দয়া করে পোষ্টটি পড়বেন না যদি পরিচিত কোন রহস্যকে রহস্য হিসেবেই মনের মধ্যে রেখে দিতে চান। ধন্যবাদ!
রহস্যে পরিপূর্ণ পৃথিবীর ভাজে ভাজে লুকিয়ে রয়েছে হাজার হাজার রহস্য। অনেক রহস্যের কোন উত্তর মানুষ এখনো খুঁজে পায়নি। তবে অনেক রহস্যের জট কিন্তু বিজ্ঞানের সহায়তায় মানুষ খুলে ফেলেছে! সেসব কিছু রহস্য এবং রহস্যভেদের অসাধারন ও অকল্পনীয় গল্পগুলো আজকে বলব!
আগের পর্বের লিংক: বিশ্বের সেরা দশটি বৃহৎ, অতিমানবীয় রহস্য এবং রহস্যজট খোলার যাত্রায় পাওয়া মনি মানিক্য! (প্রথম কিস্তি)
৫) মায়ান সভ্যতার রহস্য!
সেই বিখ্যাত মায়ান সভ্যতা! খ্রিস্টপূর্ব ২৬০০ বছর আগে যা গড়ে উঠেছিল। চার হাজার বছর আগের অন্যতম উন্নত এক সভ্যতা! পৃথিবীর মানুষ সেসময়ে বাড়িঘর তৈরী করতেই হিমশিম খেত। কিন্তু মায়া জাতি মৃতদেহের ওপরে সমাধি নির্মাণ থেকেই পিরামিড ও মমি তৈরীর ধারণা পেয়ে যায়। তারা প্রকান্ড সব ঘড়বাড়ি, মূর্তি তৈরী করত! পুরো আমেরিকা মহাদেশজুড়ে মায়ান সভ্যতাই একমাত্র প্রাচীন সভ্যতা, যাদের নিজস্ব লেখা ভাষা ছিলো। তারা সুন্দর করে পড়তে ও লিখতে জানতো। তাদের জ্যোতির্বিদ্যার ও গণিত জ্ঞান অসাধারণ ছিল। একটি উন্নত ক্যালেন্ডার পর্যন্ত তৈরী করেছিল নিজেদের ভাষায়! তাদের চিকিৎসা বিদ্যাও আধুনিক ছিল। শরীরের ক্ষত মানুষের চুল দিয়েই সেলাই করে ফেলতো। দাঁতের গর্ত পূরণ করা, এমনকি নকল পা লাগানোতেও দক্ষ ছিলো তারা। তারা প্রকৃতি থেকে ব্যথানাশক সংগ্রহ করতো। শুধু তাই নয়, তারা গান গাইত, কবিতা লিখত, সর্বোপরি সাহিত্য চর্চা করতো! কিন্ত এই স্বপ্নের মতো সুন্দর ও উন্নত জাতি ধ্বংস হয়ে যায় একসময়ে! এত অকল্পনীয় সুন্দর স্থাপত্য, শহর, রাস্তা সবকিছুকে যেন কোন এক দৈত্য তাড়া করেছিল, এবং মায়া জাতি পালাতে পালাতে ছোট ছোট গ্রামে ছড়িয়ে গিয়েছিল! একটি পতিত সভ্যতার আদর্শ উদাহরণ মায়ান সভ্যতা! এতটা আধুনিক একটি সভ্যতা, যা যুগের চেয়ে হাজার কদম এগিয়ে ছিল ধ্বংস কিভাবে হলো? কিভাবে বিপন্ন হলো মায়া জাতি?
