somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কানাডায় স্কুলে একেকটি দিন (পর্ব ৬): প্রেম পিরিতি: মফস্বল ও বৈদেশে সম্পর্কের ভাঙ্গন গড়ন এবং বৈদেশীদের চিন্তন দর্শণ!

০৭ ই আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেকদিন পরে কন্টিনিউ করছি সিরিজটি। দেরীর কারণে সিরিজটির রেগুলার পাঠকদের কাছে প্রথমেই ক্ষমাপ্রার্থী।
যাই হোক, সূচনায় কথা না বাড়িয়ে টাইম মেশিনে চড়ে চলে যাচ্ছি আমার কিশোরিবেলায়! :)

আগের পর্বগুলো:
আগের সিরিজ: কানাডার স্কুলে একদিন (এক থেকে বাইশ): পর্ব বাইশ । পর্ব বাইশে অন্য সকল পর্বের লিংক রয়েছে!
আগের পর্ব: কানাডার স্কুলে একেকটি দিন (পর্ব ১) - বাংলাদেশীদের যেসব বিষয় বিদেশীরা অদ্ভুত মনে করে!
কানাডার স্কুলে একেকটি দিন (পর্ব ২) - মফস্বলের কন্যের বৈদেশে শিক্ষাগ্রহন; ঘটন অঘটন এবং আমাদের নিয়ে বৈদেশীদের দর্শন!
কানাডার স্কুলে একেকটি দিন (পর্ব ৩) - মফস্বলের কন্যের বৈদেশ ভ্রমণ; চলন ও বলন, এবং ভিনদেশ নিয়ে বৈদেশীদের দর্শন!
কানাডার স্কুলে একেকটি দিন (পর্ব ৪) - মফস্বলের কন্যের বৈদেশ ভ্রমণ; চলন ও বলন, এবং বৈদেশীদের নানা দর্শন!
কানাডার স্কুলে একেকটি দিন (পর্ব ৫) - ঈদ মোবারক সবাইকে! কিছু পাঠকের প্রশ্নের উত্তরে আজকের পর্ব : কেমন কাটে প্রবাসে ঈদ?

পায়ের তলায় সুড়সুড়ি লাগল, খিলখিল করে হেসে উঠলাম। আবারো পা দিলাম, আবারো হেসে উঠলাম! আমাদের বাড়ির পেছনের ছোট্ট, ছিমছাম উঠানটিতে খালি পায়ে ঘাসের ওপরে হেঁটে বেড়াচ্ছি। বাড়ির উঠানে বা স্কুলের মাঠে খালি পায়ে হেঁটে ঘাস ও মাটির স্পর্শ অনুভব করতে ভীষনই পছন্দ করতাম। প্রকৃতির কোমল স্পর্শ কেমন যেন একটা নেশায় মনকে আচ্ছন্ন করে রাখে! হাঁটতে হাঁটতে আশেপাশে তাকাচ্ছি! কি সুন্দর একটা পরিবেশ! হালকা মিষ্টি বাতাসে ভেসে তাজা ঘাসের মন মাতানো ঘ্রাণ নাকে এসে লাগছে! সেই বাতাসে আশেপাশের বৃক্ষ পল্লব মৃদু চালে দুলে চলেছে। চতুর্দিকে কোমল একটা আলো বিরাজ করছে। ডুবন্ত সূর্য যেতে যেতে নিজের সবটুকু আলো বিলিয়ে দিচ্ছে। সারাদিন নীল হয়ে থাকা নির্মল আকাশ জুড়ে খেলা করছে লালচে কমলা রং এর দ্যুতি! বেলা শেষে নিকষ কালো চাদরে নিজেকে মুড়িয়ে নেবার প্রস্তুতি নিচ্ছে বোধহয়! দূরে তাকিয়ে উঁচু উঁচু পাহাড়গুলোকে দেখছিলাম। কিছুক্ষন পরে ওদের অনেকাংশ আঁধারে ডুবে যাবে, পরম প্রতাপে জেগে উঠবে সেই ভোরে! চারিপাশ শান্ত, নিরিবিলি। এতসব নীরব সৌন্দর্যের মাঝে কেমন যেন মন খারাপের সুরে বেজে চলেছে। সূর্যের বিদায় হয়ত সবার মনেই শুন্যতার অনুভব জাগিয়ে তোলে! প্রকৃতি মাকে খুঁটিয়ে দেখতে দেখতে পরিবেশটিতে হারিয়েই গিয়েছিলাম।

