আবারো নতুন ব্লগারদের সহায়তায় হাজির হলাম। সামু ব্লগে নতুন এসে ব্লগারদের মনে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খায়। আশেপাশে অবাক হয়ে তাকান, আর কিছু কিছু হিসেব মেলাতে পারেন না। সবার সাথে তাল মিলিয়ে আনন্দের সাথে ব্লগিং করতে পারেন না। অসহায়ের মতো এককোণে পরে থাকেন। স্ট্রাগল করেন। তাদের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিলাম এ পোস্টের মাধ্যমে।
দয়া করে প্রথম পর্বটিও পড়ে নেবেন, আশা রাখছি আপনার সাহায্য হবেই! সহায়তামূলক পোষ্ট; সামুতে স্ট্র্যাগলিং নতুন ব্লগারদের কমন পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর। নতুন ব্লগারদের দৃষ্টি আকর্ষন করছি।
১) প্রথম পাতায় জায়গা পাচ্ছিনা কেন? কিভাবে পাব?: অনেক শখ করে সামুতে একাউন্ট খুললাম। নানা প্রিয় লেখকের ভীরে নিজেও একটু জায়গা করে নিতে চাই। অথবা ফেসবুকে বা অন্যকোথাও ভালো লেখক হিসেবে পরিচিত, সামুতেও নিজেকে বাজিয়ে দেখতে চাই। কিন্তু আমার লেখা তো প্রথম পাতায় আসছেই না, কারো নজরেই পরছে না। কবে মডারেশন স্ট্যাটাসে সবুজ বাতি জ্বলবে? সেইফ কেন হচ্ছিনা? আমার ভুলটা কোথায়? কি করলে প্রথম পাতায় নিজের লেখা দেখতে পাব? তিন দিন তো কিছুই না তিনমাস কেটে গেল! ধুর ব্লগে আর থাকবই না! ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রত্যেক নতুন ব্লগারের মনে এসব প্রশ্ন গিজগিজ করতেই থাকে। নতুনদের মনে আসা সবচেয়ে বড় প্রশ্ন বোধ করি এটাই।
প্রথম কথা প্রতিদিন ব্লগে এতো নতুন সদস্যের আগমন ঘটছে যে মডারেশনের পক্ষে সবাইকে একটি নির্দিষ্ট টাইমে জেনারাল বা সেইফ করা কঠিন। আর প্রথম পাতায় সুযোগ দেবার আগে প্রত্যেক ব্লগারকে পর্যবেক্ষণ করা খুবই জরুরি। ব্লগের সুস্থ ও সুন্দর পরিবেশ বজায় রাখতেই এ নিয়মটি রয়েছে। এ নিয়মের প্রতি শ্রদ্ধা হারাবেন না কখনোই।
প্রথম পাতার শোক করলেই প্রথম পাতায় জায়গা পাবেন না। তারচেয়ে বড় কথা ব্লগে আনন্দময় সময় কাটাতে পারবেন না। এজন্যে প্রথম পাতার চিন্তা ছেড়ে মন খুলে ব্লগিং করুন। আর প্রথম পাতায় আসা সব লেখাই কি মানুষ পড়েন? একদমই না! মেধা, গুণ এমন একটি জিনিস যা লাখ ঢেকে রাখলেও সুবাস ছড়ায় চারিদিকে। আপনার লেখনী মানুষের মন ছুঁয়ে যাবার মতো হলে, প্রথম পাতায় জায়গা পান বা না পান, পাঠকের মনে ঠিকই পাবেন। প্রথম পাতায় লেখা না আসলে কেউ আপনাকে নোটিশ করবেনা সেটা ভাববেন না। একদমই ভুল ধারণা। তবুও প্রথম পাতায় জায়গা কিভাবে পেতে হয় এবং ব্লগজীবনে সবুজ বাতি জ্বালাতে কি করতে হবে তা বলছি।
