অভিশপ্ত রাজপ্রাসাদ, অলংকার, গুপ্তধন এসবের গল্প তো বইয়ে অনেক পড়েছি সবাই। সিনেমাতেও ভুতুড়ে অভিশাপের কল্পকাহিনী কম দেখা হয়নি। কিন্তু যদি বাস্তবেই থাকে কোন অভিশপ্ত বস্তু, স্থান, বা মানুষ? সেই অভিশাপে যদি অকল্পনীয় ক্ষতিসাধন হয় বহু মানুষের? একটার পরে একটা রহস্যজনক ঘটনা ঘটে যায় চোখের পলকে? কি বলবেন তাকে? ভৌতিক, অলৌকিক না কি শুধুই কাকতাল?
১) ব্ল্যাক প্রিন্সের রুবি!
ব্ল্যাক প্রিন্সের রুবি ব্রিটিশ মুকুটের সবচেয়ে বিখ্যাত রত্ন হিসেবে পরিচিত। নামের সাথে যদিও রূপের মিল একদমই নেই। রত্নটি কালোও নয়, আবার আসল রুবিও নয়! এটি রুবি নামে পরিচিত হলেও,আসলে একটি লাল স্পাইনাল। লাল স্পাইনাল আসলে রুবির চেয়েও বেশি দুর্লভ এবং কখনো কখনো রুবির চেয়ে বেশি দামী হতে পারে। যদিও সাধারণত অধিক জনপ্রিয়তার কারণে রুবির মূল্য বেশি হয়ে থাকে। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় লাল স্পাইনাল, যার ওজন প্রায় ১৭০ ক্যারেটস এবং লেন্থ ৫ সে.মি.। এর নামকরণ হয় দ্যা ব্ল্যাক প্রিন্স এডওয়ার্ড অফ উডস্টকের নামে। রয়াল ক্রাউনে অন্তর্ভূক্তি পাওয়া অন্যতম প্রাচীন রত্ন এটি।
১৪ তম শতাব্দিতে গ্রানাডা, স্পেনের শেষ সুলতান আবু সাঈদ সর্বপ্রথম রুবিটির মালিক ছিলেন। ১৩৬২ সালে নানা যুদ্ধের মাধ্যমে গ্রানাডা রাজ্য হারাচ্ছিল রাজা পেড্রোর কাছে। এজন্যে সুলতান একটি শান্তি বৈঠকের আয়োজন করেন রাজা পেড্রোর সাথে। কিন্তু রাজা পেড্রো শান্তির প্রতি বিন্দুমাত্র আগ্রহী ছিলেন না, এবং সেই সুযোগে সুলতান ও তার সমস্ত ভৃত্যকে খুন করে ফেলেন। এরপরে রুবি স্বরুপ রত্নটি সুলতানের শরীর থেকে খুলে নেন। আর সেই মুহূর্তে থেকেই অভিশপ্ত হয়ে যায় রুবিটি!
সুলতান আবুকে খুন করার কিছুদিনের মধ্যেই রাজা পেড্রো ও তার ভাইয়ের যুদ্ধ শুরু হয় সিংহাসনের জন্যে। রাজা পেড্রো ইংল্যান্ডের এডওয়ার্ড দ্য ব্ল্যাক প্রিন্স এর সাহায্য নেন যুদ্ধে এবং জয়ী হন। তাই রাজা পেড্রো খুশি হয়ে রুবিটি এডওয়ার্ড দ্য ব্ল্যাক প্রিন্স কে দেন।
রুবিটি নিয়ে এডওয়ার্ড দ্য ব্ল্যাক প্রিন্স ইংল্যান্ডে ফিরে যান। কিন্তু পেড্রোর জয় ক্ষনিকের অতিথি ছিল। ভাইয়ের সাথে তিনি আরো যুদ্ধে লিপ্ত হন এবং একপর্যায়ে দেউলিয়া হয়ে যান। সেই ঘটনার মাত্র তিন বছর পরে তার মৃত্যু হয়!
