somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

শরিফুল ইসলাম (ফরহাদ)
জন্ম মৃত্যুর মাঝখানের সময়টাতেই আমাদের চাহিদা বেশি,সেটাই মূল্যহীন।nঅন্ধ মানবজাতি মূল্যহীন ইহকালের পথেই বেকুল।nআল্লাহ্ আমাদের নেক হেদায়েত দান করে,তার গোলামি করার তৌফিক দান করুক।আমিন।

দুটো ইনজেকশন = একটা জিবন

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৭:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খানিক পর পর রাজাবাবুর বড় অট্টালিকার দিকে তাকিয়ে থাকে আবির।রাজাবাবু বোঁ বোঁ করে গাড়ি হাকিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করা মাত্রই হুড়মুড়িয়ে রাজাবাবুর হাতে থাকা কাগজে মোড়ানো খসখসে ঠলেটা কাধেঁ নিয়ে যাবার সময় পা পিছলে পড়ে যায় আবির।
আবির হা করে তাকিয়ে দেখছে অসংখ্যদিক হাজার টাকার গেমস টাটকা নোট বের হয়ে আসছে থলেটা থেকে,কুড়িয়ে রাজাবাবুর রুমে ঠলেটা দিয়ে আসলো আবির।
আবির আসার সময় বার বার ভাবতেছে রাজাবাবু আমাকে কিছু বকশিস দিবেনা??
খুব ছোট ছোট কদম পেলছে আবির।
রাজাবাবুর ডাক শুনে আবির থমকে দাঁড়ালো যেন তার কান এই ডাকটা শুনার অপেক্ষাতেই ছিলো।

রাজাবাবু মানিব্যাগের কোণ থেকে দুটো ৫০ টাকার নোট আবিরের হাতে দিতে দিতে বললো,যাবার সময় নিচ থেকে রাতের খাবারটা খেয়ে যাবি।

রাজাবাবু আপনি তো অনেকগুলো টাকা আনলেন আজকে।সেখান থেকে আমাকে একটা নোট দিননা রাজাবাবু।

রাজাবাবু ধমক দিয়ে বললেন টাকা দেখলে বুঝি লোভ সামলাতে পারিস না তাইনা??
যত্তসব!!

আবির নিজের খাবারটুকু একটা পলিথিনে মুড়িয়ে রওয়ানা হলেই রওশন খালার(রাজাবাবুর বুয়া) ডাক শুনে আবির দাঁড়ালো।

খালা. আবির তুই যে তোর খাবার নিয়ে যাচ্ছিস কেন রে??

আবির. খালা আজকের রান্নাটা খুব মজা হয়েছে,আমি আমার পছন্দের কোন কিছুই আমার মাকে একা ফেলে খেতে পারিনা,মনে হয় মাকে ঠকাচ্ছি।

খালা.আবির এটা পলিথিনটা রেখে এদিকে আয়।

আবির. খালা আমি এত খাবার খেতে পারবো না,আমার যেটুকু পাওনা তা দিয়েই আমাদের মা ছেলে দুজনের হয়ে যাবে।রাজাবাবু আমাকে বাড়তি খাবার খেতে দেখলে মারবে।

খালা.আবির আয়!!আমার ভাগেরটাই দুজনে ভাগ করে খাবো।কথাটা বলে আবিরকে বুকে টেনে নেয়।

আবির. খালা ভালো মানুষগুলো কেন এত ভালো হয়,খালা আপনি আমাকে এত ভালবাসেন কেন??আমিও তো আপনার মত কাজের লোকই।

দুজনে মিলে খুব আয়েশ করে খাবারটা খেয়ে নিলো।খালা রাত হয়ে যাচ্ছে,আমার একটু কাজ আছে বাজারে আমি গেলাম,বলেই আবির উঠে চলে আসে যায় পলিথিনে মুড়ানো খাবারটা নিয়ে।

হাঁটতে হাঁটতে আবির তার পকেটে গুনে ১৩৫ টাকা পেলো,আজ তার ২০০ টাকা করে দুটো ইনজেকশন নিতে হবে তার মায়ের জন্য।না হয় বাতের ব্যথায় রাতটা মা ছেলে দুজনেরই নির্ঘুম কাটাতে হবে।

আজ করিম চাচাকে বলে দুটো ইনজেকশন নিবো,১৩৫ টাকা দিয়ে বাকি টাকাগুলো কাল দিবো।
কাল একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ্।

আবির করিম চাচার দোকানে গিয়ে চাচাকে সালাম দিয়ে, ভালোর কথা বললো।।করিম চাচার কোন জবাব পেলোনা।
চাচার মনে হয় আজ মন খারাপ।
চাচা!!
ও চাচা!!

