বজ্রপাতে গত দুইদিনে প্রাণহানি ঘটেছে ৫৭ জনের ।বজ্রপাত এর জন্য যতটা দায়ী তার চেয়ে মানুষই বেশি দায়ী । মানবজাতির শত্রু নই তথাপি নিজ প্রজাতির ঘাড়েই দোষ চাপাতে বাধ্য হচ্ছি ।কারণ বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার বড় কারণ হিসেবে গ্রামে গাছের সংখ্যা কমে যাওয়া ,নদীর শুষ্কতা , জলাভূমি ভরাট আর মুঠোফোনের ব্যবহার বেড়ে যাওয়াকেই দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞমহল ।প্রতিটি ঘটনার পেছনে মানুষের প্রত্যক্ষ ভূমিকা প্রমানিত ।সহজ বাংলায় বলতে গেলে আমরা মানুষরাই মানুষ হত্যা করছি । লোভ আর অসেচেতনতা এভাবে মানুষকে স্বজাতি ধ্বংসেরর মত কাজে নিয়োজিত করছে ।এ ব্যাপারে সুশীল সমাজ কিছু বলেছেন কি? তাদের কতজন বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল এ ব্যাপারে সন্দেহ আছে । মানবসেবায় নিবেদিত প্রাণ ব্যক্তিটিও জ্ঞানের অভাবে এ ব্যাপারে ধনাত্মক ভূমিকা রাখতে পারছেন না ।
বজ্রপাত হলেই মানুষ মরে না । বজ্রপাতের সময় যারা খোলা আকাশের নীচে বিচরণ করবে তাদেরই মৃত্যু আশংকা থাকে ।বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একসময় দেশের বেশির ভাগ গ্রাম এলাকায় বড় গাছ থাকত।
তাল, নারিকেল, বটসহ নানা ধরনের বড় গাছ বজ্রপাতের আঘাত নিজের শরীরে নিয়ে নিত। ফলে মানুষের আঘাত পাওয়ার আশঙ্কা কমত।
আমাদের নদীর শুকিয়ে যাবার কারণ কি সচেতন সমাজ ভালভাবেই অবগত আছেন । তারা প্রকৃতিকে দোয়ারূপ করতে পারবেন না ।প্রতিবেশি রাষ্ট্র ভারতের ভূমিকাতে আমাদের কার্যকরি উদ্যোগ নেয়ার সক্ষমতা নিয়ে যথেষ্ঠ প্রশ্ন রয়েছে ।বজ্রপাতের জন্য এলাকার আর্দ্রতার যথেষ্ঠ ভূমিকা রয়েছে ।
বজ্রপাতের কারণে মৃত্যু ব্যাপারটি শতভাগ প্রশমন মানুষের দ্বারা সম্ভব । ব্যাপকহারে বৃক্ষরূপন; বিশেষ করে গ্রাম এলাকায়, কোলা আকাশের নীচে অহেতুক বিচরণ বন্ধ করা কঠিন কিছু নয় ।
সরকারকেও ব্যাপারটিকে গুরুত্ব দিতে হবে । বেসরকারিভাবে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যার হিসাব রাখা হলেও সরকারিভাবে একে দুর্যোগ হিসেবেই স্বীকার করা হয় না। আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে, মে মাসে নিয়মিতভাবে বজ্রপাতের পরিমাণ বাড়ছে। সংস্থাটির হিসাবে ১৯৮১ সালে মে মাসে গড়ে নয় দিন বজ্রপাত হতো। ২০১৫ সাল পর্যন্ত সময়ে গড়ে বজ্রপাত হয়েছে এমন দিনের সংখ্যা বেড়ে ১২ দিনে দাঁড়িয়েছে। তবে মার্চ ও এপ্রিলে দেশে বজ্রপাতের পরিমাণ কমছে ।
বজ্রপাত হয় কালবৈশাখীর সঙ্গে। প্রশান্ত মহাসাগরীয় বায়ুপ্রবাহের ভূমিকা আছে এ ক্ষেত্রে। মহাসাগরের পানির তাপমাত্রা বেড়ে বায়ুপ্রবাহে তা যুক্ত হয়ে ঝড়ের প্রকোপ বাড়াতে ভূমিকা রাখতে পারে। হাওর অঞ্চলে আর্দ্রতা বেশি হওয়া সে অঞ্চলে বজ্রপাত বেশি হওয়ার একটি কারণ ।
ছয় বছরে বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনার মধ্যে কয়েকটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন বেশির ভাগ মৃত্যুই হয়েছে উন্মুক্ত জায়গায়। ফসলের খেতে কাজ করতে গিয়ে বা নৌকায় থাকা অনেকে নিহত হয়েছেন। আবার মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় আছে শিশুরা। ঝড়-বৃষ্টি চলাকালে খেলার মাঠে তাদের মৃত্যু হয় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে। ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালে বজ্রপাতে যেসব মৃত্যু হয়েছে এর এক-চতুর্থাংশ হয়েছে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হাওরের নয় জেলায়। এ বছর ৮৮টি মৃত্যুর ঘটনার মধ্যে ২৭টিই হয়েছে হাওর অঞ্চলে।
গত ছয় বছরে বন্যায় মৃত্যুর সংখ্যা ২০০-র বেশি নয়। ২০১৩ সালের মার্চে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় টর্নেডোতে নিহত হন ৩১ জন। টর্নেডোতে মৃত্যুর ঘটনা গত ছয় বছরে এটিই বড়। বজ্রপাতে এসব দুর্যোগের চেয়ে অনেক বেশি মানুষ মারা যায়। তবু সরকারি নথিতে এটি দুর্যোগ নয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত জাতীয় পরিকল্পনা ২০১০-১৫তে মোট ১২টি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা উল্লেখ আছে।
দুর্যোগ ফোরামের সদস্যসচিব গওহর নাইম ওয়ারার মতে বাংলাদেশে কখনো আঘাত না হানা সুনামিও দুর্যোগ হিসেবে গণ্য করা কিন্তু বজ্রপাতের মতো এমন জীবনসংহারী ঘটনাকে দুর্যোগ হিসেবে গণ্য না করা এসব মৃত্যুকে অবহেলা করার নামান্তর।’
বজ্রপাতকে দূর্যোগ হিসেবে সরকারি ভাবে নথিবদ্ধ করে সার্বিক জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে পারলে এ সংক্রান্ত জীবননাশ শতকরা ১০০ ভাগ প্রশমন করা সম্ভব ।
বি: দ্র: ছবি ও তথ্য নেট
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মে, ২০১৬ বিকাল ৪:০৪