ওদিকে এডওয়ার্ড দ্য ব্ল্যাক প্রিন্স ও অসুখে মারা যান, এবং নিজের পুত্র রিচার্ড দুইকে রুবিটি দিয়ে যান। রিচার্ড দুই রাজা হন এবং ২১ বছর বয়সে খুন হন হেনরি চতুর্থ বলিংব্রোকের দ্বারা। সিংহাসন গ্রহনের কিছুদিন পরে তিনিও অসুখে মারা যান!
নানা হাত বেহাত হয়ে ১৬ তম শতাব্দিতে রুবিটি টিউডার বংশীয়দের কাছে যায়। রানী প্রথম এলিজাবেথ থেকে রানী ম্যারি অফ স্কট এবং তার কাছ থেকে রাজা জেমস এক এটি পান। কিছুদিন সবাইকে শান্তিতে থাকতে দিয়ে রুবিটি আবারো নিজের কালো অভিশাপের শক্তি দেখায়। রাজা জেমসের পুত্র চার্লস এক মারা যান এবং সিভিল ওয়ারের সময়ে রুবিটি বেঁচে দেওয়া হয়। সেই সময়েই একজন জুয়েলার রুবিটি দেখে বলেন যে এটি তো রুবি নয়, বরং স্পাইনাল। কোন অজ্ঞাত ক্রেতা তখন সেটিকে ক্রয় করেন। তবে চার্লস দুই যখন ১৬৬০ সালে মনার্কি পুনরুদ্ধার করেন, সেই ক্রেতা রত্নটি তার কাছেই বিক্রি করেন। তখন ঐতিহাসিক ইম্পেরিয়াল স্টেট ক্রাউনে লাল রংয়ের আকর্ষনীয় রত্নটি যুক্ত করা হয়। উত্তরাধিকার সূত্রে চার্লসের ভাই, জেমস দুই সিংহাসনে বসেন এবং রাজ্যাভিষেকের তিন বছরের মধ্যেই নির্বাসিত হন!
এভাবেই রত্নটির মালিক যেসব রাজা হয়েছেন তারা রহস্যজনকভাবে নানা অসুখ ও যুদ্ধক্ষেত্রে দূর্ভাগ্যের শিকার হতে থাকেন। বহু ঘটন অঘটন, দুর্ভোগ, মৃত্যু ঘটিয়ে রত্নটি এখন টাওয়ার অফ লন্ডনে প্রদর্শিত রয়েছে। ব্ল্যাক প্রিন্সের রুবি শুধু ব্রিটিশই নয়, পুরো বিশ্বেই সবচেয়ে অভিশপ্ত এক রত্ন হিসেবে খ্যাতি বা কুখ্যাতি লাভ করেছে!
২) চার্লস দ্বীপের অভিশাপ!
কোন ভৌতিক, রোমাঞ্চ ঘেরা অপরূপ সুন্দর দ্বীপে গুপ্তধন রয়েছে, এবং তার তলাশে দ্বীপটিকে কেন্দ্র করে নাটকীয় সব ঘটনা ঘটে যাচ্ছে! গল্পে তো অনেক পড়া এসব। বাস্তবেও কি এমন কোন দ্বীপ আছে? আছে অবশ্যই। তার মধ্যে অন্যতম অভিশপ্ত দ্বীপ হচ্ছে চার্লস দ্বীপ!
অবশ্য আমি যে অভিশাপের গল্প এবারে বলতে যাচ্ছি তার শুধু গুপ্তধন নয়, বরং পুরো দ্বীপটিই অভিশাপে ভরপুর। চার্লস দ্বীপটি ১৪ একর আয়তনের এবং যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে মিলফোর্ড, কানেকটিকাট শহরের কাছে অবস্থিত। এটিকে তিন অভিশাপের দ্বীপও বলা হয়ে থাকে। কেন তা কিছুক্ষনেই জানবেন। ১৬১৪ সালে দ্বীপটিকে আবিষ্কার করেন অ্যাড্রিয়ান ব্লক। ১৬৫৭ সালে চার্লস ডীল দ্বীপটিকে কিনে নেন এবং তখন থেকে এটি পরিচিত লাভ করে চার্লস আইল্যান্ড হিসেবে!
