উত্তম ....... আশ্চর্য্য তুমি এখনো জানালার পাশে বসে আছো???বাড়ীর ভিতরেওতো একটু এটা ওটা ধরে হাঁটতে পারো।পৃথিবীতে আর কারো প্যারালাইসিস হয়না,এভাবে বসে বসে থাকলে পুরো শরীরটা অবশ হয়ে আসবে কিছু বুজলে???আমি হৃদু কে নিয়ে একটু বাইরে যাচ্ছি।সন্ধ্যের একটু পর ফিরবো। নাইট-টেবিলে তোমার ম্যাডিসিন আছে, দয়া করে ৭.০০টা বাজলে খেয়ে নিও।
উত্তম রিমির কথা গুলোতে মনোযোগ দিতে পারছিলোনা, একতে অবশ দেহ, বিষন্ন মন, তার উপর রিমির টিপটা কেমন বাঁকা বাঁকা লাগছে।বিয়ের পর থেকেই দেখে আসছে রিমির এই এক সমস্যা,আয়না দেখেও টিপটা কখনো ঠিক জায়গায় বসাতে পারে না।
এ্যঁই শোনো একটু এদিকে এসো...।
কি? আমার সময় নেই, তাড়াতাড়ি বলো?...... রিমি বলে উঠলো।
একটু এদিকে এসোই না।
বলো...
একটু বসো..
আমি বললাম না আমার সময় নেই, আচ্ছা বলো?
উত্তম আলতো হাতে রিমির টিপটা ঠিক করে, কপালে চুমু খেয়ে বললো এবার হয়েছে যাও। তারপর আবার কি ভেবে বলে উঠলো
আচ্ছা..কোনো প্রোগ্রাম আছে? রুপা ভাবি, শশী ভাবিরা কি তোমার সাথে যাচ্ছে?
না..কেন?একটু বিরক্তভাব নিয়ে রিমি বললো... আমি আর তোমার ছেলে।কিছুক্ষন পার্কে থাকবো তারপর একটু মলে যাবো।
ও...তাহলে আজ বাইরে না গেলে হয়না, তুমি আমি আর হৃদু মিলে একসঙ্গে আজ বিকেলটা কাটায়।আজকালতো তুমি আর হৃদু প্রায় বিকেলে বাইরে যাও, আমি বাসায় একা একা থাকি আর শুধু দেশের কথা মনে পড়ে।
শুনো আজ না আমরা কাল না হয় বিকেলটা একসাথে কাটাবো...বলে রিমি তাদের ছয় বছরের ছেলে হৃদয়কে ড্রেসাপ করে অবলীলায় বেড়িয়ে গেলো।
....................................................................................................
পরবাসে তাদের দু বছরের সংসার।নিজদেশে এম.বি.বি.এস সার্টিফিকেট থাকা সত্বেও এখানে জীবিকার জন্য উত্তম ইয়ালো ক্যাবে আরোহন করেছিলো।মমতার জালে বাধা সংসারে বউ-বাচ্চার ছোট ছোট বায়না পূরন করতে মাঝে মাঝে তাকে বেগ পেতে হতো।তাই সে একটু ভালো উপার্জনের জন্য মরিয়া হয়ে ইয়ালো ক্যাবে আরোহী নিয়ে ছুটতো শহরের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে।দিন রাত অক্লান্ত পরিশ্রমের কারনে একদিন ইয়ালো ক্যাবে হার্ট স্ট্রোক হয় তার।উত্তম এর মধ্যে কয়েক বার দেশে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু রিমির পছন্দ এখানকার লাইফস্ট্যাইল। তারপর থেকে এভাবেই দিন কেটে যাচ্ছে....।
আজকাল রিমিকে কেমন অন্য মানুষ মনে হয় উত্তমের। মাহিরের সাথে নাকি ওকে ইদানিং মলে,বাঙ্গালি সংগঠন পার্টিতে দেখা যায়।মাহিরতো প্রায় বাসায় আসে,খুবই মিশুক ছেলে, তার অসুস্থার সময় অনেক হেল্প করেছে।ছিঃ ছিঃ এসব কি ভাবছি আমি? নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে
তারপর আবার নিজেকে ঠিক করে নেয় উত্তম, ভাবে হয়তো বা তার অসুস্থতার কারনে, ছেলের ভবিষৎ চিন্তা,সংসারের নানা ঝামেলা, তার উপরে ভিনদেশে পরবাস সব মিলিয়ে রিমিকে দোষ দেয়া তার উচিত নয়।
রিমিকে তো সে বিয়ের পর থেকেই দেখে এসেছে, এত মায়া মমতা আর ভালোবাসার ফুলঝুড়ি নিয়ে কেউ তার জীবন সাজাবে, সে স্বপ্নেও ভাবেনি।
রিমির বাচ্চাসুলভ আচরনে উত্তম তার প্রতি আরো মরিয়া হয়ে যেতো।
কিন্তু আজকাল রিমি কেমন যেনো বড় হয়ে উঠেছে।সব কিছুতে কেমন একটা বিরক্তির ভাব।
ধূর ছায়!!! কি ভাবছি এসব।কথায় আছে শরীরে পচন শুরু হলে মনেও পচন ধরে..... নিজেকে আবারও সংযত করে নেয় উত্তম।
.....................................................................................................
