somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সত্যের সন্ধানে

১৩ ই জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৩:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বয়স তখন খুব একটা বেশি না।বই পড়ার ছিল এক অদম্য নেশা। রোজকার দিনে স্কুল ফিরতে সূর্য ঠিক মাথার উপর অবস্থান নিত। নাওয়া-খাওয়া শেষ হতেই মা ঘুমাতে বলতেন। কখনো চোখ বুজে শুয়ে থেকে কখনো জানালার ওপারে মেঘের সাথে সূর্যের লুকোচুরি দেখে কেটে যেত দুপুর।
সেই ধীরূজ দুপুর গুলোতে শুয়ে থেকে থেকে অসহ্য হয়ে বই পড়তে শুরু করি। তখন বাবা বাসায় ইসলামি মাসিক পত্রিকা রাখতেন "মাসিক রহমত"। মাসিক রহমতের টক মিষ্টি ঝাল, নাসির গাজির ঝুলি পড়তে ভালই লাগত। একটি গল্প খুব হৃদয় কাড়ত। সুলতান মাহমুদ গাজনবীর ভারত বিজয়ের উপন্যাস "সোমনাথ মন্দির"। সেই প্রাণবন্ত ঘটনা আজ-অব্ধি হৃদয়ে রেশ রেখে গেছে।
মাসিক রহমতেই আরেকটি গল্প প্রচার হতো "সত্যের সন্ধানে"।
সালমান ফারসী (রাঃ) এর জীবন বৃত্তান্ত কেন্দ্র করে। সেই নিস্তব্ধ খররৌদ্রের দুপুরে 'সত্যের সন্ধানের' পৃষ্ঠা গুলো আমায় তীব্র ভাবে কর্ষণ করতে থাকে। প্রচণ্ড ব্যগ্র হয়ে হারাতে থাকি অতীত শতাব্দীর পারস্যে।

