নভেম্বর,১৯৭১।প্রথম দিকেই আমরা ফিরলাম ইসলামপুর(ভারত)থেকে সপরিবারে,সাথে একজনকে বেশী নিয়ে,স্বরাজকে......আমার সব চেয়ে ছোট ভাই।বাসায় ফিরে তেমন কিছুই পাওয়া যায় নাই,অনেক কিছুই খোয়া গেছে,যেটা হয় আর কি যুদ্ধের সময়কিছুদিন পড়ে একদিন দেখি আমাদের বাসার সামনে দিয়ে সারি সারি আর্মি ট্রাক যাচ্ছে স্টেশনের দিকে......... সম্পূর্ণ লোডেড।বিভিন্ন সব ফার্নিচার আর ইলেকট্রনিক্স জিনিসে ভরা!একটু ফাঁকা আছে পিছন দিকে,যেখানে ৪-৫ জন জওয়ান হাত নাড়ছে,হাসছে আর কি যেন বলছে?
ধীরে ধীরে ট্রাকগুলো যাচ্ছে তো যাচ্ছেই........আমি(বয়স ৭)আর স্বজন(বয়স ৩+) সিঁড়ীতে বসে অবাক হয়ে দেখছি,মজাও লাগছে!এতো বড় এবং এতগুলো ট্রাক এক সঙ্গে আগে কখনো দেখি নাই আমরা।আশে পাশে সবাই দেখছে এবং কিছু ট্রাক থামছে এবং ওরা বিভিন্ন জিনিস নিচ্ছে ওদের ট্রাক থেকে।ভাবলাম কি মজা,ওরা ওদের জিনিসগুলো মানুষকে দিয়ে দিচ্ছে!
হটাত দেখি আব্বাকে,এক জন জওয়ানের সাথে কথা বলছে......... একটু পরেই দেখি ট্রাক থেকে একটা আলমিরা নামছে আব্বার পাশে!আলমিরাটা বাসায় নিয়ে আসা হলে শুনলাম আব্বা আম্মাকে বলছে “ওরা সব লুটের মাল ট্রাক বোঝাই করে নিয়ে যাচ্ছে,এবং কিছু জিনিস বিক্রিও করে দিচ্ছে” তাই এই আয়রনের আলমিরাটা ওদের কাছ থেকে কিনলাম।তখন তো মোবাইল ছিল না,তাই ছবি তুলা হয় নাই......... কিন্তু এখন তো আছে!সেই আলমিরা এখনও আমাদের ঘড়ে আছে,দাম পরেছিল ৬৫ টাকা! খনকার ছবি দিলাম।
ও হ্যাঁ...... বেশ কিছু ট্রাক সম্পূর্ণ ত্রিপল দিয়ে ঢাকা ছিল।যখন থেমেছিল তখন কেউ কেউ ত্রিপল ফাঁকা করে দেখেছিল আর্মস এ্যন্ড এ্যমুনিশনে ভরা!!! বাপ চাচারা যারা পাক আর্মির আর্মস চিনে তারা বলছিল সব খান সেনাদের আর্মস।!!!
যাদেরকে হাঁড়ির সব ভাত টিপে দেখতে হয়,তারা আসলে ভাত কি সেটাই জানে না! সুতরাং তাদেরকে ভাত যে চিনাতে যাবে সে একটা মূর্খ ছাড়া কিছু না।কারণ ভাত চিনার কনও প্রয়োজন বা তাগিদ বা স্বার্থ তাদের নেই।
যেমন আমি জানিনা মোদীর আগমন নিয়ে প্রচারের উৎসবে কেন শুধুই ভারত কি পাচ্ছে তাই প্রচার হচ্ছে!!!!ইনিয়ে বিনিয়ে তিস্তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে কিন্তু চুক্তির শর্ত কি কি হতে পারে বা কি কি হলে ঠিক হবে তা নিয়ে কনও আলোচনা নেই! সমস্ত প্রচারের সারাংশ ভারত এই পাচ্ছে,ঐ পাচ্ছে!!!এ যেন সেই অমর বানীর চেতনায় সবাই চেতনায়িত,চিত্ত চঞ্চল করে তাই গাইছে “ভোগে সুখ নাই,ত্যাগে সুখ” ওদের পাওনাই আমাদের পাওনা!!!!এই ভাবনা যখন এই দেশের শিক্ষিত অংশ মনে করে তখন,আর কিছু বলার মতো ভাষা আর নাই।আমি দুঃখিত!ওরা যদি রাজাকার হয়,তবে এরা কি? মানসিক দেউলিয়াত্তের আর বাকী কি আছে আমার জানা নাই,চেতনাজিবীদের কি আছে?
পাখীর ছবির ক্যাপশনটা এই জাতীর বর্তমান দাসত্তের মানসিকতার সাথে ভীষণ মানানসই!ছবিতেই সব বলা আছে,এতো কথা আসলে বলার কনও প্রয়োজন নাই।