somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হারানো সুর

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-সিগারেট খাওয়াও ছাড়তে পারলি না, আমাদের কথাও ভাবস না, সারাদিন ঘরের মধ্যে দরজা বন্ধ করে বসে থাকস, কারোর সাথে সুন্দর করে কথাও বলস না, পড়াশোনাও করস না, আগে দেখতাম গিটার নিয়ে গান গাইতি; এখন তাও করস না, নামাজও আর পড়স না। তুই তো শেষ রে অন্তর।
-নিজের শেষ দেখতে ভালো লাগে।
-এভাবে চললে তো হবে না।
-আগেও এভাবে চলেছি, আবার ঠিকও হয়ে গেছি।
-না আগে এমন ছিলি না।
-ছিলাম, খোঁজ খবর নেওনি।
-তোকে আমাদের চেয়ে ভাল আর কে চিনবে?
-রাইট! তবে হাণ্ড্রেড পার্সেন্ট না। নাইন্টি পার্সেন্ট।
-প্রীতি-নয়নাদেরও আগে আদর করতি, চিপস, চকলেট আনতি। এখন তাও না।
-আদরের জন্য গা ধরে সারাদিন ডলাডলি করতে হয় না। মন থেকেও আদর করতে হয়।
-নাদিয়াকে ম্যাথ, ফিজিক্স গুলো দেখিয়ে দিলেও তো পারস।
-পারি না। ভুলে গেছি।
-হঠাৎ এমন বদলে গেলি কেন?
-হঠাৎ না। এটা আমার স্বভাব। মাঝে মাঝে এরকম বদলে যাই।
-কেন? তুই কি নিজে খুব হ্যাপি?
-হুমম, খুব হ্যাপি। বদলে যাওয়ার মাঝে অন্যরকম মজা আছে।
-আমার সাথে ভাব ধরা কথা বলবি না।
-জ্বি আচ্ছা বলবো না।
-এরকম চুপচাপও থাকবি না।
-আমি নাচানাচি করতে পারবো না।
-তুই এমন কেন? তোকে আমি বুঝি না। তুই কি আমার ছেলে?
-কেন তোমার কোন সন্দেহ আছে?


আফরোজা বেগম আর কথা বলেন না। ঘর থেকে নিশ্চুপ হয়ে বেড়িয়ে যান। অন্তর আগোছালো নোংরা বিছানাটায় শুয়ে সিলিং ফ্যানের দিকে তাঁকিয়ে থাকে। সিলিং ফ্যান চলার সময় একটা ঘড়ঘড় শব্দ হয়। ক্লক-ওয়াইজভাবে ঘোরে। মোটরে কোন সমস্যা থাকলেও থাকতে পারে। একটা সময় নিজের সবকিছুকে একদম পরিপাটি রাখতে খুব ইচ্ছা হতো। এখন আগোছালো হয়ে থাকতেই কেন যেন বেশ ভালো লাগে অন্তরের। টেবিলের পাশে গিটারটা পড়ে আছে। পাশের বাসায় কন্সট্রাকশনের কাজ চলছে। অল্পতেই ঘর ময়লা হয়ে যায়। গিটারের উপর ধূলা পড়ার কারণ সেটাও হতে পারে। আবার অনেকদিন গিটার হাতে না নেওয়াতেও হতে পারে। আজকে গিটারটা নেওয়া যাক। গান মাথায় ঘুরছে। কিন্তু মুড নেই। অন্তর গিটারটা হাতে নেয়।

অন্তর গলা ছেড়ে গান গাইছে। ইয়াং বয়সে ছেলে-মেয়েরা সাধারণত ব্যাণ্ডের গান গায়। বেশির ভাগ গানই "আমি তুমি, তুমি নেই, তুমি ছাড়া কাটে না" এসব উপমা ইউজ করা হয়। এই বয়সে আবেগের নদীতে উত্থাল-পাত্থাল ঢেউ উঠে। হাবীবুর রহমানের ছেলে সেরকম না। সে রবীন্দ্র সঙ্গীতই বেশি গায়। তাদের সময় ধারণা ছিল রবীন্দ্রসঙ্গীত শুধু হারমোনিয়াম, তবলা, সেতারা দিয়েই গাইতে হয়। গিটার দিয়েও যে গান গাওয়া যায় তা তাঁর নিজ ছেলেকে না দেখলে তিনি হয়তো জানতেন না। অন্তর গান গাইলে তিনি সব কাজ ফেলে চুপ করে চোখ বন্ধ করে গান শোনেন। ছেলেটার গলায় মায়া আছে। ছেলেরা সাধারণত মায়া দিয়ে গাইতে পারে না। মায়া জিনিসটা পুরুষদের মাঝে নেই। তাঁর মাঝেও নেই। ছেলের মাঝে তাহলে এত মায়া কিসের?

