রাজন হত্যার ভিডিওটা আমি দেখিনি, মানে দেখতে চাইনি। কয়েকবছর আগে পাকিস্তানে প্রকাশ্য দিবালোকে পার্ক থেকে টেনে বের করে একটা নিরীহ ছেলেকে কয়েকজন আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা রাস্তার মাঝে দিনের বেলায় গুলি করে মেরে ফেলে, আর ছেলেটি যে গুলি করেছে তার কাছেই মিনতি করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য.............. এই ভিডিওটা দেখেছিলাম......... তারপর প্রায় সপ্তাহখানেক আমি ঘুমুতে পারিনি।
বিশ্বজিৎ নামক একটা নিরীহ ছেলেকে রামদা দিয়ে পুলিশের সামনে ছাত্রলীগের ছেলেরা কুপিয়ে মারছে , আর সারা গায়ে রক্তমাখা বিশ্বজিৎ নীচতলা থেকে দুতলা, দুতলা থেকে নীচ তলায় বাঁচার আকুতি নিয়ে দৌড়াচ্ছে ........... সেই ভিডিওটা দেখেছিলাম....... জাস্ট মানসিকভাবে বিকার গ্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম.............
সুন্দর , মায়াবী চাঁদে একজন মানুষের ছবি দেখা গেছে........ সুতরাং মসজিদের মাইকে ঘোষনা দিয়ে রাতের আধারে পুড়িয়ে ফেলা হলো গোটা দুই ডজন মানুষকে...........
হরতাল , অবরোধ........ পুড়ছে মানুষ, গাড়ী, বাড়ী......., সেটাও না হয় কিছুটা চোখ সওয়া হয়ে গেছে, হঠাৎ একদিন সকালে টিভিতে চোখ রাখতেই দেখলাম একট্রাক গরুকে পুড়িয়ে মারা হলো...........
এরকম অসংখ্য নিষ্ঠুর ঘটনা প্রতিনিয়ত এদেশে ঘটছে, সুতরাং সমাজের উচুঁ তলা থেকে শুরু করে নীচু তলা পর্যন্ত সবাই আমরা পিশাচ হয়ে যাচ্ছি। সৎ ভাবে বেঁচে থাকার রাস্তাটা খুবই সংকীর্ণ হয়ে আসছে। কি চাকুরী, কি ব্যবসা সব জায়গাতেই দূর্নীতিবাজ, ভন্ডদের জয় জয়কার। সুতরাং যারা ভালোভাবে বেঁচে থাকতে চায়, তারাও মানসিকভাবে বিকার গ্রস্ত হয়ে পড়ছে। আগে অনলাইনে বেশ লেখালেখি করতাম, এখন সেটাও প্রায় ছেড়ে দিয়েছি। কোন একজন মাহমুদুর রহমান বললেন এবং প্রচার করলেন ব্লগার মানেই নাস্তিক! সুতরাং এদেরকে খুন কর, রামদা , চাপাতি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো হায়েনার দল, সুতরাং ব্লগ বাদ দিলাম, ফেসবুকে কিছু লিখবেন? না, সেটা কখন আবার সাইবার ক্রাইম হয়ে যায় তা জানে সরকার আর একমাত্র উপরওয়ালা......... সুতরাং সেটাও বাদ।
সমাজটা শুধুমাত্র একদিক থেকে নস্ট হয়ে যায় যাচ্ছে না, হয়ে যাচ্ছে চতুর্দিক থেকে। এরই ধারাবাহিকতায় আজকে রাজন, কালকে আমি বা পরশু আপনি এর নিষ্ঠুর শিকারে পরিনত হবো, এটাই বোধ হয় আমাদের নিয়তি..........
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ৯:০৫