এখানে এসেছিলাম শুধুমাত্র বেড়াতেই নয়। আসল কাজটাই ছিলো কাজ! তাই বলে শুধু কাজ আর কাজ নিয়ে থাকলেই চলবে? কোথাও কোথাও তো বেড়াতেও হবে তাইনা? একবার ভাবলাম মেলবোর্ন যাই, আরেকবার ভাবলাম ব্রিসবেন যাই। জ্যু, মিউজিয়াম, আর্ট গ্যালারী সব হলো। শেষে খুঁজে পেলাম এক অপূর্ব সুন্দর দৃষ্টিনন্দন গার্ডেন। জাপানিজ বোটানিক গার্ডেন! থোকা থোকা চেরী ফুল আর সুসজ্জিত জাপানীজ ইকেবানা স্টাইল গার্ডেনের ছবি দেখে আমার খুব পছন্দ হলো। সাথে সাথে প্লান করলাম এই বাগানেই কাবুল শপের এক্সেসরিজে সেজেগুজে ছবি তুলতে হবে আমাকে। যেই ভাবা সেই কাজ! একটা কথা বলি, আমার মতে অস্ট্রেলিয়ার নিজস্ব তেমন কিছু নেই যা খুব স্পেশালভাবে কিনে এনে রেখে দেওয়া যায়। একমাত্র এবঅরিজিনালদের আর্টস এন্ড ক্রাফটস ছাড়া। তবে হ্যাঁ সেখানে গিয়ে চাইনিজ শপ থেকে চাইনিজ জিনিসপাতি কেনা যাবে। অবার্ন থেকে এরাবিয়ান সবকিছুই বা আফগানিস্তানী সাজসজ্জা খানা পিনা আর লাকেম্বাতো আছেই। কি নেই সেখানে বাঙ্গালী কাজ কারবার! এখানকার ঢেড়স খেয়ে তো আমি অবাক! বাংলাদেশের ঢেড়স তো লজ্জা পাবে! কাজেই অস্ট্রেলিয়া এসে কাবুল সাজে জাপানিজ গার্ডেনে ঘুরে বেড়ালে দোষের কিছু নেই। একের ভেতরে তিন একটিভিটি। হা হা অস্ট্রেলিয়া, কাবুল, জাপান। পুরাই ইন্টারন্যাশনাল ব্যপার স্যাপার!!!
সে যাইহোক পরের দিন সকাল সকাল চললাম সেখানে। মেটরো, বাস, ট্রেন সব চেপে শেষে গিয়ে উপস্থিত হলাম অবার্নে। তারপরএকটু হাঁটতে হবে। এই একটু হাঁটতে হাঁটতে শেষে ৩৫ মিনিটস হাঁটতে হলো আমাকে! আমি আর পারি না । থামি আর হাঁটি। সমান রাস্তায় হাঁটা যায়! ক্রমাগত আপহিল ডাউনহিল! এইভাবে কি হাঁটা সম্ভব!!! অবশ্য উবার নিলেও চলতো।যাইহোক ধুঁকতে ধুঁকতে আমার সাজুগুজু নত্ত হয় হয় আর কি!! হাঁটতে হাঁটতে রেগে যাই আমি একটু পর পর। অবার্নের রোড ধরে হাঁটছিলাম আমরা। পথে একখানে থামলাম। সেখানে অপূর্ব সুন্দর সব বাসা ছিলো। ছোট ছোট বাংলো টাইপ বাসা, ফুলে ফুলে ঘেরা। প্রায় সব বাসার সামনেই গাড়ি আর স্পীডবোট ছিলো। মানুষ যে গাড়ির মত করে গ্যারেজে গ্যারেজে স্পীডবোট নৌকাও রাখে তা জীবনে প্রথম জানলাম!