মাহির আমাদের এভাবে মেলা মেশা করা ঠিক হবে না। উত্তম আমাকে বোধয় সন্দেহ করছে।[মাহিরের বুকে মাথা রেখে রিমি বললো]
তাতে কি? আমরা আর কটা মাস পরে বিয়ে করছি রিমি।আজ না হোক কাল উত্তম আমাদের সম্পর্কের কথা জানবেই।আর তুমি কি বাকি জীবন ওর ঘানি টানবে?আচ্ছা এসব চিন্তা ছাড়ো এখন, লাজিমদের বাসায় পার্টি আছে, ভুলে গেলে নাকি? চলো...চলো... চলো... মাহিরের চোখে মুখে রঙ্গিন স্বপ্ন।
...............................................................................................
এভাবে চলতে থাকে রিমি মাহিরের লজ্জাহীন গোপন অভিসার।কিন্তু এই অভিসার গোপন ছিলো শুধুই উত্তমের কাছে বাঙ্গালী সমাজে নয়।কেননা উত্তমের শারীরিক পরিস্থিতি দিন দিন অবনতি হচ্ছিলো।বাসায় রেখে উত্তমের টেক-কেয়ার করা রিমির পক্ষে সম্ভব হলো না,তাই তাকে নার্সিং হোমে দিয়ে আসলো। একসময় বাকরূদ্ধ হয়ে গেলো, কাউকে সে চিনতে পারেনা শুধুমাত্র তার ভালোবাসার দেবী রিমিকে ছাড়া।
......................................................................................................
আজ রিমিকে খুব সুন্দর লাগছে।মাথায় রজনীগন্ধার থোকা, গোল্ডেন পাড়ে লাল জামদানি এতো মিষ্টি লাগছে.....।পাশে দুজন এরা কারা?
রিমি তাকে কি যেনো বলছে...........।
কে একজন তার ডানহাতের বৃদ্ধাআঙ্গুলীতে চাপ দিয়ে কি নিলো বুজতে পারছে না।
রিমি আজ এতো তাড়াতাড়ি চলে যাচ্ছে কেন? আরেকটু থাকোনা জান আমার।আমার সময় ফুড়িয়ে এসেছে।আমাকে দাদুভাই ডাকছে।আরেকটু থাকোনা জান।
উত্তমের মনের সব কথা মনেই রয়ে গেলো, মুখ দিয়ে শুধু আ.....আ......আ....শব্দ বের হলো তারপর একেবারের মত চুপ হয়ে গেলো।
.........................................................................................[সমাপ্ত]
বিঃদ্রঃ আমার জানা নেই....কোন পাগল,অথবা শয্যাশায়ী সেন্সলেস মানুষের কাছ থেকে কি এভাবে ডিভোর্স দেয়া বা নেয়া বিধি সম্মত কিনা???
তবে কেন এমন হলো উত্তমের জীবনে?
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুলাই, ২০১০ রাত ১২:৪৩