ব্লগের আগের কোন পোষ্টে এক ব্লগারকে কথা দিয়েছিলাম একদিন নিজের প্রথম ভালোলাগার কথা শেয়ার করব। বেশ সরল কাহিনী। কিন্তু কথা দিলে কথা রাখতে হয়। তাই প্রথমবারের মতো জীবনের প্রথম ভালোলাগাটা শেয়ার করব আপনাদের সাথে। ধুলো পরা সে স্মৃতির পাতাটা পরিষ্কার করে আপনাদেরকে দেখাব!
আমার নানু একবার কয়েকমাসের জন্যে আমাদের বাড়িতে বেড়াতেন আসলেন। আমার নানু রিটায়ার্ড প্রফেসর ছিলেন, এবং পাঠ্যবই লিখেছেন। আমি এবং আমার নানু নিয়ম করে সকালে এবং বিকালে হাটতে যেতাম। একদিনের কথা বৈকালিক ভ্রমন হচ্ছে নানা নাতনির। এমন সময় দুটো তরুণ আমাদের পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছিল। আমার নানু ওদেরকে আটকাল, ওরা অবাক, আমিও। তারপরে ওদের হাতের বই নিয়ে (হয়ত কোচিং এ যাচ্ছিল) নাড়াচাড়া করতে লাগলেন। ওদেরকে বললেন, এই বই ওনার বন্ধুর লেখা। আমার নানু আবার যখন গল্প করতেন সাল, জায়গা, কোন বিশেষ মানুষ তার ছাত্র ছিলেন সবকিছু বলতেন। বাড়িতেই আমরা বোর হয়ে যেতাম কিন্তু ওনার সামনে হাসিমুখ করে রাখতাম যাতে কষ্ট না পায়। ঠিক আছে বাড়ির মানুষ না হয় সহ্য করে, কিন্তু অপরিচিত দুই ছেলে কেন করবে? আমি এমবারেসড, আটকালে ঝাড়ি খাব। কি করি?
অবাক হয়ে দেখলাম ঐ দুটো ছেলের মধ্যে একটা ছেলে শ্যামলা, গভীর চোখে চশমা পরা খুব মজা নিয়ে হাসি চাপতে চাপতে আমার নানুর লেকচার শুনছে। আমার যে কি ভালো লেগেছিল সেই সরল হাসি!! আমি ওর দিয়ে তাকিয়ে ইশারায় বললাম যেন কিছু মনে না করে, ও তাকিয়ে কাঁধ ঝাকিয়ে ইশারা করল কোন ব্যাপার না। আর সেভেন এ পড়া সদ্য কিশোরি আমি অন্য এক ভালো লাগার সম্মুখীন হলাম। একদিকে নানু লেকচার দিচ্ছে অন্যদিকে আমরা দুজনে ইশারায় হেসে হেসে কথা বলছি। ছেলেটা একটু পরে পরে বলছে জ্বী দাদু, জ্বী দাদু! আমার সেটাও খুব ভালো লেগেছিল। বড়দের সম্মান দিতে পারা মানুষদের আমি খুব পছন্দ করি। এখানে বলে রাখা ভাল আমি প্রচন্ড লাজুক ছিলাম বিশেষ করে ছেলেদের ব্যাপারে। কিন্তু ওর সাথে প্রথমেই এত সহজে ফ্রি হলাম কিকরে কে জানে। হয়তো ওর প্রচন্ড সরলতার কারনেই।
নানুর লেকচার শেষ হল, ওরা বিদায় নিল। ছেলেটা যেতে যেতে যে সুন্দর হাসি দিল তা বর্ণনা করা সম্ভব না। বাড়ি আসলাম। মা আমাকে জিগ্যেস করলো হাসছিস কেন একা একা? আমি বললাম নানু কিরকম অপরিচিত দুই ছেলেকে লেকচার দিল! মাও হেসে ফেললেন আব্বুনা! যাই হোক, আমার হাসির কারন নানু না ঐ ছেলেটা ছিল। ওর সাথে মজার ইশারাবাজিটা মনে করে খিলখিল করে হেসে উঠছিলাম একটু পরে পরে। এত জীবন্ত ছিল স্মৃতিটা! শুধু ৫/১০ মিনিটই তো ছিল। কিন্তু বারবার মনের আয়নায় রিপিট দিয়ে দেখছিলাম।
তারপরে যখনই বাইরে যেতাম খুজতাম ছেলেটাকে। ছোট শহর, কোন মার্কেটেও তো আবার দেখা হতে পারে। কিন্তু হয়নি আর দেখা। কয়েক মাস পরেই আমরা অন্য জায়গায় বদলি হয়ে চলে যাই।
এখন আসল মজার ব্যাপার হলো আমি বুঝতেও পারিনি ছেলেটাকে আমার ভালো লাগত। ভালো লাগা কি বুঝতামই না। নিজেকে এতো প্রশ্নও করিনি কেন এমন আনচান করছে মন? অনেকদিন পরে কানাডায় তখন ১১/১২ এ পড়ি আমাকে এক বান্ধবী প্রথম প্রেমের কথা জিগ্যেস করল। আমি কখনো প্রেমে পরিনি বলতে যাব কিন্তু বিজলি চমকানোর মতো করে ঐ ছেলেটার মুখ মনে পরল! তখনকার অনুভূতি বিশ্লেষন করে বুঝলাম ভালো লেগেছিল প্রথম কাউকে। থতমত খেলাম নিজের মধ্যে। ইস! কি লজ্জার ব্যাপার! এত ছোট বয়সে এসব ভেবেছিলাম? হাহা।
তবে এখনো শ্যামলা, বড় চোখের, সরল হাসির ছেলেদের অনেক ভালো লাগে। একসময় ভাবতাম বিয়ে করলে শ্যামলা ছেলেই করব। কিন্তু এখন একটা সারটেইন ম্যাচুরিটি থেকে বুঝি চেহারা না মনটাই আসল। ভাললাগা চেহারা, হাসি দেখে হতে পারে কিন্তু ভালোবাসার সময় এসব মনে করা বোকামি ছাড়া আর কিছুই না।
তো আমার কাহিনী ফুরালো, নটে গাছটি মুরোল। অন্য ব্লগারেও কমেন্ট বক্সে বলা শুরু করে দিন, আমি যখন শেয়ার করেছি আপনাদেরও করা উচিৎ।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:২৭