হাঁটতে হাঁটতে হাপাতে হাপাতে এক বাড়ির সামনে একটু রেস্ট নিচ্ছিলাম। একজন মধ্যময়সী মহিলা বের হয়ে এসে বলে - কোথায় যাচ্ছো তোমরা? আমি বললাম আমরা বোটানিক গার্ডেনে যাই। কিন্তু আমি হাপাচ্ছি! সে বললো আহা আহা তোমাদেরকে কি হেল্প করতে পারি? কোনো উপায়ে? আমি মনে মনে বললাম- গাড়ি করে নিয়ে চল পারলে আমারে...... উপরে উপরে বললাম হে হে না না কিত্তু লাগবে না, আপনার বাসাটা অনেক সুন্দর! এই মহিলাটা যেন শকুন্তলা। জিগাসিলো মোদের- পথিক তুমি কি পথ হারাইয়াছো!
অবশেষে পৌছালাম বোটানিক গার্ডেনে। গার্ডেনে পৌছেই আমার হাঁপানি মাপানি, টায়ার্ড মায়ার্ড সব চলে গেলো। আমি করিৎকর্মা হয়ে উঠলাম সাজুগুজু নিয়ে। বেঞ্চে গ্যাট হয়ে বসে আমার ফোটো তুলবার আয়োজন শুরু হলো।মাথায় কোলা, গোলায় ঝোলা এই সব পরা দেখে তো আশেপাশের লোকজনের চক্ষু চড়কগাছ। আমার সঙ্গী সাথীরা বলে, তোমাকে তো এমনিতেই সুন্দর লাগছিলো! এসব পরা কেনো? আমি বললাম চুপ কর। আমাকে এসব পরলে একদম রাণীর মত লাগবে। আমি এমনেই ছবি তুলবো! হারে রে রে আমায় রাখবি ধরে কেরে!!! আমি যেমন ছাড়া বনের পাখি মনের আনন্দে রে!!!
তারপর সেই রাণীর সাজে সেজে কাবুল শপের কোলা ঝোলা পরে মনের আনন্দে ছবি তুলতে তুলতে আমি সবার বারোটা বাঁজিয়ে ছাড়লাম।
ছবি না যত সুন্দর হলো তার থেকেও সুন্দর হলো ভিডিওগুলো। যাইহোক এই জাপানিজ বোটানিক গার্ডেনের ইতিহাস কি জানতে হবে আমাকে। জাপানীরা এই অস্ট্রেলিয়া এসেও কেনো এই গার্ডেন বানালো কে জানে?
যাইহোক এইখানে চেরী ব্লসম ছবি দেখে নেটে এসে দেখি কোনো চেরীর নাম গন্ধ নেই। সেটা নাকি হয় অগাস্টে। যাইহোক তবুও চেরী ব্লসম ছাড়াই এই অপূর্ব সুন্দর গাপানিজ গার্ডেন দেখে চোখ জুড়ালো মন ভরালো।
জাপানিজ স্টাইলে সাজানো লেকে হাস, রাজহাস ও আরও কিছু অজানা পাখিদের দেখা মিলেছিলো।
লেকের পানিতে সাজানো পাথরের উপর তারা দাঁড়িয়ে নানা ভঙ্গিতে পোজ দিচ্ছিলো। যেন বলছিলো, আমার ছবিও তুলে দাও না? স্বচ্ছ পানিতে ঘুরে বেড়াচ্ছিলো সব রঙ্গিন মাছ। যেন রুপকথার রাজ্যের ছবি। রঙ্গিন সব সাঁকো দিয়ে ঘেরা ছোট ছোট লেক ও লেকের গতিপথ। বাচ্চাদের খেলার পার্কও আছে সেখানে। যে কেউ বাটন প্রেস করলেই শোনা যায় পশু পাখির গর্জন।
যাইহোক রাণীর মত ছবি তোলাতুলি শেষ হলে আমরা মিনি জ্যুতে গেলাম। সেখান ক্যাঙ্গারূরা তখন আয়েশ করছিলো।
