মসজিদ। রোজার মাসে কি নিয়ে লিখা যায় তা নিয়ে আগেই কনফিউশনে ছিলাম। এর ভিতর একটা ক্যাম্পেইন ছিলো যাএাবাড়িতে। সেখানে যেয়ে একটা মসজিদ দেখে খুব ভাল লাগলো। বাসায় এসে নেট ঘেটে বের করলাম বেশ কিছু মসজিদের ছবি। কিন্তু তার ভিতর থেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ১০ টা মসজিদের খোজ করতে যেয়ে আমি আবার কনফিউশনে পরে গেছিলাম। কারন প্রত্যাকটি মসজিদই সুন্দর। এর ভিতর খুব সুন্দর বা কম সুন্দর বলে কিছু নাই আসলে। যা হোক, আমার চোখ কিছু মসজিদের বৈশিষ্টের ভিতর আটকে ছিলো। তাই এই তালিকা বানাতে হলো। আশা করি আপনারাও একমত হবেন।
১০) The Sultan Ahmed Mosque of Istanbul, Turkey
পরন্ত বিকালে সুলতান আহমেদ মসজিদ।
দুর থেকে ছয় মিনারের সুলতান আহমেদ মসজিদ।
ভিতরের কারুকাজ।
রাতের বেলা সুলতান আহমেদ মসজিদ।
সুলতান আহমেদ মসজিদ ইস্তানবুলের একটি ঐতিহাসিক মসজিদ। মসজিদের অভ্যন্তরের দেওয়াল নীল রঙের টাইলস দিয়ে সুসজ্জিত বলে এই মসজিদটি ব্লু মস্ক বা নীল মসজিদ নামে পরিচিত। এটি ১৬০৯ থেকে ১৬১৬ সালের মধ্যে অটোমান সম্রাজ্যের সুলতান আহমেদ বখতি নির্মাণ করেন। মসজিদ কমপ্লেক্সে একটি মাদরাসা, একট পান্থনিবাস এবং প্রতিষ্ঠাতার সমাধি অবস্থিত। যদিও বর্তমানে এটি মসজিদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তথাপি এটি ইস্তানবুলের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন আকর্ষণ।
সুলতান আহমেদ মসজিদের ভিতরের প্যানারোমা।
৯) Faisal Masjid of Pakistan
কাছে থেকে ফয়সাল মসজিদ।
দিনের বেলা ফয়সাল মসজিদ।
ফয়সাল মসজিদের অভ্যন্তর।
ঈদের সময় ফয়সাল মসজিদ।
রাতের ফয়সাল মসজিদ।
সৌদির প্রয়াত বাদশা ফয়সাল বিন আব্দুল আজিজের অর্থায়নে এই মসজিদটি তৈরি হয়। এই মসজিদটির লোকেশন এমন জায়গায় যে দিনে অথবা রাতে এই মসজিদ কয়েক মাইল দুর থেকে চোখে পরে। এটি পাকিস্তানের জাতীয় মসজিদ ও দক্ষিন এশিয়ার সবচেয়ে বড় মসজিদ গুলোর ভিতর একটি।
ফয়সাল মসজিদ ও পিছনে মার্গাল্লা পাহাড়শ্রেনী।
৮) Masjid Nabawi of Saudi Arabia
আমাদের প্রিয় নবীজির মসজিদ এটি। মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় পবিএ জায়গা হলো এটি। এটি সম্পুর্ন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ও মার্বেল পাথর দিয়ে ডেকরেট করা।
মসজিদে নববীর প্যানারোমা।
৭) Sultan Omar Ali Saifuddin Mosque, Bandar Seri Begawan, Brunei
সামনে থেকে তোলা ছবি। ছবিতে যে নৌকার মত পাটাতন দেখা যাচ্ছে তা কিন্তু একটা পুকুরের মধ্যে খানে।
মসজিদে যাওয়ার রাস্তা।
পুকুরে একটা নৌকার মত পাটাতন ও একটি ঝড়না আছে।
চার লাখ জনসংখ্যার ব্রুনাই এর রাজধানীতে এই মসজিদ অবস্থিত। এর টপ ডোম টি পুরো সোনা দিয়ে তৈরি। ব্রুনাই এর সুলতান এই মসজিদটি তৈরি করতে ৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার খরচ করেন। তিনি ইটালি থেকে ইতালিয়ান মার্বেলের পিলার ও ফ্লোর আনেন, সাংহাই থেকে গ্রানাইড, ক্রিষ্টালের ঝাড়বাতি গুলো আনেন ইংল্যান্ড থেকে ও কার্পেট আনেন সৌদিআরব থেকে।
৬) Crystal Mosque, Kuala Terengganu,Malaysia
রাতের ক্রিষ্টাল মসজিদ।
দিনের ক্রিষ্টাল মসজিদ।
এই মসজিদটি মালায়শিয়াতে অবস্থিত, এর কাঠামো স্টিল, গ্লাস ও ক্রিষ্টালে তৈরি। ২০০৬-২০০৮ সালে এটি Wan Man দ্বীপের Islamic Heritage Park-এ তৈরি করা হয়। এখানে ১৫০০ মুসল্লি এক সাথে নামাজ আদায় করতে পারেন। এটি ২০০৮ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি সবার জন্য খুলে দেওয়া হয়।
