somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিশ্বের সেরা দশ অতিপ্রাকৃত, বিষাক্ত, ফলিত অভিশাপের আখ্যান! ভৌতিক, অলৌকিক না কি শুধুই কাকতাল? (শেষ কিস্তি)

২৪ শে আগস্ট, ২০১৭ ভোর ৫:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের পর্ব:

বিশ্বের সেরা দশ অতিপ্রাকৃত, বিষাক্ত, ফলিত অভিশাপের আখ্যান! ভৌতিক, অলৌকিক না কি শুধুই কাকতাল? (প্রথম কিস্তি)

৬) অভিশপ্ত, অশরীরী বিয়ের পোশাক!

প্রত্যেক মেয়েই হয়ত স্বপ্ন দেখে একদিন বিয়ে হবে মনের মতো একজন পুরুষের সাথে। তার সাথে জীবনের প্রতি সুখ দুঃখের মুহূর্ত পরম নির্ভরতা ও ভালোবাসায় কাটিয়ে দেবে। বিয়ের দিনটিতে সব মেয়েই পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর কনে হতে চায়। বিয়ের সাজসজ্জার মধ্যে সবচেয়ে বিশেষ হচ্ছে বিয়ের সেই পোশাকটি। যা সব নারী সামলে রেখে দেন বছরের পর বছর। বহু স্বপ্ন, আকাঙ্ক্ষার সেই পোশাকটিও কি অভিশপ্ত হতে পারে?



১৮৪৯ সালে এনা বেকার নামের এক ধনী পরিবারের মেয়ে ভালোবেসে ফেলে এক দরিদ্র কারখানায় কর্মরত শ্রমিককে। এনার বাবা এলিস বেকার ভীষনই ক্ষুদ্ধ হন, এবং এ সম্পর্ক মেনে নেন না। তার মেয়েকে কঠোরভাবে নির্দেশ করেন সেই ছেলেকে ভুলে যেতে। শুধু তাই নয়, ছেলেটিকে তাদের শহর এলটোনা, পেনসিলভানিয়া থেকে বিতাড়িত করেন। এনা নিজের বাবার এই কাজে ভীষনই অভিমান করে। সে জীবনে আর কখনো কাউকে ভালোবাসেনি এবং বিয়েও করেনি। কুমারী জীবন কাটিয়ে ১৯১৪ সালে মারা যায় একরাশ অভিমান বুকে নিয়ে।

তার বাবা প্রেমিককে শহর থেকে বিতাড়িত করার পূর্বে এনা নানা স্বপ্নে বিভোর ছিল। সে একটি ভীষনই সুন্দর পোশাক পছন্দ করেছিল নিজের বিয়ের জন্যে। দূর্ভাগ্যবসত বিয়ে তো শেষমেষ হয়না, তাই এলিজাবেথ ডাইসার্ট নামের আরেক ধনী পরিবারের নারী সেটিকে ক্রয় করেছিলেন। বহু বছর পরে বেকার ম্যানসন একটি মিউজিয়ামে রূপান্তরিত হয়। তখন সেই ড্রেসটি সেখানে দিয়ে দেওয়া হয়। এনার শোবার ঘরে একটি কাঁচের বাক্সে ড্রেসটি প্রদর্শন করা হয়। বহু দর্শনার্থীরা বলেছেন যে তারা ড্রেসটিকে একা একাই নড়তে দেখেছেন। বিশেষত পূর্ণিমা রাতে! কথিত আছে, ড্রেসটি এমনভাবে এপাশ ওপাশ একা একাই ঘোরাঘুরি করে যে মনে হয়, একজন অদৃশ্য কনে আয়নার সামনে দাড়িয়ে বিয়ের পোশাকে নিজেকে দেখছে!!!