দ্বীপটির দিকে এর প্রথম অভিশাপ আসে নেটিভ আমেরিকানদের পাগসসেট নামের একটি গোত্রের কাছ থেকে। গোত্রটি ইউরোপিয়ান ঔপনিবেশিকদের কাছে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে দ্বীপটিকে হারায়। সেই গোত্র দ্বীপটিকে অনেক পবিত্র মনে করত। তাদের সংস্কৃতি ও ইতিহাসের অংশ ছিল দ্বীপটি। এজন্যে তারা অভিশাপ দিয়ে যান, এই দ্বীপে যেই কোন ভবন নির্মিত হবে তা ধসে পরবে এবং যারা বসবাসের চেষ্টা করবে হবে ক্ষতিগ্রস্ত!
দ্বিতীয় অভিশাপের সাথে গুপ্তধন যুক্ত! কুখ্যাত জলদস্যু ক্যাপ্টেন উইলিয়াম কিড ১৬৯৯ সালে মিলফোর্ডে আসেন। সেখান থেকে তাকে ডাকাতি ও খুনের জন্যে ইংল্যান্ডে বিচারের জন্যে নিয়ে যাবার চেষ্টা চলছিল। কথিত আছে, ধরা পরার আগেই তিনি নিজের ধন ভান্ডারের একটি বড় অংশ লুকিয়ে রাখেন এই দ্বীপে। আর অভিশাপ দেন, যেই এই গুপ্তধন খোঁজার চেষ্টা করবে মৃত্যুর সম্মুখীন হবে! সেই সময়ের দস্যুদের মধ্যে এধরণের একটি সংস্কৃতি প্রচলিত ছিল। কোথাও গুপ্তধন লুকানোর সাথে সাথে জমিটিকে অভিশপ্ত করে দিতেন। যাতে করে কেউ ভয়ে আর চেষ্টা না করে গুপ্তধন খোঁজার!
তিন নাম্বার অভিশাপটিও গুপ্তধনের চক্করে আসে। এই অভিশাপটি নিয়ে নানা মতবাদ রয়েছে। পাঁচজন নাবিক মেক্সিকান সম্রাট গুয়তোমোজিনের সোনা চুরি করে এই দ্বীপে এসে লুকিয়েছিল। সম্রাট অভিশপ্ত করেছিলেন সেই চোরদের এবং সোনাকেও! যারাই সোনার কাছে যাবার চেষ্টা করবে অভিশপ্ত বস্তুর কাছে যাবার চেষ্টা করবে! তবে অনেকে বলে থাকেন সম্রাট নয়, নাবিকেরাই অভিশপ্ত করেছিল জমিটিকে যাতে কেউ গুপ্তধন খোঁজার সাহস না করেন।
দ্বীপটিতে বছরের পর বছর নানা মানুষ বহু ব্যাবসা শুরু করার চেষ্টা করেছিলেন। যেমন রিসোর্ট, মাছের সার তৈরি ইত্যাদি। কিন্তু কোনটিই সাফল্য লাভ করতে পারেনি। এজন্যে দ্বীপটিকে "হার্ড লাক আইল্যান্ড" ও বলা হয়ে থাকে। অনেক ভবনও তৈরি করা হয়েছিল দ্বীপটিতে যা ১০ বছরও টেকেনি।
কথিত আছে বহু মানুষ দ্বীপটিতে গুপ্তধন খুঁজতে গিয়ে মারা গেছেন। যদিও কেউ এখনো পর্যন্ত কিছুই খুঁজে পাননি।
এই অপয়া দ্বীপটিকে নিয়ে অনেক ভৌতিক গল্পও শোনা যায়। দর্শনার্থীরা বলে থাকেন, সেখানে তারা ভূতপ্রেত দেখেছেন। কল্পনাতীত প্রানী, গা কাঁপিয়ে দেওয়া ছায়া ঘোরাফেরা করে দ্বীপটিতে! অদ্ভুত সব অলৌকিক শব্দ এবং আলোর খেলা দেখা যায় রাতে এমনকি দিনেও!
