কাল আমার এক ছোট বোন ফেসবুকে তার স্বামীকে পশু ডাক্তারের কাছে যাবার পরামর্শ দেবার সাথে সাথে তার সুন্দর কারন গুলোও তুলে ধরেছিল। যে সকল কারন গুলো ও তুলে ধরেছিল সেটা যে কোন কষ্ট করে অর্থ উপার্জনকারী মানুষ এক বাক্যে মেনে নেবেন বলেই আমার বিশ্বাস। বাস্তব জীবনে অর্থ উপার্জন করতে গিয়ে আমরা সাধারন মানুষ গুলো যে দিন দিন মানুষ থেকে পশুতে রূপান্তরিত হচ্ছি এটা বাস্তব।
বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতির দিকে তাকালে স্পষ্ট ভাবে দুটি শ্রেণী ধরা পরে। যেখানে এক শ্রেণীর হাতে অঢেল অর্থ এবং যা তারা খরচ করছে ৫ টাকার জিনিস ১৫ টাকা দিয়ে ক্রয় করে। আর অন্য একটি শ্রেণীর সকাল শুরু হয় মোরগের মত তাড়াতাড়ি ধরফর করে উঠে, ঘোড়ার মত ছুটে, গাধার মত সারাদিন খেটে, শেয়ালের মত সারাদিন এদিক ওদিক থেকে তথ্য সংগ্রহ করে, সিনিয়রদের কথায় বাঁদরের মত নাচন-কুর্দন করে, দিনশেষে বাসায় ফিরে ফ্যামিলির সবার ওপর কুকুরের কত করে চিৎকার করে আর রাতে যতটুকু ঘুম সেটা মহিষের মত ঘোঁত ঘোঁত করে। এক কথায় এমন শ্রেণীর জীবিত জীব গুলোর জীবনকে যান্ত্রিক জীবন না বলে পশুর জীবন বলাই যুক্তিযুক্ত। ঠিক এমন সময় জীবন যেখানে খুব খুব কঠিন সেখানে লিখন ও তাহমিনা নামক দুজনের এমন কঠিন বাস্তবতার জীবন নিয়ে তামশা আমার কাছে বিরক্তের কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
"হ্যান্ডসাম ফেরিওয়ালা লিখন" শিরোনামে একটি খবর অনলাইনে বেশ সারা ফেলতে দেখেছি। অনেক অনেক অনেকেই খুব বাহবা দেবার চেষ্টা করেছেন। খুব যুক্তি সঙ্গত কারনেই আমি বাহবাটা দিতে পারিনি। যে লিখন উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান এবং ঢাকা শহরের দুটি ফ্ল্যাট বাড়ির মালিক যিনি তার রাস্তায় নেমে এমন তামশা করলেই কি বা না করলেই কি? তার তো আর সত্যি সত্যি পেটের দায়ে রাস্তায় নামতে হয়নি। দিন শেষে বা মাস শেষের উপার্জনের উপর তার জীবনে কিছু যায় আসে কি? হেড ফোন কানে দিয়ে গলায় দামী ক্যামেরা ঝুলিয়ে ঢাকার রাস্তায় ফেরিওয়ালা সাজা আমার কাছে এক কথায় তামশা। আমার তো মনে হয় এমন নিশ্চিত জীবন থাকলে আমি প্রতি দিন সকালে আমার বাড়ির কাছের সিটি কর্পোরেশনের রাস্তা নিজের মত করে যত্ন করে ঝাড়ু দেবার কাজ করতাম বিনা পয়সায়। যে রাস্তায় আমি আমার মেয়েকে নিয়ে খুব ভোরে উঠে হাঁটতে বের হতাম।
এখন আবার নতুন করে চলছে স্মার্ট বাদাম বিক্রেতা তাহমিনার গল্প। যার উচ্চ শিক্ষার জন্য মলয়শিয়া যাবার সুযোগ থাকে অথবা যার সপরিবারে মালয়শিয়া স্থায়ী ভাবে বসবাসের সুযোগ থাকে তাদের যে দিন আনি দিন খাই এমন নিশ্চয়ই নয়। এখানেও একই গল্প। প্রতিদিনের বা মাস শেষের উপার্জনের দিকে কেও তো তাকিয়ে থাকে না তাই আমরা এমনি এমনি খাই টাইপের গল্প। যেমনটা মনে হয় রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের বেলায়ও। নজরুল যদি রবীন্দ্রনাথের মত করে নদীতে নৌকা নিয়ে মনের জানালা গুলো খুলে দিতে পারতো তাহলে হয়তো আমরাও অন্যরকম নজরুলকে পেতাম। তাই এমন তামশায় বাহবা দেবার মত কিছু খুঁজে পাই না আমি। জীবনে দরকার আর বিলাসিতা তো আর এক নয়। মানুষ জীবনের দরকারের পথে নামে আর এরা নেমেছে বিলাসিতা করার জন্য।
এরা বিলাসী ফেরিওয়ালা। চাইলেই ছুটি, চাইলেই আরাম। বরং এ কাজ গুলো যারা প্রকৃত পেটের দায়ে করে থাকে তারা কিন্তু এমন দামী ক্যামেরা, কানে হেডফোন গুঁজে করতে পারেনা, অথবা চাইলেই আজ ছুটি বলে কাজ ফেলে চলে যেতে পারেনা। ফলে অসহায় মানুষ গুলোর অসাহায়ত্ত নিয়ে এক প্রকারের মজা করা আরকি। এমন কাজে প্রকৃত নিয়োজিত খেটে খাওয়া মানুষ গুলোর মনে না পাওয়ার কষ্ট, ধনীতে গরীবে ভেদাভেদ তুলে ধরার জন্য এরা দুজনই যথেষ্ট। যারা এদের বাহবা দিচ্ছেন তাদের কে অনুরোধ করছি এদের সম্পর্কে খবর রাখতে থাকুন। দেখবেন তাদের এমন বিলাসি তামশা বেশী দিন চলছে না। কারন তামশা বা বিলাসিতার স্থায়িত্ব যে ক্ষণস্থায়ী।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুন, ২০১৬ সকাল ১১:৪২