হুট করে আমার নিজের মায়ের গলা কানে এলো, "ছি ছি ছি!" উঠানে রাখা ছোট টেবিলে বসে মা বাবা গল্প করছিল। আমি বুঝে গেলাম কানাডিয়ান কালচারের কোনকিছু নিয়ে কথা হচ্ছে। মা কানাডিয়ান কালচারের কোনকিছু ভালো লাগলে "ওহ আল্লাহ! ওরা কত ভালো!" আর খারাপ লাগলে "ছি ছি ছি" শব্দটি ব্যবহার করেন। মা বাবাকে বলছেন, "ছি ছি ছি! সেদিন ক্রিস্টি আমাকে নিজের মেয়ের বয়ফ্রেন্ডের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিল। কি অদ্ভুত দেশ! এইটুক বাচ্চা মেয়ের বয়ফ্রেন্ড, মা আবার গদগদ হয়ে দেখাচ্ছে! কেমন দেশে নিজের মেয়েকে আনলাম রে বাবা!" আমি শুনছি আর মুচকি হাসছি। ওখানে গিয়ে প্রথম প্রথম মা আমাকে নিয়ে খুব ভয়ে থাকতেন। ওদের মতো না হয়ে যাই আবার! আমার বিষয়টি খুব মজা লাগত! হাহা। ওহ ক্রিস্টি কে তা বলি। আমার মা ওখানে গিয়ে কিছু কোর্স শুরু করেছিলেন। ক্রিস্টি ছিলেন সেই ক্লাসের টিচার। আমার মায়ের মতোই বয়স। নাক খাড়া, নীল চোখ, ফর্সা, লম্বা সুন্দরী কানাডিয়ান নারী ছিলেন তিনি। পথে দেখা হয়েছিল, তখন নিজের মেয়ে আর বয়ফ্রেন্ডের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন স্বাভাবিক ভাবে। আমার মায়ের কাছে যা ভীষন অস্বাভাবিক মনে হয়েছে!

আমাদের মফস্বলে তখনকার দিনে এবং হয়ত এখনো প্রেম খুবই লুকিয়ে করার জিনিস ছিল। কিশোরি কিশোরি আমরা কলেজ ও ভার্সিটি পড়ুয়া বড় আপু ভাইয়াদের প্রেমের গল্প মজা করে শুনতাম। আর আমার ক্লাসে বা স্কুলে কেউ প্রেম করলে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতাম। এত সাহস পায় কি করে এরা? শিক্ষক ও বাবা মায়ের চোখে পরলে তো মেরেই ফেলবে! প্রেম তো এলাহি ব্যাপার স্যাপার। ধরা পরলে মারধোর, ঘরবন্দি এসব নিজের চোখের সামনেই হতে দেখতাম অনেকের সাথে। পরিবার ও সমাজে ভীষনই লজ্জ্বার মুখে পরতে হত প্রেমের খবর জানাজানি হলে। আর প্রেম লুকানো কঠিন, তো করাও। ছেলে মেয়েদের মিক্সিং কম ছিল। শুধু মাত্র ক্লাসে চোখাচোখি, কলেজ/কোচিং এ যাবার সময়ে দু মিনিট পথ আটকে কথা বলা বা প্রতিবেশী বারান্দায় ইশারা এভাবেই প্রেম হত। এত স্বল্প সময়ে এত গভীর প্রেম হতো যে বলার নয়! আমি অবাক হয়ে ভাবতাম লাইফ রিস্ক নিয়ে এত লুকিয়ে ভয় ভয় মনে কেন কেউ প্রেম করে?