ক) সুন্দর পোস্ট: আপনি নিজের ব্লগে ভালো লেখা দিন। দায়সারা গোছের "আমি তো প্রথম পাতায় জায়গা পাইনি, আমার লেখা কে পড়বে?" টাইপ লেখা নয়। একদমই যত্ন নিয়ে সুন্দর করে লিখুন। এতে কর্তৃপক্ষের নজরে পরার সুযোগ বাড়বে। আর লেখাটি তাৎক্ষণাত মারাত্মক হিট না হোক, প্রাপ্য সম্মান না পাক। সমস্যা নেই। প্রথম পাতায় জায়গা পেলে রিপোস্ট তো করতে পারবেনই। সুন্দর কিছু সৃষ্টিতে কোন ক্ষতি নেই।
খ) মন্তব্য: অন্যদের ব্লগে ভীষন সুন্দর সব কমেন্ট করুন। বেশিরভাগ ব্লগারই তার পোস্টে সুন্দর বা ইন্টারেস্টিং কোন কমেন্ট দেখলে সেই পাঠকের ব্লগবাড়িতে ঘুরে আসেনই! এতে করে সবার সাথে আপনার পরিচয় ও বন্ধুত্ব বাড়বে। তবে হ্যাঁ নিজের লেখার লিংক সবার পোস্টে দিয়ে আসবেন না। জোর করে পাঠক পাওয়া যায় না। যদি কারো লেখার বিষয়বস্তুর সাথে আপনার লেখার মিল থাকে, তখন শেয়ার করতে পারেন। সেটা এক জিনিস। তবে সব ব্লগে ঘুরে ঘুরে আমার লেখা পড়ুন এমন মন্তব্য করবেন না। এতে সবাই বিরক্ত হবেন।
গ) সময়: একটা লম্বা সময় ব্লগে কাটান। এটা ভীষনই সাহায্য করে প্রথম পাতায়ই শুধু নয় ব্লগে জায়গা করে নিতেও। যারা ব্লগে নিয়মিত, তাদের লেখা মানুষ বেশি পড়েন। ব্লগে বেশি সময় দিচ্ছেন বলে তারা অনেক সম্মানও পান। ব্যস্ততা ভরা সময়েও কিভাবে ব্লগে থাকবেন? লগড ইন থাকুন। বেশ কিছুক্ষন পরে পরে মন্তব্য করতে থাকুন। নানাকিছুর ফাঁকে ফাঁকে চোখ রাখুন ব্লগে। ব্লগে জায়গা করতে হলে সময় তো দিতে হবে বন্ধু!
এসব করলে মডারেশনের চোখ আপনার দিকে পরবেই। যেকোন নতুন জায়গায় পরিচিতি তৈরি করা কঠিন। জীবনের প্রথম স্কুল যাওয়ার কথা মনে পড়ে? বা প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌকাঠে পা রাখা? অথবা প্রথম চাকরির প্রথম দিনটি? কেন একটা নার্ভাসনেস ঘিরতে থাকত সবসময়! প্রথম প্রথম একটুও ভালো লাগত না! যেকোন কাজ কঠিন মনে হতো! কিন্তু আস্তে আস্তে সেই জায়গাগুলোই আমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ও আপন জায়গা হয়ে যায়। সেভাবেই সামুকেও সময় দিন। দেখবেন ব্লগটাকে ভীষনই আপন মনে হবে! দিনে অন্তত একবার লগইন না করে থাকতেই পারবেন না! আর হুট করে একদিন আপনার স্ট্যাটাস চেইন্জ হয়ে সেইফ হয়ে যাবে!