একটি ড্রেস নিজে নিজেই কিভাবে ঘোরাঘুরি করে তার কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই। মানুষের ভ্রম বলা যায় খুব বেশি হলে। কিন্তু যারা চাক্ষুষ দেখেছেন তারা শুধু একটা কথাই বিশ্বাস করেন। এনা বেকার, একজন প্রকৃত প্রেমিকা; বেঁচে থাকতে না পারুক, মৃত্যুর পরে নিজের আরাধ্যের সেই বিয়ের পোশাকটি পরেছে! কে জানে অন্য কোন দুনিয়ায়, যেখানে ধনী গরীবের ভেদাভেদ নেই সেখানে তিনি ও তার প্রেমিক সত্যিই বিয়ে করেছেন, এক হয়েছেন অনন্তকালের জন্যে......

৭) টেরাকোটটা আরমি!

১৯৭৪ সালে, চায়নার শান্সি প্রদেশের সিয়ান শহরের পূর্ব দিকে সাত জন চাষী নিজেদের গ্রামের জন্যে কুয়া খনন করছিলেন। তখন তারা অপ্রত্যাশিত ভাবে ২২০০ বছরের পুরোন টেরাকোটটা আরমি কে আবিষ্কার করে। যা ছিল চায়নার প্রথম সম্রাট কিন সি হুয়াং এর সৈন্যদের ভীষনই সুন্দর ভাস্কর্য! কিন সি হুয়াং ১৩ বছর বয়সে রাজা হন এবং ২৪৭-২১০ খ্রিস্টপূর্বে চায়নার কিন রাজ্যের শাসক ছিলেন। এটিকে পৃথিবীর অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার মনে করা হয়ে থাকে। প্রত্নতত্ত্ববিদদের মতে সম্রাটের মৃত্যুর পরেও প্রতিরক্ষার জন্যে এই ভাস্কর্যগুলো তৈরি করা হয়েছিল।



৮০০০ টি পূর্ণায়ত সৈন্য, ১৩০ টি রথ, ৫২০ টি ঘোড়া, ১৫০ টি ঘোড়সওয়ার সমৃদ্ধ এই অনন্য ভাস্কর্য! এটি পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ভূগর্ভস্থ সামরিক যাদুঘর। ৩৮ বছর লেগেছিল এটি তৈরি করতে। প্রতি সৈন্যকে তাদের অনন্য বৈশিষ্ট্য দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। আর র‌্যাংক অনুসারে বসানো হয়েছিল।

এটি অসাধারণ একটি অনুসন্ধান ছিল চায়নার জন্যে। প্রচুর বিজ্ঞানী এবং দর্শনার্থী স্থানটিতে আসেন। অনেক অর্থ উপার্জিত হয় এর দ্বারা। কিন্তু যারা আবিষ্কার করেছিলেন টেরাকোটটা আরমিকে তারা পুরষ্কার, অর্থের বদলে দূর্ভাগ্য, দারিদ্রের শিকার হন।

সেই কৃষকদের কৃষিজমি সরকার দাবি করে। সেই জায়গায় প্রদর্শনী হল ও গিফ্ট শপ তৈরি করার জন্যে তাদের বাড়িঘর ধংস করে দেওয়া হয়। ১৭৯৭ সালে সাত জনের এক কৃষক ওয়াং পুজী হৃদরোগে আক্রান্ত হন, কিন্তু চিকিৎসা নেবার মতো টাকা তার ছিলনা। তাই তিনি গলায় ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যা করেন। তার মৃত্যুর তিন বছরের মধ্যেই আরো দুজন কৃষক ইয়াং ওয়েনহাই এবং ইয়াং ইয়েংক্সিন ৫০ বছরের কাছাকাছি সময়ে মারা যান বেকার ও অর্থহীন অবস্থায়।