-পড়াশোনা বাদ দিয়ে সারাদিন গান গাও কেন?
-জানি না।
-যে জিনিস জানো না, সে জিনিস তাহলে কর কেন?
-তাও জানি না।
-এই জানি না রোগের ওষুধ কি জানো?
-জানি।
-কি?
-জানার জন্য চেষ্টা করা।
-না হয়নি। মার। শক্ত মার।
-ও।
-এমন ভাবে ও বললে যেন, আমি কিছুই বলিনি। বাবাকে ভয় পাও না।
-হুমম পাই।
-তাহলে এভাবে কথা বলছো কেন?
-জানি না।

হাবীবুর রহমান অন্তরের দিকে এগিয়ে আসেন। হাত থেকে গিটারটা কেড়ে নেন। ছেলে কোন বাঁধা দেয় না। গিটার নিয়ে ওয়ালের পিলারের মাঝে বেশ জোড়ে একটা বাড়ি মারেন। গিটারটা দু ভাগ হয়ে যায়। তিনি এখন গিটারের এক ভাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।

-গোসল করে রেডী হও। আমার অফিসে যাবে। পড়াশোনা না করলে সোজা অফিসে কেরানীগিরি করবে। ঘরে বসিয়ে বসিয়ে পালতে পারবো না। বড় স্যারকে বলে তোমার জন্য সুপারিশ করবো। সেকেণ্ড ক্লাস অফিসারের ছেলে কেরানীর বেশি আর কি হবে।
-জ্বি আচ্ছা। বেতন কত হবে? আলোচনা করে নেওয়া যাক।
-ফাজিলের ফাজিল। বেতন নিয়ে আলাপ কর।
-আচ্ছা তাহলে করবো না।
-আর দেখি সিগারেটের প্যাকেটটা আমার কাছে দাও। ঘরে বসে সিগারেট খাও কত্তবড় বেয়াদব হয়েছো তুমি কি নিজে জানো?
-না।
-ফাইন। এখন জানলে। ঘরে বসে আর কখনো সিগারেট খাবে না।
-জ্বি আচ্ছা। অন্য কিছু কি চলতে পারে?

হাবীবুর রহমান সাহেব জবাব দেন না। ছেলে নিস্পকল চোখে সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে আছে। তিনি যে তার সঙ্গে কথা বলছেন, সেদিকেও তার খেয়াল নেই। গিটার ভেঙে তাঁর নিজের কাছেই খারাপ লাগছে। গিটারটা না ভাংলেও হতো।

-যাও তাড়াতাড়ি গোসল কর।
-ওকে।

অন্তর আবারো বিছানায় সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে থাকতে ভালো লাগছে। ঘুম ধরে যাচ্ছে। আরামে না, সিলিং ফ্যান ঘোরার শব্দে। কিছুটা তন্দ্রা ভাবও এসেছে। বাইরে প্রচণ্ড রোদ। গরমটা ওয়ালের ভেতরেও টের পাওয়া যাচ্ছে। গোসলটা সারলে ভালো হতো। একবার ইচ্ছা করছে গোসল করতে, আরেকবার মনে হচ্ছে একটু ঘুমিয়ে নিলে ভালো হতো। নাদিয়া মনে হয় আসছে। মেয়েটা সবসময়ই ঘরের মাঝে ঘড়ি আর বডি স্প্রে মেখে বেড়ায়। ঘরের মাঝে ঘড়ি আর বডি স্প্রে মাখার মাঝে যে কি মজা কে জানে?