আর বৈদেশী প্রেমের একটা বিষয় নিয়ে সবসময় কৌতুহলী ছিলাম। এখানে সম্পর্ক কেন ভাঙ্গে? দেশে সবসময় দেখেছি সমাজ পরিবারের কারণে প্রেম ভাঙ্গতে। বাংলা ছবিতেও নায়ক নায়িকার প্রধান শত্রু পরিবার। তাই আমি একটা লম্বা সময় পর্যন্ত ভাবতাম, পরিবার ছাড়া এই পৃথিবীতে আর কোন কারণে প্রেম ভাঙ্গে না। কিন্তু কানাডায় তো সমাজ ও পরিবারে যেকোন বয়সেই প্রেম করা জায়েজ। কানাডায় প্রেমের ব্যাপারে কোন লুকাছুপা নেই। ক্লাস, ক্লাব, পার্টি, সোশাল মিডিয়া সবখানে ছেলে ও মেয়ে অবাধে মেলামেশা করে যেকোন বয়সেই। প্রেম হওয়াটা খুবই সহজ ব্যাপার। কারো কোন বাঁধা নিষেধ নেই। বাবা মা কে বলবে ডেইটে যাচ্ছে, তারা টিপস দেবেন। ব্রেক আপ হলে শিক্ষক উপদেশ দেবেন সামলানোর জন্যে। প্রেম এখানে শিশুকালে কিউট, কিশোর কালে সহজাত ও প্রাকৃতিক, যৌবনকালে অবশ্য কর্তব্য। আমাদের দেশে প্রেম শিশুকালে পাকামি, কিশোর কালে বখে যাওয়া আর যৌবনকালে ক্যারিয়ার গড়ার পরিপন্থী মনে করা হয়! অবশ্য লাস্ট কবছরে বিশ্বায়ন ও প্রযুক্তির কারণে দেশ অনেক পাল্টেছে। তবে তার বেশিরভাগটাই শহরে, গ্রাম মফস্বলের অনেক জায়গা এখনো পুরোনো কিছু ভাবনাতেই চলে। যাই হোক, আজকাল দেশে বিদেশে নানা ছোট ছোট কারণে সম্পর্ক ভাঙ্গে। এখানে সম্পর্ক ভাঙ্গার ছোট একটা কারণ দেই গল্পে গল্পে।

তখন আমার এক দেড় বছর হয়েছে স্কুলে। মানিয়ে নিচ্ছি ধীরে ধীরে। এখানে হাই স্কুলে নিজের জিএফ বা বিএফ এর হাতে হাত ধরে কাঁধে মাথা দিয়ে হাঁটা, সবার সামনে কিস করা নরমাল বিষয়। সহপাঠী তো দূরের টিচারদের সামনেও কোন লজ্জার বিষয় মনে করা হয়না। এজন্যে দেশে যেখানে পাড়ায় কার সাথে কার ইটিশপিটিশ চলিতেছে তা জানিতে শার্লক হোমস বনে যেতে হত, এখানে তার প্রয়োজন পরে না।
একদিন আমি স্কুল লবির এককোণে একটা বেঞ্চে বসে আছি কানাডিয়ান বান্ধবী বি এর সাথে। গল্প করতে করতে দেখি দুটো ছেলেমেয়ে অন্তরঙ্গ ভাবে হেঁটে আসছে। আমি বললাম, "আমাদের ক্লাসের কুপার না? ওর পাশে কে ওটা? ওর গার্লফ্রেন্ড তো এ না!" ও আর ওর গার্লফ্রেন্ডের লং টাইম রিলেশনশিপ (এক বা দেড় বছর) ছিল। স্কুলের ফেমাস কাপল এবং সবাই ওদের চিনত। ওদেরকে সবসময় একসাথে দেখা যেত। সবসময়! হুট করে কি হলো কিছুই বুঝলাম না। কেননা আমি একটা স্কুল ক্লাবের সভায় ওদের দুজনকে কদিন আগেই হাসিখুশি দেখেছি।
বির কাছে জানলাম কেন সম্পর্ক ভেঙ্গেছে। ও বলল, "মেয়েটির জন্মদিন ছিল। সেই পার্টির ছবি ফেইসবুকে দিয়েছে। কিন্তু পার্টিতে বয়ফ্রেন্ডের সাথে তোলা ছবিগুলো দেয়নি সতর্কভাবে। রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস হিডেন রাখার কারণে ওদের আগে থেকেই ঝগড়া হতো। এ কাজের পরে তা চূড়ান্ত আকার ধারণ করে। এরপরে ব্রেইকআপ!"
এই কাহিনী শোনার পরে আমার মনে হলো, সামনের সারি করে রাখা লকারে মাথা ঠুকি! ধুর! এত ঠুংকো সবকিছু? মেয়েটি সিংগেল দেখাচ্ছিল নিজেকে সম্পর্ক থাকার পরেও! আর ছেলেটি এ কদিনেই নতুন কাউকে জুটিয়ে ফেলল? এত সহজে দুজনের পাশের সার্বক্ষণিক মানুষটিকে বদলে গেল! আজব!