৫) Qol Sharif Mosque of Kazan Kremlin, Russia
সামনে থেকে তোলা ছবি।
মসজিদের পিছন থেকে তোলা ছবি।
এটি রাশিয়ার সবচেয়ে বড় মসজিদ। এখানে ৬০০০ মুসল্লি একসাথে নামাজ আদায় করতে পারে। ১৬ শতাব্দিতে এই মসজিদ তৈরি করা হয়। ১৫৫২ সালে Qolşärif (যিনি এই মসজিদের দায়িত্বে ছিলেন) ও তার বহু সংখ্যক ছাএ নিহত হয় রাশান ফোর্সের আক্রমনে। ১৯৯৬ সালে এটিকে পুনরায় তৈরি করা হয়।
৪) Grand Mosque of Djenné of Djenné, Mali
মসজিদের মুল ফটক।
ফ্রান্সের একটি পোস্টকার্ডে মসজিদের ধ্বংশাবশেষের ছবি।
১৮৯৫ সালে তোলা ছবিতে মূল মসজিদের ছবি।
১৯১০ সালে একজন আর্টিষ্টের আঁকা ছবিতে।
বের হয়ে আসা কাঠের টুকরাগুলো মসজিদের ডেকরেশনেরই একটি অংশ, কিন্তু এগুলো বার্ষিক রক্ষনাবেক্ষনের সময় সাহায্য করে।
মূল ফটক।
১৯৩০ সালের ছবি, ফ্রান্সে এই মসজিদের রেপ্লিকা।
সম্পুর্ন মাটির তৈরি এই মসজিদটি ১২০০ থেকে ১৩৩০ সালের ভিতর তৈরি করা হয়েছিলো। কিন্তু পৃথিবীর মানুষ এর কথা জানতে পারে ১৮২৮ সালে যখন ফ্রেন্চ অভিযাত্রী René Caillié, Djenné-তে ভ্রমনে আসেন, তিনি লিখেছিলেন, "In Jenné is a mosque built of earth, surmounted by two massive but not high towers; it is rudely constructed, though very large. It is abandoned to thousands of swallows, which build their nests in it. This occasions a very disagreeable smell, to avoid which, the custom of saying prayers in a small outer court has become common." মসজিদটি অনেকদিন পরিত্যাক্ত অবস্থায় পরে ছিলো ফলে মসজিদটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। মসজিদের এখনকার চেহারা দেওয়া হয় ১৯০৭ সালে। ১৯৮৮ সালে এটিকে ইউনেস্কো ওয়াল্ড হেরিটেজ সাইট হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করে।
৩) Sheikh Zayed Mosque of Abu Dhabi, U.A.E
মসজিদের সাইড ভিউ।
মসজিদের সামনে থেকে তোলা ছবি।
মসজিদের চারপাশের পুল।
কার্পেটে মোড়ানো মসজিদের মুল হল রুম।
কারুকাজে ভরা দেয়াল।
কলামের সাড়ি।
প্রবেশপথ।
এই সেই ঝাড়বাতি। নিচে বর্ননা দিয়েছি।
মহিলাদের জন্য নির্ধারিত জায়গা।
এটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে অবস্থিত। এখানে একসাথে ৪০,০০০ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারে। এখানে মহিলাদের জন্য নামাজের ব্যবস্থা আছে। এর চার কোনায় চারটি মিনার আছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট জায়েদ বিন সুলতান আল নাইয়ান এই মসজিদ নির্মানে উদ্দোগ নেন। এই মসজিদে ৮২ টা ডোম, ১০০০ অধিক কলাম, ২৪ ক্যারেট সোনা দিয়ে বানানো ঝাড়বাতি ও পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হাতে তৈরি কার্পেট দিয়ে সাজানো। মুল হলে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ঝাড়বাতিটি আছে যা ১০ মিটার ছড়ানো, ১০ মিটার উচ্চতার ও ১২ টন ওজনের। মসজিদটির চারপাশে পানির পুল দিয়ে ঘেরা যা মসজিদটির সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দেয়।
মসজিদের প্যানারোমা।
২) James Asr Hassanal Bolkiah Mosque of Brunei
সামনে থেকে মসজিদের ভিউ।
পাশে থেকে মসজিদের ভিউ।