যে চারজন বেঁচে ছিলেন, ইয়াং কোয়ানি, ইয়াং পেইয়ান, ইয়াং ঝিফা এবং ইয়াং জিনম্যান দিনপ্রতি কয়েক ডলারের জন্যে সরকারী স্মারকগ্রন্থের দোকানে বসে বই সাইন করতেন দর্শনার্থীদের জন্যে। টেরাকোটটা আরমির আবিষ্কারক হিসেবে তাদের জীবনের দাম না থাকলেও, সাইনের দাম ঠিকই ছিল! ইয়াং কোয়ানির তিন মাস লেগেছিল তার নিজের নাম লেখা শিখতে! তিনি কয়েক ডলারের জন্যে বছরের পর বছর বই সাইন করে গেছেন প্রচন্ড অভাবের সাথে লড়তে। ইয়াং কোয়ানি আক্ষেপ নিয়ে বলেছিলেন, "কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ীরা প্রচুর টাকা আয় করেছেন টেরাকোটটা আরমি থেকে, কিন্তু আমরা না!"

অনেকে বলেন যে সেই সাত কৃষককে সম্রাটের অভিশাপের কারণে এমন দিন দেখতে হয়েছিল। সেটা আসলেই মৃত সম্রাটের অভিশাপ না বেঁচে থাকা ক্ষমতাবান মানুষদের অন্যায় সে তর্কে গেলাম না। শুধু এটুকু বলব, এই সাত কৃষকের অভিশাপ অবশ্যই সেই সব বড় মানুষদের লাগা উচিৎ। যারা তাদের আবিষ্কারের বদৌলতে অর্থ লাভ করে নির্লজ্জের মতো গরীব কৃষকদের জমি, বাড়িঘর ধংস করে দিয়েছিল! ছি!

৮) অভিশপ্ত প্রাসাদ বা চিৎকাররত মাথার খুলি!

স্যার হেনরি গ্রিফিথ বার্টন ১৬০১ - ১৬১০ সালে এগনেস হল তৈরি করেছিলেন। ইংল্যান্ডের বার্টন অ্যাগনেস নামক গ্রামে অবস্থিত এই হল। অ্যানি গ্রিফিথ ছিলেন ওনার মেয়ে। অ্যানি এই বিল্ডিংটিকে তৈরি হতে দেখছিল এবং এটা ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারত না! এটিকে সবচেয়ে সুন্দর বাড়ি মনে করত! বাড়িটির কাজ প্রায় শেষ শেষ, সেই সময়ে সে এক বিকেলে বেড়াতে যায় এক জায়গায়। তখন সে দুর্বৃত্তদের দ্বারা আক্রমণ ও লুণ্ঠনের শিকার হয়। ভীষনরকম আহত অ্যানিকে কোনভাবে বার্টন অ্যাগনেস হলে ফিরিয়ে আনা হলেও কদিন পরেই সে মারা যায়।



কখনো হালকা অজ্ঞান অবস্থায় ঘোরের মধ্যে এবং কখনো সজ্ঞানে সে তার বোনদের বলেছিল, সে কখনোই শান্তি পাবে না যদি তার একটি অংশকেও তাদের এই সুন্দর বাড়িতে রাখা না হয়! বোনদের কাছে সে প্রতিজ্ঞা নেয় যেন মৃত্যর পরেও তাকে সেই বাড়িতেই রাখা হয়। যদিও প্রতিজ্ঞা ভেঙ্গে মৃত্যুর পরে ওকে চার্চে সমাধি দেওয়া হয়।



তখন সে ভূত হয়ে বাড়িতে আসে এবং সবাইকে মারাত্মক ভাবে ভয় পাইয়ে দেয়। তখন বোনেরা তার শেষ কথা মনে করে এবং সিদ্ধান্ত নেয় যে ওর কবর খোড়া হবে। তারপরে ওর মাথার খুলি বা স্কালকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। তখন হলটি শান্তিময় হয়। কিন্তু তারপরে অ্যানির স্কালকে সেখান থেকে সরানোর অনেক চেষ্টা করে হয়। একবার ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছিল, একবার বাগানে কবর দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বারবার সে ভূত হয়ে এসে মারাত্মক সব আওয়াজ করত। অবিরত গোঙানি, ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠা, চিৎকারের শব্দে কেউ শান্তিতে থাকতে পারত না। এজন্যে আবারো ফিরিয়ে আনা হতো। এ্যানির স্কালটি এখন বাড়িতেই আছে। সে পরম শান্তিতে নিজের সুন্দর বাড়িটির দেখভাল করছে!