-ভাইয়া কি করিস।
-সিলিং ফ্যান দেখি।
-এটা দেখার মাঝে কি আছে?
-জানি না।
-তাহলে দেখিস কেন?
-ভাল লাগে।
-তুই এমন গম্ভীর কেন বল তো?
-আমি গম্ভীর?
-হ্যাঁ খুব গম্ভীর। এইজন্য পুষ্প আপা তোকে দেখতে পারে না।
-কেন আমার সামনে কি সে বোরকা পড়ে পর্দা করে চলে? তাঁকে তো দেখি সারাদিনই ফতুয়া আর লুঙ্গি পড়ে ঘুরে বেড়ায়।
-লুঙ্গি!
-হ্যাঁ লুঙ্গি।
-যাক এসব ভাকওয়াস কথায় যেতে চাই না।
-আচ্ছা।
এই শোন না। আমার না কাল ম্যাথ ক্লাস টেস্ট। রাজিনকে এবার টপকাতে হবে। ঐ ব্যাটা ফাজিল সবসময় হাইস্ট পায়। তুই আমাকে ম্যাথগুলো একটু দেখিয়ে দে না।
-না।
-কেন? দে না!
-দিব না। দিলে তুইও ফাজিল হয়ে যাবি। তোকেও রাজিন বলবে, “ঐ বেটি ফাজিল সবসময় আমার থেকে হাইস্ট পায়।”
-ও বললে বলুক। ওতে আমার কিছু যায় আসে না।
-তাহলে তো হলোই। ও হাইস্ট পেলেও তোর কিছু যায় আসে না।
-তুই দিবি কি না সেটা বল।
-না।
-তুই পারলে সে দিবি।
-টু দ্যা পয়েন্ট ধরেছিস।
-বুঝিস, পুষ্প আপাকে বলবো তোর সাথে যেন কথা না বলে।
-আচ্ছা।
-তোর কি প্রেম করতে ইচ্ছা করে না।
-না করে না।
-চিরকুমার থাকবি?
-কি জানি।
ধ্যাত আমি গেলাম।
আচ্ছা, এক কাপ চা দিয়ে যা। বাবা ঘরে সিগারেট খেতে মানা করেছে। বারান্দায় না। বারান্দায় বসে চা খেতে খেতে সিগারেট খাবো।
-তোকে চা দিব ভাবলি কি করে?
-আচ্ছা দেওয়া লাগবে না।

নাদিয়া চলে যায়। অন্তর আবারো সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে আছে। আচ্ছা আজ সিলিং ফ্যান দেখতে এত ভালো লাগছে কেন? মানুষ চাঁদের সৌন্দর্য দেখে; জোছনার সৌন্দর্য্য দেখে; কুয়াশা, গোধুলী, বৃষ্টির সৌন্দর্য দেখে। যন্ত্রের সৌন্দর্য কেউ দেখে না কেন?

ড্রয়িং রুম থেকে হাবীবুর রহমানের গলা খাঁকারির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। থমথমে ভরাট গলা। অন্তরেরও ভরাট গলা। তবে থমথমে না। গোসল সেরে ফেলা দরকার। বাসা থেকে বের না হলে একটা হাউকাউ লেগে পড়তে পারে।

গোসল সেরে অন্তর টিয়া রঙের পাঞ্জাবীটা গায়ে দেয়। পাঞ্জাবীর সাথে পায়জামা ভালো মানালেও আজকাল কেউ পাঞ্জাবীর সাথে পায়জামা নামাজে যাওয়া ছাড়া কেউ পড়ে না। জিন্সের প্যান্টই বেশি পড়ে। জিন্সের প্যান্টের পকেটে মানিব্যাগ, মোবাইল রাখতে সুবিধা।

আফরোজা বেগম ছেলেকে ঘর থেকে বেড়িয়ে যেতে দেখেন। কেমন যেন হন্তদন্ত হয়ে চলে যাচ্ছে। অন্তর মুরগীর গিলা-কলিজা-গলার লটপটি খেতে পছন্দ করে। শুকনা মরিচ, আলু দিয়ে কষিয়ে রান্নাও করেছিলেন। ছেলে ঘ্রাণ পেলে আগে দৌড়ে ছুটে আসতো। ইদানিং আসে না। ঘরের খাবারের প্রতি টান কি উঠে গেল নাকি?