ব্যাখ্যা: মায়ান সভ্যতা তিলে তিলে গড়ে তোলা মায়া জাতি নিজেরাই নিজেদেরকে ধ্বংস করেছিল! এরিযনা স্টেট ইনিভার্সিটির রিসার্চারেরা ২০১২ সালে মায়া সভ্যতার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো পরীক্ষা ও বিশ্নেষন করে ব্যাখ্য দেন এ রহস্যের। তারা পরিবেশের অবস্থা গবেষনা করে কিছু এভিডেন্স পান যা তাদের পূর্ববর্তী নানা গবেষকদের মতে মোহর লাগাতে সহায়তা করে। তারা আবিষ্কার করেন যে মায়া জাতি অতিমাত্রায় গাছ ও বনজংগল কেটে ও পুড়িয়ে ফেলেছিল। তারা এসব কাটত জমি পরিষ্কার করে শস্য উৎপাদনের উদ্দেশ্যে, স্থাপত্য নির্মাণে, এবং পোড়াত জ্বালানি কাঠ সংগ্রহে! তাদের এই কর্মকান্ড জমির সৌর বিকিরণ সহ্যশক্তিকে কমিয়ে দেয়। এর কারণে মেঘ, বৃষ্টি পরিবেশ থেকে কমে যেতে থাকে, এবং তাপমাত্রা মারাত্মক ভাবে বেড়ে যেতে থাকে। এসকল কর্মকান্ড প্রকৃতিগতভাবে আসা খরাকে বহুগুণে ভয়াবহ করে দেয়। এই ভয়াবহ খরা মায়া জাতির কৃষিকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়। খাবারের অভাবে মৃত্যু এড়াতে মায়া জাতি নানা গ্রামে ছড়িয়ে যায়।
এমন একটি উন্নত জাতি অবশ্যই শুধুমাত্র একটি কারণে ধ্বংস হতে পারেনা। আরো অনেক কারণ ছিল যার সবই খরার কারণে সৃষ্ট ও বর্ধিত হয়েছিল। যেমন নাগরিকদের মধ্যে অশান্তি, যুদ্ধ, খাদ্যাভাব, এবং নানা ধরণের রোগ!
মায়া সভ্যতা বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ এর সকল সভ্যতার জন্যে একটি উদাহরণ! প্রকৃতির ওপরে অত্যাচার করে মানুষ নিজেরই ধ্বংস ডেকে আনে। প্রতিটি জাতি যেন মায়া জাতি থেকে শিক্ষা নেয়!
৬) মনারখ প্রজাপ্রতি মাইগ্রেশন রহস্য!
প্রতি শরৎ এ মনারখ প্রজাপতিরা দক্ষিন-পশ্চিমে কানাডা থেকে মেক্সিকো মাইগ্রেট করে। একে প্রকৃতির সবচেয়ে বিখ্যাত ভ্রমণ বলা হয়ে থাকে। পতঙ্গদের মধ্যে সবচেয়ে লম্বা সফর তৈরী করে এই প্রজাপতিরা, যা প্রায় ২০০০ মাইলের ও বেশি পথ! কিভাবে এত লম্বা পথ ছত্রভঙ্গ না হয়ে পাড়ি দেয় এরা? কোথায়, কখন যেতে হবে, মনারখদের ব্রেইন কিভাবে এই তথ্য গ্রহণ ও সংরক্ষন করে?