এতকিছু করে কাজ না হয়ে পারে না। তবুও দূর্ভাগ্যবসত কাজ না হলে, সব নিয়ম মানার পরেও প্রথম পাতায় অনেকদিনেও জায়গা না পেলে কর্তৃপক্ষকে জানান মেইল করে।
কর্তৃপক্ষও এদিকে একটু নজর দেবেন এবং দ্রুতগতিতে কাজ করে নতুনদের উৎসাহিত করবেন সে আশাও রাখছি।
২) আমার লেখাটি তো অনেক ভালো! তবুও কেউ কেন আমার লেখা পরল না? অন্যের নিম্নমানের লেখা কেন পড়া হলো?
কষ্ট করে একটা লেখা লিখলেন। কিন্তু তেমন পাঠকপ্রিয়তা পেলেন না। আর কোন পুরোন ব্লগারের একটি লেখা পোস্ট হবার সাথে সাথেই হিট! হয়ত আপনি ফেইসবুকে বা অন্যকোন সাইটে ভীষনভাবে হিট। ভেবে বসলেন সামুতেই মানসম্মত পাঠক নেই। পূর্বের পর্বে ব্লগ ও ফেইসবুকের পার্থক্য বলেছি। সেটা পড়ে নেবেন। আর বাকি কথা নিচে:
ক) পুরোনদের লেখা হিট হয়ে কেন? আপনি নতুন, আপনাকে সেটা মাথায় রাখতে হবে। যে মানুষটি ৭/৮ বছর ধরে নিষ্ঠার সাথে ব্লগিং করছেন, ব্লগে হাজারো ভালো লেখা লিখেছেন তার লেখা মানুষ হুমড়ি খেয়ে পরবে। চোখে না পরলেও ঘুরে আসবে তার ব্লগবাড়ি নতুন কোন লেখার জন্যে। আপনার সেই সুবিধাটি নেই। সেই মানুষটিও কষ্ট করে নিজের জায়গা তৈরি করেছেন। প্রথমদিন থেকেই তিনি ভিআইপি ট্রিটমেন্ট পান নি। আপনাকেও করতে হবে। ধৈর্য্য ধরে মানসম্মত লেখা লিখুন। অন্যদের লেখা বেশি পড়া হলো, ৭০০ পার হলো, আমারটা ৭ বার ও না! এমন পরশ্রীকাতরতা কোন সৃষ্টিশীল মানুষকে মানায় না।
খ) ইরেগুলার: ব্লগে ইরেগুলার হলে আপনি ভালো লিখলেও অনেকসময় কেউ পড়বে না। যদি প্রতি ছয় মাস বা এক বছরে একটি/দুটি পোস্ট করেন তবে কারো আপনার কথা সেভাবে মনে থাকবে না। আবারো বলব ব্লগে জায়গা করার সবচেয়ে কার্যকরী পন্থা হচ্ছে ব্লগে সময় দেওয়া। নিয়মিত পোস্ট করুন। তখন ব্লগারগন আপনাকে পরিবারের সদস্য মনে করবেন, অতিথি না। আর তখন খারাপ লিখলেও মন্তব্য এবং সমালোচনা পাবেন। সমালোচনা পাওয়াও ভাগ্যের ব্যাপার। মানে কেউ আপনার মধ্যে সম্ভাবনা দেখেছেন। এজন্যে আপনাকে উপদেশ দিচ্ছেন।
গ) বিনয় ও সমালোচনা: কোন লেখা ভালো, এবং কোনটি ভালো না সেটা ভীষনই আপেক্ষিক ব্যাপার। আপনি অনেক কষ্ট করে লিখেছেন, আপনার সন্তানের মতো লেখাটি। তাই পরম মমতায় কোন ত্রুটি দেখছেন না। তার মানে এই নয় যে ত্রুটি নেই। নিরপেক্ষ পাঠক হয়ে নিজের লেখা পড়ুন এবং বোঝার চেষ্টা করুন সমস্যাগুলো। সমালোচনা কানে না তুলে একই ভুল বারবার করলে পাঠক বিরক্ত হবেনই। সবার সমালোচনা মাথা পেতে নিন এবং সে অনুযায়ী লেখনী উন্নত করুন।
ঘ) কন্সিস্টেন্সি: এটা এমন এক জিনিস যার অভাব কোন কাজে থাকলে, সাফল্যের অভাবও হবে। আপনি একটি পোস্ট ভালো লিখে অপরটি খারাপ লিখলে পাঠকের কাছে আপনার দু একটি পোস্ট জনপ্রিয়তা পেলেও, ব্লগার আপনি জনপ্রিয় হবেন না। তাই প্রতিটি পোস্টই যত্ন নিয়ে করুন। মনে রাখবেন আপনার ব্লগিং এ কন্সিস্টেন্সি থাকলে, পাঠকের আপনার ব্লগে আসার কন্সিস্টেন্সি থাকবে।
এসব কিছু মেনে চললে আপনি ব্লগে আশানূরুপ সাফল্য পাবেন।
৩) ব্লগিং তো বেশ অনেক মাসই করে ফেললাম। তেমন কোন জায়গা করতে পারিনি। আমি কি ব্লগিং এর যোগ্য? না ব্লগ ছাড়া উচিৎ?