দ্বীপটির জমির অবস্থা, প্রাকৃতিক দূর্যোগ এসবকে দায়ী করা যেতে পারে এতসব মৃত্যু ও অঘটনের জন্যে। আর ভূতপ্রেত তো মানুষের কল্পনাপ্রসুত হতেই পারে। হয়ত তাই! তবে যেভাবে প্রতিটি অভিশাপ ফলে গিয়েছে, অভিশাপ বলে সত্যিই তো কিছু থাকতেও পারে! কে জানে?
৩) মমির অভিশাপ/রাজা তুতের অভিশাপ!
পৃথিবীর সবচেয়ে আলোচিত অভিশাপ মনে করা হয় রাজা তুতেনখামেন বা তুতের মমির অভিশাপকে। তিনি মাত্র নয় বছর বয়সে সিংহাসনে আহরণ করেন এবং ১০ বছর ধরে ইজিপ্ট শাসন করেন। মাত্র ১৯ বছর বয়সে অসুখে মারা যান ১৩২৪ খ্রিষ্টপূর্বে।
১৯২২ সালে, ইংলিশ এক্সপ্লোরার হাওয়ার্ড কার্টার একটি অভিযান শুরু করেন, যাতে অর্থ প্রদান করেন লর্ড কারনারভন। অনেক পরিশ্রম ও সাধনার পরে কার্টার ও তার টিম খুঁজে পান রাজা তুতেনখামেনের সমাধি। মিডিয়ায় তোলপাড় শুরু হয়ে যায় ঘটনাটিকে ঘিরে। এরপর থেকে এই সমাধি একের পর এক নাটকীয়তার সৃষ্টি করতে থাকে। তুতেনখামেনের সমাধি আবিষ্কারের অল্পসময়ের মাথায় এর সাথে যুক্ত মানুষ ও পরিচিতদের মৃত্যু ও নানা ধরণের দূর্ঘটনা ঘটতে থাকে!
কথিত আছে, সেটি একটি অভিশপ্ত সমাধি ছিল! রাজা টুট এর সমাধির কাছে একটি দরজায় নাকি লেখা ছিল: "মৃত্যু ডানা ঝাপ্টে আসবে তাদের কাছে, যারা রাজার শান্তি বিঘ্নের চেষ্টা করবে!" তৎকালীন সময়ে নানা রকম অভিশাপ সকল মিশরীয় রাজার সমাধিকে দেওয়া হত। অভিশাপের ভয়ে কেউ রাজাদের মৃত্যু পরবর্তী শান্তিতে আঘাত হানবে না সেই ভাবনায়। সেই যাই হোক, এসব কথিত অভিশাপ কৌতুহলী মানুষকে কখনো আটকে রাখতে পারেনি অনুসন্ধানে!
অভিশাপ সর্বপ্রথম তার অস্তিত্ব জানান দেয় অর্থ যোগানদার কর্নারভানের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। তার মৃত্যু এবং এর সাথে জড়িত ঘটনা সবাইকে নাড়িয়ে দেয়! তিনি মৃত্যুবরণ করেন মশার কামড়ে। আসল অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে যে মূহুর্তে তিনি মারা যান ঠিক তখন মিশরের রাজধানী কায়রোর সবগুলো বাতি নাকি হুট করে নিভে যায়। লন্ডনে তার পোষা কুকুরটিও একই সময় ছটফট করতে করতে মারা যায়।
এছাড়াও আরো কিছু মানুষ যারা জড়িতে ছিলেন অভিযানটির সাথে তারা মৃত্যুবরণ করেন বা কোন দুর্ঘটনার শিকার হন।
অড্রে হার্বার্ট ছিলেন লর্ড কারনারভন এর ভাই। তিনিও রহস্যজনক ভাবে মারা যান। সমাধি আবিষ্কারের কয়েক মাস পরেই তিনি হুট করে অন্ধ হয়ে যান। যদিও তার তেমন কোন অসুখ ছিল না এবং এক্সিডেন্টও হয়নি! ডাক্তারেরা অপারেশন করে তাকে সুস্থ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু ঠিক হবার পরিবর্তে অপারেশনটির কারণে তার রক্ত বিষাক্ত হয়ে যায় এবং তিনি মারা যান ভাইয়ের মৃত্যুর পাঁচ মাস পরেই।
আরন এম্বের আরেকজন ইজিপ্টোলজিস্ট ছিলেন যিনি এই কাজের যাথে যুক্ত ছিলেন না। তবে তিনি এই অভিযানে যাওয়া প্রায় প্রত্যেকটি মানুষের বন্ধু ছিলেন। সমাধি আবিষ্কারের মাত্র কবছর পরে ১৯২৬ সালে তিনি মারা যান! তার বাড়ি পুড়ে গিয়েছিল। তখন সবকিছু বাঁচানোর আগে তিনি একটি বই বাঁচানোর চেষ্টা করছিলেন। বইয়ের নাম? দ্যা ইজিপ্টিশিয়ান বুক অফ দ্যা ডেড! তিনি বইটি লিখতে লিখতেই আগুনে পুড়ে মারা যান!