বল কি দরকার?

চাচা দুটো ইনজেকশন দিন।

টাকা এনেছিস?

হুম।

করিম চাচা দুটো ইনজেকশন দিলো।আবির পকেট থেকে বের করে ১৩৫ টাকা করিম চাচার হাতে দিলো।

তোর সাথে কি আমি দুষ্টুমি করতেছি?বেয়াদব!!!.

বাকি টাকা কই?

চাচা আজ রাজাবাবু বলেছে কাল আমাকে বোনাস সহ পুরো মাইনেটা দিবে,কাল আপনাকে সব টাকা দিয়ে দিবো।

শুন, তোর কাছে আগের অনেক টাকা পাওনা এমনিতেই
,আজকে তোকে এক পয়সাও বাকি দিবোনা।

চাচা মা রাত খুব কষ্ট পাবে,প্লিজ চাচা দিন,কালকেই আমি সব ঋন পরিশোধ করে দিবো আপনার।

অনেক চেষ্টা করে আবির করিম চাচার কাছ থেকে একটা ইনজেকশন নিয়ে বাড়ির দিকে রওয়ানা দেন।

আবিরের মনটা খারাপ প্রতি রাতে মাকে দুটো ইনজেকশন না দিলে মা স্বাভাবিক থাকেনা,আজ তো মাত্র একটা ইনজেকশন।

মা মা মা
দরজাতে টোকা দিচ্ছে আবির।

মা দরজা খুলেছে একটু দেরি করেই,আবির মাকে জড়িয়ে ধরে বললো,মা আজ কি শরীরটা বেশি খারাপ?
এত দেরি করলেন যে!!!

দুপুরের পর থেকে কেমন জানি লাগতেছে বাবা,একা বাড়িতে কেউ নেই।একটা মোবাইল থাকলে রাজাবাবুর কাছে কল দিয়ে তোকে আসতে বলতাম।

মা চলো আজকে অনেক মজার খাবার আছে,আবির তার মাকে নিজের হাতে খাইয়ে দিলো।

মা আপনি শুয়ে পড়ুন,ইনজেকশনটা দিয়ে দেই,তারপর ঘুমিয়ে পড়ুন।রাত অনেক হলো।

আবির তার মাকে ইনজেকশনটা দিয়ে দিলো,খানিক বাদেই আবিরের মা ঘুমিয়ে গেলো।

আবির নিজের বিছানা গুচিঁয়ে শুতে শুতেই ঘুম চলে আসে।গভির রাতে মায়ের চিৎকারে আবিরের ঘুম ভাঙ্গে।

মা!!!
কি হয়েছে?.
আবির দৌড়ে তার মাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো,বাবা আমার নিঃশ্বাস ফেলতে খুব কষ্ট হচ্ছে।

মা কিছু হবেনা, মা একটু পানি খেয়ে নিন ঠিক হয়ে যাবে।
আবিরের মায়ের ব্যথিত হৃদয়ের কান্না আবিরের কলিজা ভেদ করে হাড়ের সাথে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।

আবির কিছুক্ষন পর মনে করতে পারলো,আজ তো একটা ইনজেকশন দিছি তার জন্য বেড়ে গেছে মায়ের অসুস্থতা।

আবির কিছু না ভেবেই তার মাকে কাঁধে করে নিয়ে যেতে লাগলো করিম চাচার বাড়ি,আবির এতটুকুও দেরি করেনি বাসায়।কেননা আবির জানে,ইনজেকশন না দিলে তা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে।

আবির তার মাকে কাঁধে করে দৌড়াচ্ছে,গভীর রাত আকাশের তাঁরাগুলো মিটি মিটি জ্বলছে বাকি সবকিছু নির্জনতায় বন্দি।

আবির খানিক পর পর মায়ের বড় বড় নিঃশ্বাসের শব্দ শুনছে আর দৌড়াচ্ছে।কিছুক্ষন পর আবির তার কাধঁটাতে থাকা মানুষটার ওজন ক্রমান্বয়ে বাড়ছে এমন মনে করতেছিলো,আবির কিছুক্ষন কোন শব্দ পাচ্ছেনা।আবির ভাবছে মা মনে হয় ব্যথায় ব্যথিত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।
আবির একটু রেষ্ট নিবার জন্য তার মাকে নিচে নামিয়ে একটু বসে বসে হাঁপাচ্ছে।