গল্প টেনে সিনিয়ার ইয়ারে আনি। আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর কিছু সময় কেটেছে মি: এম এবং বান্ধবী জের সাথে। সিনিয়ার ইয়ারে E.S.L. ক্লাসে দুজনকেই একসাথে পেয়েছিলাম। আমি মি: এম এর টি.এ. ছিলাম এবং জে স্টুডেন্ট ছিল ক্লাসটির। আমাদের তিনজনের বন্ডিং কি ছিল সেটা বলে বোঝানো যাবেনা। মি: এমের ক্লাসটা বেশ বড় ছিল, এবং সবসময় আলোকিত থাকত। সেই ক্লাসের ভিউ সবচেয়ে সুন্দর ছিল। স্বচ্ছ কাঁচের বিশাল দুটো জানালা দিয়ে বাইরে তাকালে নির্মল নীল আকাশ দেখতে পেতাম। পুরো ঘরে নীলাভ একটি রং ছেয়ে থাকত সবসময়! আকাশের কোল জুড়ে উঁচু নিচু পাহাড় দেখা যেত। ঘাসময় মাঠ, এবং সেই মাঠে ফুটে থাকা বুনো ফুলগুলোও দেখা যেত। দূর থেকে ফুলগুলোকে দেখে মনে হতো চঞ্চল প্রজাপতির দল উড়ে বেড়াচ্ছে যেন! আমি আর জে কতো দাড়িয়ে থাকতাম জানালা ঘেষে সব কাজ শেষে! আর মি: এম আমাদের দুই পাগলীর আড্ডা, হাসি মজা নিয়ে দেখতেন। দেখতেন কিভাবে বাংলাদেশের কনজারভেটিভ কালচার আর ব্রাজিলের ওপেন কালচার এক নদীতে মিশে গিয়েছিল!

ওহ, যাদের কথা বলছি তাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই। মি: এম ছিলেন একজন মধ্যবয়স্ক সুদর্শন কানাডিয়ান পুরুষ। পুরোপুরি ফ্যামিলি ম্যান, ভীষনই বুদ্ধিমান এবং সুন্দর করে কথা বলতে ও বোঝাতে পারতেন। আর জে ব্রাজিলের খুব সুন্দর একটি মেয়ে ছিল। লম্বা, চিকন চাকন, বেশ লম্বা ব্রাউন চুল, আর লম্বাটে মুখ। খুবই সরল ভালো মনের একটা মেয়ে ছিল। আমার খুব প্রিয় দুজন মানুষকে এক ক্লাসে পেলে কি ভীষন ভালো সময় কাটবে তা বলাই বাহুল্য!