সালমান (রাঃ) ছিলেন পারসিক। পারস্যের ইস্পাহান প্রদেশের জাঈ নামক গ্রামের অধিবাসী।উনার পিতা ছিলেন জাঈ গ্রামের মোড়ল। পিতা সালমান (রাঃ) কে এতো বেশি স্নেহ করতেন যে, বাড়ি থেকে কোথাও যেতে দিতেন না। দাস-দাসীর মতো বাড়িতে আটকে রাখতেন। এসময় উনি অগ্নি উপাসনায় খুবই দক্ষতা অর্জন করেন।
উনার পিতা ছিল বিরাট ভূসম্পত্তির মালিক। একদা তা দেখা-শোনার জন্য পিতা সালমান (রাঃ) কে দায়িত্ব দেন। পিতার নির্দেশ অনুসারে তিনি ভূসম্পত্তি দেখতে গেলেন। পথে এক খ্রিস্টীয় গির্জায় লোকজনকে উপাসনারত অবস্থায় শব্দ করতে দেখলেন। তারা কি করছিলো তা দেখার জন্য তিনি গির্জায় প্রবেশ করেন। তাদের উপাসনায় মুগ্ধ ও আকৃষ্ট হন। সূর্যাস্ত পর্যন্ত তিনি সেখানে অবস্থান করেন, পিতার ভূসম্পত্তি দেখতে যাওয়ার ইচ্ছে ত্যাগ করেন। তিনি গির্জার লোকদের জিজ্ঞাসা করেন- এই ধর্মের উৎস কোথায় ?
তারা বলল সিরিয়ায়।
এরপর তিনি পিতার কাছে ফিরে গেলেন। পিতা তার প্রতি রাগান্বিত হয়ে বলল- এতো সময় কোথায় ছিলে?
তিনি বলেন- বাবা! যাওয়ার পথে কিছু লোককে একটা গির্জায় উপাসনা করতে দেখলাম। তাদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান দেখে বড়ই ভাল লাগলো, তাই সূর্যাস্ত পর্যন্ত তাদের সাথে ছিলাম।
বাবা তাকে বললেন ঐ ধর্ম ভাল না।
প্রতি উত্তরে তিনি বললেন- কখনো নয়। ঐ ধর্ম আমাদের ধর্ম চেয়ে অবশ্যই ভালো। এতে পিতা ভিত হয়ে গেলেন সালমান (রাঃ) কে শিকল পরিয়ে ঘরে আটকে রাখলেন।
এসময়ে তিনি গোপনে গির্জার খ্রিস্টানদের নিকট খবর পাঠালেন যে, আপনাদের কাছে সিরিয়ার কোনো কাফেলা এলে আমাকে জানাবেন। কিছুদিন পর তাদের কাছে সিরিয়া থেকে খ্রিস্টানদের একটা বাণিজ্যিক কাফেলা এলো। কাফেলা কাজ শেষ করে যখন স্বদেশে ফিরার প্রস্তুতি নিলো তখন তারা উনাকে সে খবর জানালো।
সালমান (রাঃ) পায়ের বেড়ী ফেলে দিয়ে পালিয়ে তাদের সাথে সিরিয়া চলে গেলেন। সিরিয়া গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন- তোমাদের ধর্মাবলম্বীদের মাঝে সবচেয়ে বেশি জ্ঞানী কে? তারা গির্জার প্রধান ধর্মযাজকের কাছে পাঠিয়ে দিল। তিনি ধর্মযাজকের সহচর হয়ে ধর্মীয় শিক্ষা লাভ করেন। দীর্ঘদিন গির্জায় অবস্থানের পর পাদ্রীর মৃত্যু নিকটবর্তী হলে সালমান (রাঃ) বললেন- হুজুর আমি তো আপনার কাছে দীর্ঘদিন কাটালাম এখন আপনার শেষ অবস্থা, এখন আমি কার কাছে যেতে বলেন।
পাদ্রী বললেন- এখন যারা আছে তারা ধর্মকে অনেকাংশ বিকৃত করে ফেলেছে এবং অনেক খানি বর্জন করেছে। তবে মূসেল শহরে এক ব্যক্তি আছে। তিনি আমার মতো খাটি ধর্মের অনুসারী।
সালমান (রাঃ) এভাবে মূসেল,নসীবন সর্বশেষে আম্বুরিয়া নামকে স্থানে ধর্মযাজকের নিকট থাকেন। আম্বুরিয়ার ধর্মযাজকের মৃত্যুর সময় জিজ্ঞাসা করলেন- আপনার পর আমি কাকে ধর্মযাজক হিসেবে গ্রহন করবো?
তখন তিনি বললেন- বাবা! আল্লাহর কসম, এখন আর আমাদের এই ধর্ম সঠিক ভাবে অনুসরণ করে, এমন কেউ আছে বলে আমার জানা নেই। তবে একজন নতুন নবীর আবির্ভাবের সময় ঘনিয়ে এসেছে, তিনি ইবরাহীম আ. এর ধর্মসহ প্রেরিত হবেন। তিনি আরব ভূমিতে আবির্ভূত হবেন। দুই মরুর মাঝে খেজুর বাগানে পরিপূর্ণ হবে, এমন এক শহরে আগমন করবেন। এক শহর থেকে অন্য শহরে হিজরত করবেন। তিনি হাদিয়া নিবেন কিন্তু সদকা গ্রহণ করবেন না। তার দুকাধের মাঝখানে নবুওয়াতের সীল থাকবে।তুমি যদি সেদেশে যেতে পারো তবে সেদেশে যাবে। এরপর এই ধর্মযাজক মারা গেল। সালমান (রাঃ) অনুসন্ধান করতে শুরু করলেন। এমন সময় বনু কালবের একদল বণিক তার নিকট দিয়ে যাচ্ছিল। তখন সালমান বললেন- তোমরা আমাকে আরব দেশে নিয়ে চলো, এর বিনিময়ে আমি তোমাদের এসব গবাদিপশু দিয়ে দিব।
বণিকরা সালমান (রাঃ) কে সাথে নিয়ে চলল, ওয়াদি কুরাতে পৌছে তারা জুলুম করল এবং জৈনক ইহুদির নিকট দাস হিসেবে বিক্রি করে দিল। তিনি তার কাছে থাকতে লাগলেন। ঐ সময় মদীনার বনু কুরায়যা গোত্র থেকে ঐ ইহুদীর এক চাচাত ভাই এলো এবং সালমান (রাঃ) কে কিনে নিয়ে মদিনায় গেল। সালমান (রাঃ) বলেন- আল্লাহর কসম, মদীনাকে দেখেই আমি চিনতে পারলাম যে, এটাই আমার আম্বুরিয়া উস্তাদের বর্ণিত জায়গা।
এসময় রাসূলুল্লাহ (সঃ) নবুওয়াত প্রাপ্ত হন। তিনি মদিনায় হিজরত করেন। সালমান (রাঃ) এ খবর পেয়ে আম্বুরিয়া পাদ্রীর শিক্ষা অনুযায়ী রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর সত্যতা যাচাই করার জন্য প্রস্তুতি নিতে লাগলেন।
কিছু খাদ্য সামগ্রী নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর কাছে হাজির হলেন এবং বললেন- আমি জানতে পেরেছি যে আপনি একজন সৎ লোক। আমার কাছে কিছু সদকার জিনিস জমা আছে ভাবলাম যে অন্যের তুলনায় আপনার হক বেশি।হযরত রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেন আমি সদকা গ্রহণ করি না।
২য় বার কিছু খাবার জিনিস সংগ্রহ করে রাসূলুল্লাহ (সঃ) নিকট হাজির হলেন এবং বললেন- ইতোপূর্বে আমি দেখেছি আপনি সদকা গ্রহণ করেন না, তাই এবার যা এনেছি তা হাদিয়া। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তা গ্রহন করলেন এবং ভক্ষণ করলেন বাকি অংশ সাহাবীদেরকে দিলেন।
রাসূলুল্লাহ (সঃ) বাকীউল গারকাদ নামক কবরস্থানে তার জনৈক সাহাবীর দাফন সম্পন্ন করে ফিরে আসছিলেন। তখন আমি তার নিকত উপস্থিত হলাম। রাসূলুল্লাহ (সঃ এর দেহে ছিল দুটো ঢিলেঢালা পোশাক। তিনি তার সাহাবীদের মাঝে বসলেন এসময় আমি তাকে সালাম দিলাম। এরপর আমি তার পিছনদিকে ঘুরে গিয়ে তার পিঠের দিকে তাকাতে লাগলাম। হযরত রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাকে ঘুরে দাড়াতে দেখে বুঝতে পারলেন যে, আমি সম্ভবত কোথাও থেকে তার কোন বিষয়ে জানতে এসেছি এবং তা সত্য কি না তার অনুসন্ধান চালাচ্ছি। তাই তিনি তার পিঠের চাদর ফেলে দিলেন।
তখন আমি তার মোহরে নবুওয়াত দেখে চিনতে পারলাম। আমি মোহরটি চুমু খাওয়ার জন্য ঝুকে পড়োলাম এবং কাদতে লাগলাম।
হযরত রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাকে বললেন সামনে আসো। আমি সামনে এসে বসলাম তারপর অতীতের সমস্ত ঘটনা ঘটনা খুলে বললাম এবং সাথে সাথে ইসলাম গ্রহণ করলাম
ইসলাম গহণের পর সালমানের জীবনের বেশীর ভাগ সময় অতিবাহিত হয়েছে রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর সুহবতে। তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ) থেকে ৬০টি হাদীস বর্ণনা করেন।
হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন রাসূলুল্লাহ (সঃ) যে রাতে সালমানের সাথে নিভৃতে আলোচনা করতে বসতেন, তখন আমরা ধারণা করতাম সালমান হয়তো আজ আমাদের রাতের সান্নিধ্যটুকু কেড়ে নিবে।
তিনি ছিলেন দুস্থ, তার নিবাস ছিল মসজিদ, তার উপার্জন ছিল ধৈর্যশক্তি, তার পোশাক হলো তাকওয়া, তার উপাদান হলো বিনিদ্রতা। তার জীবনের শ্রেষ্ঠ গৌরব হলো- রাসূলুল্লাহ (সঃ) বাণী 'সালমান আমাদের একজন' ।
রাসূলুল্লাহ (সঃ) সালমান (রাঃ) কে উদ্দেশ্য করে বলেন কিছুলোক এমন আছে যারা সুরাইয়া(আকাশের অনেক দূরের তারকা) গিয়ে হলেও সত্যের সন্ধান করবে।
(সংক্ষিপ্ত)


সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৩:৪০
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দীপনের দীপ নেভে না

লিখেছেন ডার্ক ম্যান, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯


ছবিঃ সংগৃহীত
আজকে সামুর অন্ধকার ব্লগার নামে খ্যাত ফয়সাল আরেফিন দীপনের মৃত্যু দিবস। ২০১৫ সালে আজকের এই দিনে জঙ্গি হামলায় দীপন মারা যান নিজ প্রকাশনীর কার্যালয়ে । যে ছেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বজলুল হুদাকে জবাই করে হাসিনা : কর্নেল (অব.) এম এ হক

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১১:৫৯

মেজর বজলুল হুদাকে শেখ হাসিনা জবাই করেছিলেন।

(ছবি ডিলিট করা হলো)

শেখ মুজিবকে হত্যার অপরাধে ২৮শে জানুয়ারী ২০১০ এ মেজর (অব.) বজলুল হুদা সহ মোট ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। রাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মি. চুপ্পুর পক্ষ নিয়েছে বিএনপি-জামাত; কারণ কী?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৬


বিএনপি গত ১৬ বছর আম্লিগের এগুচ্ছ কেশও ছিড়তে পারেনি অথচ যখন ছাত্ররা গণহত্যাকারীদের হটিয়েছে তখন কেন বিএনপি চু্প্পুর পক্ষ নিচ্ছে? অনেকেই বলছে সাংবিধানিক শুন্যতা সৃষ্টি হবে তার সংগে বিএনপিও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগারেরা প্রেসিডেন্ট চুপ্পুমিয়াকে চান না, কিন্তু বিএনপি কেন চায়?

লিখেছেন সোনাগাজী, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৪



**** এখন থেকে ১৯ মিনিট পরে (বৃহ: রাত ১২'টায় ) আমার সেমিব্যান তুলে নেয়া হবে; সামুটিককে ধন্যবাদ। ****

***** আমাকে সেমিব্যান থেকে "জেনারেল" করা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিকাহের পরিবর্তে আল্লাহর হাদিসও মানা যায় না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪




সূরা: ৪ নিসা, ৮৭ নং আয়াতের অনুবাদ-
৮৭। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নাই। তিনি তোমাদেরকে কেয়ামতের দিন একত্র করবেন, তাতে কোন সন্দেহ নাই। হাদিসে কে আল্লাহ থেকে বেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×