অভিশাপটি যে মানুষকে সবসময় মেরে ফেলত তা নয়, দুর্ঘটনার সম্মুখীন করত মাঝে মাঝে। সমাধির প্রধান আবিষ্কারকের হাওয়ার্ড কার্টারের বন্ধু ছিলেন স্যার ব্রুস ইনঘাম। কার্টার সমাধি থেকে একটি জিনিস এনে উপহার দিয়েছিলেন তার বন্ধুকে। উপহার গ্রহণের কিছুদিনের মধ্যেই তার বাড়ি পুড়ে যায়। যখন তিনি বাড়িটি পূণনির্মানের চেষ্টা করেন, একটি বন্যায় তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়!
জেমস হেনরি ব্রেস্টেড নামে আরেক ভদ্রলোক সেই টিমে ছিলেন এবং সমাধি উদ্ধারে সহযোগিতা করেন। সমাধি খুঁজে পাবার পরে তিনি বাড়ি ফেরেন এবং দেখেন যে ওনার পেটকে একটি কোবরা খেয়ে ফেলেছে! কোবরা মিশরীয় মনার্কির প্রতিক। অনেকে সেটিকেও অভিশাপের জন্যে দায়ী মনে করেন। ব্রেস্টেড ১৯৩৫ সালে মারা যান, সেই অভিযানের বেশ পরেই। তবে তার মৃত্যুটি ইজিপ্ট পুনরায় ভ্রমণের কিছু দিন পরেই হয়েছিল!
কেউ কেউ অভিশাপ ফলার অপেক্ষাও করেন নি। নিজে থেকেই প্রাণ দিয়েছিলেন অভিশাপটির ভয়ে! হিউ এভলিন-হোয়াইট দেহটি খননের দায়িত্বে ছিলেন। ১৯২৩ সালে অভিযানটির অনেক কর্মী মারা যেতে থাকেন বা কোন দূর্ঘটনার সম্মুখীন হন। এতে করে তিনি ভীষন ভয়ে পেয়ে আত্মহত্যা করেন গলায় ফাঁস দিয়ে। একটি সুইসাইড লেটারও লিখে যান, যাতে লেখা ছিল, "আমি মাথা নত করলাম অভিশাপটির কাছে যা আমাকে চলে যেতে বাধ্য করছে!"
নানা ভাবে আরো ২০ টি রহস্যসজনক মৃত্যু ঘটে ১৯৩৫ সালের মধ্যে যার জন্যে দায়ী করা হয় সেই অভিশাপকে।
সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে প্রধান অভিযানকারী কার্টার নিজে ৬৪ বছর বয়সে স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেন। কোন রহস্যজনক অসুখ বা প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে নয়। তিনি ক্যান্সারে মারা গিয়েছিলেন সেই অভিযানের অনেক পরে। যেখানে তার বহু সহকর্মী ও বন্ধুও অভিযানের কিছু সময়ের মধ্যেই রহস্যজনক ভাবে মারা যান, তিনি অভিশাপ থেকে কিভাবে মুক্তি পেলেন তা বোঝা দায়। অনেকেই বলেন তাকে বাঁচিয়ে স্বজন, বন্ধু, সহকর্মীদের ভয়ানক মৃত্যু ও দুর্ভোগ দেখানো এবং কষ্ট দেওয়াই অভিশাপের কাজ ছিল!