ব্যাখ্যা: এই বিষয়টি নিয়ে বহুদিন ধরে রিসার্চ হয়েছে, এবং শেষ পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছুতে পেরেছেন। ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটন এর প্রফেসর এবং এ রহস্যের লিড রিসার্চার এলি শ্লিজারম্যান ব্যাখ্যা দেন এই রহস্যের। মনারখ তাদের বড়, জটিল চোখ কম্পাসের মতো ব্যবহার করে থাকে। তাদের চোখে বিশেষ ফটোরেসেপিটার্স (এটি আলোর উপস্থিতি বুঝতে পারে এমন কোষ) থাকে যা তাদেরকে আকাশে সূর্যের অবস্থান বুঝিয়ে দেয়। এভাবে তারা দক্ষিন দিক কোনদিকে তা বুঝতে পারে। কিন্তু দু মাসের লম্বা দলবদ্ধ সফর তৈরি করতে শুধু এই তথ্যই যথেষ্ট নয়। তাদেরকে সময়ও জানতে হবে।
মানুষসহ অন্যান্য নানা প্রাণীর মতো, মনারখদেরও একটি ইন্টারনাল ক্লক থাকে। যাকে সার্কাডিয়ান ঘড়িও বলা হয়, যা সময়ে সম্পর্কে অন্তর্নিহিত একটি ধারণা। এই ঘড়ি দৈনিক শারীরিক অভ্যাস এবং আচরণের ওপরে একটি প্যাটার্ণ তৈরি করে। ২৪ ঘণ্টার চক্রে আমাদের দেহকে নির্দেশ দিয়ে থাকে ঘুমানো, খাদ্য গ্রহণ এবং জেগে উঠার ব্যাপারে। মনারখদের মাথার সরু শুঁড়টিতে এই ইন্টারনাল ক্লকটি থাকে। এটি তাদের দিনের সময় বুঝিয়ে দেয়। তারা সবসময় দুটি তথ্য পাশাপাশি মিলিয়ে দেখে, এক সময় এবং দুই সূর্যের অবস্থান। এই দুটি ম্যাচ করে তারা বুঝতে থাকে ঠিক পথেই আছে কিনা!
মনারখদের এই ভ্রমণ সূত্রকে ব্যবহার করে এমন প্রজাপতি রোবট বানানো সম্ভব যারা সূর্যের শক্তিকে ব্যবহার করে যাত্রা করবে! এদেরকে মনারখদের পেছনে স্পাই হিসেবে লাগিয়ে দিলে আরো অনেক অজানা তথ্য বেড়িয়ে আসবে! এই প্রজাপতিদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে, তাই এ সকল আবিষ্কার তাদের রক্ষা করতে সহায়তা করতে পারে বলে বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস!
৭) টাঙ্গুস্কা বিস্ফোরণ!
১৯০৮ সালে, জুনের ৩০ তারিখে রাশিয়ার সাইবেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমের দুর্গম পার্বত্য এলাকা টাঙ্গুস্কা নদীর কাছে, আকাশে কয়েক মাইল জুড়ে একটি বিস্ফোরণ ঘটে। এ বিস্ফোরণ হিরোশিমার পারমাণবিক বোমার চেয়ে ১০০০ গুণ বেশি শক্তিশালী ছিল! এটি ঐ স্থানের আশেপাশের ২১৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে আনুমানিক ৮ কোটি গাছকে ধ্বংস করে দেয়! শব্দের তীব্রতা এতই ছিল যে তা ঐ স্থান থেকে ৩০০ কি.মি. দূরের মানুষকেও এক ধাক্কায় ফেলে দিয়েছিল। বাড়ি ঘরের সব জানালার কাঁচ ভেঙ্গে চূর্ণ বিচূর্ণ হয়েছিল। বিস্ফোরনে পুড়ে যাওয়ার পর কয়েকদিন ধরে ঐ স্থানে কালো ছাইয়ের বৃস্টি হয়েছিল। কোন কারণ ছাড়াই হুট করে হওয়া এমন বিস্ফোরণ মানুষকে অবাক করে দেয়! নানা জনে নানা ধরণের ব্যাখ্যা দিতে থাকে। প্রাকৃতিক গ্যাস, বোমা, ব্ল্যাক হোল, এলিয়েন থেকে শুরু করে কোনকিছুই পালাতে পারেনি মানুষের অসীম কল্পনাশক্তিকে ভেদ করে!
