দেশের সর্বত্র বিস্তার লাভ করেছে ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবার নেটওয়ার্ক। ঘরে বসেই স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে চিকিৎসকদের পরামর্শসহ কোথায়, কী ধরনের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যায় তার পুরো গাইডলাইন তৈরি করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ওয়েবসাইটে (http://www.dghs.gov.bd) প্রবেশ করে ‘ই-হেলথ’ এ ক্লিক করলেই বেরিয়ে আসবে স্বাস্থ্যসেবার বিভিন্ন ক্ষেত্র। সেগুলো হলো - মোবাইল ফোনে স্বাস্থ্যসেবা, মোবাইল ফোনে স্বাস্থ্যসেবার নম্বরসমূহ, টেলিমেডিসিন সেবা, কমিউনিটি ক্লিনিকসমূহে টেলিমেডিসিন সেবা, খুদে বার্তার মাধ্যমে অভিযোগ-পরামর্শ জানানোর ব্যবস্থা, খুদে বার্তার মাধ্যমে প্রসূতি পরামর্শ, খুদে বার্তার মাধ্যমে স্বাস্থ্য পরিসংখ্যান, হাসপাতাল অটোমেশন, তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে অফিস উপস্থিতি তদারকি, অনলাইন পপুলেশন হেলথ রেজিস্ট্রি, মানবসম্পদ ডাটাবেজ, অনলাইনে মেডিক্যাল-ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষা প্রক্রিয়াকরণ, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী তদারকি সফটওয়্যার, সকল স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে বিশাল কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, স্বাস্থ্যসেবা জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সিস্টেম, অফিসিয়াল কর্মসূচী ব্যবস্থাপনা সফটওয়্যার, বাংলাদেশের ই-স্বাস্থ্য সেবা সংক্রান্ত মানদন্ডসমূহ ও তথ্য-ব্যবস্থাসমূহের মধ্যে আন্তঃযোগাযোগ কাঠামোর খসড়া, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমাদের অবস্থান ইত্যাদি তথ্য। স্বাস্থ্য খাতে পুরোদমে এগিয়ে চলছে ডিজিটাল বাংলাদেশ কার্যক্রম। মাঠ পর্যায়ে বিতরণ করা হয়েছে ল্যাপটপ ও ট্যাবলেট কম্পিউটার। গ্রাম এলাকার প্রতিদিনের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমের সব পরিসংখ্যান এখন তাৎক্ষণিকভাবে কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে। দেশের ৬৪ জেলা এবং ৪১৮ উপজেলা হাসপাতালে ইতোমধ্যে একটি করে মোবাইল ফোন দেয়া হয়েছে। উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত প্রায় ৮শ’ স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক এবং জেলা সিভিল সার্জনের অফিসে। সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে চালু করা হয়েছে টেলিমেডিসিন সুবিধা। স্বাস্থ্যসেবায় এসেছে জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সিস্টেম এবং কম্পিউটারাইজড অটোমেশন ব্যবস্থা। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরামর্শ নিতে পারছে সাধারণ মানুষ। স্থানীয় পর্যায়ে প্রচারকৃত এবং স্বাস্থ্য বিভাগের ওয়েব সাইটে (http://www.dghs.gov.bd) প্রদত্ত নম্বরগুলোতে ২৪ ঘণ্টাব্যাপী কোন না কোন চিকিৎসক কল রিসিভ করছে। একটি মাত্র কল করে ঘরে বসেই ব্যস্ত মানুষদেরও রোগের শুরুতেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার সুযোগে রোগ জটিল হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে গেছে। বর্তমানে দেশে এমন কোন সরকারী হাসপাতাল নেই যেখানে ইন্টারনেট সংযোগ নেই। এতে তথ্য আদান-প্রদান ও মনিটরিং ব্যবস্থার উন্নতি ঘটায় স্বাস্থ্যসেবার মানের গুণগত উন্নতি ঘটেছে। অনলাইন ডাটাবেজসহ ইমেলের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে দেশের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য পাওয়ায় সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে। প্রতিটি বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক এবং জেলা সিভিল সার্জনের অফিসে ওয়েব ক্যামেরার মাধ্যমে ভিডিও কনফারেন্সিং ব্যবস্থায় ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সভা অনুষ্ঠান বা মতবিনিময় করা হচ্ছে, ইতোমধ্যে চালু হয়েছে ভিডিও ফোন। সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে চালু হয়েছে টেলিমেডিসিন সুবিধা। এতে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের আধুনিক মানের টেলিমেডিসিন পদ্ধতিতে উচ্চ পর্যায়ের বিশেষায়িত হাসপাতালসমূহে কর্মরত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ নেয়া সহজ হয়েছে, কমেছে রোগীদের ভ্রমণের প্রয়োজন, ভোগান্তি ও চিকিৎসা ব্যয়। স্বাস্থ্য বিভাগ মোবাইল ফোনের এসএমএস ব্যবহার করে উদ্ভাবনামূলক হেলথ ক্যাম্পেন, স্বাস্থ্যসেবা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার কাজ শুরু করেছে এবং তা ক্রমান্বয়ে বাড়িয়ে চলেছে। এসএমএস কমপ্লেন/সাজেশন বক্স এর মাধ্যমে যেকোন নাগরিক ১৪২৪২ নম্বরে এসএমএসের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অভিযোগ বা পরামর্শ জমা দিতে পারছে। জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সিস্টেম (জিআইএস) পদ্ধতির প্রয়োগে দেশের কোথায় কি স্বাস্থ্যসেবা আছে, কোথায় নেই, কোথায় প্রয়োজন-এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে সঠিক পরিকল্পনা ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে। বর্তমান জনবান্ধব সরকারের আন্তরিকতা ও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনায় দেশের স্বাস্থ্যসেবার এই ডিজিটালাইজেশনে সাধারণ মানুষ তাৎক্ষণিক ডাক্তারী পরামর্শ গ্রহণ করে উপকৃত হওয়ার পাশাপাশি সময়, চিকিৎসা ব্যয় হ্রাস ও দুর্ভোগ থেকেও রেহাই পাচ্ছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৫:৪৭