বিজ্ঞানীরা যদিও মানতে নারাজ এসব কোন অভিশাপের ফল। তাদের মতে, কাকতাল বা সমাধির কোন ভয়ংকর ফাংগাস এসব মৃত্যুর জন্যে দায়ী এবং কার্টারের স্বাভাবিক মৃত্যুই বুঝিয়ে দেয় অভিশাপ বলে কিছু নেই। আর বাকি সব আওয়াজ, আলো মানুষের কল্পনাপ্রসূত! অনেকে এও বলেন যে পত্রিকার কাটতি বাড়ানোর জন্যে মিডিয়া বাড়িয়ে চাড়িয়ে এসব বানিয়েছে! আর কেউ কেউ বলেন এসব খবর মিডিয়ায় ছড়িয়েছেন কার্টার নিজেই আরো খ্যাতি লাভের আশায়! সত্যিই কি তাই? নাকি এতসব রহস্যজনক মৃত্যু, অঘটনের জন্যে সত্যিই কল্পনাতীত এক জগৎ এর ভেসে আসা অভিশাপ দায়ী?
৪) হাবসবার্গ রাজ পরিবারের অভিশাপ!
হাউজ অফ হাব্সবুর্গ বা হাউজ অফ অস্ট্রিয়া ইউরোপের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজবাড়ি ছিল। অভিশাপের কবলে যদি কোন পরিবার ধ্বংস হয়, তবে তা এই হাবসবার্গ পরিবার! কথিত আছে, একটি নয়, দুটি বড় অভিশাপ এই শক্তিশালী পরিবারটির সুখ শান্তি কেড়ে নিয়েছিল!
কোন মানুষ নয় এবারের অভিশাপের পেছনে দায়ী ছিল পাখি! কাউন্ট অফ আল্টেনবুর্গ নামের এক সাহসী নাইট শিকারে গিয়েছিলেন পাহাড়ে। হুট করে শিকারের পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে দলছুট হয়ে পরেন। আর আটকে পরেন পাথরঘেরা এক জায়গায় যেখানে শকুনি তার দিকে হিংস্র চোখে তাকিয়ে ছিল। তখন তিনি হাঁটুগেড়ে বিধাতার কাছে প্রার্থনা শুরু করেন। তখন হুট করে দাড়কাকের একটি দল শকুনিটিকে ভাগিয়ে দেয়। কৃতজ্ঞতা স্বরুপ তিনি একটি আশ্রয়স্থল তৈরি করেছিলেন দাড়কাকদের জন্যে! আর নিজের ভৃত্যদের বলে দেন, যেন তাদেরকে সেখানে স্থায়ীভাবে থাকতে দেওয়া হয় এবং খাবার প্রদান করা হয়। কিন্তু ১০০ বছর পরে, তার উত্তরপুরূষ হাব্সবুর্গেরা টাওয়ারটি ধ্বংস করেন এবং একটি দুর্গ নির্মাণ করেন সেই জায়গায়। শোনা যায় যে, দাঁড়কাকেরা এতে নাখোশ হয়েছিল এবং সেই পরিবারের সদস্যদের আক্রমণ করত। এজন্যে পরিবারটি তাদের আশেপাশে বসবাসরত সকল দাড়কাককে মেরে ফেলেন! আর দাড়কাকদের কাল অভিশাপ ঘিরে ফেলে পরিবারটিকে! সেই দিন থেকে, যখনই পরিবারটির কোন সদস্য মৃত্যুবরণ করেছে, ঘটনার পূর্বে বা সময়ে আশেপাশে দাড়কাক দেখা গিয়েছে। বিশেষত বলতে হয়, মারি এন্টোইনেটের কথা। তিনি ফ্রেঞ্চ রেভালুশনের পূর্বে ফ্রান্সের শেষ রানী ছিলেন। তার মৃত্যুদণ্ডের সময়েও দাড়কাক দেখা যায়।
