ব্লগার'স ব্লক কি?: এটি ব্লগারদের লেখালেখিতে তৈরী হওয়া একপ্রকার অনীহা। অনেক চেষ্টা করেও নতুন কোন পোষ্টের আইডিয়া না পাওয়া এবং পেলে সেটি নিয়ে লিখতে না পারা। ব্লগিং এ একধরণের অস্বস্তি বোধ করা! ব্লগিং ব্লকের মধ্যে দিয়ে বেশিরভাগ ব্লগারই কখনো না কখনো সাফার করে থাকেন।
কেন হয় ব্লগার'স ব্লক?:
১) প্রফেশনাল ও পারসোনাল নানা ব্যস্ততায় বহুদিন ব্লগে না আসা। অনভ্যাসে অস্বস্তি জায়গা করে নেয়। ব্লগে এসে মনে হয় অপরিচিত এলাকায় এলাম!
২) এক টানা অনেককিছু লেখা। বেশ কয়দিন পরে পরেই পোষ্ট দিচ্ছেন। হুট করে আর ব্রেইন কাজ করছে না। মনে হচ্ছে সব আপনি লিখে ফেলেছেন বা অন্যরা লিখে ফেলেছে!
৩) ব্যক্তি জীবনে যদি বড় কোন মানসিক স্ট্রেস থাকে। এটি সৃষ্টিশীল কাজে ব্যাহাত ঘটাতে পারে।
ব্লগার'স ব্লকের উপসর্গ:
১) "নতুন ব্লগ লিখুন" এ ক্লিক করে শুন্য দৃষ্টিতে বসে থাকা।
২) কিবোর্ডে হাতগুলো জড়তা নিয়ে বসে। কিছুই টাইপ করতে পারছে না।
৩) কিছু একটা লেখা, এবং ব্যাকস্পেইসে গিয়ে মুছে ফেলা। এভাবে করতে করতে আধা ঘন্টা পরও পাতা শুন্য!
ওপরের সব উপসর্গগুলো এক সপ্তাহের জন্যে হলে চিন্তার কিছু নেই। কিন্তু লম্বা সময় যেমন পনেরো দিন বা মাসখানেক দেখা দিলে আপনাকে কিছু করতে হবে সমস্যাটি কাটানোর জন্যে।
ব্লগার'স ব্লক এর চিকিৎসায় ১০ টি উপায়:
১) বিরতি: কদিন ব্লগ থেকে বিরতি নিন। একদমই লগইন করবেন না। লেখার চেষ্টা করবেন না। এতে করে আপনার মন রিল্যাক্সড হবে এবং লেখার তৃষ্ণা বৃদ্ধি পাবে। রেস্ট শেষ হলে, ফ্রেশ মনে পুনরায় চেষ্টা করুন। এক ধরণের ফ্লেক্সিবিলিটি বোধ হবার কথা। যদি তা একদমই নাহয় তবে আরো অনেক উপায় রয়েছে ব্লগার'স ব্লক কাটানোর জন্যে।
২) হাবিজাবি রাইটিং (ধাপ ১): মনে যা আসে তাই লিখুন। ইট ডাসন্ট হ্যাভ টু মেইক সেন্স, জাস্ট রাইট! হাবিজাবি যা ইচ্ছে। ভাববেন না। র্যানডম শব্দ, অক্ষর যা ইচ্ছে টাইপ করে ব্যাস কিবোর্ডের ওপরে ঝড় বইয়ে দিন। হাতের জড়তা কাটতে থাকবে।
৩) হাবিজাবি রাইটিং (ধাপ ২): এবারে হাবিজাবি রাইটিং স্টেইজের আরেকটু এডভ্যান্সড স্টেইজে যান। একটা বিষয় ঠিক করুন, সেটি নিয়ে মনে যা আসে লিখতে থাকুন। সেটা যেকোন বিষয় হতে পারে। কোন মানে থাকতে হবে না। আপনি পোষ্ট লেখার নয়, ব্লগার'স ব্লক কাটানোর চেষ্টায় আছেন। যেমন বিষয় ঠিক করলেন, ফুল! ফুল নিয়ে যা জানেন, যতটা জানেন সব লিখে যাবেন। হাবিজাবি লিখতে লিখতে কখন মিনিংফুল কিছু লিখে ফেলেছেন নিজেও বুঝতে পারবেন না!