ব্যাখ্যা: বিজ্ঞানীদের ১০০ বছর লেগে যায় এ রহস্যটি সমাধান করতে এবং প্রকৃত কারণ খুঁজতে! উল্লেখ্য, ঐ স্থানের আশেপাশের অধিবাসীদের কাছ থেকে জানা যায়, প্রথমে তারা আকাশে একটি সূর্যের মত উজ্জ্বল নীলাভ আলোর রেখা ছুটে যেতে দেখে। এর ১০ মিনিট পর ঐ স্থানটিতে উজ্জ্বল আলোক শিখা দেখতে পায় এবং এর সাথে প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসে। ২০০৯ সালে কর্নেল ইউনিভার্সিটির রিসার্চারেরা সেদিনের জ্বলন্ত আকাশের ব্যাখা দেন। একটি বরফপূর্ণ ধূমকেতু বায়ুমণ্ডলে প্রচন্ডভাবে ধাক্কা খায়। যার ফলে পৃথিবী পৃষ্ঠের পাঁচ থেকে দশ কিলোমিটার ওপরে বায়ু বিষ্ফোরিত হয়! আর এমন ধ্বংসযজ্ঞের সৃষ্টি করে।
৮) নাজকা লাইন (কেন?)!
সাউথইস্ট পেরুতে নাজকা সভ্যতা গঠিত হয় প্রায় ১০০ বি.সি.ই. তে এবং পতিত হয় ৭৫০ সি.ই. তে। রাজধানী লিমা থেকে প্রায় ৪০০ কি.মি. দক্ষিণে অবস্থিত নাজকা ও পালপা শহরের মাঝখানে প্রায় ৪০০ বর্গমাইল এলাকা জুড়ে দীর্ঘ আর রহস্যময় নাজকা লাইন বিস্তৃত। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, নাজকা সভ্যতার মানুষজন এই বিশাল ভৌগলিক রেখাগুলো ৪০০-৬৫০ খ্রিস্টাব্দে তৈরি করেছিল। শুধু লাইনই নয় নানা জ্যামিতিক আকৃতি যেমন ট্র্যাপিজয়েড, চতুর্ভুজ, ত্রিভুজ, বর্গ এবং নানা প্রানী পাখি, মাকড়শা, বানরের ছবিও খোদাই করা! এটাই পৃথিবী বিখ্যাত নাজকা লাইন! এর মধ্যে ৮০০ টি লাইন, ৩০০ টি জ্যামিতিক আকৃতি, ৭০ টি পশুপাখি ও গাছগাছালির নকশা আঁকা রয়েছে। কিছু কিছু স্ট্রেইট লাইন ৩০ মাইলেরও বেশি জমি জুড়ে এবং পশুপাখির আকৃতি ৫০-১২০০ ফিট পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল! ৮০ বছরেরও বেশি সময় ধরে রহস্য হয়ে আছে এই নাজকা লাইন! আবিস্কৃত হওয়ার পর লাইনগুলোর রহস্য উদঘাটনের জন্য অনেক গবেষণা হয়েছে এবং এ ব্যাপারে প্রচলিত রয়েছে অনেক তত্ত্ব।
প্রথম রহস্য হচ্ছে কি উদ্দেশ্য ছিল এসব লাইনের? কেন তৈরি করা হয়েছে এদের এত কষ্ট করে?
ব্যাখ্যা: রহস্য সমাধানে দুনিয়ার বাইরের কোন শক্তিকে কারণ হিসেবে দাড় করাতে অনেকে পছন্দ করলেও দুনিয়ার এই রহস্যের পেছনের কারণ দুনিয়ার ভেতরেই রয়েছে! পেরুর নাজকা শহরে পানির ভীষন অভাব ছিল! পানি ভীষন গুরুত্বপূর্ণ এক সম্পদ ছিল সেখানে! ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এক্সপ্লোরার জোহান রেইনহার্ড বলেন, পরিস্থিতি বিশ্লেষন করে বোঝা যায় যে লাইন এবং জ্যামিতিক শেইপগুলো পানির সাথে যুক্ত। তবে লাইনগুলো এমন জায়গায় নিয়ে যায় না যেখানে পানি পাওয়া যায়। বরং এমন জায়গায় নিয়ে যায় যেখানে পানি ও উর্বর শস্যের জন্যে অনুষ্ঠান হতো দেব দেবতার কাছে পানির ভিক্ষা চেয়ে! সেসময়ে মাকড়শাকে বৃষ্টির প্রতীক, হামিংবার্ড কে উর্বরতার প্রতীক মনে করা হত। আর বাঁদর পাওয়া যেত আমাজনে যা ছিল পানিতে পরিপূর্ণ! এসব কিছুই ব্যাখ্যা করে সেসব লাইনের কারণ।
৯) নাজকা লাইন (কিভাবে?)!