একদিন মি: এম ক্লাসে এসে বললেন, "তোমাদের জন্যে একটা গুড নিউজ আছে!" আমি আর জে সাথে সাথে তার দিকে আঙ্গুল তাক করে বললাম, "ইউ আর প্রেগন্যান্ট এগেইন!?" বলেই হেসে খুন দুজনে। এই জোকটি ওনাকে এক কলিগের ওপরে এপ্লাই করতে দেখেছিলাম আমরা। ব্যাস আদর্শ শিষ্যের মতো শিখে ফেলেছিলাম। মাঝেমাঝেই বলতাম ওনাকে, আর হেসে কুটিপাটি হতাম। উনি মুচকি হেসে বললেন, "বেটার দ্যান দ্যাট! আমরা মুভি দেখব ক্লাসে!"
কানাডায় স্কুলে অনেক মজার কিছু বিষয় থাকে। যেমন ক্রিসমাস বা যেকোন বড় ছুটির আগে বেশিরভাগ ক্লাসেই মুভি দেখানো হয়। ওয়ের্স্টান মুভি আমি তেমন দেখতাম না। জে আবার ওয়েস্টার্ন মুভির পোঁকা ছিল। মি: এম যেই মুভিই দিতেন না কেন জের দেখা থাকত। আর ১৫ বা ২০ তম বারের মতোও আনন্দ নিয়েই দেখত। আর আমার জন্যে একদমই নতুন! মি: এম যখনই ক্লাসকে জিজ্ঞেস করতেন যে এই পাঁচটা মুভির মধ্যে কোনটি দেখতে চাও, আমি কিছুই বলতে পারতাম না। আর জে ফট করে বলে দিত এটা বেস্ট। আমিও জের সাথে গলা মেলাতাম। আর কিইবা করার ছিল?

মি: এম যে মুভিটি দিলেন, তাতে দেখায় নায়কের মা ও বাবার প্রেম ছিল। তাদের সম্পর্ক টেকেনি বা বিয়ে হয়নি। নায়ক অনেক বোকাসোকা, সরল মনের। বড় হয়ে কোনভাবে ঠিকানা পেয়ে বাবার কাছে এসেছে। সেই বাবার বউ সংসার আছে। আমি বলছি, এইরে এদের সুখের সংসার গেল। বউটি নিশ্চই হাসব্যান্ডকে ছেড়ে দেবে। জে বলল, "না মহিলা সব মেনে নেবে। ছেলেটিকে সাপোর্ট করবে।" তারপরে দেখি সত্যিই মহিলা সব মেনে নিচ্ছে সহজেই। আমি বললাম, আমার হাসব্যান্ডের এমন কোন কাহিনী থাকলে তাকে আমি মেরেই ফেলতাম। জে ছবি দেখা বাদ দিয়ে আমার দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে চোখ বড় করে বলল, "কি? কেন? তোমার সাথে পরিচয়ের আগে বাচ্চা হলে মেনে নিতে না? সে তো তোমাকে চিট করেনি! ব্যাপারটি আগে ঘটেছে বিয়ের পরে নয়!" আমি বললাম, তো কি? বিয়ে না করেই তার একটা সন্তান হয়েছে! কোন খবরই রাখেনি, আমাকে বলেনি! এত বড় অন্যায় মেনে নেব কি করে? এটা শুনে ও আমার দিকে এমনভাবে তাকিয়ে থাকল যেন আমি চিড়িয়াখানার প্রানী! হাসব্যান্ডের গার্লফ্রেন্ডের সাথে সন্তান থাকা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। সেদিন জের চেহারায় আমি যে কালচার শক দেখতে পেয়েছিলাম! দেখার মতো এক্সপ্রেশন! হাহা। এখানে বিয়ে না করে একসাথে থাকা, সন্তান হওয়া, বাঁধহীন প্রেম দেখে প্রথম প্রথম আমিও কি কম চমকাতাম? ওরাও একইভাবে চমকায় আমাদের ভাবনায়!

