ব্লগে এবং অনলাইনে নানা পেইজে ছেলেদের প্রপোজ স্টাইল নিয়ে রম্য বা সিরিয়াস আকারে অনেক লেখা বের হয়েছে। মেয়েদের প্রপোজ করার ধরণ নিয়ে ততটা লেখা হয়নি। এজন্যে আমি এই মহান কাজে হাত দিলাম। সেযুগ চলে গিয়েছে যখন শুধু ছেলেরাই প্রেম ও বিয়ের জন্যে প্রপোজ করত। এখন মর্ডান জামানা, মেয়েরাও পিছিয়ে নেই কোনকিছুতেই। অনেকে মেয়েই পছন্দের মানুষটিকে মনের কথা জানাচ্ছেন বা জানানোর কথা ভাবছেন। সেইসব আপুদের জন্যে লিখে ফেললাম আজকের পোস্ট!
১) রহস্য: ফোন নাম্বার জোগাড় করে তাকে ম্যাসেজ করে মনের কথা বলুন। প্রথমে সে বিশ্বাসই করবে না যে আপনি একজন মেয়ে। ভাববে তার কোন ছেলে বন্ধু মজা করছে! কোন ছেলেকে প্রপোজের সবচেয়ে কঠিন দিক হচ্ছে তাকে বিশ্বাস করানো যে ইটস রিয়েলি হ্যাপেনিং! পরিচয় গোপন রেখেই তার সাথে কথা বলুন! কন্ঠস্বর শুনে এবং কথার ধরনে তার সন্দেহ ভাঙ্গতে দেরী হবেনা। এভাবে প্রপোজ করার লাভ হচ্ছে সে যদি নাও করে আপনার মানহানি হবেনা! মন খুলে নিজের সকল ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারবেন। কেন তাকে পছন্দ করেন, কতটা করেন এসব আরকি। আপনি কে হতে পারেন সেই রহস্যভেদে সে সারাক্ষন আপনার কথাই ভাবতে থাকবে। যখন দেখবেন সে পুরোপুরি দূর্বল, তখন তাকে ঠিক করার জন্যে প্রেমের ডাক্তারনি হিসেবে সামনে আসবেন। আশা করি সামনাসামনি মনের কথা বলার দায়িত্ব সে নিজেই নেবে!
২) রবীন্দ্র স্টাইল: রবীন্দ্রনাথ আমাদের রক্তে মিশে আছেন। একটা ছেলে বা মেয়ে যতই আধুনিক হোক না কেন বৃষ্টির দিনে রবীন্দ্রসংগীত না হলে চলে না, তার কবিতা, উপন্যাস না পড়লে সাহিত্য জ্ঞান শুন্য মনে হয়! এই প্রাণের টানটিকে ব্যবহার করুন। একটা ছেলের চোখের দিকে তাকিয়ে ছলছলে চোখে (আবেগে হলে ভালো, নাহলে পেঁয়াজ কেটে ছেলেটির সামনে আসুন ) কাঁপা গলায় বলুন
"প্রহরশেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্রমাস–
তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ।"
ধুর ধ্যাত, বাংলা সাহিত্যে এর চেয়ে বেশি রোমান্টিক কিছু নেই মনে হয়! যাই হোক, এতে ছেলেটার কাইত হবার সম্ভাবনা প্রবল!
৩) চিঠি: চিঠির আবেদন ফুরিয়ে যায়নি, যাবেনা। এখনো চিঠিতে আবেগমাখা স্পর্শ মিশে থাকে। প্রতিটি শব্দ যেন প্রেরক চিঠির ওপরে ঝাপসা ছবি হয়ে রিডিং দিয়ে পড়তে থাকে! (পুরনো বাংলা সিনেমার মতো!)
ও মোর পরানের পাখি,
তুমি কেন বোজনা তোমারে অনেক ভালুবাসি। আমার চক্ষের কালা কাজল, আর ভুরুর মধ্যের রঙ্গিন টিপ চিল্লাইয়া বলে ভালুবাসি, ভালুবাসি! তুমি কিল্লায় শুনতে পাও না? তোমার কানে কি পোকা? এরাসল স্প্রে মারমু না এমনিতে বুঝবা?
ইতি,
তোমার সখিনা!
এইভাবে লিখলে সে আর যাই করুক আপনার সাথে প্রেম করবেনা তা তো বুঝতেই পারছেন। আরেহ আপুরা, বলেছি তো রম্য লিখছি, রাগেন কেন? শুনুন, ব্লগের বেশিরভাগ আপুদের লেখার হাত এমনিতেই ভালো। (আমারটাও ভালো তা বলার চেষ্টা করছি না, বেশিরভাগ বলেছি, সবার নয়! ) লেখনী শক্তি আপনাদের প্লাস পয়েন্ট, তাই মনের মাধুরী ও আবেগ মিশিয়ে সুন্দর করে চিঠি লিখে তার কাছে পৌঁছে দিন। কাজ হবার কথা!