১৮৪৮ সালে দ্বিতীয় অভিশাপটি পরিবারটিকে দেন কাউন্টেস কারোলি। অস্ট্রিয়ার ফ্রান্সিস জোসেফ হিংস্রভাবে হাঙ্গেরীয় বিদ্রোহীদের দমন করছিলেন। কাউন্টেসের পুত্র সেই বিদ্রোহের অংশ ছিলেন এবং একপর্যায়ে তিনি আটক হন। বিদ্রোহীরা ওয়াদা করেন যদি বন্দীদের ছেড়ে দেওয়া হয়, তবে তারা বিদ্রোহ বন্ধ করে দেবেন। স্বাধীনতার আত্মত্যাগে জীবন ভিক্ষা চেয়েছিলেন তারা। কিন্তু তবুও কয়েদীদের মেরে ফেলা হয়। তখন কাউন্টেস অভিশাপ দেন ফ্রান্সিস জোসেফকে যা পরে ফলে যায়। ফ্রান্সিসের স্ত্রী, পুত্র, ভাগ্নে মারা যান। তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা রহস্যজনক ভাবে একের পর এক খুন হন, আহত হন অথবা পাগল হয়ে যান। তার ভাগ্নের মৃত্যুর পরে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মঞ্চ তৈরি হয় এবং তা অবশেষে ধ্বংস করে দেয় পুরো সাম্রাজ্যকে!
কি বলবেন একে? কর্মফল বা অভিশাপের ফল? কে দায়ী? দাড়কাক না শুধুই কাকতাল?
৫) দ্যা হ্যান্ডস রেসিস্ট হিম!
শিরোনামটি একটি পেইন্টিং এর যা পৃথিবীর সবচেয়ে ভুতুড়ে চিত্র হিসেবেও পরিচিত। চিত্রকার বিল স্টোনহ্যাম ১৯৭২ সালে এটি আঁকেন। ছবিটিতে দেখা যায়, একটি বাচ্চা ছেলে বড় আকৃতির একটি পুতুল নিয়ে দাড়িয়ে আছে, কাঁচবিশিষ্ট দরজার সামনে। দরজার পেছনে, একটি অন্ধকারে ঘর থেকে অনেকগুলো হাত গ্লাসটিকে চেপে ধরছে।
স্টোনহ্যামের নিজেরই পাঁচ বছর বয়সের একটি ছবি থেকে ছেলেটিকে এঁকেছিলেন। মানে ছবির বাচ্চা ছেলেটি তিনি নিজেই। দরজার এপাশ ওপাশ জাগ্রত দুনিয়া এবং কল্পনাপ্রসুত ও অসম্ভব একটি দুনিয়াকে আলাদা করছে। পুতুলটি ছেলেটিকে নিয়ে যাবে সেই কল্পনার জগতে। হাতগুলো অন্যধরনের প্রাণী বা সম্ভাবনাকে ইংগিত করছে।
এই ছবিটিকে জড়িয়ে যেসব কাহিনী প্রচলিত রয়েছে তা ভূতের সিনেমাকেও হার মানিয়ে দেয়! ছবিটির কাজ শেষ হবার পরে যে প্রথম তিনজন মানুষ এটির সংস্পর্শে আসেন, গ্যালারি মালিক, ছবিটি প্রথম সমালোচক, এবং অভিনেতা জন মারলি যিনি এটিকে প্রথম কিনেছিলেন কিছুদিনের মধ্যেই মারা যান! এরপরে ছবিটি কেনেন ক্যালিফোর্নিয়ার এক বয়স্ক দম্পতি। তাদের ভাষ্যনুযায়ী অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটতে থাকে ছবিটি কেনার পর থেকে! রাতে নাকি ছেলেটি নাড়াচারা করত এবং পুতুলটি গায়েব হয়ে যেত ছবিটি থেকে! সেই বাড়িতে আগত মেহমানেরা পর্যন্ত ছবিটির কারণে অস্বস্তি বোধ করতেন। তারা অনুভব করতেন যেন অদৃশ্য কিছু হাত তাদের স্পর্শ করছে এবং ছবিটি কাছে গিয়ে দেখতে গেলে বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শুনতে পেতেন!
