আগের পর্ব > আমার ভারত ভ্রমণ -৬ পর্ব (( ইয়ে দিল্লী হ্যায় মেরে ইয়ার ))
ভারতের হিমাচল প্রদেশ স্বনামে বিখ্যাত।যার আরেক নাম দেবভূমি (দেবতাদের দেশ)।
নামকরণ যে কতখানি সার্থক তা একটু পরই বুঝতে পারবেন।
শিমলা হল হিমাচল প্রদেশের রাজধানী। পরাধীন ভারতে ১৮৬৪খ্রি। থেকে এটি গ্রীষ্মকালীন রাজধানী ছিল।শিমলা বিখ্যাত একটি শৈল শহর। চন্ডিগড় থেকে ১১৫ কিমি দূরে অবস্থিত।
দিল্লী থেকে শিমলার দূরত্ব ৩৬৫ কি.মি.
দিল্লী ছেড়ে রাতে রওনা হয়ে পরদিন খুব ভোরে পৌঁছলাম পাঞ্জাবের ''কালকা'' ষ্টেশনে।
রাতেই টের পাচ্ছিলাম, দিল্লীর গুমোট গরম কাটিয়ে হালকা শীতের আমেজ । স্টেশনে নেমেই বুঝলাম ঠান্ডা কাকে বলে।এদিকে গরম কাপড়ও খুব বেশি আনিনি। কে জানতো , সেপ্টেম্বরের গরমে ঢাকা তে যখন আমরা কাবাব হই,তখনই শিমলা তে যে এমন ঠাণ্ডা পরে !
জমে যাচ্ছিলাম ক্রমশ।এজন্যই বোধহয় বৃটিশ যুগে শিমলা ছিল অবিভক্ত ভারতের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী।
কালকা স্টেশন
যাইহোক ,কালকা থেকে টয় ট্রেন নামের এক স্পেশাল ট্রেনে আমরা শুরু করলাম শিমলা যাত্রা । ২ ফিট ৬ ইঞ্চির সরু লাইনের অপর দিয়ে চলে বলে বোধহয় ''খেলনা রেল''এর এমন নাম।আবার মাত্র কয়েকটি বগী থাকে বলেও এই নাম হতে পারে। কি জানি! জানিনা...
টয় ট্রেন
তবে নামে খেলনা হোক আর যাই হোক । জার্নিটা কিন্তু ছিল আসাধারন !
রেলগাড়ি ঘুরে ঘুরে পাহাড়ে চড়ছে,বাইরে অবিশ্বাস্য সুন্দর প্রকৃতি, এত সুন্দর! পাহাড়ের গায়ে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে রাস্তা,লম্বা পাইন গাছের সারি,বুনো ফুলের রং-বেরঙের ঝোপ,পাহাড় চেরা ঝর্ণা,কোথাও ছোট ছোট ঘরবাড়ি নিয়ে পাহাড়ি গ্রাম।
অনেক টানেল আর ব্রীজ পেরিয়ে আমরা সামনে এগিয়ে যাচ্ছিলাম ।কালকা টু শিমলার মাঝখানে ১০৩ টা টানেল ! ভাবুন অবস্থা । একেকটা টানেল আসে আর আমরা সবাই মিলে গলা ফাটিয়ে চীৎকার করে উঠি ।অন্ধকারে একজন আরেকজন কে ভয় দেখাই।
টানেল পথ
টানেল শেষ হয়ে গেলে আবার ঝাঁপিয়ে পড়ি ভয়ংকর সুন্দর প্রকৃতির ছবি তোলার জন্যে, আঁকাবাঁকা পথে ছবি কেঁপে যায়;মন মতো হয়না । তাতে কি,একবার না পারিলে দেখ শতবার !
একেই বোধহয় বলে দম বন্ধ করা সৌন্দর্য !
