শী’আশব্দটির আভিধানিক অর্থ দল,অনুসারী,সমর্থক ও সাহায্যকারী।বর্তমানেরপরিভাষায় শী’আবলা হয় ঐ ব্যক্তি কে যিনিআলী (রাঃ) ও আহলেবায়াতের সমর্থক, ইমামতআকীদায় বিশ্বাসীএবং আবুবকর (রাঃ)ও ওমর (রাঃ) এরচেয়েআলী (রাঃ) এরঅধিক মর্তবা থাকার প্রবক্তা।শী’আদেরকে “রাফিজী”ও বলা হয়।
প্রেক্ষাপট ও সূচনাঃ
ইয়ামানের সানআ শহরে জৈনিক ইয়াহুদী আলেম ছিল আব্দুল্লাহ ইবনে সাবা ওরফেইবনে সাওদা’।উসমান(রাঃ) এরখেলাফতকালে সে ইসলাম গ্রহণ করে।তার আসল লক্ষ্য ছিল মুসলমান বলে জাহিরকরে মুসলমানদের মধ্যে বিরোধ ও ফাটলসৃষ্টি করে মুসলমানদের মধ্যে ফিৎনা ও গোলযোগ সৃষ্টি করতঃভিতর থেকে ইসলামকে বিকৃত ও ধ্বংস করা।সে মদিনায় কিছু দিন কাজ করে সফলকাম না হতে পেরে বসরা গেল।এক সময় সিরিয়া গেল।কিন্তু এসব জায়গায় পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে না পেরে অবশেষে মিসর গমন করল। এখানে সে কিছু লোককে তার দুরভিসন্ধিতে সাহায্যকারী পেয়ে গেল।
ঐতিহাসিকদের বর্ণনা মতে সে সর্ব প্রথম এই ধোঁয়া ছাড়ল যে,মুসলমানদের প্রতি আমার আশ্চর্য লাগে,যারা এ পৃথিবীতে ঈসা (আঃ) এর পুনরায় আগমন করার কথা বিশ্বাস রাখে কিন্তু মুহাম্মদ (সঃ) এর এ ধরনের পুনরাগমনে বিশ্বাস রাখে না।অথচ তিনি সকল পয়গম্বেরের তুলনায় শ্রেষ্ঠ।তিনি অবশ্যই পুনরায় এ পৃথিবীতে আগমন করবেন।অতপর যখন সে দেখল এ কথাটি মেনে নেওয়া হয়েছে,তখন সে মুহাম্মদ (সঃ) এর সাথে আলী(রাঃ) এর বিশেষ আত্মীয়তার ভিত্তিতে তার প্রতি অসাধারণ ভক্তি ও মহব্বত প্রকাশ করে তার শানে নানারকম বাড়াবাড়ির কথা-বার্তা শুরু করে দিল।এক পর্যায়ে সে বলল,প্রত্যেক নবীর একজন ওসী বা ভারপ্রাপ্ত থাকেন।নবীর ইন্তেকালের পর সেই ভারপ্রাপ্ত নবীর স্থানে উম্মতের প্রধান হয়ে থাকে।মুহাম্মদ(সঃ)এর পরও নিয়মানুযায়ী একজন ভারপ্রাপ্ত থাকার কথা।তিনি কে?তিনি হলেন আলী(রাঃ)।সে বলল,তাওরাতে তাঁকেই ভারপ্রাপ্ত বলা হয়েছে।অতএব মুহাম্মদ (সঃ) এর পর খলীফা হওয়ার অধিকার প্রকৃতপক্ষে আলী(রাঃ)এর।কিন্তু মুহাম্মদ (সঃ) এর ওফাতের পর চক্রান্ত করে আলী(রাঃ) এর অধিকারকে ছিনিয়ে নিয়ে তার স্থলে আবূ বকর (রাঃ) ও ওমর (রাঃ) কে খলীফা বানানো হয়েছে।ওমরের পর আলী (রাঃ) এর বিরুদ্ধে চক্রান্ত হয়েছে এবং উসমানকে খলীফা করা হয়েছে,যে এর মোটেই যোগ্য নয়।সে উছমান (রাঃ) কে অযোগ্য প্রমাণিত করার জন্য তার বিভিন্ন গভর্ণরদের নানান বিষয়ে ক্রুটি-বিচ্যুতির দিক তুলে ধরতে লাগল।এভাবে এক পর্যায়ে আব্দুল্লাহ ইবনে সাবার অনুসারী একদল লোক উছমান (রাঃ) এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে উঠল এই বলে যে উছমান ও তার গভর্ণেরদের কারণে উম্মতের মধ্যে ভ্রষ্টতা মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে তা দূর করা দরকার।শেষ পর্যন্ত তারা উছমান (রাঃ) কে হত্যা করল।এবং তারাই তলোয়ারের মুখে আলী (রাঃ) কে খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণে বাধ্য করল।কিন্তু উছমান (রাঃ) এর মজলূম সুলভ শাহাদাতের কারণে অথবা এ শাহাদাতের খোদায়ী শাস্তি স্বরূপ মুসলিম উম্মাহ দু’দলে বিভক্ত হয়ে পড়ল এবং এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে জঙ্গে জামাল ও জঙ্গে সিফফীনের পারস্পরিক যুদ্ধ-বিগ্রহ পর্যন্ত সংঘটিত হল।
এই জঙ্গে সিফফীনে আব্দুল্লাহ ইবনে সাবার বিপুল সংখ্যক ভক্ত আলী(রাঃ) এর পক্ষে ছিল।তাদেরকে বলা হয় “শী’আনে আলী,সংক্ষেপে “শীআ”।“শী;আনে আলী” কথাটার অর্থ হল আলী-র দল।আব্দুল্লাহ ইবনে সাবাই হল শী’আ দলের প্রতিষ্ঠাতা।
এই ঐতিহাসিক পেক্ষাপট শী’আ সম্প্রদায় প্রকৃতপক্ষে ছিল একটি রাজনৈতিক দল।যদিও তাদের উদ্ভব হয় রাজনৈতিকভাবে ,কিন্তু কালের বিবর্তনে তাদের বিভিন্ন দল বিভিন্ন আকীদা-বিশ্বাস সংক্রান্ত ব্যাপারে অভূতপূর্ব বিতর্ক ও বিভ্রান্তির সূচনা হয়।জঙ্গে সিফফীনের সময় আব্দুল্লাহ ইবনে সাবা ও তার অনুসারীগণ তখনকার পরিস্থিতি কাজে লাগিয়ে আলী(রাঃ) এর বাহিনীতে তার সম্পর্কে গোমারাহীমূলক প্রচার শুরু করে।ইবনে সাবা কিছু সংখ্যক মূর্খ ও সরল্প্রাণ লোককে এই সবক দেয় যে,আলী পৃথিবীতে খোদার রূপ।তার দেহে খোদায়ী আত্মা ও তিনিই খোদা।সে আর বলে, “মূলতঃ আল্লাহ নবুওয়াত ও রেসালাতের জন্য আলীকে মনোনীত করেছিলেন।কিন্তু ওহী বাহক ফেরেশতা জিবরাঈল ভুলবশতঃ ওহী নিয়ে মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহর কাছে পৌছে গেলেন।
এভাবেই শী’আদের মধ্যে আকীদাগত বিভ্রান্তির সূত্রপাত ঘটতে আরম্ভ করে,পরবর্তিতে যার আরও বিস্তৃতি ঘটে।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫০