ছবিটা যে আমার তোলা তাই তো এখন বিশ্বাস হয় না, জায়গাটা কাশ্মীরে ভারত পাকিস্তান সীমান্তে
এবারের ইন্ডিয়া ট্যুরটা বেশ লম্বা হয়ে গেছে, টানা ৩৩ দিন। এর মধ্যে ২৪ দিন শুধু কাশ্মীরেই ছিলাম। বাকী দিনগুলো কলকাতা, সিমলা আর দিল্লিতে। ট্যুরমেট আমরা দু’জন। মা আর আমি। আমাদের দুটো ব্যাগ ছিলো, ব্যাগগুলো আমরা কাঁধে নিয়েছি আর মনে যেদিকে চেয়েছে ছুটে বেড়িয়েছি। টাকার পরিমান ছিলো খুবই কম, এতোটাই কম যে অন্যরা শুনলে ঠাট্টা করবে। চড়েছি লোকাল বাস, লোকাল ট্রেন আর লোকাল যানবাহন। এগুলো নিয়ে আমাদের একেবারেই কোন আক্ষেপ নেই, কারণ আমরা সবকিছুই উপভোগ করেছি।
মানুষের বন্ধুত্ত্ব আমাদের সবসময় মুগ্ধ করেছে। সবার ভালোবাসা, সহযোগীতা আর আন্তরিকতায় শুধু ঋদ্ধ হয়েছি। সত্যি বলছি, এক টুকরো খারাপ অভিজ্ঞতা হয়নি। নির্মাল্য, আমার কলকাতার বন্ধু; ওর সাথে এবারই প্রথম দেখা হলো। ছেলেটা পার্ক-স্ট্রীটের রাজপথে চার রাস্তার মোড়ে এতো কোলাহলের মাঝে গড় হয়ে মাকে প্রণাম করেছে। সিমলার পঙ্কজ’দা, দুবছর পর আবার তার সাথে দেখা। মাকে হাত ধরে সে পুরো সিমলা শহরটা ঘুরিয়ে দেখিয়েছে।
আর কাশ্মীর? আহ কাশ্মীর! আহ কাশ্মীর!
কাশ্মীরের প্রতিটা মানুষের কাছে ঋনী। সেখানকার সব বন্ধু মাকে ‘মাম্মা’ ছাড়া কখনোই ডাকেনি। নিজের হাতে মায়ের জুতো খুলে দিয়েছে, পরিয়ে দিয়েছে। আমাদের তো কাশ্মীরে যাবার কোন প্ল্যান ছিলো না, হুট করে চলে গিয়েছিলাম। ওখানে কোন কোন জায়গাতে তখন বরফ ছিলো, আর ছিলো প্রচন্ড ঠাণ্ডা। আমরা ছিলাম গান্ডেরবাল শহরে, সেখানে তাপমাত্রা মাইনাস পাঁচের নীচে নেমে যেত রাতে। আর যখন পাকিস্তান সিমান্তের একটা জনপদে গিয়েছিলাম তখন তাপমাত্রা মাইনাস ১০ এর নীচে ছিলো। এই জনপদটি শুধুমাত্র মাস ছয়েকের জন্য খোলা থাকে। কমপক্ষে ১৫ বার আর্মির চেকপোস্ট পার হয়ে এখানে যেতে হয়। অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, আমি আর মা হচ্ছে প্রথম বাংলাদেশী যারা এই জনপদে গিয়েছিলাম।
যেহেতু আমাদের কাশ্মীরে যাবার কোন প্ল্যান ছিলো না, তাই আমরা কোন গরম কাপড় নিয়ে যায়নি। ঠান্ডায় আমাদের অবস্থা বেশ খারাপ হবার কথা ছিলো, কিন্তু সেটা হয়নি। আমার কাশ্মীরি ভাবী শায়িস্তা, অসাধারণ রূপবতী এই নারী তার প্রতিটা সোয়েটারের সেলাই খুলে সেগুলো মাকে দিয়েছিলো পরার জন্য। রাতে সবগুলো মোটা কম্বল দিয়ে আমাদের চাপা দিতো। একমাত্র রুম হিটারটি আমাদের দিয়ে তারা একগাদা জামা-কাপড় পড়ে আর পাতলা কম্বলগুলো গায়ে দিয়ে ঠান্ডায় হি হি করতো। এগুলো হলেও মানা যেত, কিন্তু তারা এখানেই