তখন ক্লাস নাইনে পড়তাম ভালবাসা বলে কিছু আছে সেটা বুজতাম না।
ক্লাসের পিছনের বেঞ্চিতে বসে সূর্যের আলো হাতের ঘড়িতে মিলিয়ে তার চোখে ফেলতাম,সে মুচকি মুচকি হাসতো,সেই থেকে তার হাসিটা দেখার জন্য ক্লাসের ফাঁকে সময় পেলেই দুষ্টুমিটা করতাম।সে হাসতো আর আমি আপ্লুত হয়ে যেতাম।
একদিনও ক্লাসে পড়া পাড়তাম না,লুকোচুরির ফাঁকে ক্লাসে কোন শিক্ষক কি পড়াচ্ছে তার হিসেব রাখতাম না,প্রতিদিন পড়ার জন্য মার খেতাম।আমাকে শিক্ষকরা মারতে দেখে সে খুব কষ্ট পেত,তখন বুজতে পারলাম সে আমাকে আর সবগুলো ক্লাসমেটের মত ভাবেনা।
দেখতে দেখতে কেটে যাচ্ছিলো আমাদের লুকোচুরিগুলো।
কখনোবা বিরতির ফাকেঁ একসাথে বসে পাথর খেলতাম,কখনোবা মামার ঝাঁঝালো ঝাঁলমুড়ি তার হাতে গুজে দিয়ে দূর থেকে তার টেপ টেপানো চোঁখের পানি দেখে মুচকি হাসতাম।
রাতে পড়তে বসলে তার চেহারা দেখতে পেতাম বইয়ের পাতায়,পড়তে পারতাম না।ঘুমাতে গেলে চোখ বন্ধ করলেই তাকে দেখতে পেতাম,ঘুমাতে পারতাম না।চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে যেতো,মা বকুনি দিতো,বলতাম সামনে ফাইনাল পরিক্ষা(এসএসসি) তো!!!রাত জেগে পড়তে হয়,ঠিক হয়ে যাবে।
স্কুল ছেড়ে কলেজে গেলাম কত অচেনা মুখ সামনে আসলো কাউকেই মনে ধরলোনা,একটা চেহারাই চোখের সামনে ভেসে উঠে বারবার।
সে বারবার বলতে বাবা বলেছে আমাকে নাকি শহুরে কোন ভালো কলেজে ভর্তি করাবে ,চলোনা দুজন একসাথে একি কলেজে পড়ি।তার কথাতে সায় না দিয়ে বলেছিলাম,দূরে থাকলেই তো ভালো,অনেকদিন পর দেখবো খুব আনন্দ পাবো,তার কাছে থেকে আর পড়া হলোনা।
দূরত্বটা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে একটা সময় মাসও চলে যেতো আমাদের কথা হতোনা।কাউকে কিছু বলতাম না,চুপচাপ বসে থাকতাম জানলার কড়িকাঠুরে হাত বুলিয়ে সকাল পেরিয়ে দুপুর গনিয়ে আসতো,মা বলতো।খোকা!!খাবিনা??
তার জন্য এতো ভাবনা কেন?কেন তাকে শুনতে না পেলে দেখতে না পেলে নিজের কাছে এত খারাপ লাগতো বুজতে পারতাম না।তাকে খুব মিস করতাম ,সে খুব কেয়ারিং ছিলো আমার অসুখে তার ঘুম হতোনা,প্রতিটা বেলাতেই ডেকে ডেকে জোর করে ঔষুধ খাওয়ার জন্য তাগিদ দিতো,নাছোড়বান্দা ছিলো খাইয়েই ছাড়তো।
হঠাৎ বুজতে পারলাম তাকেই আমার পাশে চাই সবসময়ের জন্য।যার আবদারে সব করতে পারি,যার হাসিতে আনন্দ পাই,যে পাশে না থাকলে বুকের বাম পাশে চিন চিন ব্যথা করে তাকেই তো সবসময়ের জন্য আমার পাশে চাই।
একদিন বিকালে কলেজ থেকে মন খারাপ করে ফিরে আসতেই পথে তার সাথে দেখা,নিজের চোখগুলোকে কেন জানি কল্পনার মত মনে হলো।সে যে সামনে দাড়িঁয়ে বিস্বাসই করতে পারিনাই ,মনের আবেগগুলোকে সাজিয়ে সারাটাদিন দুজনে আড্ডা দিলাম,তাকে রিক্সা করে বাড়ি ছেড়ে দিয়ে আসলাম।
রাতে এপাশ ওপাশ করতে করতে ভাবলাম তার সাথে একটু কথা বলি,তাকে কল দিলাম
হ্যালো,কেমন আছো।
সেঃভালো নেই মাথাটা খুব ব্যথা করতেছে,মনটাও খুব খারাপ।
তার কথা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেলো।আচ্ছা ঘুমিয়ে পড়ো সকালে কথা হবে।
ফ্রেস হয়ে নাস্তা করছি এমনি তার ফোন,তোমার সাথে আমার কথা আছে আমাদের প্রতিদিনের আড্ডার জায়গাটিতে আসো।চলে আসলাম ঠিক খানিক আগেই।
তার মুখে বিষন্নতার ছাড়া দেখতে পেলাম,তবুও হাসি দিয়ে কথা বলার চেষ্টা করতেছে।
শুনোনা,আমার হলুদে কিন্তু সারাটা সময় আমার পাশেই থাকবা ,আমার খুব লজ্জ্বা লাগবেতো তুমি ছাড়া ভালো লাগবেনা,কথাটা শুনেই চমকে গেলাম
বিস্তারিত জানতে চাইলাম।সে বলতে শুরু করলো,জানো!!!
বাবা আমাকে না জানিয়েই আমার বিয়ের ব্যবস্থা করে ফেলেছে,বাবার মুখে এত আনন্দভরা হাসি তার আগে আমি কখনো দেখিনাই,বাবাকে বললাম বাবা।আমিতো অনেক পড়বো।বাবা বললো ছেলের ও তোকে পড়ানোর খুব ইচ্ছা।তার কথাগুলো হজম করতে পারছিলাম না,তবুও তার চিবুকগুলো ধরে বললাম বাহ্,তুমি যে এত বড় হয়ে গেছো আমি তো কখনো তা দেখেইনাই।
হঠাৎ করেই তার বাবার ফোন,মা তুমি কোথায়,তোমার ফুফু,আন্টি সবাই চলে এসেছে আমরা একটু পড়েই গায়ে হলুদের কেনাকাটা করতে বের হবো,জলদি চলে আসো।
আমাকে অনেক বললো তার সাথে যেতে,একটা ব্যস্ততা দেখিয়ে তার কাছ থেকে চলে আসলাম।
সারাটা রাত কেদেঁছি,তাকে একটুও দোষারোপ করার সাহস পাইনি,তার জন্য দমটা কেন যেন বন্ধ হয়ে আসতেছিলো। তার জন্য যে মনের ভিতর ভালবাসার তাজমহল বানিয়ে রেখেছিলাম তা সেদিন তার কাছ থেকে ফিরার পর বুজতে পারলাম।
আগামীকাল ভোর পাঁচটায় আমাকে ইমারজেন্সি একটা কাজে ঢাকাতে যেতে হবে,তোমার পুরো বিয়ের অনুষ্টানটা ভিডিও করে রেখো আমি এসে দেখবো,এরকম একটা মেসেজ দিয়ে সিমটা মোবাইল থেকে খুলে ফেলে দিয়ে পরদিন সকালে সূর্য উঠার আগেই বাড়ি থেকে চলে আসি শতকষ্টে আচ্ছাদিত শহরটাতে।