৪) ফটো ব্লগ: জড়তা বা সংকোচ কমে গেলে পোষ্ট দেবার কথা ভাবুন। প্রথমে একটি ফটো ব্লগ দিতে পারেন। তাতে নিজের তোলা ছবি বা নেট থেকে নেওয়া মজার ছবি কালেক্ট করে ক্যাপশন লিখে পোষ্ট করুন। পাঠকদের কমেন্টের জবাব দিন। এভাবে পোষ্ট দেবার জড়তা কেটে যাবে। অনেকদিন পরে ব্লগে এলে এধরণের কিছু ব্লগ আবারো কমফর্টেবল বোধ করতে সহায়তা করবে।
৫) জনরা পরিবর্তন: এবারে সিরিয়াসলি পোষ্ট লেখার চেষ্টা করুন। প্রথমে দরকার একটি শিরোনাম মানে একটি আইডিয়া। কোন পোষ্ট লেখার সবচেয়ে কঠিন বিষয় সেটি শুরু করা। ব্লগার'স ব্লক চলাকালে সেটা অসম্ভবই হয়ে যায়। একটা মিনিংফুল আইডিয়ার সন্ধানে হাতড়ে মরতে হয়। তখন আপনি জনরা পরিবর্তন করতে পারেন। আপনি সাধারণত যে ধরণের লেখা লেখেন তা বন্ধ করুন। অন্যকিছু চেষ্টা করুন। যেমন সাধারণত কবিতা লিখে থাকলে ছোট গল্প লেখার চেষ্টা করুন। সাধারণত সময়সাময়িক লিখে থাকলে রম্য লিখুন! নতুন কিছু করার বোধ মনের সৃষ্টিশীলতাকে বাড়িয়ে দেয়, এবং সক্রিয় হতে সাহায্য করে।
৬) নিজের পুরোন লেখা: আপনি নিজেও নিজের সাহায্য হতে পারেন। আইডিয়া খোঁজার জন্যে নিজের পুরোন পোষ্ট পড়ুন যা মনকে অনেক সাহস জোগায়। নিজের পুরোন কোন পোষ্ট যা নিজের বা অন্য অনেকের প্রিয় ছিল, সেটি পড়লে আত্মবিশ্বাস পাবেন। আপনার মনে হবে যে আপনি তো লিখতে পারেন। এই আপনিই তো সেই লেখাটি লিখেছিলেন! এটি আপনাকে নতুন আইডিয়া পেতেও সাহায্য করবে। যেমন কোন প্রিয় মুভি রিভিউ দেখে মনে হতে পারে রিসেন্টলি দেখা একটি মুভির রিভিউ লিখে ফেলি! অথবা কোন গবেষাধর্মী পোষ্ট যেমন দেখে মনে হতে পারে, এটি তো আরো ডিটেইলে লেখা যায়! বা হয়ত বেশ আগের কোন পোষ্টে একটি বিষয় নিয়ে নিজের মতবাদ দিয়েছিলেন, এখন সেই বিষয়টি নিয়ে অন্যভাবে ভাবেন। সেটাও শেয়ার করতে পারেন! আপনার পুরোন লেখাই নতুন লেখার আইডিয়া দেবে আপনাকে!
৭) পাঠকদের কমেন্ট পড়ুন: এটি ভীষনই সহায়তাকারী। পাঠকেরা কমেন্ট করে নানা ভুল ত্রুটি ধরিয়ে দেন। আবার পড়ে অনেক ভালো লাগলে তেমনই কোন একটি লেখা দেবার অনুরোধ করেন। প্রশ্ন করেন। উপদেশ দেন। তর্ক করেন। এইসবের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে নানা বিষয় যা নিয়ে লিখতে পাঠকই আপনাকে বলেছেন জেনে বা না জেনে! ব্যাস লিখে ফেলুন সেই বিষয়টি নিয়ে!
৮) মনকে স্বাধীনতা দিন: এইমুহূর্তে আপনার একটি শিরোনাম থাকার কথা। এক্সাক্টলি কোন জনরায় কি নিয়ে লিখবেন তা জানেন। কিন্তু শুরু করতে গিয়ে আর এগোতে পারছেন না ব্লগার'স ব্লকের দরুন! সেসময়ে লেখা যেকোন জায়গা থেকে শুরু করুন। মাঝখান থেকেও শুরু করতে পারেন। প্রথমে ভূমিকা লিখতেই হবে এমন গো ধরে থাকবেন না। মনকে স্বাধীনতা না দিলে মনের জড়তা কাটে না! সেই বিষয়ে মনে আসা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথাগুলো লিখে ফেলুন পয়েন্ট ফর্মে।
৯) ব্রেইনস্টর্ম: লেখাকে নানা পয়েন্টে ভাগ করে নিন। সাধারণ একটি উদাহরণ দেই: আপনি বাংলাদেশী সংস্কৃতিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান নিয়ে লিখতে চান। তো ভাবুন যে আপনি ১) উপন্যাসে ওনার অবদান, ২) কবিতায় ওনার অবদান, ৩) গানে ওনার অবদান লিখবেন। উপন্যাসের নিচে নিজের প্রিয় উপন্যাসের নাম লিখুন- ১) ক, খ, গ! কবিতা, গানের ক্ষেত্রেও তাই!
