আমার বেশিরভাগ লেখাই বেশ বড় হয়। সহব্লগারেরা পড়তে পড়তে ভাবেন, "ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি!" তাই আজকে আবারো দয়াপরবশ হয়ে নিয়ে এলাম ফটো ব্লগ!
আগের পর্ব: ইতিহাসে উদ্ভাবিত ১৫ টি যন্ত্রনা থুক্কু যন্ত্র যা বর্তমানে অদ্ভুত/অকল্পনীয়/হাস্যকর! সামুপাগলার ফটো ব্লগ উইথ লিটিল বকবক!
বিজ্ঞানের নানা অবদান আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে অনেক আরামদায়ক করে তুলেছে। আজকে আমরা যা সহজ মনে করি তা একসময় সহজ ছিল না। প্রতিদিনের ব্যবহার্য জিনিসগুলো অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আবিষ্কৃত হয়েছে। সেইসব আবিষ্কারের অসাধারণ শুরু দেখে আসি চলুন...
১) কম্পিউটার!
পৃথিবীর প্রথম কম্পিউটার হিসেবে খ্যাত কম্পিউটারের নাম ENIAC (ইলেক্ট্রনিক নিউম্যারিক্যাল ইন্টিগ্রেটার এবং ক্যালকুলেটর)। পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে জে প্রপার ইকার্ট এবং জন মোচেলি এটি তৈরি করেন। ১৯৪৩ সালে শুরু হয়ে ১৯৪৬ সালে এর নির্মাণ শেষ হয়। ১৮০০ স্কয়ার ফুট জায়গা দখল করত ৫০ টন এর এই কম্পিউটারটি। এর নির্মাণকাজ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার আগে সম্পূর্ণ করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তবে জার্মানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সাহায্য করার উদ্দেশ্য নিয়েই ENIAC এর সৃষ্টিকাজ শুরু হয়েছিল!
নিউক্লিয়ার ফিজিক্সের যে প্রশ্ন ১০০ ইঞ্জিনিয়ার মিলে ১ বছরে সমাধান করতে পারতেন তা এটি মাত্র ২ ঘন্টায় সমাধান করতে পারত! এই যুগে ভীষন প্রাচীন মনে হলেও নিজের যুগের চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকা একটি আবিষ্কার নি:সন্দেহে!
২) মোটরগাড়ি!
পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন এবং অনেকের মতে প্রথম মোটরগাড়িটির আবিষ্কারক ছিলেন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার কার্ল বেঞ্জ। ১৮৮৫ সালে এর প্রধান নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ১৮৮৬ সালের জুলাই ৩ তারিখে জার্মানে কার্ল বেঞ্জ প্রথমবারের মতো এটিকে ড্রাইভ করেন এবং এর সর্বোচ্চ স্পিড ছিল ১৬ কি.মি./হাওয়ার! তখনকার দিনে এর দাম ছিল ১৫০ আমেরিকান ডলার যা আজকের ৪০০০ ডলার সমতূল্য!
৩) ফোন!
১৮৭৬ সালের ১০ মার্চ আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল ইতিহাসের প্রথম ফোনকলটি করেন। তিনি তার এসিসট্যান্ট থমাস ওয়াটসনকে বলেছিলেন, "Mr. Watson, come here, I want to see you!" বাংলায়: "মি: ওয়াটসন, এখানে আসুন, আমি আপনার সাথে দেখা করতে চাই।"
আমি ভাবতেও পারিনা তার গলা কতটা কাঁপছিল সেদিন! তার আশেপাশে মানুষেরাও নিশ্চই উত্তেজনায় কাঁপছিলেন! কি ভীষন যুগান্তকারী এক আবিষ্কার এবং অসাধারণ তার সাক্ষী সেই মুহূর্তটি!
৪) এয়ার কন্ডিশনার!
১৯০২ সালে বাফেলো, নিউ ইয়র্কে উইলিস ক্যারিয়ার পৃথিবীর সর্বপ্রথম আধুনিক বৈদ্যুতিক এয়ার কন্ডিশনার আবিষ্কার করেন। ছবিটি ১৯২২ সালের, ক্যারিয়ার প্ল্যান্টে সেনট্রিফুগাল রেফ্রিজারেশন মেশিন (বা "চিল্লার") নামে খ্যাত যন্ত্রটি প্রদর্শন করা হচ্ছে। পরবর্তী দশকে এই যন্ত্রটির হাত ধরেই আধুনিক হতে হতে আজকের এসি ছড়িয়ে যায় বিভিন্ন কারখানা, দোকান, সিনেমা হল, অফিস এবং বাড়িতে।
৫) টেলিভিশন!
জন লোগি বেয়ার্ড একজন স্কটিশ প্রকৌশলী ছিলেন এবং তিনি পৃথিবীর প্রথম মেক্যানিকাল টেলিভিশন আবিষ্কার করেন। ১৯২৬ সালের ২৬ জানুয়ারিতে তিনি এটিকে প্রদর্শন করেন।
৬) লাইট বাল্ব!
থমাস আলভা এডিসনকে আমেরিকার অন্যতম সেরা আবিষ্কারক মনে করা হয়। ইতিহাসবিদদের বেশিরভাগের মতে তিনি পৃথিবীর প্রথম ইলেক্ট্রিক লাইট বাল্ব আবিষ্কার করেননি, তবে তিনিই প্রথম টেকসই বাল্ব আবিষ্কার ও এর বাণিজ্যিকরণ করেন! ১৮৭৮ সালে তিনি এই কাজে হাত দেন এবং নিজের পুরো জীবন এই আবিষ্কারকে উন্নত করার চেষ্টায় ব্যয় করেন। অন্ধকারেও আলোকে সহজলভ্য করে তোলার জন্য তার নাম ইতিহাসে চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে তার প্রথমদিকের একটি বাল্ব স্কেচ এবং পাশে তার তৈরি আদি একটি লাইট বাল্ব!
৭) গিটার!
প্রথম ইলেক্ট্রিক গিটার ১৯৩০ সালে আমেরিকায় আবিষ্কৃত হয়। অ্যাডলফ রিকেনব্যাকার একজন সুইস-আমেরিকান ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এটিকে আবিষ্কার করেন। এর একটি খটমটে অফিশিয়াল নাম এবং মজার ডাকনাম রয়েছে। "রিকেনব্যাকার ইলেক্ট্রো এ -২২" কে "ফ্রাইং প্যান" ও বলা হতো এর আকৃতির কারণে!
৮) স্টোভ!
আমেরিকার লয়েড গ্রফ ক্যাপম্যান পৃথিবীর প্রথম ইলিেক্ট্রটিক স্টোভটি আবিষ্কার করেন। ১৯০৬ সালে তিনি গ্যাস স্টোভের ইলেক্ট্রিক ভার্সনটি তৈরি করেন। ১৯১৪ সালের ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে এটির বেশিরভাগ অংশ কাঠের তৈরি ছিল। দুটি ওভেন, তাপ নিয়ন্ত্রক এমনকি স্বয়ংক্রিয় টাইমারও ছিল এটিতে!
৯) ফ্রিজ!
উইলিয়াম কুলেন একজন স্কটিশ চিকিৎসক, অধ্যাপক, রসায়নবিদ ও কৃষিবিদ ছিলেন। জানুয়ারির ১ তারিখে ১৭৪৮ সালে তিনি গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম কৃত্রিম হিমযন্ত্র প্রদর্শন করেন।
১০) ভিডিও গেইম!
অক্টোবরের ১৯৫৮ সালে পদার্থবিদ উইলিয়াম হিগিনবোথম পৃথিবীর প্রথম ভিডিও গেইমটি আবিষ্কার করেন। এটি খুব সাধারণ একটি টেনিস গেইম ছিল তবে ব্রুকহেইভেন জাতীয় গবেষণাগারে অবসর কাটাতে ভীষনই জনপ্রিয় ছিল!
-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
কোন কোন আবিষ্কারের ক্ষেত্রে কে সেটা প্রথম আবিষ্কার করেছিলেন তা নিয়ে ব্যাপক মতবিভেদ রয়েছে। তবে হ্যা, একটি বিষয়ে আমরা সবাই একমত হতেই পারি! এই আবিষ্কারকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ওপরে দাড়িয়েই আমরা দৈনিন্দিন জীবনে অকল্পনীয় সুযোগ সুবিধা ভোগ করছি। খ্যাত অখ্যাত সকল আবিষ্কারকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও সম্মান জানিয়ে শেষ করছি।
পোস্ট লেখার পরবর্তী কথা: পোস্ট শেষ করে দেখি লিটিল না স্বভাব বশত ভালোই বকবক করে ফেলেছি। সহব্লগারগণ কিছু মনে করবেন না। কথায় বলে না স্বভাব যায় না মরিলেও!
সূত্র: অন্তর্জালের অলিগলি!
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৭ রাত ৮:১৯