২০৩০ সাল, মায়ের সাথে আজকে আবার মিতুর ঝগড়া হয়েছে। মিতুর বয়স ৬ বছর। তার জেদ সে স্কুলে যাবে, জেভাবে রাতুল, অনিক আর মাহিরা যায়। কিন্তু তার মা কিছুতেই স্কুলে যেতে দেবে না। কেনও যেতে দেবে না তা একটু একটু বুঝলেও পুরোটা তার কাছে স্পষ্ট হয় না। মাকে কত্ত জিজ্ঞেস করে মা তাও বলে না। বাবাকে জিজ্ঞেস করলে বলে মা যা বলে তাই ঠিক। কিন্তু মিতুর খুব স্কুলে যাবার ইচ্ছা, তার ছোট খালার কাছ থেকে স্কুলের অনেক গল্প শুনেছে। তার ছোট খালা ভিকারুন নিসা নামের একটা স্কুলে পড়ত। পুরো বাংলাদেশের মধ্যে একটা শ্রেষ্ঠ স্কুল ছিল নাকি ভিকারুন নিসা। কিন্তু খালা খুব বেশি পড়ে নাই মাত্র ক্লাস ৫ পর্যন্ত পড়েছেন। স্কুলের দিনগুলো নাকি রুপকথার মত ছিল। । খালা ঘুম থেকে সকালে উঠা শিখেছিল স্কুলের জন্য, সাদা ফিতে দিয়ে মাথার চুল শক্ত করে বেধে রাখা, পরিশকার করে নখ কাঁটা, জুতায় শব্দ না করে হাটা সব নাকি স্কুল থেকেই শিখেছিল। খালার প্রানের বান্ধবিও স্কুলে ই পাওয়া। যেখানে সব কিছু এত্ত ভালো সেখানেই মা যেতে দেয় না। মা শুধু বলে রান্না শিখতে, ঘর গোছানো শিখতে। এখনও মিতু বড় হয়নি কিন্তু মিতু জানে, আরেক্টু বড় হলে মিতুকে মা সেলাই সেখাবে। রাতুলদের সাথেও মিশ্তে দেবে না। আর ১৩ বছর হলে বড় আপুর মত বিয়েও দিয়ে দেবে।
আমি মনে প্রানে চাইবো, এমন ঘটনা কোন দিন যেনও কোন মিতুর জীবনে না আসে। প্রত্যেকটা মিতু যেনও জানতে পারে স্কুল আসলেই মজার জায়গা, এখানে প্রানের বন্ধু হয়, জাদের সাথে চুলোচুলি করেলেও চটপটি ভাগ করে খাওয়া জায়।সবাই বসে একসাথে দেওয়াল পত্রিকা বানানো যায়। সাইন্স ফেয়ারের দিন ভাব নিয়ে প্রোজেক্ট বঝান যায়। ঝগড়া না করেও যুক্তি দিয়ে বিতর্ক করা যায়।
কিন্তু একবার ভাবুন তো, আজকে যদি পরিমলের বিচার না হয়, পরিমল যদি বীরদর্পে বেরিয়ে আসে সে হয়তো আরেকটা স্কুলে ঢুকবে। যে কাজ আগে অগোচরে করত, তা হয়তো ক্লাসে বশেই করবে। ৫/৬ এর মেয়েদের বুকে হাত দেবে। মেয়েটা কাঁদবে, মাকে বলবে। তারপর মা স্কুল ছারিয়ে বাসায় নিয়ে যাবেন। বাসায় গিয়ে বোঝাবেন মেয়েদের সাথে এমন হয়ই। কিন্তু এসব কাউকে বলতে হয় না, এসব লজ্জা। এসব বললে শুধু শুধু মানুষ জানবে কোন বিচার হবে না। এর চেয়ে মেয়েকে মা ঘরে রান্না শেখাবেন, সেলাই সেখাবেন।বার বার বোঝাবেন মেয়েরা নরম, মেয়েদেরকে সহ্য করতে হয় সব কথা বলতে হয় না। মা বোঝাবেন ঠিকই কিন্তু মেয়ে চোখের আড়ালে গেলে বুক ভা্সিয়ে কাঁদবেন। সে কান্না কেউ দেখবে না।সে কান্না বড় লজ্জার।
মেয়েটি হয়তো অঙ্কে অনেক ভালো ছিল। আধা ঘণ্টার অঙ্ক সে ৫ মিনিটে করে ফেলতে পারত। মেয়েটা হয়তো বড় হয়ে নভোচারী হতে পারত।কে জানে, বিজ্ঞানের কোন শাখায় হয়তো সে নোবেল ও নিয়ে আসতো কিংবা কে জানে, এই মেয়েটি হয়তো বাংলাদেশের মাহাথির মোহাম্মাদ, ইন্দিরা গান্ধী বা অং সাং শুচি হতে পারত।। বাংলাদেশ গর্বিত হত তার পরিচয়ে।তার যখন কোন মেয়ে হয়ত সে হয়তো ৫ বছরে তার হাতে খড়ি করত ল্যাপটপ দিয়ে। আর ১৫ বছরে ফেসবুক বা ইউটিউবের মত কিছু আবিষ্কার করে ফেলত সেই মেয়েটি। কিন্তু এখন এসব কিছুই হবে না। তার লক্ষ্য হবে তার অসহায়ত্ব মেনে নিয়ে ১৬ বছরে কারো ঘরের বধু হয়ে যাওয়া। যে কোন দিন তার মেয়েকে স্কুল নামক বিভীষিকায় যেতে দেবে না শুধু মাত্র নিরাপত্তার জন্য। তার মেয়েটি তখন কম্পিউটার না চিনে চিনবে শুধু হাড়ি পাতিল। তার ভাই যখন কম্পুটারে এসাইন্মনেট করবে সে তখন ভাইয়ের মস্তিষ্ক প্রখর করার জন্য বাদামের বরফি নিয়ে যাবে।
আমি সত্যি সত্যি মনে প্রানে আশা করবো এমন কিছুই হবে না। আমাদের দেশ তাদের শিক্ষিত জনশক্তি ধংস করবেনা। আমাদের যে ছোট বোনগুলো কালকের ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজ্ঞ বা বিখ্যাত সাহিত্তিক হবে, তাদের প্রতিভা কে গলা টিপে মারবেনা। জীবন নিয়ে প্রতি মুহূর্তের আতঙ্কের বদলে তারা ভব্বে বিজ্ঞান, সমাজ আর সাহিত্তের নতুন নতুন ক্ষেত্র নিয়ে। বলুন, শুধু একবার বলুন, আমরা নিজের হাতে আমাদের দেশটিকে ধংশ করবো না।