গল্প লিখতে গেলেও ব্রেইনস্টর্ম করতে পারেন। চরিত্রগুলোর নাম লিখুন। কোথায় গল্পটি অবস্থান করছে, গ্রামে না শহরে না অন্যকোথাও সেটা ভাবুন। এরপরে সেই জায়গাটি কল্পনা করার চেষ্টা করুন। কিছু পয়েন্ট লিখুন। উদাহরণ: রফিক - গ্রাম্য কিশোর- চঞ্চল, হামিদুল সাহেব - শিক্ষক -আদর্শবাদী! গ্রাম- রসূলপুর - শ্যামলিমায় ঘেরা!
এভাবে পয়েন্টস, এন্ড সাবপয়েন্টস লিখুন। তারপরে পূর্ণ বাক্যে নিজের কথাগুলো লিখতে শুরু করুন। প্রথমেই একটি বাক্য বা প্যারাগ্র্যাফ লিখে ফেলা ব্লগার'স ব্লক চলা সময়ে প্রায় অসম্ভব!
ও হ্যা, ব্রেইনস্টর্মিং শুধু ব্লগার'স ব্লক কাটাতেই নয় যেকোন সময়েই করা যায়। ব্লগে বা ব্লগের বাইরে, যেকোন লেখার আগে আউটলাইন তৈরি করে নিলে সহজ হয় পুরো বিষয়টা এক সুঁতোয় গাঁথা।
১০) ড্রাফট এডিট, ড্রাফট এডিট..: আপনি একটি লেখা মোটামুটি দাড় করিয়ে ফেলেছেন। ভাগ্য ভালো থাকলে এতকিছু করার পরে গড়গড় করে পুরো একটি পোষ্টই লিখে ফেলবেন মনের অজান্তে।
তবে তা নাও হতে পারে। দেখা গেল, আপনি অনেক খাপছাড়া ভাবে লিখেছেন। ব্লগার'স ব্লক চলাকালিন মনের বিক্ষিপ্ত ভাব লেখাতেও ফুটে এসেছে। কোন কোন পয়েন্ট শেষও করতে পারেননি। তখন ড্রাফট সেইভ করে লগ আউট হোন। কদিন পরে আবারো চেষ্টা করুন। পড়ুন, নিজের সেই লেখাটি বারবার পড়ুন। আর ভুল ভ্রান্তি গুলো ঠিক করুন। এভাবে চেষ্টা করতে করতে দেখবেন আপনি আস্তে আস্তে একটি গোছালো মন মতো পোষ্ট লিখতে পেরেছেন।
এসব স্টেইপ ঠিকঠাক ভাবে করলে আপনার ব্লগার'স ব্লক কেটে যাবার কথা। তখন মনের সুখে ব্লগিং করুন এবং সামুপাগলাকে এসে ধন্যবাদ দিন। না কেটে গেলে সে দায়ী নয়, আপনিই কোন ভুল করেছেন স্টেপস ফলো করতে সেটিও মাথায় রাখুন।
আশা করি ওপরের আইডিয়াগুলো আসলেই অনেক ব্লগারকে সহায়তা করবে। নানা প্রিয় ব্লগারকে পোষ্ট দিতে দেখিনা অনেকদিন। অনেককে সামুতে লগড ইন হতে পর্যন্ত দেখি না! হয়ত তারা ব্লগার'স ব্লকের মধ্য দিয়েই যাচ্ছেন। অথবা কোন অভিমানে সামু থেকে দূরে সরে আছেন। এই পোষ্ট ব্লক কাটাতে সহায়তা করবে। আর অভিমান? সেটা সামু এবং ব্লগারদের আপন ভেবে মাথা থেকে সরিয়ে ফিরে আসুন। প্লিইইইজ!
অন্যসব ব্লগারদের ব্লগার'স ব্লক কিংবা রাইটিং ব্লক কাটানোয় কোন পরামর্শ থাকলে দয়া করে জানাবেন। উপকারী হলে আমি পোষ্টে এড করে দেব। সবার অনেক সাহায্য হবে।
হ্যাপি ব্লগিং টু অল নিউ এন্ড ওল্ড ব্লগারস!
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০১৭ সকাল ৯:১৮