সত্যিই কি অ্যানি ভূত এসে উপস্থিতি জানান দিত নাকি কেবল মানুষের কল্পনাবিলাসী মন এতসব গল্প তৈরি করেছে?

৯) জলিয়েট একটি অভিশপ্ত পুতুল!

ভৌতিক সিনেমায় একধরণের সিনেমার প্রায়ই দেখা যায়। গল্পটা হয় অনেকটা এরকম: কোন এক অভিশপ্ত পুতুল এর মালিক এবং আশেপাশের সবার শান্তি, সুখ বরবাদ করে দিচ্ছে। ছোটবেলায় এধরণের মুভি দেখে ভীষণই ভয় পেয়েছিলাম এবং রাতের বেলায় আমার অতি প্রিয় পুতুলদের ধারেকাছে যেতে ভয় লাগত। মনে হতো এই তাদের ভূত জেগে উঠবে এবং ঘাড় মটকে দেবে! হাহা! মধুর শৈশবের অর্থহীন খেয়াল কি বাস্তবও হতে পারে?



পুতুলটির নাম জলিয়েট! পুতুলটির বর্তমান মালিক এনা। এনার মায়ের গর্ভবতী নানীকে তার বান্ধবী পুতুলটি উপহার দিয়েছিলেন। তিনি সরল মনে নিলেও বান্ধবী হিংসার বশবর্তী হয়ে পুতুলটিকে অভিশপ্ত করে উপহার দিয়েছিলেন। এনার দাদা সেই মহিলাকে অপছন্দ করতেন এবং দূর্ব্যবহার করেছিলেন। সেজন্যেই তিনি এমন কাজ করেন বলে ভাবা হয়। যদিও নিশ্চিতভাবে কেউ বলতে পারেনা।

এনা, তার মা, তার নানী, প্রমাতামহী সবাই একই পরিনতির মুখোমুখি হয়েছেন। ভীষনই দুঃখজনক এক পরিণতি! প্রত্যেকটি মহিলা একটি করে কন্যা ও পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। প্রতি পুত্র জন্মের তিন দিন পরেই মারা যায়! তারা জন্মের পরে একদমই হেলদি ছিল, তাই এই মৃত্যুগুলো ভীষনই রহস্যজনক।

আপনারা ভাবছেন যে পুতুলটি এত মারাত্মক ক্ষতিসাধনের পরেও কেন পরিবারটি পুতুলটিকে ফেলে আসে না? আগলে রাখে? কেননা পুতুলটির কাছ থেকে আলাদা সব কান্নার আওয়াজ শোনা যায়। লক্ষ্য করে শুনে এই মহিলারা খেয়াল করেন এই কান্না তাদের পুত্রসন্তানের কান্নার আওয়াজ!! তারা বিশ্বাস করেন পুতুলটি তার মধ্যে চার জেনারেশনের চার পুত্রকে আটকে রেখেছে! কখনো চারটি গলা একসাথে শোনা যায়, কখনো আলাদা ভাবে। চারজন মা ই এই আওয়াজটি পেয়েছেন। কিন্তু তারা কাউকে বিশ্বাস করাতে পারেন না কেননা অন্যকেউ আওয়াজটা পায়না!

একতো এভাবে সন্তান জন্মের কদিনের মধ্যেই হারানো তারপরে কান্নার আওয়াজ! যা প্রতি মুহূর্তে তাদের সন্তান হারানোর বেদনাকে বারবার জাগিয়ে তোলে। তাছাড়া, এনার মেয়েও এই পরিনতি দেখতে হবে কিনা সে ভয় ভীষনভাবে রয়েছে। তবুও তারা ফেলতে পারেন না সেই পুতুলকে যার মধ্যে তাদের বংশের চার পুত্র সন্তানের আত্মা নিহিত!