এটা বিশেষভাবে তাদের জন্যে যারা বেশ কমাস ধরে ব্লগিং করে ফেলেছেন। কিন্তু নতুনের মতোই অপরিচিত। প্রথম পাতায় জায়গা পেলেও, সহব্লগারদের মনে জায়গা পাননি! এ নিয়ে হতাশায় ব্লগিং বা লেখালেখি ছেড়েছেন। অথবা শুধু মন্তব্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছেন ব্লগিং! তারা ধরেই নিয়েছেন ব্লগিং তাদের জন্যে না।
ব্লগিং শুরু করতে আপনাকে লেখালেখি জানতে হবেনা। অনেককে দেখেছি বাংলা টাইপিং ও ঠিকমতো পারতেন না, সেখান থেকে সিরিজ লেখা শুরু করেছেন! ব্লগে থাকতে কিছু জানা না লাগলেও টিকতে জানা লাগে। চিন্তা করবেন না, ব্লগই আপনাকে সব শিখিয়ে পড়িয়ে নেবে। আপনার যেসব যোগ্যতা থাকা উচিৎ তা হলো:
ক) গুরুত্ব: সবচেয়ে বড় যোগ্যতা ব্লগ ও ব্লগিংকে গুরুত্ব দেওয়া। আসলাম, ঘুরলাম মনোভাব থাকলে আপনাকে কেউ চিনবে না। ব্লগিং মন দিয়ে করতে হবে। ধৈর্য্য ও অধ্যবসায় থাকতে হবে। লেখালেখি এমন একটি জিনিস যে যতো লিখবেন ততই উন্নত হবে। বেশি বেশি লিখুন। পাঠক সমালোচনা করবেন, শুধরাবেন, আবার লিখবেন।
খ) শেখার আগ্রহ: এই গুণটি জীবনের যেকোন ক্ষেত্রেই সাফল্য লাভে জরুরি। ব্লগে হিটের জন্যে আসলে হিট পাবেন না, শেখার জন্যে আসলে হিট পাবেন! প্রচুর পরিমাণে জনপ্রিয় ব্লগারদের লেখা পড়ুন। আর তুলনা করুন আপনি কোথায় আছেন? তারা কি করছে যা আপনি করছেন না? একটু ভাবুন। নিজের স্টাইল ধরে রাখুন। কখনোই কাউকে কপি করবনে না। কিন্তু অন্যান্য গুণী মানুষদের কাছ থেকে শিখুন। নিজের লেখার মান বাড়ান। যত্ন বাড়ান।
গ) ব্যবহার: ভালো ব্যবহার জরুরি একটি জরুরি যোগ্যতা ব্লগিং এ। কারো লেখা ভালো না লাগলে বা কোন ব্লগারকে ভালো না লাগলে দূর্ব্যবহার করবেন না। পরিচ্ছন্ন ভাষায় সমালোচনা করুন। অথবা কেউ আপনাকে সমালোচনা করলেই যদি গালাগালি শুরু করেন বা বেশি কঠোর ভাষায় সবার সাথে কথা বলেন তবে একঘরে হয়ে যাবেন। কেউ আর আপনার ব্লগবাড়ির মুখ দেখতে চাইবে না!