থেমে থাকেনি। একটাই মাত্র বেডরুম তাদের, সেটা আমাদের জন্য ছেড়ে দিয়ে তারা রান্নাঘরে থাকতো। কথাটা শুনলে অমানবিক মনে হচ্ছে, যে আমরা গিয়ে তাদের উপর অত্যাচার করে এসেছি। কিন্তু ব্যাপারটা তা নয়, বরঞ্চ আমরা গিয়েই তাদের ভালোবাসার অত্যাচারে জর্জরিত হয়েছি। আমাদের সব টাকা-পয়সা তারা নিয়ে নিয়েছিলো যেন আমরা চলে আসতে না পারি। তাদের এই ভালোবাসার প্রতিদান দেবার ক্ষমতা আমাদের নেই। আল্লাহ তার সরবোচ্চ নেয়ামত এই পরিবারটার প্রতি দান করুন।
কাশ্মীর নিয়ে আলাদা কোন পর্ব লিখবো আশাকরি, এজন্য এখনই এতো ডিটেলস লিখলাম না।
শুরুটা হয়েছিলো ৩০ শে অক্টোবর ভোরবেলা। যশোরে ছিলাম। আমি আর মা দুজনে চিল্লাপাল্লা করে ঝগড়া করতে করতে বাসা থেকে বের হলাম। কারণটা হচ্ছে মায়ের গোছগাছই শেষ হয় না, এটা করে ওটা করে। রাস্তায় আমাদের আরো কিছু প্রতিবেশি চাচী যোগ দিয়ে আমার হয়ে মাকে বকাবকি করতে লাগলেন। আমি মাকে হুমকি দিলাম যে তার এই দেরীর জন্য যদি বর্ডারে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় তাহলে তার খবর আছে। মা দেখি আমার দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে আছে। তবে তিনি সুবিধাজ্বনক অবস্থানে নেই, কারন আমরা বেশ দেরী করে ফেলেছি আর এই দোষটা তার। প্রতিবেশি এক চাচী রিক্সা ডেকে দিলেন আর আমরা সেটাতে উঠে পড়লাম। আমরা দু’জন মানুষ, আমাদের দুটো কাপড়ের ঝোলা (ভেবেছিলাম কলকাতা থেকে দুটো ট্রাভেল ব্যাগ কিনে নেব)। কাপড়ের ঝোলা দুটোর অবস্থা ভালো না, যে কোন সময় ছিড়ে যাবে। আর আমার পিঠে আমার ছোট্ট বাচ্চা ব্যাগটা।
চাচড়া বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে লোকাল বাসে চেপে বসলাম। এই বাসগুলো খুবই নিয়ম মেনে ছাড়ে, একটুও দেরী করে না। বাসটা যখন ছাড়লো মনটাই ভালো হয়ে গেল। দুপাশে যশোর রোডের বিখ্যাত গাছগুলো।(তখনও জানতাম না যে কিছুদিনের মাঝেই উন্নয়নের নামে এই ঐতিহাসিক গাছগুলো কাটার জন্য কি আপ্রাণ চেষ্টা করা হবে)। যশোর থেকে বেনাপোল বর্ডার পর্যন্ত রাস্তার অবস্থা একেবারেই ভালো না। ঝাকিতে ঝাকিতে প্রাণ শেষ। রাস্তা তো সংস্কার হয়, কিন্তু কিছুদিনের মাঝেই এমন জঘন্য অবস্থা হয় কেন কে জানে! যদি রাস্তা নষ্ট হবার জন্য অসহায় গাছগুলোকে দোষ দেয়া হয় তবে তা অপরাধ হবে। কারণ বর্ডার পার হবার পর ইন্ডিয়ান অংশে আরো বড় বড় গাছ আছে, এবং ওপাশের রাস্তা ভাঙ্গাচুরা না।
