আমি কোন আলেম নই।তাই ইসলামের খুটিনাটি সব বিষয় জানা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।তারপরও এটুকু বুঝতে পারি যে ইসলামের ভূল ব্যাখা দিয়ে যারা এসব অপকর্ম করছে তাদের শাস্তি না দিলে এদের কারনে ইসলাম চড়মভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। গতকাল আমার সাথে যা ঘটল তা একজন অমুসলিমের সাথে ঘটলে কোনদিনও সে ইসলাম বা মুসলিম শব্দটি শুনলেও গালি দিবে।

গতকাল দুপুরে হঠাত করেই একবন্ধুর ফোন পেয়ে যতদ্রুত সম্ভব সেখানে গেলাম। দেখি আমার আরেক বন্ধু খুবই অসুস্থ। তাই তাকে নিয়ে হাসপাতালে গেলাম। ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, রাজশাহী। হাসপাতালে নিতে নিতে ঐ বন্ধুটির অবস্থা আরও খারাপ হল। অভ্যর্থনা কক্ষে জিজ্ঞেস করলাম, ভাই এখানে জরুরী বিভাগ কোন দিকে?? লোকটি আমাকে বললঃ ৪০টাকা দিয়ে টিকেট কেটে বহিঃবিভাগে ডাক্তার দেখাতে বলল।কাউন্টার থেকে টিকেট দিচ্ছে না কারন নামাজের সময় হয়ে গেছে, আমি অনেক অনুরোধ করলাম। কিন্তু কাজ হল না। অন্যদিকে টিকেট ছাড়া ডাক্তার রোগী দেখবেন না।
আমার অবস্থা দেখে পাশের একজন (রোগী) তার টিকেট দিল, তাকে দাম দিয়ে দিলাম ।আমি টিকেট নিয়ে এসে দেখি ডাক্তার নামাজে যাচ্ছেন। আমি বললামঃ স্যার ওর অবস্থা খুবই খারাপ, আপনে যদি একটু দেখতেন… বন্ধুটি শ্বাস নিতে পারছে না। উনি বললেন নামাজ পড়ে আসি তারপর। আমি বললাম স্যার ততক্ষনে যদি কিছু হয়ে যায়? অন্তত নেবুলাইজার দিয়ে যান। সেই ডাক্তার যার মুখে দাড়ী, আমাকে সরিয়ে দিয়ে চলে গেলেন… তারপর ওকে অন্য হাসপাতালে চিকিতসা করানো হয়।
একজন মানুষের জীবনের থেকে নামাজ আগে এইটা কোন হাদিসে আছে?? কুর-আনের কোন সূরাতে আছে?? কোন ধর্মপ্রান মুসলিম কি এই কাজ করতে পারেন??
যে হাসপাতালে মানুষের জীবনের থেকে ৪০টাকার মূল্য বেশী, যে হাসপাতালে মানুষের জীবন বাচানোর আগে নামাজ পড়া বেশি গুরুত্বপুর্ন সে হাসপাতাল কোন মুসলিমের না, যে মানুষের ডাক্তারের কাছে মানুষের জীবন মৃত্যুর মুখে রেখে নামাজ পড়তে যান, সে আর যাই হোক মোমিন ব্যক্তি নন- এইটা আমি নিশ্চিত। তার নামাজ আমার আল্লাহ কবুল করবেন বলে আমার মনে হয় না।
ধর্মের নামে এই ব্যবসা আর কতদিন?? এইসব নামে মুসলিম মানুষ আর তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে ভাল কিছু আশা করা যায় না। বরং একজন অমুসলিমের জীবন গেলে, সেই অমুসলিম দূরে থাক, তার ১৪গোষ্টির কেউ ইসলামের কথা শুনলে গালি দিবে।
আবার ভাববেন না আমি নামাজ পড়তে নিষেধ করছি। আমি বলছি যেখানে খুব বেশি প্রয়োজন, সে ক্ষেত্রে ১০মিনিট দেরী করে নামাজ আদায় করলে আমার আল্লাহ অ_সন্তোষ্ট হবেন না।
আল্লাহর অশেষ রহমতে আজ অটোগাড়ীতে এক হুজুরের সাথে দেখা,। উনাকে জিজ্ঞেস করলাম, যদি এমন কোন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, যখন একজন মানুষের জীবনের আসংকা রয়েছে সেই মুহুর্তে তাকে চিকিতসা না দিয়ে নামাজ পড়তে যেতে হবে???
উনি বললেনঃ ইসলামে নামাজের গুরুত্ব নিঃসন্দেহে অন্যান্য কাজের তুলনায় অনেক অনেক উপরে এবং ফরয কাজ। কিন্তু কারো জীবন বাচানো তার থেকেও গুরুত্বপুর্ন এবং এটাও ফরয কাজ। যখন এরকম অবস্থা হবে তখন তার জীবন বাচানোর জন্য যা যা করা দরকার তা করতে হবে এবং এ কাজগুলো করার পরেই নামাজ আদায় করে নিতে হবে। আপনি এই কাজ করবেন বলে নামাজ হতে অব্যাহতি পাবেন না। বরং চিকিতসা দেওয়ার পরপরেই আপনাকে নামাজ আদায় করে নিতে হবে।
এই হুজুর মিথ্যা বললেন কি না তা আমি জানি না। তবে আমার কাছেও হুজুরের মতই মনে হয়েছে। যদি কেউ জানেন তবে দয়াকরে আমাকে জানাবেন ।
দু'জনের মধ্যে একজন অবশ্যই ভুল বলেছেন, কে বলেছেন বুঝতে পারছি না