আজকাল যেখানেই যাই দেখি মানুষ প্রেমরোগে আক্রান্ত। ফেসবুক, ইমেইল, টুইটার, বন্ধুর বিয়ে, কলেজ পিকনিক আরও কত কি। যত প্রেম তত ছ্যাকা। আমার কাছের অনেক বন্ধুই ছ্যাকারোগে আক্রান্ত। তাদের সামলাতে সামলাতে মনে হল আইডিয়াগুলো ব্লগের ছ্যাকাপ্রাপ্ত বোন, বান্ধবীদের সাথেও শেয়ার করা উচিৎ। তো লিখে ফেললাম।
প্রথমত ছ্যাকা কত প্রকার ও কি কি?
১) প্রপোজ ছ্যাকা: এই ধরনের ছ্যাকায় প্রপোজ করা মাত্র অপরজন আপনাকে কঠোরভাবে অথবা মিষ্টি করে বলবে সম্ভব না। এই ধরনের ছ্যাকা বেশিরভাগ সময় ছেলেরাই খায়। তবে আজকালকার যুগে মেয়েরও অনেক এক্সপ্রেসিভ। তারা মনের কথা অবলীলায় বলে প্রপোজ করে ছ্যাকা খাচ্ছে।
২) ভুল করেছিলাম: অনেক ছেলে প্রথম প্রথম কিছু না ভেবে চেহারা দেখে, মিষ্টি কথা শুনে প্রপোজ করে বসে। কিন্তু সম্পর্কের কয়েক মাসের মাথায় মনে হয় এই মেয়েটাতো আসলে আমার মনের মতো না। ছেলেটা হঠাৎ করে দেখে আগে যার কথা সারাক্ষন ভাবতে ভাল লাগত তার ভাবনাগুলোই আজ বিরক্তি লাগছে। আগে যাকে বারবার ভালবাসি বলতে ভাল লাগত এখন তারই মুখে ভালবাসি শব্দটা মিষ্টি লাগছে না! অনেক চেষ্টা করেও আর আগের আবেগ আসছে না। ছেলেটার মনের এই দ্বিধা মেয়েটা একসময় গভীর বিস্ময়ে উপলব্ধি করে। উপায়হীন মেয়েটা তখন আস্তে আস্তে ছেলেটার থেকে দূরে সরতে সরতে প্রচন্ড কষ্ট পায়। অনেকটা মোমবাতি ধীরে ধীরে জ্বলতে জ্বলতে যে কষ্ট পায় সেই কষ্ট। ছেলেটার এক সেকেন্ডের ভুল আর মেয়েটার সারাজীবনের কান্না!
৩) অন্য নারী: এই ছ্যাকায় আপনি আবিস্কার করবেন আপনার "সে" আপনাকে যা বলে অন্য একজনকেও একই কথা বলে। আপনি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে, আপনাকে ছাড়া মরে যাবে, আপনাকে প্রেমিকা না বউয়ের মতো দেখে এমনকি মেয়ে হলে মুন্নি আর ছেলে হলে মুন্না এই কথাটাও অন্যকাউকে বলেছে। ফেসবুকে অন্য কারও সাথে ক্লোজ হয়ে কথা বলছে, ছবি দিচ্ছে। এসময়ে আপনি ভাবতে থাকবেন কি আছে ঐ মেয়ের মধ্যে যা আমার মধ্যে নেই? আপনার সেল্ফ রেসপেক্ট, কনফিডেন্স জিরো হয়ে যাবে। এই ছ্যাকাটা সবচেয়ে মারাত্মক, কেননা এই ছ্যাকায় নিজের ভালবাসাকে হারানোর কষ্ট তো থাকেই। কিন্তু তার সাথে সাথে নিজের কাছেও নিজেকে অনেক ছোট হয়ে যেতে হয়।
ছ্যাকা খাওয়ার পরে করনীয়:
১) বারবার আশা নিয়ে ফেসবুকে লগইন করে নোটিফিকেশন চেক, ফোন হাতে নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা একটা কলের আশা করা বন্ধ করুন। প্রথমে নিজের মনের মধ্যে মেনে নিন সে আর ফিরে আসবে না। আপনি প্রতিটা সেকেন্ড তার কথা ভাবছেন কিন্তু সে শান্তি মনে অন্যকিছু বা কাউকে নিয়ে ব্যস্ত। আপনি রাতে যন্ত্রনায় ঘুমাতে পারছেন না কিন্তু সে রাত কাবার করে সকাল পর্যন্ত আনন্দে ঘুমাচ্ছে। এই অবহেলা, অপমান এবং কষ্টটাকে মেনে নেওয়া কষ্ট নির্মূলের প্রথম পদক্ষেপ।
