প্রথমেই দেখি জিনিসটা কি??
আসলে সোজা বাংলায় বলতে গেলে এটি ছিল তৎকালীন চীনা রাজাদের প্রাসাদ যেটি পুরোটা সাধারণ মানুষজনের জন্য এক্কেবারেই নিষিদ্ধ ছিল।
সংক্ষেপে একটু ইতিহাস—
১৪০৬ সালে এই বিশাল কমপ্লেক্স টি তৈরি করা শুরু হয়।বলতে গেলে এটিই এখন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কমপ্লেক্স।এটি বানাতে প্রায় দশ লাখ মানুষের ১৫ বছর লেগেছিল-মহাযজ্ঞ বলতেই হবে।১৪২০ সালের দিকে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়।প্রায় ৯৮০ টি বিল্ডিং তখন তৈরি করা হলেও এর মধ্যে বর্তমানে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।
কোন সেই রাজ-রাজড়া যাদের জন্য এই মহাযজ্ঞ??
মুলত চীনের মিং বংশের রাজাদের জন্যই এটি তৈরি করা হয়।সেটি প্রায় ৬০০ বছর আগের কথা।কিন্তু ১৬৪৪ সালে এটি যখন qing বংশের কাছে ক্ষমতার পালাবদল হলে অবশেষে তারাই হয় এই বিশাল প্যালেস কমপ্লেক্সের অধিকারী।এই সিটির শেষ রাজা ছিলেন puyi – সেটি খুব একটা আগের কথা নয়।এই সেদিন ১৯২৪ সালে রিপাবলিক চায়না ক্ষমতাবলে তাকে forbidden city থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
কেন রাজাদের জন্য এই forbidden city তৈরি হয়েছিল???কি প্রয়োজনে???
আসলে তখনকার চীনের রাজাদের মনে করা হত son of heaven এবং স্বর্গের পরে রাজাকেই এই বিশ্বের supreme authority মনে করা হত।আর তাই প্রচলিত জনমতে তাদের জন্য এমন একটি জায়গা দরকার ছিল যেটি সবার জন্য উন্মুক্ত নয়, যেটি হবে একান্তই স্বর্গের সন্তানদের জন্য বরাদ্দ।
এইবার একটা সিক্রেট—
Forbidden city এর রাজাদের কিন্তু সবসময় শুধু এবং শুধু উজ্জ্বল হলুদ বা সোনালী রঙের পোশাক পরিধান করতে হত কেননা তারা মনে করত এটি স্বর্গ বা রাজকীয় রঙ। ভুলক্রমেও কেউ যদি এই রঙের পোশাক অন্য কেউ পরিধান করত তবে তার আর নিস্তার ছিলনা।
পুরো জায়গাটার ডিজাইনও একটু জেনে নিন—
পুরো জায়গাটাকে দুভাগে ভাগ করা যায়- ইনার কোর্ট আরেকটি হচ্ছে আউটার কোর্ট।
আউটার কোর্ট—এটি মুলত বিভিন্ন রকম রাজকীয় কাজ কারবার আর উৎসব পালনের জন্য ব্যবহৃত হত।
ইনার কোর্ট— এটিই মুলত রাজার প্রাসাদ ছিল।শুধু রাজা নয় রাজার পরিবারের জন্য জায়গা বরাদ্দ ছিল।
পুরো জায়গাটি walled city নামক একটি বিশাল জায়গা দ্বারা আবদ্ধ।পুরো জায়গার নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ছিল ব্যাপক।পুরো সিটির প্রত্যেকটি কর্নারেই রয়েছে কর্নার টাওয়ার যেগুলো আগে সারাক্ষন সচেষ্ট থাকত বহিঃশত্রুর আক্রমন ঠেকানোর জন্য।
এইবার আসেন একটু ছবি টুর নিয়া পুরা সিটি টা দেইখা আসি---
এইটা ফরবিডেন সিটির আউটার কোর্ট
সিটির নিরাপত্তার জন্য স্থাপিত কর্নার টাওয়ার
আগেই বলেছিলাম যে উজ্জ্বল হলুদ তাদের বিশ্বাসে ছিল রাজকীয় কালার।ঠিক এই কারনেই পুরো সিটির দালানগুলোর ছাদ হলুদে হলুদে হলুদায়িত।
খুব ভালো করে খেয়াল করেন দালানের ছাদের উপরে অনেকগুলো জীবজন্তুর নকশা।এভাবে যে দালানের ছাদে যত বেশি নকশা সে দালান ছিল তত বেশি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
অবশেষে প্রশ্ন হল এটি কি এখনো ফরবিডেন অথবা এর বর্তমান হালচাল কি??না এটি এখন আর নিষিদ্ধ নয়, আসলে এটি এখন একটি মিউজিয়াম যেটি Palace Museum নামে পরিচিত।এটি আসলে World Heritage Site এর অন্তভুক্ত হয়েছে ১৯৮৭ সালে।
যাই হোক সবাই ভালো থাকবেন।