সকাল আটটার দিকে গিয়ে পৌছালাম বেনাপোল বর্ডারে। সঙ্গে সঙ্গে দুজন পুলিশ ছুটে আসলো। আমাদের কাজগুলো করে দেবার জন্য তাদের সে কি আপ্রান চেষ্টা! তবে অবশ্যই সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে। একেবারেই গুরুত্ত্ব দিলাম না। নিজেরা গটগট করে ঢুকে গেলাম। বাংলাদেশ অংশের কাজ শেষ হতে ১০ মিনিটও লাগলো না। শেষবারের মতো পুলিশ চেক করলো, আর তারপর আমরা ঢুকে পড়লাম নোম্যান্স ল্যান্ডে।
মা সঙ্গে সঙ্গে আমার উপর চোখ গরম করে উঠলো। নোম্যান্স ল্যান্ড একদম ফাঁকা, মানুষের একেবারেই ভীড় নেই। আমি যে বাড়ি থেকে বের হয়ে সাথে ভীড়ের ভয় দেখিয়ে তার সাথে চিল্লা-পাল্লা করেছি, এবার তার প্রতিষোধ নেবার পালা। নোম্যান্স ল্যান্ডে দাঁড়িয়ে আমাকে বেশ কিছুক্ষন শাঁসালো সে। এখানে আমি অসহায়। ঠিক আছে! সময় করে আমি এর শোধ নেব! (নিয়েছিলাম)।
ঢুকে গেলাম ইন্ডিয়াতে।
ইন্ডিয়ান কাস্টমসে লম্বা লাইন। লোক বেশি এজন্য লম্বা লাইন ব্যাপারটা তা নয়। সবাইকে অনেকক্ষণ করে করে চেক করার জন্য লম্বা লাইন। বিশেষ করে কোন যাত্রীর কাছে ডলার না পেলে ইন্ডিয়ান কাস্টমস উল্লাসে ফেটে উঠছে, আজকে তাদের কামাই ভালোই। সব যাত্রী দেখি মুখ শুকনো করে আছে। ইয়াং পোলাপানগুলোর অবস্থা বেশি খারাপ।
মা আমার আগে ঢুকে পড়লো। পড়বেই তো! তার কাছে তো আর ব্যাগ নেই। দুটো কাপড়ের ঝোলা সামলাইতে সামলাইতে আমার অবস্থা খারাপ। মায়ের পিছু পিছু আমিও কাস্টমসে ঢুকলাম। কাপড়ের ঝোলা দুটো মেশিনে চেক করতে দিয়ে মায়ের সাথে দাড়ালাম। এসময় এক কাস্টমস হুংকার দিয়ে আমাকে বললো, “এই! তোমার পিছের ব্যাগ মেশিনে দাও”। আমার পিঠে যে ছোট্ট একটা ব্যাগ বাঁধা থাকে তাই আমার মনে থাকে না, ওটাকে আমার শরীরের অংশ মনে হয়।
মেশিনে ব্যাগটা দিয়ে লাইনে এসে দেখি মা কাস্টমস শেষ করে বের হয়ে গেছে। এবার আমার পালা। আমি সবসময়েই কাস্টমস ভয় পাই। আমার অতীত অভিজ্ঞতা ভালো না, একবার আমাকে দেড়ঘন্টা আটকে রেখেছিলো। প্রচন্ড পরিমানে লজ্জ্বাকর হ্যারাসমেন্টের শিকার হয়েছিলাম আমি। তারপর থেকে আমার বর্ডার ফোবিয়া হয়ে গেছে। আয়াতুল কুরসি পড়তে পড়তে দুরুদুরু বুকে সামনে এগিয়ে গেলাম। অসাধারন সুদর্শন একজন কাস্টমস অফিসার আমাকে জিজ্ঞাসা করলো আমি একা কিনা।
দূর থেকে মাকে দেখিয়ে বললাম যে আমরা দুজন। সঙ্গে সঙ্গে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে সে আমাকে বললো, যাও।
