এরা ভাগ্যবান যে বাসের পাদানিতে ঝুলে থাকার সুযোগ পেয়েছেন।
আমি বাসে প্রচুর যাতায়াত করি। কেননা, আমার এ ছাড়া উপায় নেই। সীমিত আয়ের মানুষ। বাস ছাড়া চলাচলের উপায় নাই। কম দূরত্বের পথ রিক্সায় চলাচল করা যায়। বেশী দূরত্বে পথ বাস ছাড়া আর উপায় কি?
প্রতি মাসে মোট আয়ের একটা বিরাট অংশ চলে যায় যাতায়াত খাতে। তারপরও সর্বদাই মনে ভয় জাগে, জান নিয়ে নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারবো তো? নাকি দুই বাসের চিপায় পড়ে হাত খুয়াবো। পা খোয়াবো । নাকি বাসের চলায় পিষ্ট হয়ে জানটাই খোয়াবো।
আমার মনে হয় বাস, ট্রাক ইত্যাদি চালানোকে যারা পেশা হিসাবে নেবেন তাদের একটি মিনিমান পড়াশোনা থাকা দরকার। দরকার ভালো প্রশিক্ষণের। তাহলে তারা অন্ততঃ কিছু নিয়মনীতি, আইন কানুন জানবে। যার তার হাতে স্ট্রিয়ারিং ধরার লাইসেন্স দেয়া যুক্তিসঙ্গত নয়।
যখন কলেজে পড়তাম তখন বাসে কিছু ক্যাচাল প্রায়ই চোখে পড়ত। যেমন-
১।
কন্ডাক্টরঃ ভাড়া দেন।
যাত্রীঃ পরে নাও।
কন্ডাক্টরঃ এখন দেন। পরে ভুইলা যাইতে পারেন।
যাত্রীঃ অই ব্যাটা, আমি যামু মীরপুর। ভাড়া পরে নে।
কন্ডাক্টরঃ পরে তো আমার মনে থাকবো না। বিরাট লছ হইবো।
যাত্রীঃ আমার ঠিকই মনে থাকবো।
কন্ডাক্টরঃ ভাড়াটা দিয়া দেন।
যাত্রীঃ চুপ বেয়াদব! মারবো এক থাপ্পড়!
এই সব যাত্রীরা পরে আর ভাড়া দিত না তা যাচাই করে দেখার মতো ধৈর্য কিংবা ইচ্ছা কোনটাই আমার ছিল না। তবে আমি ব্যাক্তিগতভাবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রিপেইডে বিশ্বাসী। ভাড়া নিয়ে যাত্রীদেরকে বাসে উঠানো বাস কোম্পানীর দায়িত্ব। তারা টিকিট দিতে পারে। বাসে কোন কারণে প্রয়োজন হলে টিকিট দেখালেই ঝামেলা চুকে যাবে। গাড়ীতে ৫০ টি সিট থাকলে ৫০ জন যাত্রীই উঠবেন। সবাই আরামে যাবেন। অযথা ক্যাচাল কারোই ভালো লাগার কথা নয়।
২।
কন্ডাক্টরঃ ভাড়া দেন।
যাত্রীঃ হাফ ভাড়া রাখ। আমি কলেজের ছাত্র।
কন্ডাক্টরঃ কার্ড দেখান।
যাত্রীঃ কার্ড বাসায় রেখে এসেছি।
কন্ডাক্টরঃ তাইলে পুরো ভাড়া দেন।
যাত্রীঃ বললাম তো ছাত্র। হাফ ভাড়া নে।
কন্ডাক্টরঃ হাফ ভাড়া দিতে চাইলে কার্ড দেখাতেই অইবো।
যাত্রীঃ অই ব্যাটা মারবো এক চড়! বললাম না কার্ড বাসায় রেখে এসেছি।
ছাত্র প্রমাণ করতে চাইলে কার্ড তো দেখাতেই হবে। অথচ খুব কম জনকেই দেখেছিলাম তারা কার্ড দেখাতো।
আরেক ধরনের লোক ছিল তারা পরিচয় দিতঃ আমি স্টাফ। স্টাফ ব্যাপারটা আমি বুঝতাম না। পরে পর্যবেক্ষণ করে বুঝতে পারলাম- স্টাফ মনে হচ্ছে তিনি অন্য কোন বাসে চাকরি করেন। তাই তিনি ভাড়া দিবেন না। সেখানেও ক্যাচাল। বাইরের চেহারা দেখে তো আর বুঝার উপায় নেই তিনি আসলেই কোন বাসের স্টাফ কিনা। স্টাফরা কোন ভাড়া দেবে না। কিন্তু তাদের পরিচয় পত্র থাকতে হবে।
৩।
কন্ডাক্টরঃ ভাড়া দেন।
যাত্রীঃ ভাড়া দিতে অইবো ক্যান, আমি তো স্টাফ।
কন্ডাক্টরঃ কার্ড দেখান।
যাত্রীঃ কার্ড বাসায় রেখে এসেছি।
কন্ডাক্টরঃ তাইলে ভাড়া দেন।
যাত্রীঃ বললাম তো স্টাফ। আমার ভাড়া লাগে না।
আবার শুরু হয়ে যেত ক্যাচাল। আজকাল এই সব ক্যাচাল আছে কিনা আমার জানা নাই। না থাকলে ভালো। ক্যাচাল জীবনকে বিষাদময় করে তুলে।
আমাদের বাসগুলোতে সাধরণতঃ নিম্নমধ্য বিত্তের চলাচল। বাসে নানান হৈ চৈ হয়। ধাক্কাধাক্কি হয়। পকেট মার হয়। জীবন যে কি কষ্টের সেটা বাসে চড়লে সামান্য টের পাওয়া যায়। আমরা সবাই যদি বিবেকবান হই, অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল হই, সততা আর ন্যায়বান হই তাহলে বাসও হতে পারে আনন্দপূর্ণ একটি জায়গা।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ৯:১৬