সর্বোপরি, আন্তরিকতা এবং নতুন কিছু শেখায় আগ্রহ নিয়ে ব্লগের সাথে মিশে যেতে হবে। তবেই আপনি কোণায় পরে থাকা এক ব্লগার থেকে সবার পরিচিত, প্রিয় ব্লগারে রূপান্তরিত হতে পারবেন।
৪) পোস্ট করার পরেই দায়িত্ব কি শেষ? আর কি করতে পারি?
এটা নতুন ব্লগারদের প্রশ্ন হয়ত নয়। আমারই প্রশ্ন নতুনদের কাছে। কিছু কিছু নতুন সদস্য পোস্ট লিখেই ঝাড়া হাত পা হন কেন? পোস্ট লেখার পরের দায়িত্ব হচ্ছে প্রতিমন্তব্য। এর ওপরেও আপনার ব্লগ পরিচিতি এবং পাঠক ভীষনভাবে নির্ভর করে। কতগুলো মন্তব্য পাবেন, সহব্লগারদের সাথে কতটা ভালো সম্পর্ক হবে তাও নির্ভব করে।
অনেক ব্লগারই মন্তব্যের উত্তর দেন না। এটা তো ক্রাইম। কেউ আপনার লেখা পড়ল সময় ব্যায় করে, আর মন্তব্য করল, আপনি ভাব নিয়ে বসে রইলেন। তাহলে তো সেই মানুষটি আবার আসবে না। যদি না মন্তব্যের জবাব পাই তবে আবারো মন্তব্য কেন করব? এতে আপনার পাঠক বিরক্ত ও অপমানিত বোধ করবেন। প্রতিমন্তব্য করতেই হবে এবং কিভাবে করতে হয় তা শিখতে হবে। নিচে কিছু জরুরি পয়েন্ট তুলে ধরলাম এ বিষয়ে:
ক) সব পাঠক সমান: সবাইকে প্রতিমন্তব্য করুন। অনেকেই দেখি কারোটা করেন তো কারোটা বাদ দেন। যারটা করছেন না তাকে অপমান করার অধিকার আপনাকে কে দিল? আর পারলে সিরিয়ালি সব মন্তব্যের জবাব দিন। কারোটা আগে কারোটা পরে জবাব দেবেন না। ব্লগে কেউ কেউ আপনার বেশি পছন্দের ব্লগার আছেন, কেউ কম পছন্দের। কারো প্রতিটি লেখা পড়েন, কারো কোনটাই না। ঠিক আছে। তবে পাঠক হিসেবে যখন তারা আপনাকে ব্লগে আসবেন, সবাই সমান। এ বিষয়টি খেয়াল রাখবেন।
খ) বৈচিত্র: সবাইকে যদি একই মন্তব্য করেন যেমন "ধন্যবাদ, ভালো থাকুন!" তাহলে কাজ হবেনা। একঘেয়ে প্রতিউত্তরে সবাই ইন্টারেস্ট হারিয়ে ফেলবে আপনাকে কিছু বলতে। কেননা আপনি কি জবাব দেবেন তা তো আগে থেকেই তার জানা। তাই কোন মানুষ যদি আপনার লেখা নিয়ে অনেক বিচার বিশ্লেষন করে কমেন্ট করেন, তবে সময় নিয়ে আপনিও তার কথাগুলোতে মতামত জানাবেন নিজের। কেউ আপনার লেখার পেছনে সময় দিলে, আপনার দায়িত্ব অনেক বেড়ে যায়।
গ) আন্তরিকতা: প্রত্যেক ব্লগারের মন্তব্য তার জন্যেই বিশেষ ভাবে করবেন। যেন তাদের মনে হয়, আপনি প্রতিমন্তব্যটি তার জন্যেই করেছেন। যেমন ব্লগারটির নাম নিয়ে, অথবা আপু/ভাই/বন্ধু এভাবে ডাকতে পারেন। যাতে তিনি আবারো আপনার ব্লগে ফেরার আগ্রহ পান। আপনাকে তার আপন মনে হয়।
