রাতের আলোয় পেনাং ব্রীজ (ছবি গুগুল)
থিসিস নিয়ে দারুন একঘেয়েমি কর্মযজ্ঞ । দেশ থেকে কত দূরে আছি । প্রচন্ড দেশ কাতরতার মধ্যে থিসিস ওযার্ক বোর হওযাতে নতুন মাত্রা দিয়েছে । এসব থেকে রক্ষা পাবার একটাই উপায় সেটা হলো দূর ভ্রমনে বেড়িয়ে পড়া । আগস্টের ৩০ তারিখ শুক্রবার থেকে তিনদিনের ছুটি পাওয়া গেল । আর সেটির সদ্ব্যবহার করার জন্য আমরা বেছে নিলাম পেনাং লং ড্রাইভ ।
পেনাম কেন যাওয়া ? সেটি এই ব্লগের সুপ্রিয় একজন পেনাং ব্যাপারটা মাথায় ঢুকিয়েছেন। কলিগরা কেউ যেতে না চাইলেও তাদেরকে মটিভেট করতে সক্ষম হই । কয়েকটা কারনে পেনাং নগরী যাওয়া যায় । এখানে যেতে ক্রস করা হবে পেনাং ব্রীজ দিয়ে যেটির দৈর্ঘ্য ১৩.৫ কিলোমিটার । এটি দক্ষিণ মালয় চ্যানেলের উপর দিয়ে গেছে । আর সংযুক্ত করেছে মালয় উপদ্বীপ কে পেনাং নগরীর
সঙ্গে । এটি মালয়েশিয়ার প্রথম ব্রীজ যেটি দিয়ে কোন দ্বীপকে মালয় উপদ্বীপের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে । সত্তরের দশকে এটি তৈরি করার পরিকল্পনা করেন মালয়েশিয়ার প্রধান মন্ত্রী তুন আব্দুল রাজাক ।
মালয়েশিয়া সরকার ১৯৭১ সালে ক্রিশ্চিয়ানী নিয়েলসনকে নিয়োগ করেন ব্রীজটি নির্মানের সম্ভাব্যতা পর্য়ালোচনা করার জন্য।
ব্রীজটি ডিজাইন করেছেন পেনাং নগরীর নাগরিক একজন স্বনাম ধন্য সিভিল প্রকৌশলী প্রফেসর চিন ফুংকি ।
ব্রীজটি নির্মানের পূর্বে এখানে যেতে ব্যবহৃত হতো পেনাং ফেরী সার্ভিস ।যেটির চলাচল রুট ছিল বাটারওর্থ আর জর্জটাউনের মধ্যে ।
১৯৮৫ সালের ৩রা আগস্ট পেনাং ব্রীজটি চালু করা হয় । পেনাং ব্রীজের সঙ্গে পেনাং ভ্রমনের অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে বলা যায় পেনাং বীচ ,পেনাং হিল আর পেনাং বৌদ্ধ মূ্র্তি ।আর পেনাং ইউনিসেফ ঘোষিত মালয়েশিয়ান ট্রেডিশনাল ফুড হেরিটেজ প্লেস হিসেবেও স্বীকৃত ।
আর লং ড্রাইভ সত্যি দারুন উপভোগ্য।মালয়েশিয়া সত্যি কারের সবুজ দেশ। এখানে আছে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য । কোন রাজনৈতিক হ্যারাসমেন্ট নেই। সকল ধর্মের সহাবস্থানের উদাহরণ দিতে গেলে এটাকে এক নম্বরে রাখবো আমি। এখানে মসজিদের পাশাপাশি মন্দির আছে ।আর আছে বহুজাতিক সহাবস্থান । আর রাস্তা ঘাট গুলো চমৎকার । অবকাঠামোগত সুবিধা এটিকে ভ্রমনের জন্য দারুন উপযোগী করে তুলেছে ।
এবার ভ্রমনের কথায় আসি । স্যুট টাই আর যান্ত্রিক ব্যস্ততা আমাদের রবোটে রূপান্তিরিত করেছে । রবোটিক জীবনকে মানুষের জীবনে পরিণত করতে আমাদের এই রাত্রিকালীন দূর ভ্রমন । পেনাং ব্রীজে গাড়ীতে চরে দক্ষিন মালয় চ্যানেলের বিশুদ্ধ বাতাস সেবনে অপার শান্তি লাভ করার লোভ কে সমালাতে পারে ।
ক্যামেরুন হাই ল্যান্ডের কাছাকাছি সুরঙ্গ পথ