পাহাড়ের গায়ে বুনো ফুল
শিমলা যাবার পথে--''কুফরি''
শুধু ভাব আর ভাব !
একদম পিঠ খাঁড়া করে বসে থাকার সিটগুলোতে যদিও টয় ট্রেনের জার্নি ভীষণ ক্লান্তিকর ,তবুও ওই জার্নিটা আমরা কেউই কখনো ভুলব না ।
দুপুর নাগাদ পৌঁছলাম বৃটিশ যুগের আর একটি ছোট্ট শহর "বরোগ"।
মোটামুটি আধা ঘণ্টার বিরতি।দুপুরের খাবারটা সেরে নিলাম তার মধ্যেই ।
"বরোগ" স্টেশন
শিমলা স্টেশনে যখন নামলাম,তখন বিকেল।ছিমছাম ছোটখাটো একটা স্টেশন।তবু কি সুন্দর ঝকঝকে তকতকে !
লাগেজগুলো জীপে তুলে দিয়ে আমরা হেঁটেই হোটেলের দিকে চললাম ।পাহাড়ি খাঁড়া পথে হাঁটা বেশ কষ্টের ।একটুতেই হাঁপ ধরে যায় ।তবুও শেষ বিকেলের নরম রোদ আর ঠাণ্ডা বাতাসে এতোগুলো বন্ধুর সাথে হাঁটতে খুব খারাপ লাগলো না।
হোটেল গুল মার্গ-এ পৌঁছতে প্রায় সন্ধ্যা ।সবাই চরম ক্লান্ত। কিন্তু কাওকেই দেখলাম না রুমে থাকতে। ফ্রেশ হয়ে,খেয়েই বেরুলাম রাতের শিমলাকে আবিষ্কার করতে। শিমলার মল রোডেই ছিল আমাদের হোটেল; তাই একটু হেঁটেই পৌঁছে গেলাম স্ক্যান্ডাল পয়েন্টে। মলের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হলাম, মুগ্ধ হলাম রিজ আর চার্চ এর লাইটিং দেখে।
শিমলা চার্চ
প্রায় মেঘের কুয়াশার ভেতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চললো ফটো সেশন,শপিং আর পাল্লা দিয়ে নানা স্বাদের আইসক্রিম,কেক চেঁখে দেখা। ইস কি যে মজার মজার আইসক্রিম আর কত যে তাদের ফ্লেভার !
রাতের শিমলা
একফাকে সমুদ্রতল থেকে ৭২৩৪ ফিট ওপরে শিমলার রাস্তার কিনারে যেয়ে তাকালাম নীচে । পাহাড়ের গায়ে ছোট ছোট গ্রাম গুলোর অস্তিত্ব বোঝা যাচ্ছিলো বাড়ি-ঘরগুলোর আলো দেখে । দম বন্ধ করা এক দৃশ্য । মনে হচ্ছিলো আকাশটা মাথার ওপরে নয়,নেমে এসছে পায়ের নীচে।আর তাতে জ্বলছে হাজার-হাজার ,লক্ষ-লক্ষ তারা ।
এই প্রথম মনে হলো এতখানি কষ্ট করে শিমলায় আসা সার্থক হলো। রাতের শিমলা মন কেড়ে নিল আমাদের ।
*সব ছবি কিন্তু আমার তোলা না,কিছু নেট থেকেও নেয়া ।
বি।দ্র ঃ অনেকদিন পর ভারত ভ্রমণ সিরিজের এই পর্বটা লিখলাম।বেশ দেরি হয়ে গেলো। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সময় করতে পারছিলাম না।
মাঝে মাঝে পড়াশোনাটা সিন্দাবাদের ভূতের মত ঘাড়ে চেপে বসে,তারপর আর নামতেই চায়না। যারা সত্যি সত্যি অপেক্ষা করতে করতে আমার ওপর বিরক্ত তারা আইসক্রিম খান,বি কুলললললল
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুর ১:১৬