আগের পর্ব মেয়েদের নিয়ে ছিল। ছ্যাকা খেয়ে একা হয়ে ব্যাকা হওয়া মেয়েদের জন্যে (ফানপোস্ট নহে, নারী সহব্লগারদের কার্যকরী টিপস ) । মেয়েদের পোষ্ট হলেও অনেক পুরুষ ব্লগার কমেন্ট করেছিলেন এবং অনেকে ছেলেদেরটা লেখার কথা বলেছিলেন। ছেলেদের নিয়ে এমনিতেও লিখতাম কিন্তু ব্লগের পুরুষ সদস্যদের এত কিউরিসিটি আরো বেশি আগ্রহ করে লিখলাম। আমার টিপসগুলোতে কষ্ট দূর হয় কিনা দেখুন!
ছ্যাকা কত প্রকার ও কি কি:
সিনিয়ার আপু ছ্যাকা: এটা ছেলেদের জীবনের প্রথমদিকের ছ্যাকা। আমাদের কনজারভেটিভ সোসাইটিতে কৈশর কড়া নারলেই সমবয়সী মেয়েদের সাথে মেলামেশা কমে যায়। কিন্তু প্রেম তো তখনই আসে। সহজ মেলামেশা হয় পাশের বাড়ির কলেজ পড়ু্য়া রিমি আপু বা বড় বোনের বান্ধবী রিতা দিদির সাথে! তারা ছোট ভাই ভেবে অনেক ফ্রিলি মেশেন। আর কিশোর ছেলেটা মনে অন্য স্বপ্ন আঁকতে শুরু করে দেয়। একদিন হঠাৎ করে সুন্দরী আপুটা লজ্জা মুখে দুলাভাইয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় এবং সরল ছেলেটা জীবনে প্রথম প্রচন্ড কষ্ট দেখে। বুকের ভেতরে তীর ঢুকিয়ে দেয়া কষ্ট। কষ্ট ভুলতে ভাল ছেলেটা বখাটেদের সাথে মিশে কাশতে কাশতে সিগারেট ধরায়। কাউকে কিছু বলতেও পারেনা আবার ভুলতেও পারেনা!
নোট ছ্যাকা: এটা ক্লাসের সবচেয়ে সরল মেধাবি ছেলেটা খায়। কোনদিন কোন মেয়ের দিকে না তাকানো ছেলেটা হঠাৎ করে দেখে এক সুন্দরি ললনা কোমল কন্ঠে নোট চাইছে। নোট দিতে দিতে প্রথমবারের মতো মনে গিটার বাজে। জিওগ্রাফির ম্যাপে তার চুল, সাহিত্যের নোট বাদ দিয়ে কবিতা রচনা, তার এসাইনমেন্ট করতে যেয়ে নিজেরটা মিস! কিন্তু কোন পরোয়া নেই, ভালবাসার জন্যে নোটের তাজমহল তৈরি হবে। ফাইনাল হয়, কম মেধাবি মেয়েটা হায়েস্ট, অতি মেধাবি ছেলেটা লোয়েস্ট! কিন্তু ছেলেটা আসল কষ্ট তখন পায় যখন মেয়েটাকে অন্য ছেলের সাথে ঘুরতে দেখে! বোঝে তাকে ব্যবহার করা হয়েছে। ভাল ছেলেটা মন খুলে কাউকে বলতেও পারেনা কিছু শুধু নীরবে চোখের পানি ফেলে আর রেসাল্ট খারাপ করে! অনেকে তো খারাপ ছেলেও হয়ে যায়!
প্রপোজ ছ্যাকা: এই ছ্যাকা খায়নি এমন ছেলে হাতে গোনা। অনেকে তো ৪/৫ বছর ঘুরেও পসিটিভ উত্তর পায়না। একটা মেয়েকে একবার প্রপোজ করে না শুনলে তার জীবন থেকে চলে যাওয়া বোকামি। প্রথম প্রোপজে অনেক মেয়ে নার্ভাসনেস/এক্সাইটেড/পরীক্ষা করার জন্যে নাই বলে। কয়েক বার চেষ্টা করা উচিৎ। কিন্তু তারপরে মুগ্ধতার তোরে নিজের ব্যক্তিত্ব খুয়িয়ে বারবার ট্রাই করে রিজেক্ট হতে থাকেন অনেকে। এত অপমানের পরে মহাপুরুষও ভালবাসতে পারে কিনা সন্দেহ। কিন্তু জয় করার জেদ আর ভালবাসার মধ্যে তফাত করতে না পেরে অনেক ছেলেই বারবার ছ্যাকা খেতে থাকেন!