২) ফোন, ফেসবুক, হোয়াটসএপ এবং আর যাতে যাতে তার সাথে চ্যাট হত তা ডিলেট করে তাকে ব্লক করে দিন। কেননা সেগুলো থাকলে আপনি বারবার পড়বেন আর কষ্ট পাবেন। তার সব ছবি ডিলেট করুন। বিশেষ করে কম্পিউটারের ব্যাকগ্রাউন্ডে যেটা দিয়ে রেখেছেন সেটা। এসব করতে হাত কাপবে, একটা ছোট ক্লিক অনেক ভারী পাথর ওঠানোর মতো কঠিন মনে হবে। কিন্তু সব ট্যাব একসাথে খুলে নিঃশাস বন্ধ করে ব্লক এবং ডিলেট বাটনটা টিপেই ফেলুন। মনের এক অজানা শান্তি অনুভব করবেন। যে আপনাকে অবহেলা করেছে তাকে ছুড়ে ফেলে দেওয়ার শান্তি।
৩) মনতো বলবে গোসল করোনা, খেওনা, কিন্তু মনের কথা শুনেই তো প্রেম করেছিলেন। তাই এবার ব্রেইনের কথা শুনে শরীরটাকে টানতে টানতে নিয়ে গোসল করুন, সুন্দর পোষাক পড়ুন, ভালো পারফিউম মাখুন। গাড়ো করে কাজল দিন, ম্যাচিং করে টিপ পরুন। আর ভালো কোন রেস্টুরেন্টে বন্ধুদের সাথে খান, পেট ভরে খান, ডেসার্টও বাদ দেবেন না। গলা দিয়ে নামবে না সহজে কোন খাবার কিন্তু গল্প করতে করতে আস্তে আস্তে সব খেয়ে নিন।
৪) নিজেকে আয়নার দিয়ে তাকিয়ে বলুন "I am young, I am beautiful. I am smart. I deserved something better! I am lucky that he is gone. বলেই কান্নায় ভেংগে পরুন। না না চেষ্টা করতে হবে না, চেষ্টা না করলেও he is gone বলার সময় কান্না ঠিকই চলে আসবে। যেটা অনেক ভাল কেননা কাদলে বুক হালকা হবে, নাহলে গোমট হয়ে থাকা কষ্টগুলো বাড়তেই থাকবে।
৫) দূরে কোথাও ঘুরে আসুন ফ্যামিলি অথবা বন্ধুদের নিয়ে। এখানে একটা কথা, অনেকে প্রেমের কারনে ফ্যামিলি, ফ্রেন্ডদের ইগনোর করে দূরে সরে যায়। কিন্তু লজ্জা পাবেন না। নির্লজ্জের মতো সরি বলুন। বলুন এখন বুঝতে পেরেছেন আসলে কে আপন। গ্যারান্টি দিয়ে বলছি এতেই আপনজনদের মন গলে যাবে। তারা অনেক খুশি মনেই আপনাকে সামলানোর কাজে লেগে যাবেন।
৬) নিজেকে ছোট ভাববেন না। অনেক মেয়েই আছে যারা প্রেমিক ছেড়ে চলে যাওয়ার পরে ঘন্টার পর ঘন্টা আয়নার দিকে তাকিয়ে ভাবে আমি কি সুন্দর না? আর যে মেয়েগুলোর চেহারা নিয়ে আগে থেকেই কোন কারনে হীনমন্নতা ছিল তাদের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়। নিজের প্রতি বিশ্বাস বাড়ান। যে ছেলে ধোকা দিয়ে অন্য কোন মেয়ের কাছে যেতে পারে তার কোন কারন লাগেনা। হলিউডের সুন্দরী নায়িকাদের সাথেও তো এরকম হয়। এটা আপনার কোন ভুলের কারনে হয়নি, মেনে নিন প্রচন্ড খারাপ একটা ছেলেকে ভালবেসেছিলেন। আপনার চেহারা অসুন্দর না, ছেলেটার মন অসুন্দর!