আনুমানিক রাত সাড়ে বারোটায় আমাদের হিমু রঙের গাড়ীতে চড়ে বসলাম পেনাং এর উদ্দেশ্যে । কাজাং এর ওয়েল পা্ম্প স্টেশনে গাড়ীতে তেল ভরে ছুটতে থাকলো আমাদের গাড়ী । বাংলাদেশের কয়েকটা বিখ্যাত মিউজিক ছেড়ে দিয়ে সেগুলোর সঙ্গে ব্যাক ভোকালের ভূমিকায় আমরা কয়জন ।রাতটা জোছনা মাখা ছিলনা ।ক্ষয়িষ্ণু চাঁদ মাঝে মাঝে উঁকি দিচ্ছিল । তবে ল্যাম্প পোস্ট গুলো এক পায়ে দাঁড়িয়ে আলোকিত করছিল চারদিক ।রাস্তার দুই পাশে সবুজ বনের সমারোহ। কখনো সুউচ্চ অট্টালিকা ।মালয়েশিয়া রঙিন দেশ। সেটা প্রকৃতি গত ভাবেই ।মানুষগুলোর মনে সৌন্দর্য় আছে ।বিলাসিতা আছে । আর আভিজাত্য ও আছে ।রাস্তার লাইটগুলোর ডিজাইন ,রাস্তাকে বিভিন্ন ফুল দিয়ে সাজিয়ে চমৎকার সব মসৃন চকচকে রাস্তা ।গাড়ীতে ঝাকি নেই ।বাতাসে সীসা নেই। কিছু দূর পরপর বিশ্রামাগার বা রিফ্রেশ হওয়ার সমস্ত উপকরণ সত্যি প্রশংসার দাবী রাখে ।
আমার বাসস্থান কাজাং থেকে পেনাং নগরীর দূরত্ব প্রায় চারশত কিলোমিটার ।দুইটি বিরতি দিয়ে আমরা পৌঁছে যাই কাঙ্খিত সেই পেনাং ব্রীজে ।কিছুদূর পর পর টোল দিতে হচ্ছিল ।পেনাং ব্রীজের টোল ৪২.৫০ রিংগিট মাত্র।
যেখানেই থেমেছি সেখানে রিফ্রেশ হওয়ার সমস্ত সুবিধাদি ছিল । প্রথম বিরতিতে থামার সময় লক্ষ্য করলাম বিশাল মোটা এক তামিল ভদ্রলোক হাটছেন । এত মোটা মানুষের জীবন প্রানালী নিয়ে কৌতুহল কার না জাগে । কলিগরা তো তার স্ত্রীর দূরাবস্থার কথা বলে রীতিমত মায়াকান্না করছে ঠিক সেই মুহুর্তে তার কাছাকাছি আকৃতির আরেকজন এসে হাজির। এদের দুইজনকে কোন গাড়ী বহন করে দেখার জন্য উৎসাহ বোধ করলাম । দারুণ হেভী একটা গাড়ীতে মোটা ভদ্রলোকটি উঠলেন । এত হেভী গাড়ী সেটিও ইঞ্চি খানেক দেবে গেলো ।
আমরা কফি আর হালকা নাস্তাকরে আবার চলতে শুরু করলাম । জিপিএস দিয়ে ট্রাকিং করে রাস্তা চলতে চলতে আরো প্রায় শ কিলোমিটার দূরে আবার থামলাম । শরীরটা ম্যাজ ম্যাজ করছিল। সেখানে ম্যাসেজ চেয়ার পেলাম। মিনিট তিনেকের ম্যাসেজনিয়ে ফুরফুরে মেজাজে সোজা পেনাং ব্রীজে ।
ততক্ষনে আকাশ পরিস্কার হতে শুরু করেছে । দাক্ষিন মালয় চ্যানেলের বাতাসে গা জুড়াতে গাড়ীর এসি বন্ধ করে জানালা খুলে দিলাম । সত্যি মুগ্ধ হওয়ার মত।চমৎকার সুদূর্ঘ ১৩.৫০ কিলোমিটার লম্বা ব্রীজ ।দুই পাশে পানি। পানিতে ঢেউ । ঢেউ ভেসে চলছে চমৎকার সব ইঞ্জিন চালিত নৌকা । ব্রীজের সামনে পেনাং নগরীতে দাঁড়িয়ে আছে সুউচ্চ সব অট্টালিকা । তার কয়েকটি মনে হবে হয়তো সমুদ্রের বুকে দাড়িয়ে আছে । সবুজ পেনাং নগরী পেনাং হিল আর পেনাং সীবীচ ভাবতে ভাবতে দারুন ভাল লাগা নিয়ে ছুটছিলাম পেনাং ব্রীজের উপর দিয়ে । আর মনে মনে ভাবছিলাম সমুদ্রে পারে আমাদের বুকিং করা রেস্ট হাউজটি কেমন হবে সেটি নিয়ে ।
কয়েকটি ছবি ।
--------------------------------------------------
ছবি প্রথমটি গুগুল । বাকী গুলো নিজস্ব এলবাম ।ফেরার পথে দিনে তোলা ছবি এড করা হয়েছে ।
তথ্য সূত্র নেট ।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১০