somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কম খরচে আবার ভারত পর্ব-৫ ( আধিক্য কালকা মেইল-৩)

২২ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অন্য পর্বগুলো

কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সেতু আর নিয়নের ট্রেনের টিকিট দিল্লী পর্যন্ত। দিল্লী ছাড়িয়ে কালকা যাবার জন্য তারা এখন কি করতে পারে? তদেরকে বললাম টিটির সাথে কথা বলার জন্য। কিন্তু টিটিগুলো সেতুদের কোন পরামর্শ দিতে পারলো না। কারণ এখনকার টিটিগুলো দিল্লী স্টেশনে নেমে যাবে, আর দিল্লী স্টেশন থেকে সব জনবল বদল হয়ে নতুন কর্মচারী উঠবে। আমরা বেশ চিন্তায় পড়লাম। সেসময় শিভেন্দু আমাদের বললো যে দিল্লী থেকে নতুন যে টিটি উঠবে তাকে টাকা দিলে সে জরিমানা কেটে রেখে দিল্লী থেকে কালকা পর্যন্ত নতুন টিকিট দিয়ে দেবে। তার এই পরামর্শ শুনে আমরা মোটামুটি আশ্বস্ত হলাম।

দিল্লীতে ট্রেন পৌছানোর সঠিক সময় হচ্ছে রাত পৌনে ন’টা । কিন্তু সেই ট্রেন গিয়ে পৌছালো গিয়ে রাত এগারোটার পর। কালকা মেইল পুরানো দিল্লী স্টেশনে থামে। এখানে প্রায় ঘন্টাখানেকের বিরতি। দিল্লীর যাত্রীরা সব নেমে গেল। সেতু আর নিয়নও নামলো, যদি কোন টিকিটের ব্যাবস্থা করা যায় এই ভেবে। আমি তাদের মালপত্র পাহারা দিতে লাগলাম। নতুন যাত্রী উঠলো সেতু আর নিয়নের সিটে।

সময় পার হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু সেতু আর নিয়নের দেখা নেই। শেষ পর্যন্ত আমি প্ল্যাটফর্মে নামলাম। দেখি তারা দুজনে ফটোসেশন আর সেলফি তোলায় ব্যাস্ত। তো আমি তাদেরকে বলতে গেলাম যে তাদের ব্যাগগুলো একসাথে করে আমার ব্যাগের সাথে তালা মেরে রাখবো কিনা। এ প্রস্তাব দিতেই তারা কেমন যেন আমার উপর রেগে উঠলো।

কিছুই বুঝলাম না! আমারো হঠাৎ মাথা গরম হয়ে গেল। কারো সাথে মুখ কালাকালি করবো না বলেই খরচ বেশী হলেও আমি একা একা ট্যুর করি। তো একা একা ট্যুরে এসেও দেখি এসব যন্ত্রণা থেকে নিস্তার নেই। চলে এলাম সেখান থেকে। শুয়ে পড়লাম আমার সিটে।

রাত বারোটার পর। ২১শে সেপ্টেম্বর’১০১৫

ট্রেন ছাড়লে সেতু আর নিয়ন দৌড়ে এসে ট্রেনে উঠলো। তারা দুজনে ফাঁকা সিটটা দখল করে বসলো। কিন্তু রাতে যেহেতু মাঝখানের সিটে যাত্রী শুয়ে আছে এজন্য নিচের সিটে বসা যায়না। তবুও তারা দুজনে কোচড়া মোচড়া হয়ে বসে রইলো। আমি ঘুমিয়ে আছি ভেবে নিয়ন আমার বিরুদ্ধে বিষেদ্বাগার শুরু করলো। আমার নাকি কমনসেন্স নেই, এটা করা নাকি আমার উচিৎ হয়নি ইত্যাদি ইত্যাদি। ঘুমের ভান করে চুপচাপ শুনতে লাগলাম। এসব শুনতে শুনতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি টের পায়নি।

ঘুম ভাঙলো রাত আড়াইটার দিকে। জেগে দেখি সেতু সিটে ঘুমিয়ে আছে, কিন্তু নিয়ন এককোণে খুব কষ্ট করে কোন রকমে বসে আছে। দেখে খুব মায়া হলো। দুপক্ষের মনমালিন্য হলে মিটমাট করার জন্য কাউকে তো ছাড় দিতেই হবে। ছাড়টা আমিই দিলাম। আমার সিটটা ছেড়ে দিলাম নিয়নকে। একটা ধন্যবাদ দিয়ে আমার জায়গায় শুয়ে পড়লো নিয়ন। আর শোবার সাথে সাথে গভীর ঘুম।

নিয়নতো নাহয় আমার জায়গায় ঘুমালো কিন্তু আমি এখন কি করি? একবার বগির এপাশের বাথরুমে যায়, আরেকবার ওপাশের বাথরুমে। রাত্রে ট্রেনের দরজা আটকানো থাকে বলে দরজায় দাঁড়ানো যায় না। এইসব ট্রেনে টিকিট ছাড়া যাত্রী উঠলে তার খবর আছে। রাতে পুলিশ বারবার ট্রেনের এমাথা থেকে ওমাথা পর্যন্ত টহল দিয়ে বেড়াচ্ছে।

