somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অতীতের গন্ধ - ১

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গতকার বেশ আয়োজন করেই ৩৯তম জন্মদিন পালন করা হলো। মনে হলো পেছনে ফেলে আসা দিনগুলো বড্ড টানছে আজকাল।

আগের জন্মদিনগুলো কত উত্তেজনার ছিল, মনে হতো দিনটা কেবল আমার, নিজেকে কেমন গুরুত্বপূর্ণ লাগত :)
বন্ধু মন্জু এসে ঘুম ভাঙাত খুব ভোর বেলা, এক গুচ্ছ ফুল আর একটা উপহার নিয়ে। ওর হাতে সবসময় দুইটা ফুলের তোড়া থাকত। একটা আমার জন্য, একটা ওর ভাবীর জন্য।

স্কুলের বান্ধবীরা নিজের হাতে কার্ড বানিয়ে উইশ করত, এখন তো Facebook এ HBD লিখেও সেরে ফেলা যায়। তখনকার অনুভূতিগুলো এত সংক্ষিপ্ত ছিলনা।

আমার বান্ধবি আইলিন অনেকদিন যাবৎ টিফিনের টাকা জমাতো আমাকে জন্মদিনে গিফ্ট দিবে বলে। সাথী, মনি, দিপু পাগলি আমার ছোট বেলার সখিরা, ওদের ছাড়া জন্মদিন ভাবাই যায়নি তখন।

আমার ছোট্ট ছাত্র সোয়েব তার পকেট মানি থেকে জমিয়ে, জমিয়ে আমার জন্য নিয়ে এসেছিল ছোটদের গল্পের বই, বহুদিন আমি বইটা যত্ন করে রেখেছিলাম।

বন্ধু খালেদ, নিজের চাইতে বড় সাইজের ফুলের তোড়া নিয়ে ভয়ে, ভয়ে চুপ করে দরজার সামনে রেখে যেত।

কলেজে 'হাম পাঁচ' (আমি সহ জাকিয়া, পান্না, পপি, শিল্পী) নিজেদের জমানো টাকা দিয়ে আমার জীবনের সেরা একটা জামা কিনে দিয়েছিল। এখনও জামাটা যত্ন করে রেখে দিয়েছি।

একটু বড় বেলায় এসে ছোট বোন সুমনা, ওর বন্ধু আইরিন, মিমি, ভাবী, প্রাপ্তি, বড় ভাইয়া আর আশরাফ প্রতি বছর আমাকে নতুন, নতুন চমক দিতো। একবার সবাই মিলে রাঙামাটি গেলাম শুধু আমার জন্মদিন উপলক্ষে। তিনটা কেক কাটা হল। একটা বাসে, একটা রাঙামাটির লেকে আর একটা ঘটা করে ফ্লোটিং রেস্টুরেন্টে। সেদিন ছিল ভরা পূর্ণিমা।
বন্ধু ইশতিয়াক, অফিস শেষে ক্লান্ত হয়েও একটু উঁকি দিয়ে যেত শুভেচ্ছা দিতে।
কিছু মানুষ ছিল, যাদের শুভেচ্ছা না পেলে জন্মদিন অপূর্ণ থেকে যেত।

মন্জু এখন সৌদিতে, চাইলেও ফুল নিয়ে এসে ঘুম ভাঙাতে পারে না।
সাথী অতি মাত্রায় সহজ সরল জীবন যাপনে ব্যস্ত, ফেইসবুক ও ব্যবহার করে না মেয়েটা। ওর বর আমাকে ওর হয়ে শুভেচ্ছা দিয়েছে:)
মনি কিছুদিন হল মা হয়েছে, তার ভুবনটা এখন অন্যরকম ব্যস্ততায় ভরা, তেমনি পাগলি দিপুও। তবে আমাকে ভালোবাসা জানাতে কখনও ভোলে না, এখনও আমার চোখ ভেজায়।
খালেদ বহু কষ্টে একটু সময় বের করে আজ সকালে ফোন করেছে, থাকে আমার থেকে তিন ঘন্টা এগিয়ে সিডনিতে। ভয়ে, ভয়ে গিফ্ট রেখে যাওয়ার বয়স পার করেছি আমরা, এখন আর ভয় নেই, সেই সাথে এখন আর সময়ও নেই।
মিমি এখনও চমক দেয়। গোপনে আশরাফ কে বুদ্ধি দেয় কি করতে হবে। এখনও আমার বউ পাগল বরটা সারপ্রাইজ কে সারপ্রাইজ রাখতে পারেনা।
সুমনা সুদূর কানাডায় বসে ছটফট করে আমার জন্মদিনে, পেরে উঠে না, ১২ ঘন্টা সময়ের ব্যবধানে চাইলেও হয়ে উঠে না। তখন গ্রুপ ভিডিও হয়ে উঠে ভরসা।

