somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"মুক্তিযুদ্ধের ভিনদেশী বীরেরা" (প্রথম পর্ব)

২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ আমাদের অহংকার। শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি সেইসব শহীদদের, যাদের রক্তের ফসল এই স্বাধীনতা। আর এ স্বাধীনতা যুদ্ধের গৌরবময় অধ্যায়ের সাথে মিশে আছে ভিনদেশী কিছু মানুষের নাম। একাত্তরের মুক্তিসংগ্রামে কোটি মুক্তিকামী বাঙালির পাশাপাশি তাঁরা লড়েছেন, নিছক সহযোগিতা বা কর্তব্যের খাতিরে নয়, তাঁরা লড়েছেন মানবতার জন্য। এদেশের লাখো অসহায় দুঃস্থ মানুষের নৃশংস মৃত্যু তাঁদের বিবেককে তীব্রভাবে নাড়া দিয়েছিল। আর তাই তাঁদের কেউবা যুদ্ধ করেছেন মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সম্মুখ সমরে, কেউবা দিয়েছেন আহত যোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা, কারো কলমের কালিতে ফুটে উঠেছিল এদেশের করুণ দশা; গান, কবিতা কিংবা পত্রিকার কলামে। আর এভাবেই এদের প্রত্যেকেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য বিশ্বসমর্থন যুগিয়েছেন দারুণভাবে।
আর সেইসব ভিনদেশী বীরদের অবদান স্মরণে ধারাবাহিক এই আয়োজন -

উইলিয়াম এ. এস. ওডারল্যান্ড



জন্মঃ ৬ ডিসেম্বর, ১৯১৭
মৃত্যুঃ ১৮ মে, ২০০১

বাংলাদেশের স্বাধিকার আদায়ের সংগ্রামে অবদান রাখা বিদেশীদের মধ্যে অন্যতম ব্যতিক্রম ব্যক্তি হলেন উইলিয়াম এ. এস. ওডারল্যান্ড। সামনা-সামনি যুদ্ধক্ষেত্রে সাহসী ভূমিকা রাখবার জন্য তাকে বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশের চতুর্থ সর্বোচ্চ সামরিক খেতাব বীর প্রতীক প্রদান করেন। তিনি এই খেতাব-প্রাপ্ত একমাত্র বিদেশী। ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে বাটা সু কোম্পানিতে চাকরির সুবাধে বাংলাদেশের যে কোন স্থানে তাঁর ছিল অবাধ যাতায়াত। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ২২ বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল সুলতানের সাথে প্রথমে এবং এরপর একে একে সেনাবাহিনীর আরো কয়েকজনের সাথে সখ্য জমিয়ে ফেলেন তিনি। এ সুযোগে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সব ধরনের নিরাপত্তা পাস পেয়ে যান। অবাধ মেলামেশার সুযোগে সব ধরনের তথ্য, সেনাবাহিনীর তৎপরতা ও পরিকল্পনা গোপনে পাঠাতে থাকেন ২ নম্বর সেক্টর হেডকোয়ার্টারে। একই সঙ্গে টঙ্গীর বাটা সু কোম্পানির কারখানা প্রাঙ্গনে স্থাপন করেন মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য গোপন ক্যাম্প। মুক্তিযোদ্ধারা তাঁর কারখানায় আশ্রয় নিয়ে আশেপাশে গেরিলা অপারেশন চালাতে থাকে। এছাড়াও মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র সংগ্রহ, চিকিৎসা সামগ্রী, আর্থিক ও প্রশিক্ষণ সাহায্য দিয়েও সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সাবেক এই অস্ট্রেলিয়ান যোদ্ধা।

আরউইন অ্যালেন গিন্সবার্গ



জন্মঃ ৩ জুন, ১৯২৬
মৃত্যুঃ ৫ এপ্রিল, ১৯৯৭

"কাদামাটি মাখা মানুষের দল
গাদাগাদি হয়ে আকাশটা দেখে
আকাশে বসত মরা ঈশ্বর
নালিশ জানাবে ওরা বলো কাকে"