যেই পুলিস আসছে আমি তাড়াতাড়ি ব্যাগ থেকে বোতল বের করে পানি খাবার ভান করছি। আমার মুখে টর্চ মেরে পুলিশ আমাকে নিরীক্ষণ করছে। খুবই যন্ত্রণায় আছি। এদিকে ঘুমে শরীর ভেঙে আসছে। আমি রাত জাগতে পারি না। খুবই ছটফট করছি। এভাবে চারঘন্টা কাটলো। ক্লান্তিতে আমি পুরাই অস্থির।তবে আল্লাহর রহমতে কোন টিকিট চেকার আসেনি। আসলে সেতু আর নিয়নের কপাল খারাপ ছিলো।

আমার পুরো রাতের ক্লান্তি দূর করে ভোরে সূর্য উঠলো। চলন্ত ট্রেন থেকে দিনের জন্ম নেবার দৃশ্য সবসময়ই অসাধারণ। ভোর সাড়ে ছ’টার দিকে ট্রেন পাঞ্জাবের রাজধানী চন্ডিগড় এসে থামলো। এটি নাকি স্বাধীন ভারতের প্রথম সবচেয়ে পরিকল্পিত নগর। ট্রেন এখানে আধাঘন্টার বেশি সময় থামে। বেশিরভাগ যাত্রী এখানে নেমে গেল। শিভেন্দু তার দলবল সহ এখানে নামলো। এখান থেকে তারা গাড়িতে করে ধর্মশালা যাবে। সিমলা বা মানালি যেতে হলে চন্ডিগড় থেকে বাস বা জীপে যাওয়া সবচেয়ে সুবিধাজ্বনক।



চন্ডিগড় স্টেশনটা খুব সুন্দর। সবুজ গাছপালা অনেক বেশি। ট্রেন থেকে নেমে বেশ কিছুদূর হাঁটাহাঁটি করলাম। স্টেশন থেকে যতোটা দূর দেখা যাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে শহরটা সত্যিই খুব সুন্দর। এমনকি স্টেশন ভবনটিও অনেক দৃষ্টিনন্দন।



সাতটার পরপরই আবার ট্রেন ছাড়লো। এরপরের স্টেশনই কালকা। চণ্ডীগড় থেকেই ছোট ছোট পাহাড় শুরু হয়েছে। দুপাশের দৃশ্য এতো সুন্দর যে চোখ ফেরানো দায়। মাঝে মাঝে কিছু কলকারখানা চোখে পড়ছে। এসবকে পাশ কাটিয়ে ট্রেনটি পাহাড়ি পথ বেয়ে এগিয়ে চলেছে। আজকের কালকা মেইল প্রায় চার ঘন্টা লেট। নামার জন্য অস্থির হয়ে গেছি। অবশেষে প্রায় সাড়ে আটটার দিকে ৩৮ ঘন্টা জার্নি শেষে এসে পৌছালাম আকাঙ্খিত কালকা স্টেশনে।





খরচঃ
১। চা ( রামপেয়ারি চায়ের তিনজনের বিল আমি দিয়েছিলাম ) =৩০ রুপি
২। দুপুরের খাওয়া=১৩০ রুপি
৩। রাতের খাওয়া=১২০ রুপি
মোট=২৮০ রুপি
১০০টাকায় ৮২ রুপি হিসাবে এই পর্বের মোট খরচ =৩৪২ টাকা।
পরের পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:১৭
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবি কখনো কখনো কিছু ইঙ্গিত দেয়!

লিখেছেন ডার্ক ম্যান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৭



গতকাল ভারতীয় সেনাপ্রধানের সাথে বাংলাদেশ সেনাপ্রধান এর ভার্চুয়ালি কথা হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের অফিসায়াল এক্স পোস্টে এই ছবি পোস্ট করে জানিয়েছে।

ভারতীয় সেনাপ্রধানের পিছনে একটা ছবি ছিল ১৯৭১ সালের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রথম আলু

লিখেছেন স্নিগ্দ্ধ মুগ্দ্ধতা, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



লতিফপুরের মতি পাগল
সকালবেলা উঠে
পৌঁছে গেল বাঁশবাগানে
বদনা নিয়ে ছুটে



ঘাঁড় গুঁজে সে আড় চোখেতে
নিচ্ছিল কাজ সেরে
পাশের বাড়ির লালু বলদ
হঠাৎ এলো তেড়ে




লাল বদনা দেখে লালুর
মেজাজ গেল চড়ে।
আসলো ছুটে যেমন পুলিশ
জঙ্গী দমন করে!





মতির... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশে ইসলামি আইন প্রতিষ্ঠা করা জরুরী?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:০২



বিশ্ব ইসলামের নিয়মে চলছে না।
এমনকি আমাদের দেশও ইসলামের নিয়মে চলছে না। দেশ চলিছে সংবিধান অনুযায়ী। ধর্মের নিয়ম কানুন মেনে চললে পুরো দেশ পিছিয়ে যাবে। ধর্ম যেই সময় (সামন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি হাজার কথা বলে

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৩:৫৩

আগস্টের ৩ তারিখ আমি বাসা থেকে বের হয়ে প্রগতি স্মরণী গিয়ে আন্দোলনে শরিক হই। সন্ধ্যের নাগাদ পরিবারকে নিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ি রেখে এসে পরদিনই দুপুরের মধ্যেই রওনা হয়ে যাই। আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×