নাজকা লাইন সম্পর্কিত আরেকটি বৃহৎ রহস্য হ্চ্ছে, কিভাবে প্রাচীন জুগে এমন সব বৃহৎ নকশা মাটিতে তৈরী করা হয়েছিল? কিভাবে তা এতদিন পর্যন্ত সংরক্ষিত হলো? এলিয়েন বা ভৌতিক শক্তি বা নাজকা জাতির দেব দেবীদের কাজ নয়তো?
ব্যাখ্যা: গবেষনায় জানা যায়, মরুভূমির উপরের স্তরের আয়রন-অক্সাইডযুক্ত শিলা সরিয়ে নাজকা লাইনগুলো তৈরি করা হয়েছে। নাজকা পৃথিবীর অন্যতম শুষ্ক এলাকা, সারা বছর জুড়ে তাপমাত্রার তারতম্য খুব কম। এ এলাকায় বাতাসের প্রবাহও খুব কম। এ কারণে লাইনগুলো শতাব্দীর পর শতাব্দী জুড়ে সুরক্ষিত রয়েছে। লাইনগুলো তৈরী করতে নাজকা মানুষেরা সাধারন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেছিল। রিসারচারেরা কিছু কিছু লাইনের শেষে কাঠের পোষ্ট বা খুঁটি খুঁজে পেয়েছিল। যা এই থিয়োরিকে সাপোর্ট করে। নাজকা প্রান্তর টেবিলের ওপরের মতোই সমান! স্ট্রেইট লাইনগুলো বানানো তাই ততটাও কঠিন হবার কথা নয়। লম্বা সব দড়ি খুঁটির মধ্যে বিছিয়ে রাখা হতো নাজকা লাইন তৈরি করার জন্যে। ১৯৮২ সালে ইনিভার্সিটি অফ কেনটাকির জো নিকেল একটি নাজকা শেইপ তৈরী করেন। তার সাথে ছিল তার বাবা, দুজন কাজিন, একজন বন্ধু, একজন ১১ বছরের ভাইপো। ৪৪০ ফুট একটি প্রানীর ডিসাইন তারা বাড়ির পাশের একটি মাঠে আঁকেন যা নাজকাদের তৈরিকৃত ডিসাইনের অবিকল প্রতিরূপ ছিল! এটি তৈরি করতে তারা দেড় দিনের মতো সময় নিয়েছিলেন। তারা ব্যাবহার করেছিলেন সেসব জিনিসপত্র যা প্রাচীন যুগে নাজকাদের কাছে থাকতে পারত। দড়ি, কাঠের পোষ্ট বা খুঁটি, এবং একটি টি-স্কোয়ার যা দুটি কাঠের টুকরো দিয়ে তৈরি করেছিলেন তারা।
তাদের এই কাজ প্রমান করে যে কোন এলিয়েন নয় সুপরিচালিত প্ল্যানিং ও সরল যন্ত্রপাতি দিয়ে নাজকা লাইন তৈরী সম্ভব ছিল! তবে হ্যা, এত বিস্তৃত সব লাইন এত বিশাল জমি জুড়ে কনস্ট্রাক্ট করা সহজ নয়। অনেক সময়, পরিকল্পনা ও পরিশ্রম নিশ্চই লেগেছিল নাজকাদের। তবে এই রহস্যজট খুলে এটা প্রমানিত হয় যে এটি অসম্ভব ছিলনা প্রাচীন যুগে! তবে হ্যা, এমন গাঢ় রহস্যের এমন সহজ সমাধান রহস্যপ্রেমীদের হতাশ করারই কথা!
১০) রক্তাক্ত সমুদ্র!