৪) অন্তর্জাল: ব্যাকডেটেড থেকে এখন ডিজিটাল স্টাইল। অন্তর্জাল ব্যাবহার করিয়াই তাহাকে অন্তরের জালে ফাঁসাতে হইবে! ছেলেটি অনলাইনে যেখানে যাই পোস্ট করুক হোক তা ছবি বা লেখা, তাতে লাইক দিন। ছেলেটি আপনাকে একটু নোটিস করবে। তখন বন্ধুত্বের হাত বাড়ান। একটু ক্লোজ হলেই মনের কথা বলে ফেলুন। কিভাবে বলবেন? টাইপ করে, ছোট্ট একটা ম্যাসেজে কয়েক কথায় বলে ফেলুন তাকে ভালোবাসার কথা। সামনাসামনি কারো চোখে চোখ রেখে মনের কথা বলা অনেক কঠিন। তবে ভার্চুয়ালি স্ক্রিনের ওপাশে এই কাজটিই অনেক সহজ হয়ে যায়!
৫) ফ্রেন্ড - দ্যা ইনডাইরেক্ট প্রপোজ!: ছেলেটির কোন মেয়ে বন্ধুর সাথে আপনাকে বন্ধুত্ব করতে হবে। ছেলেটির শুধু ছেলেবন্ধুই থাকলে এই স্টেইপটি স্কিপ করুন। কেননা কোন ছেলের সাথে আপনি মন খুলে পছন্দের ব্যাপারটি জানাতে দ্বিধা বোধ করতে পারেন। তাই ছেলেটির দোস্ত টাইপ পিওর বান্ধবীর সাথে যোগাযোগ করুন। খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষন করুন সেই মেয়েটিকে। মেয়েটির বয়ফ্রেন্ড থাকলে খুবই ভালো, আপনি শিওর হয়ে যাবেন আপনার মনের মানুষ আর সে কেবলই বন্ধু! সাবধান: শিয়ালের কাছে মুরগী বর্গা দেবেন না! সেই মেয়েটিকে পুরোপুরি ভরসা করতে পারার মতো মনে হলে, তাকে কথায় কথায় বলে ফেলুন যে আপনি তার বন্ধুকে পছন্দ করেন। ব্যাস আপনাকে আর কিছু করতে হবেনা, আপনাদের প্রেম করানোর দায়িত্ব সেই কমন ফ্রেন্ডই নিয়ে নেবে।
৬) ব্ল্যাকমেইল: ছেলেকে বলবেন, "তুই যদি আমার সাথে প্রেম না করিস, তোর পরিবার, পাড়া, ভার্সিটির সবাইকে বলে দেব তুই আমার সর্বনাশ করেছিস!" ছেলেটি অবাক হয়ে ভয়ে পেয়ে জিজ্ঞেস করবে, "আমি আমি কি করেছি?" আপনি বলবেন, "এখন বলব কেন? যখন সবার সামনে দূর্নাম হবে বুঝবি ব্যাটা! সেসব না চাইলে কি করতে হবে তাতো আগেই বলে দিয়েছি!" (আপুর জন্যে একটা লজ্জার ইমো আনো কেউ)
৭) ভাব: আজকালকার দিনে এটিটিউডই সব! এমন ভাব নিয়ে প্রপোজ করবেন যে সে চমকে যাবে। ছেলেকে বলবেন, "ঐ ছেলে প্রেম করার শখ থাকলে বল, নাহলে সমস্যা নেই। আমার পেছনে ঈদের দিনে শিশুপার্কের রাইডের মতো লম্বা লাইন ছেলেদের। রবিবারে ভার্সিটির হ্যান্ডসাম ছেলে রবি, সোমবারে পাড়ার গুন্ডা সেলাই সোমু, মঙ্গলবারে প্রাইভেটের মেধাবী মফিজ, বুধবারে ব্লগের বিখ্যাত কবি বন্য মানব১২৩ আমাকে প্রপোজ করেছে।" সে ভড়কে যাবে, ভাববে আপনার মতো মহিয়সী নারীকে কিছুতেই হাতছাড়া করা যাবে না। এই ভাব উপায়ের উদ্দেশ্য হচ্ছে ছেলেটাকে প্রপোজ করবেন না, ছেলেটার কাছ থেকেই প্রপোজ আদায় করার চেষ্টা করবেন।
৮) বাংলা সিনেমা স্টাইল: বাংলা সিনেমার নায়িকাদের দেখুন, কত স্মার্টলি নায়ককে প্রপোজ করে! নায়ক গভীর পানি থুক্কু ডিপজলের প্রেম পাবার জন্যে তারা বৃষ্টিতে সারারাত ভিজে, বস্তিতে থেকে, নায়কের বাড়িতে কাজের মেয়ে হিসেবে কাজ করে তার মন পাবার চেষ্টা করে। এই তিনটি জিনিসই অনেক বাংলা ছবিতে দেখেছি, কেবলই রম্য নয়! তো আপুরা, আপনারাও তাই করুন। বি এজ ক্রেইজি এজ ইউ ওয়ান্ট টু বি। জাতি তালি, ও সিটির সাথে আপনার পাশে থাকবে। আর বাংলা সিনেমার মতো আপনার জীবনের প্রেমকাহিনীও মিলনাত্নক দৃশ্যের মুখ দেখবে।