ঘ) গতি: খুব বেশি দেরী করবেন না প্রতিমন্তব্যে। একদম সাথে সাথেই জবাব দেবার মতো সময় না থাকতেই পারে। তবে দু সপ্তাহ বা এক মাস পার করে ফেলবেন না। ততদিনে পাঠক আপনার লেখার কথা ভুলেই যাবেন। খুব বিপদে বা এমার্জেন্সি সিচুয়েশন আলাদা কথা। তবে চেষ্টা করবেন দ্রুতগতিতে প্রতিমন্তব্য করার। এটা আপনার ব্লগিং এর একটি বিরাট অংশ!
একটি লেখার পড়ার পরে, ব্লগারগণ পোস্টের নিচের মন্তব্য, প্রতিমন্তব্যও কিন্তু বেশ যত্ন নিয়ে পড়েন। আপনার রুচি, মেধা, মতাদর্শ তারা সেখান থেকেও বোঝার চেষ্টা করবেন। বন্ধুর মতো আন্তরিকতা বজায় রাখুন প্রতিটি প্রতিমন্তব্যে। কেউ যদি দেখেন আপনি সবাইকে এক কথাই বলে যাচ্ছেন বা উত্তরই দিচ্ছেন না। তখন তিনি মন্তব্য করুন বাটনটিতে টিপ দেবেন না। তাই এ বিষয়টি খেয়াল রাখবেন।
৫) নির্বাচিত ও আলোচিত পোষ্টে কিভাবে জায়গা পাব? নিজের লেখনীকে আরো সমৃদ্ধ কিভাবে করব?
একেকটি পোস্ট লিখি আর আশা করে থাকি আলোচিত ও নির্বাচিত পোস্টে নিজের লেখা দেখতে পারব। কিন্তু এমন হচ্ছে না! কেন?
প্রথমত আলোচিত পোস্টের কথা বলি। এটা নিয়ে ভাবার কিছুই নেই। নিজের পোস্ট বারবার রিফ্রেশ করেই যেখানে জায়গা পাওয়া যায় সেখানে নজর দেবার দরকার নেই। এসব প্রতিযোগিতা ব্লগ ও ব্লগারদের কোন লাভ বয়ে আনবেনা।
নির্বাচিত পাতায় মডারেশন একটি লেখা কতটা উন্নত সেটার ওপরে ভিত্তি করে জায়গা দেন। সেখানে জায়গা পাওয়া অবশ্যই সম্মানের। লেখায় কেমন উন্নতি আনতে হবে সেখানে জায়গা পাবার জন্যে? কিছু টিপস:
১) শিরোনাম: এটি ভীষনই জরুরি। মনে রাখবেন, আপনাকে যেমন মানুষ আপনার নামে চেনে, আপনার লেখাকে চেনে তার শিরোনামে। শিরোনামটি এমন হতে হবে যেন পাঠককে কাছে টানে। আর আপনার লেখার মূল বক্তব্যটা তারা বুঝতে পারেন। শিরোনাম হচ্ছে আপনার পুরো লেখাকে এক লাইনের মধ্যে আনা! শিরোনাম দেখেই পাঠক সিদ্ধান্ত নেবেন আপনার লেখা পড়বেন কি পড়বেন না? এই কাজটি ভালোভাবে করতে পারলে আপনার পোস্টের মান একলাফে বেড়ে যাবে কয়েক গুন! তবে হ্যাঁ, শিরোনাম আকর্ষনীয়, ভেতরে কিছুই নেই, তাহলে হবেনা। পাবলিকের মার মাটিতে পরবে না তবে। ভেতরের লেখাও যত্ন নিয়ে লিখবেন। আর লেখাটির শিরোনাম ভাবতে লম্বা একটি সময় নেবেন।
