যদিও আপনার বিরক্তি লাগতে পারে, তবু আসুন কিছু ঘটনা শোনাই...
সিলেট শহরের একই বাড়ির দুই বোনকে পছন্দ হয় স্থানীয় দুজন রাজাকারের। তারা বিয়ে করতে চাইলে অভিভাবকেরা রাজি হন নাই।
রাজাকার দুজন তখন অভিযোগ জানায় স্থানীয় পাকি ব্রিগেডিয়ারকে। বিচারের দায়িত্বে থাকা এই বিগেডিয়ার তখন বলেন,
‘উসকো পাকড়াকে লাও। হাম লোক বিলকুল ম্যানেজ কর ল্যায়েঙ্গা’।
অতঃপর ব্রিগেডিয়ার এই বিচার করে দেন; বিচারের ফলাফলে এই পাকি নিজের কাছেই ভোগের জন্য রেখে দেয় দুই বোনকে।
১৯৭১ এর ১৬ সেপ্টেম্বরের ‘দৈনিক বাংলা’তে এই ঘটনার উল্লেখ আছে!
এবার চুনারুঘাটের একটা ঘটনা বলি,
চুনারুঘাটের হাতুণ্ডা গ্রামের নিরীহ বাসিন্দা যামিনী মোহন দের ঘরে সুন্দরী স্ত্রী; বেশ আনন্দেই চলছিল স্বামী স্ত্রী'র সংসার।
যুদ্ধের সময় সুন্দরী এই মহিলার প্রতি লোলুপ দৃষ্টি পড়ে পাকিস্তানিদের। এরপর এই বাড়ীকে তারা তৈরী করেছিল পতিতালয়তে; প্রতিদিন পালাক্রমে ধর্ষণ করত এই বাঙালী নারীকে।
দেশ স্বাধীনের পর এই মহীয়সী নারী লজ্জায় – ক্ষোভে – দুঃখে দেশ ত্যাগ করেন।
এবার বলি এক ঈদের সময়কার ঘটনা, আসলে ঈদের পরের দিন,
পাকিস্তানিরা হবিগঞ্জ জেলার মোহাম্মদপুর গ্রামে আক্রমণ চালায়।অভিযান শেষে যাওয়ার সময় গাড়িতে করে তুলে নিয়ে যায় গ্রামের দু জন নারীকে, ক্ষত বিক্ষত দেহে পরবর্তীতে তারা মুক্তি পেয়েছিলেন।
মাত্রাধিক দৈহিক নির্যাতনের কারণেই পরবর্তীতে একজন মারা যান।
আর কিশোরী মনোয়ারার কথা মনে আছে?
মনোয়ারা তখন ১৪ বছরের কিশোরী। যুদ্ধের কারণে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পথেই ধরা পড়েন দুই পাকি সৈন্যের কাছে। তাকে ধরে নিয়ে যায় এক পরিত্যক্ত বাড়িতে। তাকে ছেড়ে দিতে কাকুতি মিনতি করলে উল্টো দুই সৈন্য ধমকে উঠে,
‘লেট যা ।কোচ নেহি হোগা’
দুটো বিশাল দেহের অত্যাচারে জ্ঞান হারান মনোয়ারা। রক্তাক্ত করে চলে যায় তারা। মামা – মামি পরে নিয়ে যান তাকে শ্রীমঙ্গলের কালিঘাট হাসপাতালে। রক্ত বন্ধ করতে তার গোপনাঙ্গে বেশ কয়েকটা সেলাই দিতে হয়েছিল পরে।
আর চা বাগানের হীরামনির ঘটনাটা তার মুখ থেকেই শুনেন,
“এরপর সুঠাম দেহের দুই পাঞ্জাবী আমাদের সাথে মেতে ওঠে উন্মাত্ততায়। ছিন্নভিন্ন করে আমাদের শরীর। জ্ঞান হারাই আমি। পরে শুনেছি, লালসা মিটিয়ে পাঞ্জাবীরা আমাদের মৃত ভেবে ফেলে রেখে চলে যায়”।
আরো হাজারো, লাখো, কোটি ঘটনা লুকিয়ে আছে আমাদের ইতিহাসের গর্ভে,
প্রত্যেক ত্রিশ লক্ষ শহীদের পরিবারে আছে ত্রিশ লক্ষ কাহিনী,
প্রত্যেক চার লক্ষ বীরাঙ্গনার কাছে আছে অন্তত চার লক্ষ কাহিনী,
প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধার কাছে আছে লক্ষাধিক কাহিনী,
এমনকি যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ্রহণ করেন নাই- তাদের কাছে ও আছে কোটিখানেক কাহিনী -
কোনটা কষ্টের, কোনটা আনন্দের, কোনটা গর্বের , কোনটা কান্নার...
শুনতে গেলে দু জনমেও শেষ হবে না!