সেই দম্পতি ছবিটিকে ফেলে দেন এবং ছাব্বিশ বছর পরে সেটিকে একটি পুরোন মদ কারখানার কাছে পাওয়া যায়। যিনি ছবিটিকে পান, তিনি ইবে তে এটিকে অকশনে দেন। কেননা ওনার সাথেও একই সব ঘটনা ঘটে চলেছিল যা সেই দম্পতির সাথে ঘটেছিল। ছবিটি ১০২৫ ডলারে গ্রান্ড রেপিডস, মিশিগানের পার্সেপশন গ্যালারি কিনে নেয়।
আমি সেই ছবিটি এখানে দিলাম না। কেননা ছবিটি সামনাসামনি দেখা মানুষ তো সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেনই। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে প্রচুর অনলাইন ভিউয়ার রিপোর্ট করেছেন যে তারা ছবিটি দেখার পর থেকে মানসিক অস্থিরতা অনুভব ও এলোমেলো আচরণ করেছেন। ছবিটির মধ্যে ভৌতিক কিছু আছে তা মানতে আমি নারাজ। তবুও কেন দিলাম না ছবিটি? আমি মনে করি তিনজন সদস্যের মৃত্যু কাকতালীয় ছিল। নাহলে প্রথমে চিত্রশীল্পিই মারা যেতেন। কিন্তু তার কিছুই হয়নি! এরপরে সেসব কথা সেই দম্পতির মনে প্রভাব বিস্তার করায় এসব অদ্ভুত জিনিস দেখতে থাকেন, এবং তাদের স্বজনেরাও তাদের কথায় প্রভাবিত হন। তবে পরে যিনি ছবিটি কুড়িয়ে পান তার কি সমস্যা ছিল আমি জানি না। হয়ত ছবিটির মধ্যে কোন সম্মোহনী শক্তি রয়েছে। আমার তা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। কোন কারণ তো আছেই যা আমরা এখনো জানি না। তবে এটা মানতেই হবে যে ছবিটির মানুষের মনে প্রভাব ফেলার একটা ক্ষমতা রয়েছে। এতসব গল্প অনেকের মনে প্রভাব বিস্তার করার ফলেই অনলাইন ভিউয়েরেরা পর্যন্ত মানসিক অসংগতি অনুভব করেছেন। আমি চাই না ছবিটির ইতিহাস শুনে আপনাদের মধ্যে কারো তেমন কোন প্রভাব পরুক। এজন্যে ছবিটি আমি দিলাম না। দেখতে হলে নিজ দায়িত্বে দেখবেন। এটা জেনে দেখবেন যে এই ছবিটি দর্শনের পর থেকে অনেকের জীবন ওলটপালট হয়েছে!
-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
অভিশপ্ত এসব স্থান ও বস্তুর কাছাকাছি গিয়ে ক্ষতিতো হয়েছে বহু মানুষের। সে মিথ্যে নয়। কিন্তু সত্যিই কি তা অভিশাপের ফল? না কি শুধুই কাকতাল বা মানুষের কল্পনাপ্রসুত গল্প? বিজ্ঞানের প্রতি বিশ্বাস থেকে বলছি দ্বিতীয়টা হবার সম্ভাবনাই বেশি। তবে এও ঠিক, আমাদের জানার বাইরেও, কল্পনাতীত একটি জগৎ রয়েছে। সে জগৎ সম্পর্কে আমাদের কোন জ্ঞান নেই। যেদিন বিজ্ঞানের আলো সেই অজানা জগৎ এ পৌঁছাবে, সব রহস্যঘেরা আঁধার হারিয়ে যাবে! তবে ততদিন পর্যন্ত, ফ্যান্টাসি হিসেবে এসব গল্প মন্দ নয়! আমিই যেমন লিখতে লিখতে অন্য এক জগতে হারিয়ে গিয়েছিলাম! গা ছমছমে এসব কাহিনী পড়তে বা দেখতে ভালোই লাগে! তাই না?
সূত্র: অন্তর্জালের অলিগলি!
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ৮:৪০