বিবাহ ছ্যাকা: এটা কিন্তু সত্যিই ভয়াবহ। প্রেমিক হিসেবে এ ছ্যাকা খেতে পারেন। প্রেমিকা বলবে জলদি চাকরির ব্যবস্থা কর নাহলে আমেরিকান প্রবাসি মেরিন ইংজিনিয়ারের সাথে বিয়ে হয়ে যাবে। সদ্য গ্র্যাডুয়েট আপনি এরকম টাফ কম্পটিশনের সাথে কোনভাবেই পেরে উঠবেন না। প্রেমিকাকে অশ্রুসজল চোখে এমেরিকার প্লেনে উঠতে দেখবেন।
বিয়ের পরেও এ ছ্যাকা খেতে পারেন। আপনার বউ আপনাকে বলবে সে এখনো নিজের প্রেমিককে ভালবাসে। বাবা মায়ের চাপাচাপিতে আপনাকে বিয়ে করেছে। এখন তার পক্ষে আপনার সংসার করা সম্ভব না। আপনি এখন মেয়েটার সাথে থাকলে কষ্ট পাবেন, ছেড়ে দিলে সমাজের কাছে ছোট হবেন। এটা ফান এন্ড গেম না জীবন নষ্ট করে দেওয়া ছ্যাকা!
ছ্যাকা ঠেকাতে এবং ছ্যাকার পরে করনীয়:
ঠেকাতে:
১) লেট হার গো। বারবার প্রপোজ করলে মেয়েটা হ্যা বলবে কিন্তু সেটা আপনাকে ভালবেসে না আপনার অসহায়ত্ব দেখে মায়া করে। এধরনের সম্পর্কগুলো হেলদি হয়না। শুধু চোখে দেখে এত পাগল হবার কি আছে? প্রেমিকা ডেকোরেশন পিস না যে সুন্দর হতে হবে। ব্যস আপনাকে ভালবাসুক আর কি? আর যদি ভালোবাসা না থাকে, আপনার প্রতি কোন কেয়ার না থাকে তবে পৃথিবীর সবচয়ে সুন্দর মেয়েটাও আপনার যোগ্য না। আপনি বেটার ডিসার্ভ করেন।
২) রিজেক্টেড হওয়ার পরে নিজেকে ছোট মনে করবেন না। আপনার আশাপাশের অনেক মেয়েকেই আপনার ভাললাগে না তেমনি এই মেয়েটার আপনাকে ভাললাগেনি। নট আ বিগ ডিল! একটা মেয়ের সাথে সম্পর্ক শুরু হওয়ার আগেই তার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে অনেক বেশি ভালবেসে ফেলবেন না। প্রপোজ করবেন ৩০% ভালোবাসা নিয়ে, হ্যা বললে বাকিটা। এতে রিজেক্টেড হলে কষ্ট পাবেন না অতটা।
৩) বিয়ের পরে ছ্যাকা খাওয়াটা আসলে আটকাতে হবে। এটা অনেক বড় একটা ব্যাপার। বিয়ের আগে শুধু ফ্যামিলির ওপরে ভরসা না করে নিজে থেকেও খোজ খবর নিতে হবে। বাংলাদেশী সমাজে একটা মেয়ে প্রেম করলে আগুনের মতো ছড়িয়ে যায় এই ওমুক মেয়ে তমুক ছেলের সাথে প্রেম করছে। তাই একটু খোজ নিন। মেয়ের সাথে কথা বলে হাভেভাবে বোঝার চেষ্টা করুন। মেয়েরা বিয়ের সময় মা বাবাকে ছেড়ে যাওয়ার জন্যে মন খারাপ করছে না আরো বড় কারন আছে তা একটু খেয়াল করলেই বুঝতে পারবেন।
৪) ভালো ছাত্রদের আল্লাহ সাধারনত অন্যদিকের ব্রেইন একটু কম দেন। কোন মেয়ে ন্যাকামি করছে নোট পাওয়ার জন্যে আর কাকে সত্যিই ভালবাসা উচিৎ তা এনারা বুঝিতে পারেন না সরলতার কারনে। পড়াশোনাই আপনাদের মেইন সম্বল, ওটা দিয়েই পরিচয়। তাই যতো যাই করুন মার্ক যেন খারাপ না হয়। গড গিফডেট ব্রেইনটাকে কারও ওপরে ওয়েস্ট করবেন না।
