ধর্ষণ এমন একটি অভিব্যক্তি যার প্রতি একটা অদম্য আকর্ষণ কাজ করে নারী পুরুষ নির্বিশেষে আমাদের এই উপমহাদেশীয় সমাজে। আমরা ধর্ষিতার সমর্থনের বদলে তার ধর্ষণের পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা উদ্ধারেই ব্যতিব্যস্ত, যেখানে তাকে উপবাসন ও ধর্ষকের শাস্তি বিধানই হল আমাদের দায়িত্ব। বরং, আমরা হয়ে যাই নীরব বা পরোক্ষ দর্শনকারী ধর্ষক। চাই সে হোক নারী, হোক পুরুষ।
কেন আমাদের নারীদের ধর্ষণের মতন ঘৃণ্য ও তিক্ত অপমানকর পরিস্থিতির স্বীকার হতে হবে?
কারণ, আমাদের সমাজ, ধর্ষকদেরকে পূজা করে, তাদেরকে সম্মান করে, ভয় করে সমীহ করে।
বলুনত, সংবাদপত্রে প্রতিদিন যে কয়টা ধর্ষণের রসালো বর্ণনা আপনার লোভাতুর ধর্ষক দর্শক দৃষ্টি পড়ে, সেই দৃষ্টিতে কয়টা ধর্ষকের শাস্তির কথা পড়ে? বা পত্রিকাতেই বা কটা শাস্তির কথা শুনি আমরা। উত্তর আসবে একটাও না, বা জানিই না আদৌ কি হয়েছে ঐ মানবপশু ধর্ষকের।
এই যে, আপন জুয়েলার্সের ছেলের কীর্তিকলাপে আপনাদের ওয়াল ধুয়ে মুছে সাফ, বলি কয়জনে আপন জুয়েলার্স বয়কট করেছেন?
আপনি যতবার আপন জুয়েলার্সের পণ্য এঘটনার পর কিনছেন, উপরন্তু, যখনই এদেশের জুয়েলার্সদের কাছ থেকে পণ্য কিনছেন আপনি ততবারই এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার সমর্থন করছেন। কারণ এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার এখনও হয়নি। ঠিক এই কাজটাই যদি আমরা করতে পারতাম, তবে “ধর্ষণ” - নামক ঘৃণ্য কাজটা অনেক কমে যেত।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ধনীদের দ্বারা ধর্ষণের সংখ্যাটা বেশি হয় এবং এদের সাজা হয় না বললেই হয়। বরং এরা কয়টা ধর্ষণ করতে পারল সেটার প্রতিযোগিতা হয়, পার্টি হয় তাদের নিজেদের মধ্যে। আর্থিকভাবে, সামাজিকভাবে - শুধু আইনিভাবে নয়, যদি এদেরকে কোনঠাসা করি আমরা, তবে এরা পেটের দায়ে, ভয়ে এধরনের অন্যায় করার সাহসই পাবে না।
ধর্ষণের শাস্তিগুলাও কিন্তু নেহাত কম। কয়েক বছর জেল আর কিছু ফাইন – এই ত, শেষ। তাতে করে এদের সাহস যায় বেড়ে। আর, ধর্ষণের পর হত্যা করা হলে সেটা মৃত্যুদণ্ডের আওতায় পড়ে, কিন্তু ধর্ষিতা বেচে থাকলে সেক্ষেত্রে সাজা কমই হয় বৈকি।
সামাজিকভাবে এদেরকে হেয় কেউ করে না, কারণ, এরা সমাজের, রাষ্ট্রের মাথা ! অনেক প্রভাবশালী হর্তাকর্তা।
তাই, বাস্তববাদী হউন, নিজের Bargaining power টা ব্যবহার করুন, আর সোচ্চার হউন, কঠোর সাজা দিন। তবেই তো, এই জঘণ্য কাজটা আর হবে না।
এর সাথে আরেকটা বিষয় মনে রাখতে হবে সেটা হল, “ধর্ষণের” অপব্যবহার যেন কেউ না করতে পারে।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ অনুযায়ীঃ
ধর্ষণ, ধর্ষণজনিত কারণে মৃত্যু, ইত্যাদির শাস্তি
৯৷ (১) যদি কোন পুরুষ কোন নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন, তাহা হইলে তিনি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন৷
ব্যাখ্যা৷- যদি কোন পুরুষ বিবাহ বন্ধন ব্যতীত ১[ ষোল বত্সরের] অধিক বয়সের কোন নারীর সহিত তাহার সম্মতি ব্যতিরেকে বা ভীতি প্রদর্শন বা প্রতারণামূলকভাবে তাহার সম্মতি আদায় করিয়া, অথবা ২[ ষোল বত্সরের] কম বয়সের কোন নারীর সহিত তাহার সম্মতিসহ বা সম্মতি ব্যতিরেকে যৌন সঙ্গম করেন, তাহা হইলে তিনি উক্ত নারীকে ধর্ষণ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন৷
(২) যদি কোন ব্যক্তি কর্তৃক ধর্ষণ বা উক্ত ধর্ষণ পরবর্তী তাহার অন্যবিধ কার্যকলাপের ফলে ধর্ষিতা নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অন্যুন এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন৷
(৩) যদি একাধিক ব্যক্তি দলবদ্ধভাবে কোন নারী বা শিশুকে ধর্ষন করেন এবং ধর্ষণের ফলে উক্ত নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে বা তিনি আহত হন, তাহা হইলে ঐ দলের প্রত্যেক ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অন্যুন এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন৷
(৪) যদি কোন ব্যক্তি কোন নারী বা শিশুকে-
(ক) ধর্ষণ করিয়া মৃত্যু ঘটানোর বা আহত করার চেষ্টা করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন;
(খ) ধর্ষণের চেষ্টা করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি অনধিক দশ বত্সর কিন্তু অন্যুন পাঁচ বত্সর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন৷
(৫) যদি পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন সময়ে কোন নারী ধর্ষিতা হন, তাহা হইলে যাহাদের হেফাজতে থাকাকালীন উক্তরূপ ধর্ষণ সংঘটিত হইয়াছে, সেই ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণ ধর্ষিতা নারীর হেফাজতের জন্য সরাসরিভাবে দায়ী ছিলেন, তিনি বা তাহারা প্রত্যেকে, ভিন্নরূপ প্রমাণিত না হইলে, হেফাজতের ব্যর্থতার জন্য, অনধিক দশ বত্সর কিন্তু অন্যুন পাঁচ বত্সর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অন্যুন দশ হাজার টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন৷
এখানে একটা বিষয় লক্ষ্যণীয় যে, এই আইনের যেন অপব্যবহার না হয়, যেমনটা আমরা দেখেছি “The Gone Girl (2014)” মুভিতে। নায়িকা প্রতিশোধ নিতে একান্তে মিলিত হয়, পরে নিজেকে আহত করে এবং ধর্ষণের মিথ্যা মামলা দিয়ে নিরপরাধ ব্যক্তিদের শাস্তি দেয়।
সাজ্জাদ হোসেন
রাতঃ ১১ঃ৪০
বৃহস্পতিবার,
মে ১১, ২০১৭
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মে, ২০১৭ বিকাল ৪:১২