পাশেই ঘুরে বেড়াচ্ছিলো ময়ুর। এই সব ঘুরে বেড়ানো ময়ুরের অপার নীল গ্রীবাতে পৃথিবীর সকল সৌন্দর্য্য যেন থেমে গেছে। আমি চোখ ফেরাতেই পারি না! ময়ুর যে এই রকম সুন্দর নীল তা আগে কখনও জানতাম না। দেখলাম কোয়ালা দেখলাম ইমো, আরও দেখলাম দু আঙ্গুল চেপ্টা একটা মিশমিশে শান্ত শীতল চোখের সাপ বাগানের ফোয়ারার পাথর গলে আামার দিকে মাথা তুলে তাকিয়ে আছে। তাই দেখে আমার তো সকল সৌন্দর্য্য দেখার সাধ মিটে গেলো। ঐ জ্যু এর এক মেয়েকে জিগাসা করলাম এইখানে সাপ কেনো? সে বলে ওহ নো প্রবলেম।দে লিভ হিয়ার! বলে কি! মনে মনে তখন আমি বাবা মা দাদা চাচা সবাইকেই ডেকে ফেললাম আর আমার আর কোনো গার্ডেন জ্যু কিছুই দেখার সাধ রহিলো না আমি তখন ছেড়ে দে মা কেন্দে বাঁচি......
সবশেষে আবার সেই ৩৫ মিনিটের হাঁটা পথ! আমি আর পারি না। পথে থামলাম এক এরাবিয়ান স্যুইটসের দোকানে। দোকানী মহিলাকে বললাম কোনো ড্রিংকস হবে? সে বললো তার দোকানে কোনো ড্রিংকস নেই তবে পথিক তুমি এসেছোই যখন কিছু মিছু খেয়ে যাও আমার দোকান থেকে? সে আমাদের হাতে তুলে দিলো বেহেস্তি স্বাদের কুনাফা।
সেই অমৃত খেয়ে আমরা ফের চললাম অবার্নের উদ্দেশ্যে। ফেরবার পথে আমাদের স্টুডেন্ট বিরিয়ানীতে বিরিয়ানী খেতেই হবে। শুনছি স্টুডেন্ট বিরিয়ানী ইজ দ্য বেস্ট! শেষে এই বিরিয়ানী খেয়েই ছাড়লাম এবং .......বোকাও বনে গেলাম।। তারপর আমরা ফিরে এলাম রাত দুপুরে।
জাপানিজ বোটানিক গার্ডেন ইন সিডনী, যার জানার ইচ্ছা জেনে নাও
এই পোস্টটা মূলত সিডনীর জাপানীজ গার্ডেনে কাটিয়ে দেওয়া কিছু সময় আর অবার্নের মহিলাদের আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়ে লেখা। এইসব সাজসজ্জা পরে একখানা পোস্ট দিতে বলেছিলো সোনাবীজভাইয়া। তাই এই পোস্ট তার জন্য উৎসর্গিত হইলোক।
এতক্ষন যারা পিচ্চি পাচ্চা সামু স্টাইল ছবি দেখিয়া বিরক্ত তাহাদের জন্য ইমগুর স্টাইল কষ্ট করে বানায় আনিলাম। আসলে সকল আপুদের জন্য এই গয়নাগাটি ছবিগুলি। অবশ্য ভাইয়ারাও ভাবীদেরকে একটু এই ইসটাইলিশ গয়নাগাটি দেখাতে পারেন।
আর মিররমনির জন্য তাড়াতাড়ি দিয়ে দিচ্ছি কিন্তু। একলব্য ভাইয়া ফিরে এসেছে। কিন্তু আমার কুটনাবুড়া ভাইয়াটা একদম নীরব হয়ে গেছে। এমন করে সবাই নিশ্চুপ হয়ে গেলে কি চলবে ??
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৬