এই ঘটনার ব্যাখ্যা হিসেবে দাড় করানো যায় কোন জেনেটিকাল ডিজিজকে যা হয়ত এখনো অনাবিষ্কৃত। আর দুঃখিনী ভেঙ্গে পরা মায়েরা কল্পনাপ্রসূত আওয়াজ শুনতেই পারেন। কি বলবেন একে? ভৌতিক, অলৌকিক না কাকতাল? যাই হোক না কেন, ভীষনই মর্মান্তিক বিষয়টি!

১০) মর্টলস প্লানটেশনের অভিশপ্ত আয়না!


আয়না! প্রতিদিনই কম বেশি মুখ দেখা হয় সবার। আয়না না থাকলে আমরা নিজেরাই নিজেদের চেহারা দেখতে পেতাম না। আবিষ্কারের জগতে অনন্য এক আশীর্বাদ নি:সন্দেহে। কিন্তু কারো জন্যে কি অভিশাপ হয়ে দাড়াতে পারে?



১৭৯৬ সালে জেনারেল ডেভিড ব্রাডফোর্ড প্রতিষ্ঠা করেন মর্টলস প্লানটেশন। এটি সেন্ট ফ্রান্সিসভিল, লুইসিয়ানা, আমেরিকায় অবস্থিত। তিনি পরবর্তীতে তার জামাই বিচারক ক্লার্ক উডরাফ কে দিয়ে যান, ক্লার্ক সেখানে তার বউ সারা মাটিল্ডার সাথে সাথে থাকা শুরু করেন। তাদের দুটি কন্যা সন্তান ছিল। এটি পৃথিবীর বিশেষত আমেরিকার সবচেয়ে অভিশপ্ত একটি জায়গা হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে বেড এন্ড ব্রেকফাস্ট হিসেবে ব্যবহৃত জায়গাটি গেইস্ট হাউজের মতো। মানুষজন রাতের মতো থাকেন এবং সকালে ব্রেকফাস্ট করেন।

বিচারক ক্লার্ক সমাজে ভীষনই সম্মানিত একজন মানুষ ছিলেন। বিনয়ী, ভদ্র, এবং আইনের প্রতি কর্তব্যরত হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কিন্তু ভেতরে ভেতরে একটি জঘন্য চরিত্রের মানুষ ছিলেন তিনি। যখনই সুযোগ পেতেন বাড়ির দাসীদের সাথে সম্পর্ক করতেন!

ক্লোয়ি নামের এক দাসী ছিল বিচারক ক্লার্কের সন্তানদের দেখভালের দায়িত্বে। তিনি তার সাথে সম্পর্ক করতে চান। ক্লোয়ি একদমই পছন্দ করেনা বিষয়টি। কিন্তু না করলে তাকে কোন এক মাঠে পাঠিয়ে দেওয়া হতে পারে কঠোর পরিশ্রমেের কাজে। এত বড় বাড়িতে আরাম আয়েশ ও স্বাধীনভাবে কাজ করার জীবনকে সে হারাতে চায়নি। এজন্যে রাজি হয়ে যায়। কিন্তু একসময়ে ও অনুভব করে যে বিচারক ক্লার্ক ওর প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। ওর গুরুত্ব কম হয়ে যাচ্ছে এবং বিচারক নতুন কাউকে খুঁজছেন! ভীষনই ভয় পেয়ে যায় ক্লোয়ি, ও কোনভাবে বাড়িটি ছাড়তে চায়না। ওর অনুভব ঠিক কিনা তা জানতে ও সবসময় বিচারকের কথা আড়ালে শুনত। চোখে চোখে রাখত তাকে। একদিন বিচারক তার ব্যাবসা বিষয়ক কিছু আলোচনা করছিলেন, আর ক্লোয়ি কিহোল দিয়ে তাদের কথা শুনতে থাকে। ওকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন বিচারক ক্লার্ক। শাস্তি হিসেবে ওর কান কেটে ফেলেন! তখন থেকে সবসময় ক্লোয়ি একটি পাগড়ি পরত মাথায় সেই কাটা দাগ লুকানোর জন্যে।