২) টাইপিং ও বানান: সামুতে এমন অনেকেই আসেন যারা বাংলা টাইপিং পারেন না। তাদের টাইপোর তোরে লেখা বোঝাই যায় না। এক্ষেত্রে প্রুফরিড সাহায্য করবে। টাইপো গুলো চোখে পরবে, এবং ঠিক করে নেবেন। আর কোন অক্ষর লিখতে না জানলে সামুর এই লিংকটি টাইপিং সাহায্য করবে।
আর অনেকের বানান জ্ঞান স্বল্প। কোন বানান নিয়ে সন্দেহ থাকলে গুগলে সার্চ করে দেখবেন। গুগল ট্রান্সলেটরও সাহায্য করতে পারে এ বিষয়ে। ব্লগে আসাই লেখা উন্নত করার জন্যে, জ্ঞানের পরিধি বাড়ানোর জন্যে। তাই আন্দাজে কিছু লিখবেন না, শিখতে কার্পণ্য করবেন না।
৩) লেখার সাইজ: আজকালকার ব্যস্ত জীবনে কেউই ধৈর্য্য ধরে পুরো এক বই পড়তে চান না ব্লগ পোস্টে। লেখার সাইজ এমন করুন যাতে ফেবু স্ট্যাটাসের মতো নাহয়, আবার পুরো এক বই না হয়ে যায়। মাঝামাঝি রাখুন। নিজের পুরো বক্তব্য অল্পের মধ্যে বয়ান করা একটি শিল্প। চেষ্টা করুন তা শিখতে। গল্প, বক্তব্য অনেক লম্বা হলে পর্ব করে লিখুন দরকার হলে।
৪) প্রেসেন্টেশন: খাবার সুস্বাদু হলো কিন্তু সুন্দরভাবে পরিবেশিত হলোনা! কারোরই রুচি হবে না খেতে। তেমনি লেখারও মূল বক্তব্য ও মান ভালো হলেও, সহজবোধ্য ভাবে পরিবেশিত না হলে পাঠকের ভালো লাগবেনা।
কোন গল্প লিখলেন একটানে, কোন প্যারা নেই! পাঠকের পড়তে খুবই অসুবিধে হবে। দাড়ি, কমার মতো ঠিক সময়ে প্যারা বাই প্যারা লেখাও জরুরি। আবার কিছু কিছু লেখা পয়েন্ট আকারে লিখলে পাঠকের সুবিধা হয়। লেখার ধরণের ওপরে নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নেবেন কিভাবে সেটাকে সাজাবেন? লেখাকে নানা অংশে ভাগ করুন। হেডিংস, সাবহেডিংস তৈরি করুন। জায়গাগুলো বোল্ড করুন বা আন্ডারলাইন করুন। যেন সহজেই পাঠকের চোখে পরে।
৫) প্রুফরিড: সবচেয়ে জরুরি! নিজের কোন লেখা পাঠককে পড়ানোর আগে নিজেই নিজের পাঠক বনে যান।
যেই পোস্টই করবেন না কেন সেটা বারবার পড়ুন। চোখে অনেক ভুল ধরা পরবে। যেমন কোন বাক্য বেশি বড় হয়ে যাওয়ায় হয়ত বক্তব্য বুঝিয়ে উঠতে পারেননি। বা কোথাও বর্ণনা ঠিকভাবে হয়নি। একদমই নিরপেক্ষভাবে পড়ুন নিজের লেখা। আর লেখার সাথে সাথেই পড়বেন না। একটু ব্রেইক নিয়ে পড়বেন। তখন শান্ত ব্রেইনে ভুলগুলো আরো চোখে পরবে। আর পাঠকের চোখে পড়ার আগে নিজেই ঠিক করে নিতে পারবেন।