৯) অধিকার: এই পদ্ধতি সফল করার জন্যে আপনার মধ্যে পাগলামি, গুন্ডামি ব্যাপক পরিমাণে থাকতে হবে। আপনি কোন চান্সই নেবেন না, মানে তাকে কোন চান্সই দেবেন না হ্যাঁ বা না বলার। এমন ভাব করবেন যে আপনি অলরেডি তার গার্লফ্রেন্ড। অধিকার ফলাবেন। সে কোন মেয়ের সাথে কথা বললে বলবেন, "তুমি ওর সাথে কথা কেন বললে? এত সাহস? আবার কথা বললে তোমার খবর আছে!" সে অবাক হয়ে আপনার দিকে তাকাবে। জিজ্ঞেস করবে, "আপনার কি?" আপনি তখন বলবেন, "আমারই তো সব, আর কার কি?" সে এতে বুঝে যাবে আর না বুঝলে শেষ পদ্ধতিই আপনার গাধারামের জন্যে একমাত্র উপায় আপু!
১০) ডাইরেক্ট একশন: ওপরের কোনটি কাজ না করলে একটাই রাস্তা, দু হাতে ছেলেটার কলার চেপে ধরে চোখে চোখ রেখে বলে ফেলুন ভালোবাসেন! এই কাজটি আপনাকে কোন প্রকার রিহার্সাল ছাড়া ভীষণই জোশের সাথে করতে হবে। লজ্জা শরম সিন্দুক ভরে দূর নদীতে ভাসিয়ে দিতে হবে কিছুক্ষনের জন্যে। ব্যাস, তারপরে রেজাল্ট দেখুন আর আমাকে ধন্যবাদ দিন!
একটি জোক বলি, যাতে আপুদের প্রপোজের মনোবল বাড়ে।
একটি ছেলে একটি মেয়েকে প্রপোজ করলে ৬ ধরনের উত্তর পায়।
১) আমি বাবা মায়ের পছন্দে বিয়ে করব, ২) তোমার মতো ছেলে আমাকে প্রপোজ করার সাহস পায় কি করে?, ৩) আপনাকে আমি বড় ভাইয়ের মতো দেখি, ৪) তোকে শুধু বন্ধু ভাবি, ৫) আমার বয়ফ্রেন্ড আছে, ৬) এইমুহূর্তে এসবে পরতে চাচ্ছি না!
একটি মেয়েও একটি ছেলেকে প্রপোজ করলে ৬ ধরনের উত্তর পায়।
১) আমিও তোমাকে ভালবাসি, ২) আমিও তোমাকে ভালবাসি, ৩) আমিও তোমাকে ভালবাসি, ৪) আমিও তোমাকে ভালবাসি, ৫) আমিও তোমাকে ভালবাসি, ৬) আমিও তোমাকে ভালবাসি ।
মোরাল অফ দ্যা জোক: রিস্ক ইজ অল অন দ্যা গাইজ!
-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
শেষ ও জরুরি কথা: এই সকল পদ্ধতির কোনটিই পরীক্ষিত নহে যেহেতু লেখিকা কখনোই কাউকে প্রপোজ করেনি। সে দুষ্টু মনের আশাকারায় রম্য লিখিবার প্রয়াস করিয়াছে মাত্র। কিন্তু প্রেম ভীষনই অনিশ্চিত, এসব উল্টাপাল্টা আইডিয়াও কাজ করিলেও করিতে পারে। ব্লগার আপুরা, আপনারা একেকটি পদ্ধতি ট্রাই করিয়া বলুন কাজ করে কিনা? কাজ করলে সোনায় সোহাগা, না করিলে আমি রম্য লেখিকা বনে গেলাম!
আর জরুরি কথা হচ্ছে সত্যিকারের ভালোবাসায় প্রপোজের ধরণ খুব জরুরি নয়। মন থেকে বলা কথা মনের মানুষের মন ছুঁয়ে যাবেই। আর তা নাহলে বুঝে যাবেন সে আপনার ছিলই না!
লেখাটি মজা করে লিখেছি। কেউ সিরিয়াসলি নিয়ে, উদ্ভট কমেন্ট করে মজাটাকে নষ্ট করবেন না প্লিজ। ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ১০:৪৪