রাশিয়ার নরিলস্ক শহরের দালদিকান নদীর রং হঠাৎ একদিন বদলে যায়। নদীর পানি রক্তাক্ত লাল হয়ে ওঠে। অবস্থা দেখে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। যদিও শুধু রাশিয়াই নয়, নদীর লাল হয়ে যাওয়া আর আনকমন কোন ঘটনা নয়। পৃথিবীর নানা প্রান্তে নদী, জলাশয় লাল হবার ঘটনা প্রায়ই শোনা যাচ্ছে। কিন্তু এমন কেন হবে? এত বিপুল পরিমাণ পানি কিভাবে লাল হতে পারে? এত রক্ত কোথা থেকে এলো? কোন মারাত্মক ক্রাইম বা কল্পনার অতীত ভৌতিক ঘটনা ঘটছে না তো?
ব্যাখ্যা: রাশিয়ার অন্যতম শিল্প শহর হল নরিলস্ক যার জনসংখ্যা ১ লক্ষের কিছু বেশি। এই শহর জনবহুল ও শিল্পোন্নত হওয়ায় বাড়ছে দূষণের মাত্রা। বিশ্বের সবচেয়ে বড় নিকেল প্রস্তুতকারক নাদেঝদা মেটালারজিক্যাল প্ল্যান্ট লদিকান নদীর তীরে অবস্থিত। মেটালারজিক্যাল প্ল্যান্টের থেকে বের হওয়া রাসায়নিক বিষক্রিয়ায় নদীর রং পাল্টে গিয়েছে। হয়ত পাইপ লাইনের কোনও জায়াগা লিক হয়ে ক্যামিকেল মিশছে নদীর জলে।
তবে শুধু মানুষই নয়, এর পেছনে অনেক প্রাকৃতিক কারণ রয়েছে! কোন নদীতে ক্ষয়ের মাধ্যমে প্রচুর পরিমানের মাটি জমা হলে পানি লাল বর্ণ ধারন করতে পারে যদি মাটিরও একই রং থাকে। তবে মাটির এভাবে নদীতে মেশার জন্যে অনেক বেশি বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন। লাল স্রোতও এর পেছনের একটি বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকে। সমুদ্র বা নদীর জলজ উদ্ভিদ বিস্ফোরনের মতো দ্রুতগতিতে নদীতে ছড়িয়ে গেলে লাল স্রোত উৎপন্ন হয়। এই লাল স্রোত জীব ও উদ্ভিদের শরীরে উৎপন্ন প্রাকৃতিক বিষ নদীতে ছড়িয়ে দেয়। এটি পানিতে অক্সিজেনে পরিমান কমিয়ে দেয়। সবমিলিয়ে পানির রং লাল করে দেয়!
-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
এই ছিল বিশ্বের বৃহৎ কিছু রহস্য এবং তাদের জট খোলার কাহিনী! অনেকে রহস্যের ব্যাখ্যা ঠিকভাবে মেনে নিতে পারেন না। রহস্য ব্যাখ্যার মধ্যেও আরো রহস্য খুঁজে পান! যা রহস্যের আরো গভীরে নিয়ে যায় আমাদের! মজার ব্যাপার হচ্ছে, রহস্যগুলো যত জনপ্রিয় হয়, উত্তরগুলো ততটা নয়। কেননা রহস্য ভীষন পছন্দ করে কৌতুহলী মানবজাতি! অনেকের কাছে, সহজ কোন ব্যাখ্যা নয় এলিয়েন, ভূতপ্রেত এর লিংক থাকলে আরো বেশি ইন্টারেস্টিং হয় পুরো বিষয়টা! তবে নিরস বিজ্ঞান তো নিজের গতিতে বাস্তবিক ব্যাখ্যা দিয়েই চলেছে! বিশ্বাস করি সামনেও আরো অনেক রহস্যের জট বিজ্ঞান খুলে দেবে.....
সূত্র: অন্তর্জাল!
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মে, ২০১৭ রাত ২:৩৭