ক্ষুদ্ধ, ভীত ক্লোয়ি কোনভাবে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রমান করতে চায় পরিবারটি কাছে। যাতে তাকে আরাম আয়েশের জীবন ছেড়ে যেতে না হয়। কিন্তু কিভাবে করবে? একদিন সে বিচারক ক্লার্ক ও তার পরিবারের জন্যে কেক বানায়। তাতে কিছু পরিমান বিষাক্ত পাতার রস দিয়ে দেয়। ওর ধারণা ছিল এতে পরিবারের সবাই অসুস্থ্য হবে, এবং ও সেবা যত্ম করে সবাইকে ঠিক করে তুলবে। এতে করে সবাই খুশি হবে এবং ওকে আর এই বাড়ি থেকে দূরে পাঠাবে না। কিন্তু অসুস্থ্য হবার পরিবর্তে বিচারক ক্লার্কের বউ ও বাচ্চারা মারা যায়।

ক্লোয়িকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়। তখন সে বাড়িটিকে অভিশপ্ত করে। অনেকে দর্শনার্থী আজও বলেন, যে তারা একটি সবুজ পাগড়ির মহিলাকে মর্টলস প্লানটেশনের আশেপাশে ঘুরতে দেখেছেন।

মর্টলস প্লানটেশনের সবচেয়ে অভিশপ্ত বস্তু মনে করা হয় একটি আয়নাকে। ১৯৮০ সালে অভিশপ্ত আয়নাটি বাড়িতে আসে। অতিথিরা বলেছেন তারা আয়নার মধ্যে কাকে যেন দেখেন! এছাড়াও ছোট বাচ্চার হাতের ছাপ দেখতে পান কাঁচে! অনেকে যেহেতু মর্টলস প্লানটেশনে তৈরি হয়েছিল একটি সমাধিক্ষেত্রের ওপরে। এছাড়াও তৈরির সময়ে এবং পরে দাসদের অত্যাচারের লজ্জার ইতিহাস নিয়ে দাড়িয়ে বিল্ডিংটি। তাই ক্লোয়ি সহ নানাজনের চোখের পানি ও অভিশাপে তাদের আত্মা এমন কষ্টের বদ্ধ জীবন কাটাচ্ছে! সারা উডরাফ এবং তার সন্তানেরা নাকি এজন্যেই সেখানে বন্দি পরে আছেন এবং অনন্তকাল তাই থাকবেন!

এর ব্যাখ্যা কি হতে পারে? বড়জোর মানুষের মুখে মুখে রটে যাওয়া কল্পনাপ্রসূত ঘটনা। তবে এসব বড় বড় বাড়িতে কতই না লজ্জার রহস্য লুকিয়ে থাকে! অপরাধবোধই হয়ত মানুষের মনের সবচেয়ে বড় ভূত!