ছ্যাকার পরে:
৫) একটা কিশোর নিজে নিজের কষ্ট নিরোশন করবে সে আশা রাখিনা। কৈশরকালীন ছ্যাকায় আসলে মা বাবাকে সাহায্য করা লাগবে। পাকামি বলে মারধোর করলে ছেলে হাত থেকে বেরিয়ে যাবে। তার সাইকোলজি বুঝে সাপোর্ট করতে হবে।
৬) আজকাল অনেক ছেলে ছ্যাকা খাওয়ার পরে ব্যাপারনা, আমি ভাল আছি, আমিতো কত মেয়ে ঘোরাই এসব কথা বলে নিজেকে বোঝায়। এসব ঠুংকো কথায় দুঃখ যাবেনা বরং ফেস ইট। কষ্ট লাগছে, প্রচন্ড কষ্ট লাগছে সেটা মেনে নিন। কেউ অবহেলার পাত্র বানিয়েছে, ধোকা দিয়েছে, কথা রাখেনি মেনে নিন। মেনে নেওয়াটাই দুঃখ নিরশনের প্রথম স্টেপ।
৭) মেয়েটা আপনার আশেপাশে থাকলে বা ফেসবুকে ছবির দিকে তাকিয়ে উদাশ নয়নে তাকানো বন্ধ করুন। তাকে পাবার আশা মনের যে কর্নারে আছে তাকে পরিষ্কার করুন। সে আসবে না। সে অন্যকারও সাথে সুখে আছে। আপনি অতো ফালতু চরিত্রের না এজন্যে অতি সহজে সব ভুলবেন না। কিন্তু আপনি একটা শক্ত মনের মানুষ তাই আবারো উঠে দাড়াতে পারবেন সেই বিশ্বাস রাখুন।
৮) প্রেমিকাকে অন্য ছেলের সাথে ধোকা দিতে দেখলে অনেক ছেলের আত্মসম্মানবোধ ভীষন ভাবে ধাক্কা খায়। নিজেকে অনেক ছোট মনে হতে থাকে। এমনকি অনেকে সেই অন্য ছেলেটার সাথে মারামারি পর্যন্ত করে। কিন্তু এসব করে তো ভালবাসা ফিরে পাবেন না আর পেলেও ওধরনের মেয়েকে আপন করার মানেই হয়না। ভায়োলেন্ট কিছু করলে আপনারই রেপুটেশন খারাপ হবে। সবাই বলবে আপনি খারাপ বলেই মেয়েটা ছেড়ে চলে গিয়েছে। তাই ভালো থাকুন যাতে মেয়েটারও আফসোস হয় আপনার মতো ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ছেলেকে ছেড়ে।
৯) দেবদাশ হওয়ার দরকার নেই। দেবদাশের পরিনতি এমন কিছু ভালো ছিলনা। বেশিরভাগ ছেলেই নেশা শুরু করে প্রেমে ব্যর্থ হয়ে। কোন মানে হয়? একটা মেয়ে গেলে আরেকটা আসবে। কিন্তু ফুসফুস, লাংসের রোগ এসে গেলে আর সহজে যাবেনা।
১০) কাদুন ফর গড সেক কেদে নিন। কাদলে পুরুষ হওয়া যায় না এটা ঠিক না। কষ্ট হচ্ছে আপনি মানুষ কাদবেন ব্যাস। গলা ছেড়ে কাদুন দরকার হলে। বুকের গোমট ভাব কেটে যাবে অনেকটা। কষ্ট জিয়িয়ে রাখবেন না।
১১) ছেলেদের ঘরদোর এমনিতেই অনেক অগোছালো থাকে আর মন ভাংলে তো ডাস্টবিনের চেয়েও খারাপ অবস্থা হয়ে যায়। ধূলাবালির মধ্যে শুয়ে শুয়ে উদাস চোখে আকাশ দেখে। এটা করা যাবেনা। শরীরটাকে টেনে হিচড়ে তুলতে হবে, মনকে টোটালি এভয়েড করুন। এক ব্লগারের ভাষায় মনকে কানমলা দিন। মন ভাংলে মনের কথা এভয়েড করতে হয়। ঘর পরিষ্কার করে বাসযোগ্য করুন। নিজে গোসল করুন, চুলে জেল দিন, সবচেয়ে ভালো টিশার্টটি পরুন। করা অনেক কষ্ট কিন্তু করলেই অনেক ফ্রেশ মনে হবে নিজেকে।