- কন্ঠশিল্পী মৌসুমী ভৌমিকের গান ‘যশোর রোড’ থেকে গৃহীত, যা কবি আরউইন অ্যালেন গিন্সবার্গের অমর কাব্য ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’ এর বঙ্গানুবাদ।
মার্কিন এই বিখ্যাত কবি ও গীতিকার ১৯৭১ এর ভয়াবহতা দেখেন ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশী শরণার্থী শিবিরগুলো ঘুরে দেখবার সময়। বন্ধুত্বের খাতিরে সদ্যপ্রয়াত পশ্চিম বাংলার জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কলকাতার বাসায় ওঠেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষ দিককার সময়ে। আরো অনেকের মতোই শরণার্থী শিবির পরিদর্শনে যাবার পরিকল্পনা করেন তাঁরা-তবে সড়কপথে না গিয়ে, বেছে নেন পানিপথ। নৌকায় করে বনগাঁ পেরিয়ে বাংলাদেশের যশোর সীমান্তে পৌছে যান। বিট্রিশ রাজ্যের সময় পূর্ব বাংলা ও পশ্চিমবঙ্গের সংযোগকারী সড়ক ছিল এটি। আশে পাশের শরণার্থী শিবিরগুলোর সীমাহীন দুর্দশা দেখার অভিজ্ঞতা থেকে লেখেন সেই অসাধারণ কবিতাটি - 'সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড'। যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে গিয়ে বন্ধু গায়ক বব ডিলান ও অন্যদের সহায়তায় সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’কে গানে রূপ দেন তিনি। কনসার্টে এই গানটি গেয়ে তারা বাংলাদেশি শরণার্থীদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেন।

অ্যান্থনি মাসকারেনহাস



জন্মঃ ১০ জুলাই, ১৯২৮
মৃত্যুঃ ৩ ডিসেম্বর, ১৯৮৬

১৩ জুন, ১৯৭১। লন্ডনের সানডে টাইমস পত্রিকাতে পূর্ব পাকিস্তানের গণহত্যা নিয়ে 'Genocide' শিরোনামে প্রকাশিত একটি বিশদ সংবাদ হৈ-চৈ ফেলে দেয়। আন্তর্জাতিক বোদ্ধারা নড়েচড়ে বসেন, কারণ রিপোর্টার যে একজন গোয়ানিজ পশ্চিম পাকিস্তানি। হ্যা, তিনিই অ্যান্থনি মাসকারেনহাস, মায়ের নির্দেশমত সর্বদা যিনি সত্যকে সবার উপরে স্থান দিয়েছিলেন। অবশ্য রিপোর্টার অ্যান্থনি মাসকারেনহাসের পরিবারকে আত্মগোপন করতে হয় ইতিহাস বদলকারী এই ঘটনার পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াতে। পুরো বিশ্ব এরপর বাংলাদেশকে সমর্থন জানাতে দ্বিধা করেনি। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সানডে টাইমস এর সম্পাদক হ্যারল্ড ইভান্‌স কে জানান, আর্টিকেলটি তাকে এতটাই প্রভাবিত করেছিল যে তিনি স্ব-উদ্যোগে ইউরোপ ও মস্কোকে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সাথে যুক্ত হবার প্রস্তুতি নিতে প্রচারণা চালিয়েছিলেন। এছাড়াও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে সংঘাত, গণহত্যা ও অন্যান্য ঘটনা নিয়ে বই লিখে [The Rape of Bangladesh (1972), Bangladesh: A Legacy of Blood (1986)] অ্যান্থনি মাসকারেনহাস প্রকৃত ঘটনা বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেন।

. . . .(চলবে)
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

‌এখন সময় কৃষ্ণচূড়ার

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৫:০৪



বৃক্ষপ্রেমিক দ্বিজেন শর্মা বলেছিলেন - বসন্তে কৃষ্ণচূড়া ফোটে না, আর ফুলের বাজারেও কৃষ্ণচূড়া বিকোয় না।
তবুও কৃষ্ণচূড়ার কদর আর রূপের ঝলক তাতে একবিন্দুও কমে না।

ফুলের নাম : কৃষ্ণচূড়া
অন্যান্য ও আঞ্চলিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:২৪



চাইলে জিয়াউর রহমান ঢাকায় ঝাঁ চকচকে দালান কোঠা রাস্তা বানিয়ে সবার চোখ ধাঁধিয়ে উন্নয়ন করার বাহাদুরি করতে পারতেন। সেটা না করে তিনি ঘুরতে লাগলেন সারা দেশে, গ্রামে গঞ্জে গিয়ে খাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জবাবদিহিতার অনন্য দৃষ্টান্ত

লিখেছেন মেঠোপথ২৩, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:৪৫

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করার পর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামের বিরুদ্ধে গুজব ছড়ানো হয় সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে। সেসব পোস্টে তার বিরুদ্ধে বিপুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি যাত্রা করবেন নাকি রাজনীতি করবেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:১১


ইদানীং দেশে রাজনৈতিক দল গজানোর হার দেখলে মনে হয়, দেশের মাটিতে এখন ধান নয়, গজায় দল। ভোট এলেই বুঝি এই দলগুলো দুলে ওঠে, আর না এলেই পড়ে থাকে ফাইলের পাতায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের নেতারা যদি সত্যিই নির্দোষ হতেন, তাহলে তারা পালিয়ে গেলেন কেন?

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১১:০৯

আওয়ামী লীগের নেতারা যদি সত্যিই নির্দোষ হতেন, তাহলে তারা পালিয়ে গেলেন কেন?

পলায়নপর ছবি কৃতিত্ব এআই

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা দেশ ছেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×