আত্মচেতনার পর্যালোচনা বিশাল পরিসরে করা যায়। দেশ ও জাতি ভেদে আত্মচেতনা সবারই এক। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটাই সত্য। কিন্তু ব্যক্তি বিশেষে আত্মচেতনা অন্য ক্ষেত্রে নানা রকম হয়ে থাকে। প্রতিটি মন ভিন্ন ভিন্ন চিন্তা করতে পারে। কারণ মনের জগতে বাক স্বাধীনতা রুখতে পারে এমন ক্ষমতাসীন কেউ বসে নেই।
এই যে ধরুন, একজন নগন্য মানুষ (অবস্থান ও সামাজিক মর্যাদার ভিত্তিতে) নানা রকম ভাবনা-চিন্তা করতে পারে। সেও একটা পরিবারের প্রধান হতে পারে। সেই পরিবারকে সে নিজের রাষ্ট্র মনে করতে পারে। নিজের কথা পরিবারের অন্য সদস্যদের প্রতি চাপিয়ে দিতে পারে। এটা তার স্বৈরাচারি মনোভাব। আবার পরিবারের সব সদস্যের মতামত নিয়েই যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এই নিজস্ব জগত সবার ক্ষেত্রে একইভাবে প্রয়োগ করা যায়। এক্ষেত্রে পৃথিবীর ধনির দুলালরাও আলাদা নয়।
যে ব্যক্তি একবেলা খাবার যোগাড় করতে পারে না, সে চিন্তা করে ধনি মানুষের সহানুভূতি সে পাচ্ছে না। এজন্য টাকার অহং নিয়ে যারা আশপাশে বসবাস করে তাদের সে দেখতে পারে না। আবার যারা প্রতিবেলায় প্রচুর খাবার নষ্ট করে কিংবা তাদের কুকুর ডলির খবারে যে খরচ হয় তার হিসাব তারা কষে না। পাশেই এক ব্যক্তির একবেলা খাবার জোটে না তা তার মনোজগতে আঘাত করে না।
হাজার হাজার টাকা খরচ করে যারা প্রতিদিন মাতাল হওয়ার জন্য বারে যায়, যাদের এই পন্থায় টাকা খরচ না করলে রাতের ঘুমটুকু হয় না, তাদের আত্মচেতনাও সেরকম। তারা মনে করে মিডিয়ার কোন সুন্দরীর সঙ্গে রাত কাটালে রাতের সময়টা মূল্যবান হবে, কিভাবে কোন কৌশলে কাজ করলে আরো ৫টা সুন্দরী পরের সপ্তাহে কাছে পাওয়া যাবে-এসব তাদেরই ভাবনা। আত্মচেতনা তাদের এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কারণ তারা বিশাল সম্পদশালী কিংবা বিশাল ক্ষমতাশালীদের কাছের বা হৃদয়ের লোক।
জীবন যাপনের এই ভিন্নতা মানুষকে কাছে টেনে নেয়, আবার মানুষকে দূরেও ঠেলে দেয়। এরমধ্যে মৃত্যু বাসা বাধে ক্ষণে ক্ষণে। অভিনয়স্থল ঠিকই থাকে, অভিনেতারা নতুন হয়। আত্মচেতনার জগতটা ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলাতে থাকে। এসবের পেছনে ক্ষমতাশালী মানুষেরাই সম্পদশালী মানুষেরাই অনুঘটক হিসেবে কাজ করে।
তবে মন মানবিকতা হারিয়ে ফেললে তা সমাজের সুখকে কেড়ে নেয়। মানবিকতার অভাবেই আজকের যুবক তরুণ সমাজ আনন্দ খোজে বিলাসবহুল শপিংমলে। সৃজনশীলতা তাদের টানে না। তাদের কাছ থেকে অপর আত্মা সুখ পায় না। তারা প্রতিনিয়ত অপরকে অবহেলা করে চলে। চেতনার এই যে টানাপোড়েন তা বড়ই বিচিত্র। এজন্যই সাম্য দরকার। যার গান গেয়েছেন বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জনক বিশ্বনবী মুহাম্মদ স., যিশুখ্রিষ্ট (ইসা আ.) প্রভৃতি মহামানবগণ।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:৩৫