এতো সহজে আমি কখনোই ইন্ডিয়ান কাস্টমস পার হয়নি। প্রচন্ড পরিমানে অবাক হলাম। বিমূড় ভাবটা তখনো কাটেনি। মায়ের কাছে গিয়ে দেখি সে তখন অন্য এক অফিসারের সাথে ঝগড়া করছে, সে অফিসার বেচারা আমাদের একটা ব্যাগ মেশিন থেকে বের করে চেক করার সময় ছিড়ে ফেলেছে। প্রচন্ড পরিমানে বিব্রত সে। ঝোলাটা কিছুটা ঠিকঠাক করার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। আহারে বেচারা! মরা মেরে খুনের দায়ে পড়েছে। বার বার শুধু সরি বলছে। শেষ পর্যন্ত মা বিরক্ত হয়ে ঝোলার ভিতর থেকে একটা দড়ি বের করে ঝোলাটা ভালো করে বাধলো (সাথে করে সে দড়ি নিয়ে এসেছ)। তারপর আমরা সেখান থেকে বিদায় হলাম। অভাগা অফিসার শেষ বারের মতো সরি বললো।
কাস্টমস থেকে বের হয় আমি মাকে জিজ্ঞাসা করলাম, কাস্টমসে চেক করার সময় তুমি কি বলেছ যে এতো তাড়াতাড়ি আমাদের ছেড়ে দিয়েছে। মা হো হো করে হেসে বললো, আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলো যে কতো ডলার আছে সাথে। তা আমি তাকে দেখে বললাম, ইয়া আল্লাহ! আপনি দেখতে তো খুবই সুন্দর। মনে হচ্ছে যেন একটা রয়েল বেঙ্গল টাইগার বসে আছে। তো একথা শোনার পর আমাকে আর কিছু জিজ্ঞাসা করেনি, চলে আসবার অনুমতি দিলো।
যাক বাবা!! যেভবেই হোক কাস্টমসের যন্ত্রনাটা তো যন্ত্রনা ছাড়া শেষ হয়েছে! আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া। আমরা ইন্ডিয়ান ইমিগ্রেশনের দিকে পা বাড়ালাম।
৩৩ দিন পর যখন একই বর্ডার দিয়ে ফিরে আসি, তখন কাপড়ের ঝোলার বদলে আমাদের কাছে দুটো ভালো ব্যাকপ্যাক। আর সেই ব্যাকপ্যাক ভরা উপহার। কাশ্মীরের মানুষেরা গাদাখানেক জিনিস ভরে দিয়েছে তাতে। আসার সময় ইন্ডিয়ান কাস্টমস একেবারেই ঝামেলা করেনি। আমি চাচ্ছিলাম যতো দ্রুত সম্ভব এই বর্ডার ঝামেলা থেকে বের হয়ে যেতে। কাস্টমস শেষ করে এক্সিট গেট দিয়ে বের হয়ে আসার সময় মা আবার এন্ট্রি গেটের দিকে যাচ্ছে দেখে তাকে বললাম যে বের হবার পথ ওটা না। মা আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললো, আরে দাড়া! সেই রয়েল বেঙ্গল টাইগারটা আছে কিনা দেখি, থাকলে চল তার সাথে আমরা একটা ছবি তুলে আসি।
কলকাতার একটি মসজিদ
পুরানো কলকাতায় বিড়ালের একটি এতিমখানা
কলকাতার একটি চার্চ
কলকাতা থেকে কালকা ১,৭১৩ কিমি যাত্রাপথে একটি স্টেশন
কালকা থেকে সিমলা যাবার পথে পাহাড়ি টয় ট্রেন
কালকা থেকে সিমলা যাবার পথে ছোট্ট একটি পাহাড়ি রেল স্টেশনে দাঁড়িয়ে
দেড়শো বছরের পুরানো একটা ভবনের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সিমলা
সিমলা স্ক্যান্ডাল পয়েন্ট
সুন্দরী সিমলা
কাশ্মীরের একটি রেল স্টেশন
ট্রেন টু প্যারাডাইস
শ্রীনগরে ডাল লেকে যে হাউজবোটে ছিলাম তার ড্রইং রুম
ডাল লেকের পাশে ব্যুলেভারড রোড
কাশ্মীরে হেমন্তের পাতা ঝরার দিনগুলিতে
ফুলের সিজন না তারপরও এতো রঙ , তাহলে বসন্তে কি অবস্থা হয়!!!
