যখন শুক্রবার বিকেলে বৃষ্টি পড়া শুরু হলো তখন আমি শিওর যে আজকে আর কেউ আড্ডাতে আসবেনা। আমি ধানমন্ডীতে মামার বাসায় বসে বসে খাইতে খাইতে রাতে একটা বিয়ের দাওয়াত আছে ঐটাতে যাওয়ার প্ল্যান করতেছিলাম। ৬টার দিকে ভাবলাম ২/১ জন হয়তো আসতে পারে, একটু ফুনাই দেখি। কিন্তু শুনলাম ৫০/৬০ জন নাকি এসে হাজির। ব্লগারদের আসলে তেমন কোন কাজ কাম নাই এটা আমি আগেই সন্দেহ করছিলাম, এখন পুরা শিওর হইলাম । তো আমি ভাবলাম আমিতো পুরাই আকাইম্যা, আমি না গেলে তো জাতির বিবেক মাথা ঝাঁকাবে। বৃষ্টির মধ্যেই দৌড়ায় দৌড়ায় পৌছে গেলাম রবীন্দ্র সরোবর। গিয়েই প্রথমে এক মহা ঝামেলায় পড়লাম, এক ভদ্রমহিলার সাথে পরিচয় হওয়ার পরে দেখি উনি বললেন, "আপনার কথা আমি কত শুনেছি।" জীবনে এরকম ভালো দিন আসবে আগে ভাবি নাই । উনার কথা শুনে আমি হালকা কাইত হব নাকি ভাবতেছি, তখনি উনি বললেন, "কিন্তু এখন দেখা হয়ে খুবি হতাশ হলাম"। চিন্তা করছেন কি অপমান । আজকে আমার যে এই কথা শুনতে হলো এইজন্য আমি পল্লীবাউল ভাই আর কালপুরুষদাকে তীব্র ধিক্কার জানাই । খুবি হতাশ মনপুরা ভাবীকে পরে অনেক তেল মাইরা একটা দাওয়াত আদায় করে নিছি। আমার দাওয়াতে অবশ্য পাথুরে আর শামসীরও ফ্রি খেয়ে আসতে পারবে । তারপরেই দেখলাম আরিয়ানা আপু আমাকে ইংলিশে কি জানি বলতেছেন, কিছুই বুঝলামনা আফসুস । শুধু nice to meet u বুঝছি । কিছুক্ষনের মধ্যে দেখি সবাই গোল হয়ে কিসব জানি বলতেছে, বুঝলাম নিজেদের সম্বন্ধে বলতেছে। আমার মেমোরীর অবস্হা যা তা, ১ জন কিছু বলার পরে পরেরজন কিছু বলা শুরু করলেই আগেরজনের সব ভুইলা যাইতেছি। সবার শেষে চিপাচুপা থেইকা বহুত কষ্টে বের হয়ে নিজের নাম বলতে গিয়ে দেখি অধিকাংশ ব্লগাররা মুখ ঘুরাইয়া নিজেদের মধ্যে গল্প করা শুরু করছে। কি অপমান চিন্তা করেন । কেউ খুব একটা পাত্তা দিতেছেনা দেইখা শ্রাবণসন্ধ্যা আপুর কোলে জাফনারে দেখে ভাবলাম এর লগেই খানিক আলাপসালাপ করি। কিন্তু, ও তো দেখি সেলেব্রেটি ব্লগারদেরি পাত্তা দিতেছেনা, সেখানে আমিতো পোকামাকড় । অপমানের একশেষ আর কি ! ফয়সালরকস্ এর সাথে কথা বলার ট্রাই দিছিলাম, উল্টা ওনার বিশাল মিউজিক নলেজের পাশে আমার নো মিউজিক নলেজ নিয়ে হালকা একটু ফাঁপরে পড়ে গেছিলাম। পল্লীবাউল, মনপুরা, যাযাবর পাখি, পাথুরে, শামসীর এরা দেখলাম একটু পাত্তা দিতাছে। এরমধ্যে স্বাভাবিকভাবেই শামসীরের বিয়ের ব্যাপার চলে আসলো, রোহানও যোগ দিছিলো এই ইস্যুতে। মনপুরা ভাবী দায়িত্ব নিছেন মেয়ে খুঁজে দেয়ার, তারপরেও আসেন আমরা সকলে মিলে এরকম একজন সুপাত্রের বিয়ের জন্য দোয়া করি।