ওপরের বিষয়গুলো কিভাবে করতে হবে তা বলে দিলাম। তবুও নতুনদের সমস্যা হবে। উদাহরণ হিসেবে গুণী ব্লগারদের লেখা পড়ুন। তখন নিজে নিজেই বুঝে যাবেন। আয়ত্বে এসে যাবে এসব ছোটখাট তবে ভীষনই জরুরি বিষয়গুলো। সিনিয়ারদের দেখে শিখুন। তারাও প্রথম পাতায় সুযোগ পেতেন না, তাদের লেখা কেউ পড়ত না, ধীরে ধীরে তারা এমন জায়গায় যে সবাই হুমড়ি খেয়ে তাদের লেখা পড়েন। হতাশ না হয়ে সিনিয়ারদের দেখুন।
এসব বিষয় মেনে চললে, পাঠকের সাথে সাথে মডুরও সুনজর পরবে। আর লেখাটি প্রাপ্য সম্মান পাবে। তবে হ্যাঁ, গ্যারান্টি নেই কোনকিছুরই। মাঝেমাঝে জনপ্রিয় ব্লগারের ভালো লেখাও পাঠকপ্রিয়তা পায় না। আর "আজ আমার মন খারাপ" টাইপের এক লাইনের পোস্টে মন্তব্যের পর মন্তব্য পরেই যায়। নির্বাচকদেরও চোখের আড়ালে পরে যায় উন্নতমানের কিছু লেখা। কেউই পারফেক্ট নন। এমন হতেই পারে, তবে কদাচিৎ হয়। তাই হতাশ না হয়ে ভালোভাবে লিখতে থাকুন। ভালো লেখা বারবার লিখলে, মানুষের চোখে এড়াবে না।
-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
মনে রাখবেন আজ যারা জনপ্রিয় ব্লগার, তাদের অনেকেই শুধু ব্লগিংই নয় লেখালেখির ক, খ, গ, ঘ ও সামু ব্লগ থেকেই শিখেছেন। দেশের জনপ্রিয় এবং প্রথম ব্লগ কত লেখক তৈরি করে দিয়েছে তার হিসেব নেই। আপনি কেন শিখতে পারবেন না তবে এই ব্লগে থেকে? তাই হতাশ হবেন না। ব্লগ ছাড়ার বা কমিয়ে দেবার কথা ভাববেন না। লেগে থাকুন।
অনেক বড় মাপের লেখকের সৃষ্টিকারী এই ব্লগের সদস্য হওয়া নি:সন্দেহে আনন্দের ব্যাপার। সেই আনন্দের সাথে আসা দায়িত্বকেও নতুনরা গুরুত্বের সাথে দেখবেন সেই কামনাই করি।
ব্লগ নিয়ে আরো কোন প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় করুন। পুরোন ব্লগারদেরও পোস্টে আমন্ত্রন জানাচ্ছি। আমি জানলে আমি উত্তর দেব, আর না জানলে অন্যরাও আপনার প্রশ্নের উত্তর আন্তরিকতার সাথেই দেবেন।
আর এত বকবকের পরে আসল কথা হচ্ছে নতুন, সেমি নতুন, পুরোন হতে থাকা নতুন সবাইকে স্বাগতম আমাদের ব্লগ পরিবারে। হ্যাপি ব্লগিং টু অল!
ছবি সূত্র: অন্তর্জাল।
তথ্য সূত্র: অভিজ্ঞতা!
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুন, ২০১৮ সকাল ৭:৪৬