মনের হাবিজাবি আঁকিবুঁকি: গল্প নয়, ব্যাস কিছু খুচরো বকবক করব। কানাডায় হুট করে সম্পর্ক গড়া ভাঙ্গার সংস্কৃতি আমাদের দেশেও ছড়িয়েছে। বিশ্বায়নের যুগে সব দেশই যেখানে পশ্চিমি সংস্কৃতিতে রঙ্গিন, বাংলাদেশকে আলাদা রাখা সম্ভব নয় হয়ত। কিন্তু তবুও নিজ সচেতনতায় নিজ সুখ সবারই দেখা উচিৎ। এটা যেকোন দেশের যেকোন মানুষের জন্যেই প্রযোজ্য। কিশোরি বয়সের সেই সম্পর্ক ভাঙ্গে কেন এ কৌতুহল আশেপাশের নানা সম্পর্ক ভাঙ্গতে দেখে মিটেছে কিছুটা হলেও। মনে হয় সম্পর্ক ভাঙ্গার সবচেয়ে বড় কারণ স্বার্থ আর কৌতুহল! নিজের দিকটা একচুল ছাড় দিতে চায় না কেউ। বিলিয়ে দেবার চেয়ে আদায়ের হিসেবটা বেশি জরুরি হয়ে পরেছে। কোথায় যেন একটা বেপরোয়া ভাব! আগেকার দিনে প্রিয়জনকে হারানোর ভীষন ভয় ছিল। এখন আর তা যেন নেই। যাকে ভালোবাসি তার চেয়ে বেটার কেউ কি আমার জন্যে আছে? এমন ভাবনায় ওপেন রিলেশনশিপের চল শুরু হয়েছে। মানে সম্পর্ক চলাকালীন অন্যকারো সাথে সম্পর্ক হতে পারে। একে অপরকে জবাবদিহিতার কিছু নেই! কমিটমেন্ট নামক জিনিসটি নেই। আর কমিটমেন্ট থাকলে হনেস্টি নেই! আমরা ছোটবেলায় দুধ চিনি মিশিয়ে আইসক্রিম বানানোর চেষ্টা করতাম। ফ্রিজে দিয়ে প্রতি ৫ সেকেন্ডে চেক করতাম জমল কিনা? বারবার ফ্রিজের দরজা খোলা ও অধৈর্য্য হবার কারণে ভালোভাবে আইসক্রিম জমত না কখনোই। অাধা পানি আধা বরফ হয়ে থাকত। আজকালকার সম্পর্কগুলোও তাই হয়ে যাচ্ছে! একটি সম্পর্কে থেকে অন্যদিকে উঁকি দেবার স্বভাব যেন জমতে দিচ্ছেনা ভালোবাসাকে। আমার খুব অবাক লাগে সবকিছু! কিছু বছর আগেই তো প্রেম অন্যরকম ছিল! অনেকসময় সমাজ পরিবার সর্বশক্তি লাগিয়েও ভাঙ্গতে পারতনা। আর আজকাল? কত ছোট বিষয়ে দুটো মানুষ দূরে সরে যায়! চোখের পলকেই সব পাল্টে গেল যেন! কি অদ্ভুত! তবুও পৃথিবীতে প্রেম আছে, ভালোবাসা আছে। নি:স্বার্থ ও স্থির মনোভাবে খাঁটি ভালোবাসা সৃষ্টি হচ্ছে। আধুনিক যুগের সব বৈরিতা পেছনে ফেলে ভীষন সুন্দর কিছু সম্পর্ক গড়ে উঠছে মানুষে মানুষে। তাদের দেখে মনে হয়, ভালোবাসারা ভালো আছে! আরো বেশি ভালো থাকুক সেই কামনায় শেষ করছি আজকের পর্ব!
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০১৭ ভোর ৫:৩৫
২৪টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দেশনায়ক তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করার নেপথ্যে  

লিখেছেন এম টি উল্লাহ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৮


আগেই বলেছি ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং আওয়ামীলীগের যবনায় জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পৌনে একশ মামলা হলেও মূলত অভিযোগ দুইটি। প্রথমত, ওই সময়ে এই প্রজন্মের নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল দেশনায়ক তারেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পের বিজয়, বিশ্ব রাজনীতি এবং বাংলাদেশ প্রসংগ

লিখেছেন সরলপাঠ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১

ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশে বা দেশের বাহিরে যে সব বাংলাদশীরা উল্লাস করছেন বা কমলার হেরে যাওয়াতে যারা মিম বানাচ্ছেন, তারাই বিগত দিনের বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টের সহযোগী। তারা আশায় আছেন ট্রাম্প তাদের ফ্যাসিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠেলার নাম বাবাজী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩১

এক গ্রামীণ কৃষক জমিদার বাড়িতে খাজনা দিতে যাবে। লোকটি ছিলো ঠোটকাটা যখন তখন বেফাস কথা বা অপ্রিয় বাক্য উচ্চারণ করে ক্যাচাল বাধিয়ে ফেলতে সে ছিলো মহাউস্তাদ। এ জন্য তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×