-এই খেয়ে যা।
-ক্ষিধে নেই।
-রাতেও তো কিছু খাস নাই। সকালেও খাবি না। ভাত দিয়ে লটপটি খেয়ে যা।
-ক্ষিধে নেই তো মা।
-এত অল্প খেলে হবে?
-আমার পেট কুয়া না।

বাসা থেকে বের হতেই গোল্ডলীফের প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বের করল। খালি পেটে দিনের প্রথম সিগারেট খেতে বেশ ভালো লাগে। মন-শরীর দুটোই ফ্রেশ হয়ে যায়। বাথরুমও চাপে। এখন কিছুটা চাপছে। তবে কন্ট্রোলে নেওয়া যাবে। তবে বাথরুম চাপার কারণ শুধু সিগারেটই না। অন্য একটা কারণও আছে। পুষ্প রিকশায় করে ওর দিকেই এগিয়ে আসছে। এই মেয়েটার বাসা ওদের কাছে না, তবুও রোজ ক্লাস করতে যাওয়ার সময় ওদের বাসার সামনে দিয়ে যাওয়ার কারণ কি সেটা অন্তরের অজানা না হলেও এড়িয়ে যেতে সমস্যা হয় না।
রিকশাটা আস্তে আস্তে অন্তরের কাছে এসে থেমে পড়লো

-অন্তর কোথায় যাচ্ছো।
-জানি না।
-আমার সাথে ভ্যাগাবণ্ড টাইপ কথা বলবা না।
-যেটা জানি না, সেটা কিভাবে বলবো?
-ধ্যাত। ওঠো রিকশায় ওঠো।
কেন?
-উঠতে বলেছি তাই উঠবে।
-কারণ ছাড়া তো উঠতে পারবো না। স্যরি।
-আমাকে সামনে পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে এসো। যে গুণ্ডা এলাকায় থাকো, যেতেই ভয় করে।
-তাই আমাকে গুণ্ডা ভাড়া করছো।

পুষ্প জবাব দেয় না। অন্তর রিকশায় চড়ে বসে। রিকশাওয়ালাটা আস্তে আস্তে রিকশা টানছে। একবার বললোও, “মামা হুট টা টাঙ্গায় দেই।” অন্তর মানা করলেও পুষ্প হুট টাঙাতে সম্মতি দিল। ঢাকা শহরের বেশিরভাগ রিকশাওয়ালারই ছেলে-মেয়েকে একসাথে রিকশায় উঠতে দেখলেই পুঙটা প্রকৃতি জেগে উঠে। পুঙটা মানে দুষ্ট। অন্তরের নানী তাকে ছোটবেলায় “ফুঙটা ফোলা” বলে ডাকতো। ময়মনসিংহের মানুষেরা ‘প’ কে ‘ফ’ বলে আনন্দ পায়।

-তুমি কি জানো, আমি তোমাকে প্রচণ্ড ঘৃণা করি।
-জানি না।
-না জানলে এখন তো জানলে।
-হুমম।
-পড়াশোনার খবর কি?
-জানি না।
-তা জানো টা কি?
-কি জানি?
-কি জানো না সেটাই জানো না?
-না।
-গান ছেড়ে দিলে কেন?
-ছেড়ে দেইনি।
-তাহলে আর আসো কেন আড্ডায়?
-ভালো লাগে না।
-কি ভালো লাগে? মেয়েদের সাথে ফোনে গ্যাঁজাইতে?
-কি জানি।
-তুমি আজকে বিকেলে ছবির হাটের আড্ডায় গিটার নিয়ে আসবে। আমি গান শুনবো।
-দেখি।
-দেখি না। আনতেই হবে।
-চেষ্টা করবো।
-তুমি নিজেকে আসলে ভাবো টা কি?
-কিছুই ভাবি না।
-তাহলে এরকম ভাব ধরে থাকো কেন?
-আমি তো ভাব ধরি না।

রিকশা রোকেয়া হলের সামনে এসে থামে। অন্তর এতদূর পর্যন্ত আসলো কেন কে জানে? পুষ্প হ্যাণ্ডিব্যাগে কিছু একটা খুজছে বোধহয়।

-এই তোমার কাছে খুচরা ষাট টাকা হবে?
-না তো।
-কত হবে?
-কয়েকটা ভিজিটিং কার্ড।
-ওহ। আচ্ছা। তাহলে এই ৫০০টাকাটা ভাঙ্গিয়ে আনতে পারবে? আমার কাছে এই ৫০০ আর হাজার ছাড়া আর নোট নেই।
আচ্ছা।