-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------


শেষ হলো আমার অতিপ্রাকৃত, বিষাক্ত, ফলিত অভিশাপের আখ্যান! এই লেখাটি লেখার কারণটি বলি পাঠককে।
আমি একবার বিশ্বের সেরা দশটি বৃহৎ, অতিমানবীয় রহস্য এবং রহস্যজট খোলার যাত্রায় পাওয়া মনি মানিক্য! (শেষ কিস্তি) শিরোনামে একটি লেখা লিখি। সেখানে যথারীতি বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে সকল রহস্য ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আমি বিজ্ঞানে বিশ্বাস করি, ভূত প্রেত শুধুই মানুষের কল্পনা সেটা পুরোপুরি শিওর নই। কেননা ভূত থাকার প্রমাণগুলোর বিপক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ থাকলেও সবকিছুর ব্যাখ্যা বিজ্ঞান দিতে পারেনি। তবে একটা পুতুল বা চিত্রকর্মও মানুষের ক্ষতি করতে পারে তা মানতে পারিনা। অলৌকিক জগতের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, তারা হুটহাট লৌকিকতায় ভ্রমণ করবে না। করলেও পুতুলের রূপে তো নয়। আমার যৌক্তিক মন তা মানতে নারাজ। এসব রহস্য, ভৌতিক বিষয় নিয়ে পড়তে বিশেষ করে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা জানতে ভালো লাগে। তাই যা বিশ্বাস করি তা প্রথমে লিখেছিলাম। কিন্তু যা পুরোপুরি বিশ্বাস করিনা, সেই ভৌতিক দৃষ্টিকোণ থেকে লিখতে কেমন লাগবে তা জানার জন্যেই এই লেখার অবতারণা।

মজাই লেগেছে আসলে। লেখার সময়ে মনকে একটু ভূত ভূত আবহে নিয়ে গিয়েছি। ছোটবেলার কি ভীষন ভয় পেতাম নানীর কাছে ভূতের গল্প শুনে বা ভূতের ছবি দেখে তা মনে করে আনমনে হেসেছি। তবে শেষ করেছি যখন বলে দেই, বিজ্ঞান সবকিছুর ব্যাখ্যা দিতে না পারলেও অনেককিছুরই ব্যাখ্যা দিতে পেরেছে। যা দিতে পারেনি তা অদূর ভবিষ্যতেই দিয়ে দেবে। এককথায় এসব কিছুর ব্যাখ্যা মানুষের অবচেতন মন। প্রবলভাবে বিশ্বাস করলে নিত্যদিনের ব্যবহার্য টুথব্রাশের মধ্যেও ভূত পাবেন। জ্বিন, ভূত যতক্ষন বিনোদন দেয় ঠিক আছে। ভৌতিক উপন্যাস, সিনেমা, বা ব্লগ পোস্টই হোক, আপনাকে এটকুক্ষনের জন্যে রোমাঞ্চে মাতিয়ে আনন্দ দিক। রহস্যপ্রেমী মনকে ভাবিয়ে তুলুক। কিন্তু এসবের নামে সমাজে কুসংস্কার যেন ছড়িয়ে না পরে, ভন্ড লোভী মানুষের ব্যাবসা ক্ষতি যেন না করে সরল বিপদগ্রস্ত মানুষদের সেই আশায় শেষ করছি।

তথ্য ও ছবি সূত্র: অন্তর্জালের অলিগলি!
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০১৭ ভোর ৫:৩০
৩৫টি মন্তব্য ৩৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দেশনায়ক তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করার নেপথ্যে  

লিখেছেন এম টি উল্লাহ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৮


আগেই বলেছি ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং আওয়ামীলীগের যবনায় জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পৌনে একশ মামলা হলেও মূলত অভিযোগ দুইটি। প্রথমত, ওই সময়ে এই প্রজন্মের নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল দেশনায়ক তারেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পের বিজয়, বিশ্ব রাজনীতি এবং বাংলাদেশ প্রসংগ

লিখেছেন সরলপাঠ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১

ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশে বা দেশের বাহিরে যে সব বাংলাদশীরা উল্লাস করছেন বা কমলার হেরে যাওয়াতে যারা মিম বানাচ্ছেন, তারাই বিগত দিনের বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টের সহযোগী। তারা আশায় আছেন ট্রাম্প তাদের ফ্যাসিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠেলার নাম বাবাজী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩১

এক গ্রামীণ কৃষক জমিদার বাড়িতে খাজনা দিতে যাবে। লোকটি ছিলো ঠোটকাটা যখন তখন বেফাস কথা বা অপ্রিয় বাক্য উচ্চারণ করে ক্যাচাল বাধিয়ে ফেলতে সে ছিলো মহাউস্তাদ। এ জন্য তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×