১২) যেসব বন্ধুকে গার্লফ্রেন্ডের কারনে অবহেলায় দূরে সরিয়েছেন তাদের কাছে ফিরে যান। প্রথমে আপনাকে নিয়ে হাসাহাসি করলেও পরে তারাই শক্ত করে আগলে রাখবে। তাদের সাথে হাসিখুশিতে কিছুক্ষনের জন্যে হলেও ভুলে যাবেন সবকিছু।
১৩) কোন ক্লাবের সাথে যুক্ত হতে পারেন। কলেজের ভলান্টিয়ারি ক্লাব হতে পারে আবার পাড়ার ক্যারাম ক্লাবও হতে পারে। কিন্তু নতুন মানুষ দেখলে নতুন বন্ধু হলে তাদের কথাই মাথায় ঘুরতে থাকবে। সেই মানুষটার কথা কম মনে পরবে। এছাড়াও খুটিনাটি এদিক সেদিকের কাজে নিজেকে বিজি রাখুন। মাথায় অন্য চিন্তা থাকলে মন খোচানো বন্ধ করতে বাধ্য হবে। যেকোন কিছু করে মনকে ডাইভার্ট করুন, ঘরে এক কোনে একা একা পরে থেকে শোক করবেন না ভাংগা হৃদয়ের।
এতসব কিছু করেও যে খুব ভাল থাকবেন তা না। বিভিন্ন জায়গায় (ভার্সিটি, পাড়ায়, অনলাইনে) মেয়েটাকে দেখে বুকটা হুহু করে কেদে উঠবে। চোখের সামনে তার সুন্দর স্মৃতিগুলো বারবার ভেসে উঠবে। একটা তীক্ষ্ণ জ্বলুনি, গোমটভরা মনাবস্থা, বুকের বাম পাশে প্রচন্ড ব্যাথা নিত্য সংগী থাকবে বেশ অনেকদিন। প্রচন্ড কষ্টে নারীজাতির প্রতি ঘেন্না এসে যাবে। তাদেরকে বলব সব মেয়ে খারাপ না। ওয়েট ফর দা রাইট ওয়ান। আর সময়ের সাথে সাথে সব ঠিক হয়। এমন একটা মেয়ে শেষ পর্যন্ত জীবনে আসবে যে সারারাত জ্বরে সেবা করবে, আপনার প্রিয় খাবার রান্না করতে হাত পুড়িয়ে ফেলবে, অনেক খুটিনাটি ভালবাসায় আপনার জীবন ভরিয়ে তুলবে। তবে এই কষ্টের সময়টা দাতে দাত চেপে সহ্য করুন, পার হওয়ার পরে আপনি আগের চেয়ে অনেক বেটার মানুষে পরিনত হবেন, বিশ্বাস করুন।
কিছু কথা: আগের পর্ব অনেক সহজে লিখেছিলাম। মেয়ে হয়ে মেয়েদের কষ্টের সাথে সহজে রিলেট করা যায়। কিন্তু ছেলেদেরটা লিখতে গিয়ে বেগ পেতে হয়েছে। আমি সাধারনত অনেক জলদি ভাবনাগুলো টাইপ করে ফেলি। কিন্তু এ পর্বে অনেকবার আটকেছি। কিন্তু কথা যখন দিয়ে ফেলেছিলাম রাখতেই হতো, রাখলাম ধৈর্য ধরে। স্মৃতির পাতা ঘেটে পাড়ার বড় ভাই থেকে শুরু করে ক্লাসমেটের ছ্যাকা কাহিনী মনে করলাম। তাদের কি হাল হয়েছিল, কেন হয়েছিল, কিভাবে উত্তরন হয়েছিল সব মনে করতে করতে লিখলাম। আগের লেখায় একজন কমেন্ট করেছিলেন যে এক্সপেরিমেন্ট করে দেখতে চান এগুলো কার্যকরী কিনা। তো হার্টব্রোকেন পুরুষ সহব্লগারেরা এপ্লাই করে বলুন আমার আইডিয়াগুলো কার্যকরী কিনা? যদিও আমি মন থেকে চাই এপ্লাই করার সিচুয়েশনে আপনারা যেন না পরেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০১৬ রাত ৮:০৩