অন্তর রিকশার পেছন দিক থেকে গিয়ে একটা টং দোকান থেকে এক প্যাকেটে গোল্ডলীফ কিনে বাকীটাকা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। টাকাটা নিয়ে এখনই চম্পট দেওয়া যায়। তবে রিকশাওয়ালা দাঁড়িয় আছে। বেচারার ক্ষতি করিয়ে লাভ নেই। সে টাকা নিয়ে না ফিরলে পুষ্প এমনিতেই অন্য কোন একটা উপায় বের করে নিবে।

অন্তরের চোখ আর রিকশাওয়ালার চোখ এখন সামনাসামনি পড়েছে। পুষ্প নিশ্চিত বেশ বিরক্ত হচ্ছে। রিকশাওয়ালাটা অন্তরের দিকে তাকিয়ে একটা ভেচকি মারা হাসি দিল। হাসির অর্থ খারাপ। অন্তরের ধারণাই ঠিক, রিকশাওয়ালা পুঙটা প্রকৃতির। অল্প না, বেশি মাত্রার পুঙটা প্রকৃতির। রিকশাওয়ালা কি বলে পুষ্পকে ভাড়া ছাড়াই রাজী করালো কে জানে, পুষ্প রিকশা থেকে নামা মাত্রই অন্তর টংয়ের দোকানের আড়ালে মিলিয়ে গেল। বার কয়েক এদিক সেদিক খোঁজাখুঁজি করে পুষ্প না পেয়ে হলের ভেতর ঢুকে গেল। মেয়েটা বাসাতেও থাকে, আবার হলেও থাকে। কেন কে জানে?

অন্তর মনে মনে রিকশাওয়ালাটার নাম দিয়েছে পুঙটা রিকশাওয়ালা। পুঙটা রিকশাওয়ালা রিকশা রেখে আস্তে আস্তে তার দিকে এগিয়ে আসছে। নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বুদ্ধি খাটিয়ে ঘুষ চেয়ে বললো, “মামা একটা চা খাওয়ান।”

রিকশাওয়ালাকে চা খাইয়ে ভাড়া মিটিয়ে অন্তর ছবির হাটের দিকে গেল। অনেকদিন পর ছবির হাটে আসা। অনেক কিছুই বদলে গেছে এমন লাগছে। অবশ্য সকাল বেলা এখানে প্রেমিক-প্রেমিক যুগল ছাড়া আর কারোর আনাগোনাই পাওয়া যায় না। মাঝে মাঝে দু একটা গাঞ্জাখোর, হেরোইঞ্চি পাওয়া যায়। বিকেলের দিকে ক্রিয়েটিভ মানুষেরা আসতে শুরু করে। একেকজন দেশকাল জাতি নিয়ে বিরাট জম্পেশ আড্ডা শুরু করে। কেউ গান গায়, কেউ স্কেচ ড্রয়িং করে, কেউ বা কবিতা পাঠ করে, কেউবা গল্প পাঠ। অন্তর আগে এখানে নিয়মতি আসতো। গাইতোও খুব। হঠাৎ একদিন মনে হল এ জায়গা তার না। এরপর থেকে আস্তে আস্তে এখান থেকে সরে আসা শুরু করলো।

ছবির হাটের ইটের রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে বহুদূর চলে যায় সে। অনেকক্ষণ হাঁটার পর ছায়াতলে একটা বেঞ্চ পেয়ে বসে পড়ে। প্রচণ্ড গরম। গাছগাছালি থাকার জন্য সেভাবে গরমটা বোঝা যাচ্ছে না।

ছোট ছোট কিছু ঘণ্টার মতো মানুষের স্মৃতি। অনেক উপরে বাশের সঙ্গে একটা ঘন্টা ঝুলিয়ে রাখা হলে ঘন্টাটা কিন্তু সারাদিন অচল থাকে, অথচ হঠাৎ একটু বাতাস লেগে গেলে ঘন্টার গায়ে লেগে যায়, আর ওমনি টিং করে শব্দ হয়। একটা ঘন্টার গায়ে লাগলে আরেকটা ঘন্টার গায়ে লাগে, আরেকটার লাগলে আরেকটার। এভাবে ঘন্টা অনেকক্ষণ ধরে বাজতে থাকে। বাতাস থেমে গেলে আবার ঘন্টাগুলো অচল হয়ে বসে থাকে। মানুষেরও তেমনি এরকম এন্টিনা থাকে, সেখানে সিগন্যাল পেলেই টিং করে শব্দ হয়, তারপর একের পর এক সুর তার মাথায় চলে আসে।