আবির তার মায়ের বুকে একটু মাথা রেখে মাকে জড়িয়ে ধরেছে,আবিরের কেন যেন মনে হচ্ছিলো কোন শ্বাস প্রশ্বাসের আলাপ সে পাচ্ছেনা।আবির কয়েকবার তার মাকে ডেকেও কোন সাড়া না পেয়ে আবির তার মায়ের নাকের সামনে কান পেতে কোন নিশ্বাসের গন্ধ না পেয়ে আবির তার মায়ের শিরাতে হাত দিয়ে পাথর হয়ে যায়।

আবিরের কেন জানি এক ফোঁটাও চোখের পানি পড়েনাই,একটা পাখি আচমকা পাখা ঝাঁপটিয়ে কাছ দিয়ে চলে গেলো।

গহীন পথের আনাচে কানাচে কোন মানবের ছায়াও নাই।বনের শিয়ালগুলো একটু পর পর হুঙ্কার দিয়ে উঠে যেন তারা তাদের ডিনারের সন্ধ্যান পেলো।আবির তার মাকে বুকে জড়িয়ে ধরে একটা চিৎকার দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো।

বিধাতা তোমার এত সুন্দর পৃথিবীতে অসুন্দর বুঝি আমরা দুজন মা আর ছেলে।অসুন্দরের আস্বাদ নিয়ে বাঁচতে কষ্ট হচ্ছিলো সুন্দর মানুষগুলো।
মাবুদ আজ শেয়ালগুলোর ডিনারের খাদ্য আমাকেও বানিয়ে দাও,এই সুন্দরের ভিড়ে যেন অসুন্দরের ছায়া ও না পায় ধরনীর মানবকুল।

০১.০৯.২০১৮
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নারী

লিখেছেন এসো চিন্তা করি, ০২ রা এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১২:৪৭


"নারী "
এ. কে . এম. রেদওয়ানূল হক নাসিফ

মন খারাপ কেন বসে আছো কেন হতাশ
ওহে আজ নারী তুমি ,
কি হয়েছে তোমার এতো , সবসময় ভাবছো কি এতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওহীর বাইরে রাসূল (সা.) ও সাহাবার (রা.) সিদ্ধান্ত সঠিক হয়নি, অন্য কারো সিদ্ধান্ত কিভাবে সঠিক হবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা এপ্রিল, ২০২৫ ভোর ৬:২৫



সূরাঃ ৮ আনফাল, ৬৭ থেকে ৬৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৬৭।দেশে ব্যাপকভাবে শত্রুকে পরাভূত না করা পর্যন্ত বন্দী রাখা কোন নবির উচিত নয়। তোমরা পার্থিব সম্পদ কামনা কর। আল্লাহ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফ্যাসিবাদের কবলে ইসলামিক ফাউন্ডেশন: ধর্মীয় বইয়ের বদলে দলীয় প্রচার

লিখেছেন নতুন নকিব, ০২ রা এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১০:০৮

ফ্যাসিবাদের কবলে ইসলামিক ফাউন্ডেশন: ধর্মীয় বইয়ের বদলে দলীয় প্রচার

ছবি অন্তর্জাল থেকে সংগৃহিত।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, যার মূল লক্ষ্য ইসলামী জ্ঞান, গবেষণা ও সচেতনতা প্রচার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সংস্কার VS নির্বাচন

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০২ রা এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪২



সোস্যাল মিডিয়ায় এখন ডক্টর ইউনুসের কমপক্ষে পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার পক্ষে জনগন মতামত দিচ্ছে। অন্তবর্তী সরকার এক রক্তক্ষয়ী অভ্যূত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা গ্রহন করেছে। তাই এই সরকারের কাছে মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কী অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের জন্য

লিখেছেন হিমন, ০২ রা এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:৪৫

বাংলাদেশে সাড়ে খোলাফায়ে রাশেদিন- ইউনুসের সরকার আসার পর থেকে আজ অব্দি দেশ নিয়ে এখানে সেখানে যা অনুমান করেছি, তার কোনটিই সত্যিই হয়নি। লজ্জায় একারণে বলা ছেড়ে দিয়েছি। এই যেমন প্রথমে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×