আমার মতো গরীব জনগণের ধার করা টাকা থেকে মেসবাহ য়াযাদ ভাই ১০০ টাকা নিয়ে ফেলছিলেন, উনারে মাইনাস। শামীম ভাই পরে একটা খাওয়ার বক্স দিছেন, উনারে প্লাস। মনসুর আর ক্যামেরাম্যান ভাইয়েরা আড্ডার ডাক দিছিলো, উনাদের প্লাস, মাইনাস কোনটা দিব বুঝতেছিনা। রাতমজুর, শামীম,কাক ভূষন্ডী ভাইজানেরা যেভাবে শরীরের সব এনার্জি নিয়ে সব আড্ডার জন্য দৌড়াদৌড়ি করেন, উনাদের দেখলে আমার মতো আইলসা লোকের খুবি টায়ার্ড লাগে ।
কাব্যকে দেখলাম মুখ কালো করে উদাসভাবে ঘুরতেছে। ঘটনা কি জানতে চাইলে বললো, "পুরুষ ব্লগাররা সব মেয়ে ব্লগারদের ঘিরে আছে, পাত্তা পাইতেছিনা। আড্ডাতে আইসা কি আর লাভ হইলো??"। আমি দেখলাম, ঘটনাতো সঠিক। তাই তো বলি, কোন মেয়ে ব্লগারদের দেখা যাচ্ছেনা কেন? জানপরীও দেখলাম খুবি হতাশ এই ব্যাপারে। উনারে নিয়ে বহুত ঠেলাঠেলি কইরা আপুদের সাথে পরিচিত হওয়ার জন্য গিয়ে দাঁত বের করে বললাম, "আমার নাম অন্ধ দাঁড়কাক", উনারা গম্ভীরভাবে বললো, "ও" । আরো অনেকের সাথে পরিচয় হয়ছিলো, আমার যা মেমোরী...কি আর বলব ! আমি একই লোকের কাছে কিছুক্ষণ পরপর গিয়ে বলতেছি, আমার নাম অন্ধ দাঁড়কাক। লোকজন দেখি কিছুক্ষণ পরে সরু চোখে তাকায়, এই পোলার সমস্যা কি? এতবার পরিচিত হয়তাছে কেন? শুধু ব্যতিক্রমীরে দেখলাম আমার সাথে কথা বলতে গিয়ে হালে পানি পাইছে। ও আমার থেকেও নার্ভাসভাবে এদিকওদিক তাকাচ্ছিলো। অনেকের সাথেতো পরিচিত হওয়ার চান্সই পাইলামনা। বিশেষ করে যারা সেলিব্রেটি । একমাত্র কালপুরুষদা যা একটু পাত্তা দিলেন। গোয়েবলস আড্ডাতে আসবে শুনছিলাম, ওর লগেতো দেখাই হইলনা । ওরে একটা টাইট দিব ভাবছিলাম, সেই ভয়ে বোধহয় আসে নাই । যাইহোক, পরে কখনো দেখা হলে ওর খবর আছে। চাচামিয়া দেখি ফ্ল্যাশ ছাড়াই ছবি তুইলা বেড়াইতাছে রাতের আন্ধারে। বুঝলাম একটাও উঠবেনা, পরে কারো মাথা জোড়া লাগায় দিবে । হতাশ ভাবে কিছুক্ষণ ঘুরে ভাবলাম, বিয়ের দাওয়াতেই যাইগা, আর্মি অফিসারের বিয়া। মন ভালো গ্যারান্টিড ।
১ দিন পরে ব্লগ খুইলাতো আমি পুরা তাজ্জব। মানুষ গেছিলো ৭০ জন, আর আড্ডা নিয়ে লেখা পড়ছে ৮০টা!!!ফেইসবুকেও ছবি দিছে যেগুলা আমি অফিস থেকে দেখতে পারতেছিনা। লোকজনের কি কোন কাজ কাম নাই নাকি! এই আড্ডাব্লগের কারণে আমি আড্ডার আগে একটা লেখা দিছিলাম, সেইটা দেখি কেউ খুইলাও পড়ে নাই। এভাবেতো পিছায় পড়া যায়না। তো আমিও কম আকাইম্যা নাকি! আমিও একটা বড় দেইখা লিইখা ফেলছি ।