আস্তে আস্তে চারপাশ মেঘলা হয়ে আসে। ঠাণ্ডা বাতাসও বইতে শুরু করছে। গাছের পাতায় খস খস শব্দ করে বাতাস এমাথা থেকে ওমাথা যাচ্ছে। হঠাৎই অন্তরের সিলিং ফ্যানের শব্দের কথা মনে পড়ে যায়। আস্তে আস্তে একের পর এক সুরের ধারা, লিরিক মনে পড়ে যাচ্ছে। অনেকদিন গান বাঁধা হয় না। এই ঝড়ের সময় কেন যেন খুব গান বাঁধতে ইচ্ছা করছে। স্টেজ শো’তে প্রথম সেই অ্যাওয়ার্ড, মিউজিক ডিরেক্টরের সাথে অ্যালবাম বের করার কন্টাক্ট সাইন, তারপর হুট করেই গানের সুর, লিরিক উড়ে যাওয়া সবকিছুই বিগড়ে দেয়। চেনা-অচেনা মানুষদের সাথে আস্তে আস্তে দূরত্ব বাড়তে থাকা সবই নিয়ম মেনে হয়, অথচ গানের সুর আর মেলে না। আজ বহুদিন পর ঝড়ের বাতাসের শব্দে হারানো সুর, লিরিকগুলো মনে পড়ছে। ঝড়ের বাতাসের শব্দও তো খুব একটা খারাপ না।



৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মায়ের কাছে প্রথম চিঠি

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:০৪

Ex-Cadets Literary Society নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ আছে, আমি যার সদস্য। এই গ্রুপে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত স্বনামধন্য লেখক ও এক্স-ক্যাডেট শাকুর মজিদ একটি পোস্টের মাধ্যমে জানিয়েছেন যে ক্যাডেট কলেজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রানশিপমেন্ট বাতিলের পর বাংলাদেশ কী করতে পারে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:২৩

১.০
আমি তখন সাউথ কেরিয়ার কিউং হি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্ডাস্ট্রি ও ট্রেড পলিসিতে মাস্টার্স করছি। আমার একটা কোর্সের নাম ছিল থিওরি অ্যান্ড প্রকটিসেস অব গ্লোবাল ট্রেড গভর্নেন্স। কোর্সটি পড়াতেন প্রফেসর Wook Chae... ...বাকিটুকু পড়ুন

সময় থাকতে মনা হুশিয়ার......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪

সময় থাকতে মনা হুশিয়ার......


ফ্যাসিবাদের দুঃশাসনকালে সময়ের চলমান প্রক্রিয়ায়, নাগরিক দ্বায়িত্ব পালনে দেশের প্রয়োজনে রাজপথে আমরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি। কীবোর্ডকে অস্র বানিয়ে স্বৈরশাসকের হৃদয় ফালাফালা করে দিয়েছি। ফলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

চৈত্র সংক্রান্তি থেকে পহেলা বৈশাখ বহমান আনন্দধারা।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২৮


চৈত্র মাসের বাতাসে যে সুগন্ধা হওয়ার দোলন সে ব্যাপারটার প্রশান্তি অনন্য! মাঝ দুপুরের তপ্ততা, নুয়ে আসা বিকেলে আচমকা দুরন্ত দুষ্ট ঝড়, অথবা সন্ধ্যার আজানের ঘরে ফেরার ব্যস্ত ধ্বনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজা, ওসামা, পাকিস্তান, নাজি : বাংলাদেশে মাল্টিভার্স পতাকা বিপ্লব !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:১২


গত একসপ্তাহ ধরে ফিলিস্তিনের গাজাবাসীর উপর ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে সারা বাংলাদেশে প্রতিবাদের ঝড় বয়ে গেছে। কিন্তু এই প্রতিবাদের মিছিলে এমন সব পতাকা, সিম্বল ও ছবি হাতে প্রতিবাদীরা মিছিল করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×