বিখ্যাত পবিত্র হযরতবাল মসজিদ। এই মসজিদে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর একটি পবিত্র দাড়ি মোবারক সংরক্ষণ করা আছে।
ইউনিভার্সিটি অফ কাশ্মীর
গান্ডেরবাল শহর। আমার কাশ্মীরি বন্ধুদের বাড়ি এখানেই। ওদের বাড়িতে ২১ দিন ছিলাম।
কাশ্মীরের অসাধারণ ছবিগুলো এখানে সংযুক্ত না করতে পারার জন্য দুঃখিত। আশাকরি অন্য লেখাতে সেই ছবিগুলো থাকবে।
লেখাটা শেষ করতে চাই একটা ভালোবাসার গল্প দিয়ে। দুলালী বিশ্বাস, দিল্লি থেকে কলকাতা আসার সময় প্রায় পৌড় এই ভদ্রমহিলা ট্রেনে আমাদের সহযাত্রী ছিলেন। আমরা যে সময় ট্রেনে কলকাতা ব্যাক করছিলাম সেসময় রাতের যাত্রায় প্রচন্ড ঠাণ্ডা পড়ে। এতোটা ঠান্ডা যে পড়তে পারে কল্পনা করা যায় না। আমাদের কাছে এই ঠান্ডাকে প্রতিহত করার জন্য কোন কিছু ছিলো না। দুলালী কাকীর কাছে দুটো কম্বল ছিলো, তিনি একটা আমাদের দিয়ে দিলেন। রাতে যে কয়বার তিনি ওয়াশরুমে গেছেন, আমার গায়ের কম্বল ঠিক করে দিয়ে গেছেন। আমাদের ট্রেনটা সেদিন লেট ছিলো। ২২ ঘন্টার জার্নি লেগেছিলো ৩০ ঘন্টারও বেশি। মাঝপথে যে স্টেশন থেকে খাবার কিনে খাবো ভেবেছিলাম সে স্টেশনগুলোতে অসময়ে পৌছানোর কারনে আমাদের প্রয়োজনীয় খাবার পাইনি। কেউ কি বিশ্বাস করবে, দিল্লি থেকে আমি আর মা যখন রওনা দিয়েছি আমাদের কাছে তখন সর্বসাকুল্যে ৩৮০ রুপি ছিলো। এজন্য কোন দামী খাবারও আমরা কিনতে পারছিলাম না। তো যেহেতু আমরা না খেয়ে ছিলাম এজন্য দুলালী কাকীমাও না খেয়ে ছিলেন। বেচারীর কাছে অল্প যে খাবার ছিলো তা খেতে তিনি বহুবার অনুরোধ করেছেন, কিন্তু আমরা তার খাবার খেতে রাজী হয়নি। বারবার তিনি বলেছিলেন, “আমার আব্বুটা না খেয়ে রয়েছে, তার সামনে আমি খাই কি করে!”
দুদিন আগে দুলালী কাকীমা ফোন দিয়েছিলেন। আমাকে বললেন, “আব্বু, আমার বাড়িতে পূজো হচ্ছে, তোমার আম্মুরে নিয়ে তুমি চলে আসো”। এই ভালোবাসাগুলো চোখের কোনে একগাদা পানি জমা করে দেয়। মহান আল্লাহ সবার মংগল করুন।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ৮:৫৬