স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন এই কলাম গুলো।
মসজিদের প্রবেশপথ।
মুল কক্ষে যাওয়ার করিডোর।
চারটি মিনারের একটি।
ফ্লোরের মার্বেলের কারুকাজ। অসাধারন তাই না ??? পাথরে এমন প্যাটার্ন আঁকা মুখের কথা না।
এই মসজিদটি সুলতান হাসানাল বলখিয়া মু'জাদিন ওয়াদ্দুলাহ এর নামে নামকরন করা হয়েছে। এর নির্মান কাজ ১৯৮৮ সালে শুরু হয় এং ৫ বছর পর ১৯৯৪ সালের ১৪ই জুলাই সুলতানের জন্মদিনের আগের রাতে সবাট জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এটি ব্রুনাই এ অবস্থিত। এটি সুলতানের সিংহাসন আরোহনের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে ব্রুনাইবাসিদের প্রতি সুলতানের উপহার ছিলো। এখনে একসাথে ৪০০০ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারে।
১) Al-Masjid Al-Haram, Holy Makkah of Saudi Arabia
১৮৫০ সালের মক্কা।
১৯১০ সালের মক্কা।
আল মসজিদ আল হারাম এর মিনার।
কাবা শরীফ।
জমজম কূপের পানি সর্বরাহ হয় এখানে।
আল সাফা পর্বতের অংশবিশেষ, আল মসজিদ আল হারাম এর ভিতরে।
কালো পাথরে চুম্মন।
আল মসজিদ আল হারাম এর অভ্যন্তর।
আল মসজিদ আল হারাম। সৌদিআরবের মক্কায় অবস্থিত এটি দুনিয়ার সবচেয়ে বড় মসজিদ। এই মসজিদ মুসলমানদের সবচেয়ে পবিত্র জায়গা কাবা শরিফের চারপাশে ঘিরে রেখেছে। এই মসজিদের আয়তন(ইনডোর ও আউটডোর মিলিয়ে) ৩৫৬,৮০০ বর্গমিটার (৮৮ একর)। হজ্জের সময় এই বিশাল জায়গায় ২০ লাখ মুসুল্লি এক সাথে নামাজ আদায় করতে পারে। বাংলাদেশে সম্ভব না হলেও এখানে নারী ও পুরুষ একসাথে নামাজ আদায় করতে পারে।
২০০৭ সালে বাদশা আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল আজিজ মসজিদের আয়তন বাড়ানোর কাজ শুরু করেছেন যা ২০২০ সালে শেষ হবে। একটা প্রোগ্রাম দেখেছিলাম ডিসকভারি চ্যানেলে, সেখানে এই মসজিদের কারুকাজ দেখে মাথা ঘুরতাছিলো। বর্ননাতে না গেলাম, কারন এর বর্ননা দিতে হলে একটা আস্ত ব্লগই লাগবে, পোস্টে কাজ হবে না।
২০০৭ সালের হজ্জের সময়ের প্যানারোমায় আল মসজিদ আল হারাম।
(সবাই দোয়া করবেন যেন খুব দ্রুত হজ্জ করে আসতে পারি)
(বি.দ্র. ছবি গুলোর সাথে ক্যাপশন দিব। আজ রাত ১০ টার মধ্যে। সাথে থাকবেন আশা করছি এবং প্লিজ ফিডব্যাক জানাবেন)
(যথারীতি, সবার দৃষ্টি আকর্ষন করছি। আমরা কাওমি মাদ্রাসার ছাএ-ছাএীদের মুখের যত্ন ও রোগ প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি নিয়ে কাজ করছি। আপনারা আমাদের ফেসবুক গ্রুপ Children's Oral Health Development Foundation (COHDF) ফলো করে আমাদের এক্টিভিটি সম্পর্কে জানতে পারবেন। এছাড়া ব্লগে তো আমি পোষ্ট করবোই। নিজেদের সামর্থে এই বিশাল প্রোজেক্ট শেষ করা এক কথায় খুবই কঠিন। কিভাবে মুখের যত্ন নিতে হয়, কিভাবে দাঁত ব্রাশ করতে হয় কিভাবে হাত ধুতে হয় তা হাতে কলমে শেখানো ছাড়াও প্রতিটা মাদ্রাসা ছাএ-ছাএীকে আমরা বিনামুল্যে টুথব্রাশ, টুথপেষ্ট ও সাবান দিচ্ছি। এই প্রোজেক্ট চালাতে আমাদের এখন ব্যক্তিগত ও কর্পোরেট ফান্ড খুব দরকার। তবুও আমরা সাহস করে শুরু করেছি এবং আশা করছি আপনারা সবাই এগিয়ে আসবেন। আপনাদের যেকোন ধরনের সহায়তা আমাদের কাজকে এগিয়ে নিবে।
আমাদের মেইল করতে পারেন - cohdfbd@gmail.com
যে কোন তথ্যের জন্য আমাকে ফোন করতে পারেন - ০১৬৮১ ৪০৯ ৭৭৯ )
ধন্যবাদ সবাইকে।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ৩:২০