আইরিন, রুমি সবাই কেবল ডুকরে উঠে স্মৃতিগুলো ভেবে। খালাতে, চাচাতো ভাই-বোনগুলো কেবলই হাহাকার করে হারিয়ে যাওয়া শৈশবের জন্য।

পুরনো মানুষগুলোর জায়গায় এখন নতুন মানুষেরা নতুন, নতুন আয়োজন করে। স্বর্ণা, সুমি, সংগিতা, তানিয়া আমাকে বুড়ো হতে দেয়না। আমার বাচ্চাদু'টোর উত্তেজনা দেখলে মনে হয় প্রতি মাসেই কেন জন্মদিন হয়না ? তারেক, কাব্য, বারী ভাই, লোচন - ওদের লেখায় চোখ ভেজে। কিছুই থেমে নেই, সবাই যার, যার জায়গায় থেকে সময় বের করে নেয় ভালোবাসা জানানোর। পুরনো মানুষগুলোর ভালোবাসা আছে আগের মতই, আবেগ কমেনি, শুধু বদলে গেছে সময়, অবস্থান, পরিস্থিতি। আর তাই এখনও পুরনো গন্ধগুলো ফিরে, ফিরে আসে।


সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০১৯ রাত ৯:৪৬
৭টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মায়ের কাছে প্রথম চিঠি

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:০৪

Ex-Cadets Literary Society নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ আছে, আমি যার সদস্য। এই গ্রুপে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত স্বনামধন্য লেখক ও এক্স-ক্যাডেট শাকুর মজিদ একটি পোস্টের মাধ্যমে জানিয়েছেন যে ক্যাডেট কলেজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রানশিপমেন্ট বাতিলের পর বাংলাদেশ কী করতে পারে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:২৩

১.০
আমি তখন সাউথ কেরিয়ার কিউং হি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্ডাস্ট্রি ও ট্রেড পলিসিতে মাস্টার্স করছি। আমার একটা কোর্সের নাম ছিল থিওরি অ্যান্ড প্রকটিসেস অব গ্লোবাল ট্রেড গভর্নেন্স। কোর্সটি পড়াতেন প্রফেসর Wook Chae... ...বাকিটুকু পড়ুন

সময় থাকতে মনা হুশিয়ার......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪

সময় থাকতে মনা হুশিয়ার......


ফ্যাসিবাদের দুঃশাসনকালে সময়ের চলমান প্রক্রিয়ায়, নাগরিক দ্বায়িত্ব পালনে দেশের প্রয়োজনে রাজপথে আমরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি। কীবোর্ডকে অস্র বানিয়ে স্বৈরশাসকের হৃদয় ফালাফালা করে দিয়েছি। ফলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

চৈত্র সংক্রান্তি থেকে পহেলা বৈশাখ বহমান আনন্দধারা।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২৮


চৈত্র মাসের বাতাসে যে সুগন্ধা হওয়ার দোলন সে ব্যাপারটার প্রশান্তি অনন্য! মাঝ দুপুরের তপ্ততা, নুয়ে আসা বিকেলে আচমকা দুরন্ত দুষ্ট ঝড়, অথবা সন্ধ্যার আজানের ঘরে ফেরার ব্যস্ত ধ্বনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজা, ওসামা, পাকিস্তান, নাজি : বাংলাদেশে মাল্টিভার্স পতাকা বিপ্লব !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:১২


গত একসপ্তাহ ধরে ফিলিস্তিনের গাজাবাসীর উপর ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে সারা বাংলাদেশে প্রতিবাদের ঝড় বয়ে গেছে। কিন্তু এই প্রতিবাদের মিছিলে এমন সব পতাকা, সিম্বল ও ছবি হাতে প্রতিবাদীরা মিছিল করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×