কলেজের প্রথম দিনের প্রথম ক্লাশটা ছিল ইংরেজি।মাধ্যমিক পাশ করেছি বাংলা ভার্সন থেকে। যার কারনে স্যার অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা বললেও, বোঝা আধবোঝা মধ্য দিয়ে ক্লাশের সময়টা কাটছিল। হাঠাৎ স্যার বললেন,তোমরা একে একে তোমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং এর কারন গুলো বলো।
তো শুরু হলো। কিন্তু সবারই একই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ডাক্তার না হয় ইন্জিনিয়ার। তো এই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কারন হিসাবে তারা উল্লেখ করলো, দেশে অনেক রোগী বিনা চিকিৎসায় মারা যায়, আর দেশের উন্নতির জন্য ইন্জিনিয়ার অপরিহার্য।
কিন্তু অবাক তখন হইলাম যখন কিছু ছাত্র বললো, বাবা মার ইচ্ছা আমি ডাক্তার /ইন্জিনিয়ার হই, তাই বাবা মার স্বপ্ন পূরনের জন্য লেখাপড়া করছি। যাইহোক, এই ভেবে ভালো লাগলো তারা সত্য কথা বলেছে।
আমিও বলতাম, আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আমি ইন্জিনিয়ার হবো, কিন্তু বলার সুযোগ হয় নি ক্লাশের টাইম শেষ হয়ে গেছে।
কিন্তু যারা বলার সুযোগ পেয়েছে তাদের সকলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কিভাবে দুটো বিষয়ের উপর সীমাবদ্ধ থাকতে পারে।কেনো কেউ অন্য কোনো বিষয়কে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হিসেবে পছন্দ করে নি?
এই প্রশ্নটার উত্তের জন্য ফিরে যেতে হবে শিশু কালে। আচ্ছা আমার শিশু কালেই ফিরে যাই, আমি যখন ছোট তখন নাকি শুধু আর্ট করতাম, এই ধরেন দুটো বাড়ির ছবি একে সেখানে বিদ্যুতের খুটি একে বিদ্যুতের লাইন দিতাম, এই টাইপের ছবি নাকি আকতাম বেশি, তাই কেউ একজন আমার সামনে মাকে বলেছিল "তোর ছেলে বড় হয়ে ইন্জিনিয়ার হবে "।এই যে আমি শুনলাম বড় হয়ে ইন্জিনিয়ার হবো। তো কেউ যদি জিগায় তো, বাবু তুমি বড় হয়ে কি হবা তখন সুন্দর করে বলে দিতাম, "আমি ইন্জিনিয়ার হবো"।কিন্তু আমি তো তখন বোঝতামই না ইন্জিনিয়ার কি? এইটা কেমনে হয়?বাড়ি আর তারের ছবি আকানোর সাথে ইন্জিনিয়ারেরই বা কি সম্পর্ক।তার পর থেকে পরীক্ষায় খারাপ করলে বাবা মা দেখতাম ওই কথা ওঠাইতো, তর না ইচ্ছা ইন্জিনিয়ার হওয়া তাইলে ভালো কইরা পরস না কেনো , খারাপ রেজাল্ট করলে ইন্জিনিয়ার হবি কেমনে?
তারপর থেকে ইন্জিনিয়ার ইন্জিনিয়ার শুনতে শুনতে মাথা নষ্ট, মা বাবাও অন্যদের অনেক সময় বলে থাকে আমার ছেলে ইন্জিনিয়ার হতে চায়। তো এই ভাবে আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও ইন্জিনিয়ার হয়ে গেছে।
অনেকটা এইভাবেই, না বুঝে সকলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নির্ধারন হয়ে থাকে। তারপরও যদি কেউ অন্য ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা বলে তবে তাকেও দমিয়ে দেওয়া হয়, ডাক্তার বা ইন্জিনিয়ার হওয়ার জন্য তাকে চাপ দেওয়া হয়।
এরকমই ঘটনার শিকার হয়েছে আমার খালাতো ভাই।তার ইচ্ছা সে ক্রিকেটার হবে। তার ইচ্ছার কথা প্রকাশ হওয়ার পর, তার ক্রিকেট খেলাই বন্ধ করে দেওয়া হয়। তাকে বার বার বুঝানো হয় সে যেন ডাক্তার বা ইন্জিনিয়ার হওয়ার ইচ্ছা করে,ক্রিকেটের ভোত যেন মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দেয়।তবে তার আমি আরেকটি গুণ লক্ষ করেছি সে ভালো লিখতে পারে। তার লেখা কয়েকটি গল্প আমি পড়েছি খুব ভালোও লেগেছে। তাই তাকে আমি লেখালেখির উৎসাহ দিয়ে থাকি।যদি খালা জানে ওকে আমি লেখালেখির উৎসাহ দেই তাহলে আমাকে তেলে ভাজবে।অকে ওর ফ্যামিলি থেকে এদুটাতেই কঠোর বাধা দেওয়া হয়।
ঠিক এভাবেই প্রত্যেকটি ছেলে মেয়ের স্বপ্নকে নিভিয়ে বাবা মার স্বপ্নকে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। আর তাদের স্বপ্নের জালায় তারা জ্বলে ছাই হয়ে যাই। কিছুই হতে পারে না।
অনেকের মধ্যেই অনেক প্রতিভা থাকে। কিন্তু তাদের প্রতিভা বিকাশিতই হয় না এইসব কারনের জন্য।
বাংলাদেশের একটি বিষয়ের কথা তোলে ধরি,
বাংলাদেশে মেধাবী রাজনীতিবিদ নাই। আর যারা বর্তমানে রাজনীতিতে যোগ দিচ্ছে তারা হচ্ছে লাস্ট বেন্ঞ্চের ছাত্র। তাদের মধ্যে রাজনীতি করার যোগ্যতা নাই। কিন্তু যাদের আছে তারা বাবা মায়ের চাপিয়ে দেওয়া স্বপ্নের পিছু ছুটছে।
বাবা মা সবসময় তার সন্তানের মঙ্গল কামনা করেন। যার কারনে নিজেরাই সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু লক্ষ রাখা উচিত,সন্তানের মঙ্গল করতে যেয়ে যেন উল্টোটা না হয়ে যায়। তাই আমি সকল শ্রদ্ধেয় পিতা মাতাকে বলবো, আপনারা এমন সময় ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করার কথা বলবেন আপনাদের সন্তানদের, যখন তারা বুঝবে কি করলে কি হওয়া যায়।