় অনেক সময়। এই দৃশ্য সবার জন্য বিব্রতকর। পোশাকটা আসলে সংস্কৃতির সাথে যুক্ত, ধর্মের সাথে না। ইসলাম পোশাক নিয়ে বাড়াবাড়ি করে না। কিন্তু আমরা ইসলামের প্রশস্ততাকে সঙ্কীর্ণ করার চেষ্টা করছি মানুষকে বিভ্রান্ত করার নিয়তে।
বি দ্র - আমি যা লিখেছি এগুলি যে কোন মুসলিমের জানার কথা। এগুলি কমন নলেজের পর্যায়ে পড়ে। আমি এই ব্যাপারে সারা জীবনে যা জেনেছি তাই লিখেছি। তাই কোন হাদিস বা কোরআনের সুত্র দেই নি। নির্দিষ্ট পয়েন্টে কারো প্রয়োজন হলে দেয়া যাবে।
ছবি- উইকিপিডিয়া
সুত্র - en.wikipedia.org/wiki/Hijab#Pre-Islamic_veiling_practices
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০২১ বিকাল ৩:৫০