৭) রাতে গলা ছেড়ে কাদুন, না কাদলে প্রতিটা গোমট ভাবে সে মিশে থাকবে। কিন্তু সকাল হতেই আবার ফ্যামিলি, ফ্রেন্ড, পড়াশোনা। মন ভাংলে সবচেয়ে যে জিনিসটার ক্ষতি হয় সেটা হচ্ছে পড়াশোনা। অনেক সেমিস্টার ড্রপ দেয়, ল্যাব/এসাইনমেন্ট জমা দিতে ভুলে যায়, পরীক্ষায় খারাপ করে। তাদেরকে বলব what the hell are you doing girl? সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে পড়াশোনা এবং একটা ফালতু ছেলে যে আপনার ভালবাসার মর্যাদা দিতে পারেনি তার জন্যে ক্যারিয়ার নষ্ট করার মানে আছে? এর চেয়ে পড়াশোনায় আরো ডুবে গিয়ে শয়তানটাকে ভোলার চেষ্টা করুন।
৮) নতুন কাউকে মনে মনে খুজুন। মনের পুরোটা জুড়ে ঘর করে থাকা মানুষটা হঠাৎ করে চলে যাওয়ায় যে ফাকা ভাবটা তৈরি হবে সেখানে কাউকে না বসালে শূন্যস্থান পূরন হবে না। আর এভারেজ মেয়েদের "সব ছেলেই একরকম" জোনে চলে যাবেন না। এই দুনিয়ায় ১০ টা খারাপ ছেলে থাকলে ১০০ টা ভাল ছেলেও আছে। একটা খারাপ এক্সপেরিয়েন্সের কারনে কোন ভাল ছেলের ভালবাসাকে অবহেলা করবেন না। আর মেয়েরা অনেক ভাগ্যবান এক্ষেত্রে। ব্রেক আপ হওয়ার খবর ছড়িয়ে গেলে অনেক লুকিয়ে থাকা রোমিও আবার ছুটতে ছুটতে চলে আসে।
৯) সবশেষে বলব তাড়াতাড়ি কিছুই হবেনা। ওপরের সবকিছু রেগুলারলি করার পরেও বুকের ফাকা ফাকা ভাবটা সহজে যাবে না। কোন রোমান্টিক মুভি দেখার সময় তার কথা মনে হবেই, রাস্তায় কোন কাপল দেখলে বুকটা খা খা করে উঠবে, তার সুইট কথাগুলো মনে হয়ে অজান্তেই চোখ ছলছল করে উঠবে। বুকটাকে দুমড়ে মুচড়ে দেওয়া কষ্টটা অনেক দিন পর্যন্ত থাকবে। কিন্তু সময় সবকিছু ঠিক করে দেয়। একদিন সকালে উঠে আশ্চর্য হয়ে দেখবেন বুকের পাথর নেমে গেছে। অনেক চেষ্টা করেও তার চেহারা মনে পরছে না, বা তার পুরো নাম মনে পরছে না।
শুধু একটু সময়ে নিয়ে দাতে দাত চেপে সবকিছু সহ্য করুন, কোন ভুল সিদ্ধান্ত নেবেন না এই কঠিন সময়ে। কালকেতো রাত কেটে সূর্য উঠবেই!
এই পোষ্টে শুধু মেয়েদের ছ্যাকার ব্যাপারে লিখেছি, পরের পোষ্টে ছেলেদেরটা লিখব। নিজে মেয়ে বলে আগে মেয়েদেরটা লিখেছি তা নয় আসলে Ladies first তো তাই।
বি:দ: ইহা লেখিকার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে নয়, তবে লেখিকা নিজের অনেক বন্ধু বান্ধবীকে এসব টিপস দিয়ে সাহায্য করিয়াছেন, এবং আপনাদেরও কাজে লাগবে বলিয়া আশা করিতেছেন। দুই একটা আইডিয়া একটু ফানের জন্যেই, তবে বেশিরভাগই কার্যকরী।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০১৬ রাত ৮:১৭