শাওয়াল মাসের প্রথম তারিখে যে ঈদ সেটি ঈ্দুল ফিৎর। ঈদ মানে খুশি। এ ই খুশি দুই অর্থে ;এক আল্লাহকে খুশি করা। দুই নিজেও খুশি থাকা।এই দিন নামায পাচ ওয়াক্তের জায়গায় ছয় ওয়াক্ত। এই দিনে সকল মুসলমান একত্রিত হয়ে শোকর আদায়ের জন্য দুই রাকাত নামায পড়া ওয়াজিব।
ঈ্দুল ফিতর এর দিন কমবেশি ১৩ টি কাজ সুন্নত। যথাঃ-
১) শরীয়তের মধ্যে থেকে যথাসাধ্য সুসজ্জিত হওয়া ( এবং হাসি খুশি থাকা) (মাদারেজ)
২)গোসল করা।
৩) মিসওয়াক করা।
৪)যথা সম্ভব উত্তম কাপড় পরিধান করা।
৫)খোশবু লাগানো।
৬)সকালে অতি প্রত্যুষে বিছানা থেকে গাত্রোত্থান করা
৭)ফযরের নামাযের পরেই অতি ভোরে ঈদগাহে যাওয়া।
৮)রসুল সাঃ ইদগাহে যাওয়ার পূর্বে কয়েকটি খেজুর খেতেন। এগুলির সংখ্যা বেজোড় হতো। যেমন ,তিন,পাঁচ,সাত (বোখারী তিবরানী)
৯)ঈদগায়ে যাওয়ার পূর্বে ছদকায়ে ফিৎরা দান করা।
১০) ঈদের নামায মসজিদে না পড়ে ঈদগায়ে গিয়ে পড়া।(মুসলিম,বুখারী)
১১) ঈদগায়ে একরাস্তায় যাওয়া ও অন্যরাস্তায় ফিরে আসা। ( বোখারী,তিরমিজী, মাদারেজ)
১২) ঈদগায়ে পায়ে হেটে যাওয়া ।(ইবনে মাজা)
১৩) ঈদগায়ে যাওয়ার সময় আস্তে আস্তে নিম্নলিখিত তকবীর বলতে বলতে যাওয়া।
আল্লহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাহু আল্লাহু আকবার ওয়াল্লিাহিল হামদ।
রাসুল সাঃ ঈ্দুল ফেতরের দিন কিছু আহার না করে বের হতেন না আর ঈ্দুল আজহার দিন না খেয়ে বের হতেন এবং ঈদের নামায ও কোরবানী সম্পন্ন না করে কিছু খেতেন না।
(তিরমিজী, ইবনে মাজা,মাদারেজুন্নবুওয়াত)
হাশরের ময়দানে ৫টি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে কোন ব্যক্তি স্বীয় কদম তিল পরিমান হঠাতে পারবে না তার দুইটি হলো ১) এলেম কতটুকু হাসিল করেছো ও ২) তদুনুযায়ী কতটুকু আমল করেছো।
তাই ব্যপারগুলো জেনে রাখা যেমন জরুরী তেমনি সেগুলোর উপর আমল করা জরুরী। এগুলো সরসরি রসুল সাঃ এর মোবারক অভ্যাস। তিনি ছিলেন সর্বজনীন নবী। শুধু আরব ভূখন্ডের জন্য নন।
ঈদ উল ফেতরের সঙ্গে ফেতরা ব্যাপরটা জড়িত।প্রত্যেক সামর্থবান মুসলমানের উপর ফেতরা ওয়াজিব। এবং সেটি ঈদ গাহ থেকে ফেরার পূর্বে দিয়ে দেয়া উত্তম।দরিদ্র অভাবগ্রস্ত লোকদের ফেতরা দিতে হয় ।
যখন কোন মুসলমান সাক্ষাতে সালাম দেন মুসাফাহা করেন আর মুসাফাহার দোয়া পড়েন আল্লাহ তায়ালা এত খুশি হোন যে তাদের উভয়ের কৃত সগীরা গুনাহ সমূহ মাফ করে দেন। আল্লাহতায়ালা মানুষের মধ্যে মিল মহবতকে এতটাই পছন্দ করেন। ইবরাহীম আঃ খাওয়ার সময় মেহমান সহ খাবার খেতেন। এমনকি তিনি মেহমানের অপেক্ষায় থাকতেন। কাউকে পেলে তাকে সঙ্গে নিয়ে খেতেন। রসুল সাঃ বলেছেন যে মেহমানকে সঙ্গে নিয়ে খাবার খায় সে খাবারের কোন হিসাব নেয়া হবে না ।
পুরো একমাস সিয়াম সাধনার পর যখন কোন মুসলমান ঈদগাহে গিয়ে সালাত আদায় করেন তাদের সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যায়। তারা নিষ্পাপ শিশুর মত হয়ে যান।
ঝগড়া ফ্যাসাদ আল্লাহ তায়ালা পছন্দ করেন না ।রসুল সাঃ শবেক্বদরের রাত্রি নির্ধারিত করে দিতে গেলে দুইজন মুসলমানের ঝগড়ার কারণে তা ভুলে যান ।ফলে শবে ক্বদর অনির্ধারিত থেকে যায়।ঝগড়া করা এতটাই অমঙ্গলজনক ও স্রষ্টার কাছে অপছন্দনীয়।
পবিত্র ঈদুল ফিতর ,সিয়াম সাধনার একমাস পূর্তিতে তার আগমন।রমযান মানুষকে খাবার থেকে সংযমের শিক্ষা দেয়।শুধু তাই নয় নিষিদ্ধ জিনিস দেখা , হাত দিয়ে স্পর্শ করা এমনকি কল্পনা করা থেকে বিরত থাকার শিক্ষা দেয় । আর পবিত্র ঈদুল ফিতর ফিতরার টাকা দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণের মাধ্যমে দানের মন্ত্রে দীক্ষিত করে ।শুধু তাই নয় সুন্দর পোষাকে সজ্জিত থেকে সকল আত্নীয় স্বজন প্রতিবেশি দরিদ্রদের ভাল খাবার পরিবেশন করে তাদের বাসায় গিয়ে খোঁজখবর নেয়ার মাধ্যমে হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করে।সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সুদৃঢ় করে ।
ঈদুল ফিতর তা্ই খুশির বাণী পৌছে দেয় ।বিশ্বের প্রতিটি মানুষের দ্বারে দ্বারে শান্তির বার্তা পৌছে দেয়। সকল প্রকার সংঘর্ষ হানহানি নিরুৎসাহিত করে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করে সবাইকে।
তাই ঈদ মানে স্রষ্টাকে খুশি করা আর ঈদ মানে সকল মানুষকেও খুশি করা।ঈদ আমাদের সবার জন্য মঙ্গল বয়ে আনুক।